alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

ডায়ানার সাক্ষাৎকার বিতর্ক : ঘটনা ও তদন্ত

জন ওয়্যার

: রোববার, ০৬ জুন ২০২১
image

(শেষাংশ)

বিবিসির তদন্ত

আর কদিন পরই বিবিসি ছাড়েন গারডাম। বশির যেসব মিথ্যে বলেছিলেন তার একটি তালিকা তিনি দিয়ে যান। তাতে টনি হল ও তিনি যে প্রাথমিকভাবে এতটুকু একমত হয়েছেন যে বশির তাদের বিভ্রান্ত করেছিল এবং অনৈতিক কাজ করেছেন এবং বিবিসির নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন সে কথারও উল্লেখ রয়েছে।

তবে বিবিসি যে তদন্ত করেছিল তাতে আসল সত্য আসেনি তা বলাই বাহুল্য। তার ওপর তাদের ওপর থেকে বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর বিবৃতিও দেওয়া হয়েছিল অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে।

এদিকে মেইল অন সানডে এ নিয়ে সংবাদ না করলেও সে বছর এপ্রিলে তারা বশিরের সেই ভূয়া নথিগুলো ছেপে দেয়। তখন হল ও হিউলেটের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি দেওয়া হয় বিবিসির পক্ষ থেকে, যাতে বলা হয় এসবের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই ডায়ানার সাক্ষাৎকারের। কিন্তু যেহেতু বশির স্বীকার করে নিয়েছিলেন ততদিনে যে স্পেন্সারের ঘনিষ্ঠ হতে তিনি সেই নথিগুলো তাকে দেখিয়েছিলেন, তাহলে তো দাঁড়ায় যে এগুলোর সঙ্গে আসলে সেই সাক্ষাৎকারের সম্পর্ক রয়েছে।

লর্ড ডাইসনের অভিমত, এই ব্যাপারগুলো নিয়ে বিবিসি তখন যা করছে সেটা বিবিসির মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

যাই হোক, গারডামের স্থলাভিষিক্ত হলেন অ্যান সেøাম্যান। হলও তার কথিত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করলেন বিবিসির পক্ষ থেকে। তবে সেই তদন্তে ডায়ানার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার কথাটা যে বশির মিথ্যা বলেছে সেটা সেভাবে আসলো না।

ডিসেম্বরে গারডাম যেমন পারেননি, তেমনি হল ও সেøাম্যানও ধরতে পারলেন না ডায়ানার কাছ থেকে বশিরের তথ্য পাওয়ার সুযোগ ছিল না কেননা তাদের দেখা হওয়ার আগেই উইসলারকে দিয়ে গ্রাফিক্সটা করিয়েছিলেন বশির। এই ধরনের কোনো কথাই আসেনি সেই তদন্তে।

তবে লর্ড ডাইসন সেজন্য বিবিসিকে দায়ী করেননি। তার কাছে বরং অবিশ্বাস্য ঠেকেছে বশির যে দাবি করেছে ডায়ানা তাকে তথ্য দিয়েছে সেটা।

হল-স্লোম্যানের যে তদন্ত তাতে একটি জিনিস হয়েছে, এই সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে যেসব ঘটনা ঘটেছিল, সেগুলো লিপিবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেসব ঘটনা এই তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। বরং কারা এই খবর বাইরে নিয়েছে সেটাই হয়ে উঠেছিল তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। কোনো পর্যায়েই বশির যে মিথ্যা কথা বলেছিল তা তাদের তদন্তে আসেনি। স্লোম্যানের চোখে বরং বড় হয়ে গিয়েছিল পেশাগত ঈর্ষা। তিনি তার সহকর্মীদেরও বলেছেন। ২০০২ সালে বিবিসির প্যানারোমার ইতিহাস নিয়ে রিপোর্টার লিন্ডসলে’র যে বই বেরোয় সেখানেও তিনি সমালোচনা করেন, সহকর্মীদের নামে বাজারে কথা পাচারের।

আর্ল স্পেন্সারও সেসময় তার এই অভিযোগগুলো তোলেননি। তিনি জানতেন না বিবিসি যে একটা তদন্ত করছে। এছাড়া তিনি ডায়ানার কাজে বাধা সৃষ্টি করতে চাননি। তাছাড়া তখনও তিনি জানতেন না বশিরের দেখানো আর্থিক লেনদেনের ওই নথি ভুয়া ছিল।

তারপর বিবিসি যখন এটাকে সহকর্মীদের ঈর্ষা হিসেবে বর্ণনা করলো তখন মেইল অন সানডেও একটু দিশাহারা হয়ে গেলো। বশিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ চাপা পড়ে গেলো।

মেইল অন সানডেতে যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল তার পক্ষকাল পরে সে বিষয়ে অ্যান স্লোম্যান বিবিসি কর্তৃপক্ষকে লিখেছিলেন, ডায়ানাকে নিয়ে কথাবার্তা শেষ, যদি না আর্ল স্পেনার এ নিয়ে কথা বলে। মনে হচ্ছে না তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন।

এদিকে বশির আগে তো ডায়ানাকে বলেছিলেন ব্যাংক লেনদেনের বিষয়ে তার তথ্যের উৎস। এবার তিনি আর্ল স্পেন্সারকে নিয়েও একই কথা বললেন। তবে গত বছরের আগে আর্ল বিবিসির ভেতরকার সেই কথা জানতেন না। যখন জানলেন, তিনি তা অস্বীকার করলেন এবং বিবিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি তদন্ত করাতে বললেন। এই তখন লর্ড ডাইসনকে দিয়ে তদন্ত করানো হলো।

ডাইসনের মূল্যায়ন, এই দুজনের মধ্যে নির্ভরযোগ্যতার দিক থেকে আর্ল স্পেন্সার নিশ্চিতভাবেই বিজয়ী।

লিন্ডলের বইয়ে অ্যান স্লোম্যানকে উদ্ধৃত করা হয়েছে এভাবে - হল বিস্তারিতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বশিরকে। অবশ্যই বশির নথিগুলো জালিয়াতি করেছে। এটা খুবই বোকার মতো কাজ হয়েছে। এটি দিয়ে তিনি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিষয়টা তা নয়। তারপরও সে এটা কেন করলো, ঈশ্বর শুধু জানেন।

তবে প্রমাণাদি অনুযায়ী, এগুলো দেখিয়েই স্পেন্সার পরিবারের চৌহদ্দিতে পা রাখতে পেরেছিলেন বশির। তাই লর্ড ডাইসন নিশ্চিত যে এই কাগজগুলো ডায়ানার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই আর্ল স্পেন্সারকে দেখিয়েছেন বশির।

১৯৯৬ সালের ২৫ শে এপ্রিল টনি হল এ বিষয়ে তার রিপোর্ট বিবিসির পরিচালনা পর্ষদের কাছে জমা দেন। তাতে তিনি বশিরের দোষ দেননি। তিনি বলেছেন, এইটুকু ঘাটতি হয়েছে। তা বাদে তিনি একজন সৎ ও মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ। ততদিনে যদিও হল জানতেন শুধু স্পেন্সার বা ডায়ানার সঙ্গে নয়, ইতোমধ্যে বশির বিবিসির সঙ্গেও মিথ্যা কথা বলেছেন। হল তার রিপোর্টে বশিরকে মৃদু ভর্ৎসনা করা হয়েছে অসতর্কতা ও জ্ঞানহীনের মতো কাজের জন্য। তবে দ্ব্যর্থহীনভাবেই তিনি বলেছেন বশির কোনো অনিয়ম করেননি।

লর্ড ডাইসন বলেন, বশিরের কাজকে ভুল বা বোকামো হিসেবে ব্যাখ্যা করে সুবিচার করা হয়নি। বিবিসি কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তিনদিন আগে বশিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা উল্লেখ করে বিবিসির পরিচালনা পর্ষদের কাছে একটি চিঠি দেয়।

হল বলেন, বশিরকে খুব ভর্ৎসনা করা হয়েছিল এবং তাকে খুব কাছ থেকে নজরে রাখা হয়। ১৯৯৬ সালের ৪ এপ্রিল বিবিসি থেকে বশিরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। এতে তাকে জানানো হয়, তিনি ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানানো এবং তা প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করতে ব্যর্থতার মাধ্যমে বিবিসির নীতির লঙ্ঘন করেছেন। আপনি যা ঘটিয়েছেন তা আমরা মারাত্মক হিসেবে বিবেচনা করছি এবং এই চিঠিতে এ বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট অসন্তোষ সম্পর্কে আপনার কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

তবে আসলেই এ চিঠি পাঠানো হয়েছিল বা বশিরকে ভর্ৎসনা করা হয়েছিল এমন কোনো প্রমাণ পাননি লর্ড ডাইসন। এ ধরনের কোনো পদক্ষেপের কথা জানা নেই বিবিসি প্যানারোমার তৎকালীন ডেপুটি এডিটর ক্লাইভ এডওয়ার্ডস। তিনি বলেন, এমন একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বা চিঠি দেওয়া হয়েছে তা আমি জানি না এটা হতে পারে না। কেননা তা হয়ে থাকলে সেটা আমার হাত দিয়ে হওয়ার কথা।

বশির বিবিসিতে ছিলেন ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত, তারপর তিনি আইটিভিতে যোগ দেন।

[লেখক : বিবিসি’র প্রতিবেদক]

(ভাষান্তর: মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক)

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

প্রকৃতার্থে ফকির কারা

এনসিপি চায় অবিনাশী জুলাই সনদ

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

আলুর প্রাচুর্যে কৃষকের সংকট

তাহলে কী ‘কোটা’ই জয়যুক্ত হবে!

ব্যাংকিং খাতে বিষফোঁড়া: বাংলাদেশের অর্থনীতির ধমনী বিষাক্ত হয়ে উঠছে

ছবি

ঢাকার নদী ও খালের দখল-দূষণ: পুনরুদ্ধার কোন পথে

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

সে এক রূপকথারই দেশ

উপকূলের খাদ্যসংকট নিয়ে ভাবছেন কি নীতিনির্ধারকেরা?

মানসিক স্বাস্থ্য: মানবাধিকারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকার যানজট ও বিকেন্দ্রীকরণ

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

বিনা ভোট, নিশি ভোট, ডামি ভোটের পরে এবার নাকি গণভোট!

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

ডায়ানার সাক্ষাৎকার বিতর্ক : ঘটনা ও তদন্ত

জন ওয়্যার

image

রোববার, ০৬ জুন ২০২১

(শেষাংশ)

বিবিসির তদন্ত

আর কদিন পরই বিবিসি ছাড়েন গারডাম। বশির যেসব মিথ্যে বলেছিলেন তার একটি তালিকা তিনি দিয়ে যান। তাতে টনি হল ও তিনি যে প্রাথমিকভাবে এতটুকু একমত হয়েছেন যে বশির তাদের বিভ্রান্ত করেছিল এবং অনৈতিক কাজ করেছেন এবং বিবিসির নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন সে কথারও উল্লেখ রয়েছে।

তবে বিবিসি যে তদন্ত করেছিল তাতে আসল সত্য আসেনি তা বলাই বাহুল্য। তার ওপর তাদের ওপর থেকে বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর বিবৃতিও দেওয়া হয়েছিল অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে।

এদিকে মেইল অন সানডে এ নিয়ে সংবাদ না করলেও সে বছর এপ্রিলে তারা বশিরের সেই ভূয়া নথিগুলো ছেপে দেয়। তখন হল ও হিউলেটের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি দেওয়া হয় বিবিসির পক্ষ থেকে, যাতে বলা হয় এসবের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই ডায়ানার সাক্ষাৎকারের। কিন্তু যেহেতু বশির স্বীকার করে নিয়েছিলেন ততদিনে যে স্পেন্সারের ঘনিষ্ঠ হতে তিনি সেই নথিগুলো তাকে দেখিয়েছিলেন, তাহলে তো দাঁড়ায় যে এগুলোর সঙ্গে আসলে সেই সাক্ষাৎকারের সম্পর্ক রয়েছে।

লর্ড ডাইসনের অভিমত, এই ব্যাপারগুলো নিয়ে বিবিসি তখন যা করছে সেটা বিবিসির মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

যাই হোক, গারডামের স্থলাভিষিক্ত হলেন অ্যান সেøাম্যান। হলও তার কথিত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করলেন বিবিসির পক্ষ থেকে। তবে সেই তদন্তে ডায়ানার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার কথাটা যে বশির মিথ্যা বলেছে সেটা সেভাবে আসলো না।

ডিসেম্বরে গারডাম যেমন পারেননি, তেমনি হল ও সেøাম্যানও ধরতে পারলেন না ডায়ানার কাছ থেকে বশিরের তথ্য পাওয়ার সুযোগ ছিল না কেননা তাদের দেখা হওয়ার আগেই উইসলারকে দিয়ে গ্রাফিক্সটা করিয়েছিলেন বশির। এই ধরনের কোনো কথাই আসেনি সেই তদন্তে।

তবে লর্ড ডাইসন সেজন্য বিবিসিকে দায়ী করেননি। তার কাছে বরং অবিশ্বাস্য ঠেকেছে বশির যে দাবি করেছে ডায়ানা তাকে তথ্য দিয়েছে সেটা।

হল-স্লোম্যানের যে তদন্ত তাতে একটি জিনিস হয়েছে, এই সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে যেসব ঘটনা ঘটেছিল, সেগুলো লিপিবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেসব ঘটনা এই তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। বরং কারা এই খবর বাইরে নিয়েছে সেটাই হয়ে উঠেছিল তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। কোনো পর্যায়েই বশির যে মিথ্যা কথা বলেছিল তা তাদের তদন্তে আসেনি। স্লোম্যানের চোখে বরং বড় হয়ে গিয়েছিল পেশাগত ঈর্ষা। তিনি তার সহকর্মীদেরও বলেছেন। ২০০২ সালে বিবিসির প্যানারোমার ইতিহাস নিয়ে রিপোর্টার লিন্ডসলে’র যে বই বেরোয় সেখানেও তিনি সমালোচনা করেন, সহকর্মীদের নামে বাজারে কথা পাচারের।

আর্ল স্পেন্সারও সেসময় তার এই অভিযোগগুলো তোলেননি। তিনি জানতেন না বিবিসি যে একটা তদন্ত করছে। এছাড়া তিনি ডায়ানার কাজে বাধা সৃষ্টি করতে চাননি। তাছাড়া তখনও তিনি জানতেন না বশিরের দেখানো আর্থিক লেনদেনের ওই নথি ভুয়া ছিল।

তারপর বিবিসি যখন এটাকে সহকর্মীদের ঈর্ষা হিসেবে বর্ণনা করলো তখন মেইল অন সানডেও একটু দিশাহারা হয়ে গেলো। বশিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ চাপা পড়ে গেলো।

মেইল অন সানডেতে যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল তার পক্ষকাল পরে সে বিষয়ে অ্যান স্লোম্যান বিবিসি কর্তৃপক্ষকে লিখেছিলেন, ডায়ানাকে নিয়ে কথাবার্তা শেষ, যদি না আর্ল স্পেনার এ নিয়ে কথা বলে। মনে হচ্ছে না তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন।

এদিকে বশির আগে তো ডায়ানাকে বলেছিলেন ব্যাংক লেনদেনের বিষয়ে তার তথ্যের উৎস। এবার তিনি আর্ল স্পেন্সারকে নিয়েও একই কথা বললেন। তবে গত বছরের আগে আর্ল বিবিসির ভেতরকার সেই কথা জানতেন না। যখন জানলেন, তিনি তা অস্বীকার করলেন এবং বিবিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি তদন্ত করাতে বললেন। এই তখন লর্ড ডাইসনকে দিয়ে তদন্ত করানো হলো।

ডাইসনের মূল্যায়ন, এই দুজনের মধ্যে নির্ভরযোগ্যতার দিক থেকে আর্ল স্পেন্সার নিশ্চিতভাবেই বিজয়ী।

লিন্ডলের বইয়ে অ্যান স্লোম্যানকে উদ্ধৃত করা হয়েছে এভাবে - হল বিস্তারিতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বশিরকে। অবশ্যই বশির নথিগুলো জালিয়াতি করেছে। এটা খুবই বোকার মতো কাজ হয়েছে। এটি দিয়ে তিনি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিষয়টা তা নয়। তারপরও সে এটা কেন করলো, ঈশ্বর শুধু জানেন।

তবে প্রমাণাদি অনুযায়ী, এগুলো দেখিয়েই স্পেন্সার পরিবারের চৌহদ্দিতে পা রাখতে পেরেছিলেন বশির। তাই লর্ড ডাইসন নিশ্চিত যে এই কাগজগুলো ডায়ানার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই আর্ল স্পেন্সারকে দেখিয়েছেন বশির।

১৯৯৬ সালের ২৫ শে এপ্রিল টনি হল এ বিষয়ে তার রিপোর্ট বিবিসির পরিচালনা পর্ষদের কাছে জমা দেন। তাতে তিনি বশিরের দোষ দেননি। তিনি বলেছেন, এইটুকু ঘাটতি হয়েছে। তা বাদে তিনি একজন সৎ ও মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ। ততদিনে যদিও হল জানতেন শুধু স্পেন্সার বা ডায়ানার সঙ্গে নয়, ইতোমধ্যে বশির বিবিসির সঙ্গেও মিথ্যা কথা বলেছেন। হল তার রিপোর্টে বশিরকে মৃদু ভর্ৎসনা করা হয়েছে অসতর্কতা ও জ্ঞানহীনের মতো কাজের জন্য। তবে দ্ব্যর্থহীনভাবেই তিনি বলেছেন বশির কোনো অনিয়ম করেননি।

লর্ড ডাইসন বলেন, বশিরের কাজকে ভুল বা বোকামো হিসেবে ব্যাখ্যা করে সুবিচার করা হয়নি। বিবিসি কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তিনদিন আগে বশিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা উল্লেখ করে বিবিসির পরিচালনা পর্ষদের কাছে একটি চিঠি দেয়।

হল বলেন, বশিরকে খুব ভর্ৎসনা করা হয়েছিল এবং তাকে খুব কাছ থেকে নজরে রাখা হয়। ১৯৯৬ সালের ৪ এপ্রিল বিবিসি থেকে বশিরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। এতে তাকে জানানো হয়, তিনি ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানানো এবং তা প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করতে ব্যর্থতার মাধ্যমে বিবিসির নীতির লঙ্ঘন করেছেন। আপনি যা ঘটিয়েছেন তা আমরা মারাত্মক হিসেবে বিবেচনা করছি এবং এই চিঠিতে এ বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট অসন্তোষ সম্পর্কে আপনার কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

তবে আসলেই এ চিঠি পাঠানো হয়েছিল বা বশিরকে ভর্ৎসনা করা হয়েছিল এমন কোনো প্রমাণ পাননি লর্ড ডাইসন। এ ধরনের কোনো পদক্ষেপের কথা জানা নেই বিবিসি প্যানারোমার তৎকালীন ডেপুটি এডিটর ক্লাইভ এডওয়ার্ডস। তিনি বলেন, এমন একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বা চিঠি দেওয়া হয়েছে তা আমি জানি না এটা হতে পারে না। কেননা তা হয়ে থাকলে সেটা আমার হাত দিয়ে হওয়ার কথা।

বশির বিবিসিতে ছিলেন ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত, তারপর তিনি আইটিভিতে যোগ দেন।

[লেখক : বিবিসি’র প্রতিবেদক]

(ভাষান্তর: মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক)

back to top