alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও বাস্তবতা

মিহির কুমার রায়ম

: শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-৩০) ব্রাজিলের বেলেম শহরে গত ২২ নভেম্বর শেষ হলো। সম্মেলনের মূল বিতর্ক ছিল কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাধ্যতামূলকভাবে কমানো (ফেজ আউট) নিয়ে। ১৯৪টি দেশ প্যারিস চুক্তির অধীনে একত্রিত হয়ে বিশ্ব উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে সম্মত হলেও প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কারণে তেল উৎপাদনকারী সৌদি আরব ও রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ এই প্রস্তাবকে বাধ্যতামূলক না রেখে ‘স্বেচ্ছামূলক’ করার পক্ষে অবস্থান নেয়।

লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের সঠিক স্বীকৃতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর ক্ষতিপূরণ কাঠামো তৈরিও কপ-৩০-এর একটি বড় লক্ষ্য। এবারের সম্মেলনেও আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেল না। বিশ্বনেতারা বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে একমত হতে পারেননি। অথচ এটিই ছিল সম্মেলনের মূল ফোকাস।

সম্মেলনে ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অভিযোজন তহবিল তিন গুণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও এই ১২০ বিলিয়ন ডলার বার্ষিক তহবিল ২০৩৫ সালে প্রদান করা হবে এবং কার্যকারিতা শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকে। ফলে এটি বহু দেশকেই তাদের বর্তমান জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথেষ্ট সহায়তা দিতে পারবে না।

এবারের সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো জাস্ট ট্রানজিশন মেকানিজম গ্রহণ, যা সর্বস্তরের মানুষ, শ্রমিক, নারী ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করে সবুজ অর্থনীতিতে রূপান্তর নিশ্চিত করবে। তবে এই ব্যবস্থার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন চূড়ান্ত চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। এবারের চূড়ান্ত চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পর্কিত কোনো বিষয় সরাসরি উল্লেখ নেই। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উত্তরণের রোডম্যাপকে জাতিসংঘের কার্যক্রমের বাইরে রাখা হয়েছে এবং কলম্বিয়া ও অন্যান্য দেশের নেতৃত্বে এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ব্রাজিলও আলাদাভাবে রোডম্যাপ প্রকাশ করতে পারে।

আরও একটি হতাশাজনক বিষয় হলো, মূল চুক্তিতে বনসংরক্ষণের রোডম্যাপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ কপ-৩০ আয়োজিত হয়েছিল আমাজনের কোলঘেঁষে, যেখানে বন সর্বদাই বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে ব্রাজিল নতুন ‘ট্রপিক্যাল ফরেস্ট ফরএভার ফ্যাসিলিটি’ নামে একটি তহবিল চালু করেছে, যা দেশগুলোকে গাছ সংরক্ষণে অর্থ সহায়তা করবে।

যদিও কপ-৩০-এ কিছু ছোট ও সীমিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সীমিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় দৃঢ়, বাধ্যতামূলক ও সমন্বিত পদক্ষেপ এখনও গ্রহণ করা হয়নি।

কপ-৩০ বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ প্রতিবছর বড় ধরনের বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং কৃষি উৎপাদন হ্রাসের মতো সমস্যার মুখোমুখি হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি হলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ স্থায়ীভাবে পানির নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কপ-৩০-এর আলোচ্য পাঠ্য ও অ্যাকশন এজেন্ডা বাংলাদেশের জলবায়ু নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে। তবে এর সঠিক বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় ও স্থানীয় নীতি-সমন্বয় অপরিহার্য। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২০ বছরে বাংলাদেশে নদীভাঙন, চরম বৃষ্টিপাত এবং ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি আরও বাড়বে। কপ-৩০-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অভিযোজন অর্থায়ন বৃদ্ধি, বন ও ভূমি পুনরুদ্ধার এবং পরিচ্ছন্ন শক্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা পাওয়া সম্ভব হবে। এটি বিশেষভাবে কৃষি, মৎস্য, পানি ব্যবস্থাপনা এবং নগর পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলবে।

এ ছাড়া এক ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, কোটি কোটি হেক্টর সংরক্ষিত বন ও ভূমি এবং ৪০ কোটির বেশি মানুষের সহনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন অর্থায়ন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো নিশ্চিত করেছে, তাদের জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করা হবে। তবে এসব পদক্ষেপ কার্যকর হবে ২০২৬ সাল থেকে, আর ১২০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক তহবিলও চালু হবে তখন। ফলে অনেক দেশ তাদের বর্তমান জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় সীমিত সহায়তাই পাবে।

৭০টিরও বেশি দেশ জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) জমা দেয়নি এবং জমা দেওয়া এনডিসিগুলোও পর্যাপ্ত নয়-যা বিশ্বকে ২.৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির দিকে ঠেলে দিতে পারে। এনডিসি অপর্যাপ্ত হওয়ায় একটি ‘অ্যাক্সেলারেটর’ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে, যা আগামী কপ-৩১ সম্মেলনে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।

এবারের কপ-৩০ সম্মেলনকে “আশানুরূপ ছোট পদক্ষেপ” বলা যায়। এই সম্মেলনের একমাত্র প্রাপ্তি হলো জাস্ট ট্রানজিশনের স্বীকৃতি-যা জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প থেকে পরিচ্ছন্ন শক্তিতে স্থানান্তরিত হওয়া শ্রমিকদের সহায়তা করবে।

[লেখক: সাবেক ডিন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ; সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]

লবণাক্ততায় ডুবছে উপকূল

সড়ক দুর্ঘটনার সমাজতত্ত্ব: আইন প্রয়োগের ব্যর্থতা ও কাঠামোর চক্রাকার পুনরুৎপাদন

ছবি

অস্থির সময় ও অস্থির সমাজের পাঁচালি

ভারতে বামপন্থার পুনর্জাগরণ: ব্যাধি ও প্রতিকার

চিপনির্ভরতা কাটিয়ে চীনের উত্থান

একতার বাতাসে উড়ুক দক্ষিণ এশিয়ার পতাকা

ছবি

স্মরণ: শহীদ ডা. মিলন ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থার সংগ্রাম

মনে পুরানো দিনের কথা আসে, মনে আসে, ফিরে আসে...

রাসায়নিক দূষণ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি

আছদগঞ্জের শুটকি : অতীতের গৌরব, বর্তমানের দুঃসময়

নবান্নের আনন্দ ও আমনের ফলন

‘প্রশ্ন কোরো না, প্রশ্ন সর্বনাশী’

ভূমিকম্প, অর্থনৈতিক চাপ এবং অনিশ্চয়তা: মানসিকতার নতুন অর্থনীতি

নবম পে স্কেল ও এর আর্থসামাজিক প্রভাব

মৃত্যুদণ্ড, তারপর...

জমির ভুয়া দলিল কীভাবে বাতিল করবেন?

জুলাই সনদ আদিবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি

ব্যাংকের দুরবস্থা থামানো যাচ্ছে না কেন

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্টহপারের প্রাদুর্ভাব

বৈষম্য, অপচয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সংকট

“বাঙালি আমরা, নহিতো...”

নারী নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সমাজের দায়

কাঁপছে ডলারের সিংহাসন

ত্রিশতম জলবায়ু সম্মেলন : প্রতীকী প্রদর্শনী, নাকি বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির বাঁক নেওয়ার মুহূর্ত?

অপরিণত নবজাতক : ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও যত্নের জরুরি বাস্তবতা

বাংলাদেশী উত্তরাধিকার: প্রবাস-জীবন ও আমাদের সংস্কৃতি

রাজনীতিতে ভাষার সহনীয় প্রয়োগ

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও বাস্তবতা

মিহির কুমার রায়ম

শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-৩০) ব্রাজিলের বেলেম শহরে গত ২২ নভেম্বর শেষ হলো। সম্মেলনের মূল বিতর্ক ছিল কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাধ্যতামূলকভাবে কমানো (ফেজ আউট) নিয়ে। ১৯৪টি দেশ প্যারিস চুক্তির অধীনে একত্রিত হয়ে বিশ্ব উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে সম্মত হলেও প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কারণে তেল উৎপাদনকারী সৌদি আরব ও রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ এই প্রস্তাবকে বাধ্যতামূলক না রেখে ‘স্বেচ্ছামূলক’ করার পক্ষে অবস্থান নেয়।

লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের সঠিক স্বীকৃতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর ক্ষতিপূরণ কাঠামো তৈরিও কপ-৩০-এর একটি বড় লক্ষ্য। এবারের সম্মেলনেও আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেল না। বিশ্বনেতারা বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে একমত হতে পারেননি। অথচ এটিই ছিল সম্মেলনের মূল ফোকাস।

সম্মেলনে ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অভিযোজন তহবিল তিন গুণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও এই ১২০ বিলিয়ন ডলার বার্ষিক তহবিল ২০৩৫ সালে প্রদান করা হবে এবং কার্যকারিতা শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকে। ফলে এটি বহু দেশকেই তাদের বর্তমান জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথেষ্ট সহায়তা দিতে পারবে না।

এবারের সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো জাস্ট ট্রানজিশন মেকানিজম গ্রহণ, যা সর্বস্তরের মানুষ, শ্রমিক, নারী ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করে সবুজ অর্থনীতিতে রূপান্তর নিশ্চিত করবে। তবে এই ব্যবস্থার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন চূড়ান্ত চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। এবারের চূড়ান্ত চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পর্কিত কোনো বিষয় সরাসরি উল্লেখ নেই। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উত্তরণের রোডম্যাপকে জাতিসংঘের কার্যক্রমের বাইরে রাখা হয়েছে এবং কলম্বিয়া ও অন্যান্য দেশের নেতৃত্বে এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ব্রাজিলও আলাদাভাবে রোডম্যাপ প্রকাশ করতে পারে।

আরও একটি হতাশাজনক বিষয় হলো, মূল চুক্তিতে বনসংরক্ষণের রোডম্যাপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ কপ-৩০ আয়োজিত হয়েছিল আমাজনের কোলঘেঁষে, যেখানে বন সর্বদাই বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে ব্রাজিল নতুন ‘ট্রপিক্যাল ফরেস্ট ফরএভার ফ্যাসিলিটি’ নামে একটি তহবিল চালু করেছে, যা দেশগুলোকে গাছ সংরক্ষণে অর্থ সহায়তা করবে।

যদিও কপ-৩০-এ কিছু ছোট ও সীমিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সীমিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় দৃঢ়, বাধ্যতামূলক ও সমন্বিত পদক্ষেপ এখনও গ্রহণ করা হয়নি।

কপ-৩০ বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ প্রতিবছর বড় ধরনের বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং কৃষি উৎপাদন হ্রাসের মতো সমস্যার মুখোমুখি হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি হলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ স্থায়ীভাবে পানির নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কপ-৩০-এর আলোচ্য পাঠ্য ও অ্যাকশন এজেন্ডা বাংলাদেশের জলবায়ু নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে। তবে এর সঠিক বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় ও স্থানীয় নীতি-সমন্বয় অপরিহার্য। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২০ বছরে বাংলাদেশে নদীভাঙন, চরম বৃষ্টিপাত এবং ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি আরও বাড়বে। কপ-৩০-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অভিযোজন অর্থায়ন বৃদ্ধি, বন ও ভূমি পুনরুদ্ধার এবং পরিচ্ছন্ন শক্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা পাওয়া সম্ভব হবে। এটি বিশেষভাবে কৃষি, মৎস্য, পানি ব্যবস্থাপনা এবং নগর পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলবে।

এ ছাড়া এক ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, কোটি কোটি হেক্টর সংরক্ষিত বন ও ভূমি এবং ৪০ কোটির বেশি মানুষের সহনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন অর্থায়ন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো নিশ্চিত করেছে, তাদের জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করা হবে। তবে এসব পদক্ষেপ কার্যকর হবে ২০২৬ সাল থেকে, আর ১২০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক তহবিলও চালু হবে তখন। ফলে অনেক দেশ তাদের বর্তমান জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় সীমিত সহায়তাই পাবে।

৭০টিরও বেশি দেশ জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) জমা দেয়নি এবং জমা দেওয়া এনডিসিগুলোও পর্যাপ্ত নয়-যা বিশ্বকে ২.৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির দিকে ঠেলে দিতে পারে। এনডিসি অপর্যাপ্ত হওয়ায় একটি ‘অ্যাক্সেলারেটর’ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে, যা আগামী কপ-৩১ সম্মেলনে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।

এবারের কপ-৩০ সম্মেলনকে “আশানুরূপ ছোট পদক্ষেপ” বলা যায়। এই সম্মেলনের একমাত্র প্রাপ্তি হলো জাস্ট ট্রানজিশনের স্বীকৃতি-যা জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প থেকে পরিচ্ছন্ন শক্তিতে স্থানান্তরিত হওয়া শ্রমিকদের সহায়তা করবে।

[লেখক: সাবেক ডিন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ; সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]

back to top