alt

উপ-সম্পাদকীয়

জাদুকাটা নদীতে পণতীর্থ গঙ্গাস্নান

এস ডি সুব্রত

: সোমবার, ২৮ মার্চ ২০২২
image

লোকসংস্কৃতি ও লোক ঐতিহ্যের অন্যতম আধার সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার অন্তর্গত জাদুকাটা নদী যার উৎপত্তি ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে। সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে তীর্থস্থান হিসেবে বিশেষ মাহাত্ম্য বহন করে এই জাদুকাটা নদী। স্থানটি পুণ্যতীর্থ ধাম হিসেবে সর্বজন পরিচিত। শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদ মহাবিষ্ণুর অবতার শ্রীল অদ্বৈত আচার্য ঠাকুরের আবির্ভাব স্থল বা লীলাভূমি এ পণতীর্থ ধাম। এ বছর ২০২২ সালে ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে এই পণতীর্থ গঙ্গা স্নান।

অদ্বৈত আচর্য ঠাকুরের মূল আবির্ভাব ভূমি তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের নবগ্রামে। নবগ্রাম ছিল লাউড় রাজ্যের লাউড়ের গড় এলাকা। কিন্তু নবগ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বহু আগে। বর্তমানে অদ্বৈত আচার্য ঠাকুরের যে মন্দিরটি রয়েছে, তা জাদুকাটা নদীর তীরবর্তী লাউড়ের গড়ের পাশের রাজারগাঁও গ্রামে। অদ্বৈত আচার্যের স্মৃতিচিহ্ন বিজড়িত স্থানটি সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে মহা তীর্থস্থান। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, প্রাচীন শ্রীহট্ট এক সময় জৈন্তা রাজ্যের অংশ ছিল। পরবর্তী সময়ে তিনটি অংশে বিভক্ত হয়। রাজ্য তিনটির নাম ছিল জৈন্তা, গৌড় ও লাউড়। জৈন্তাপুরের দশম রাজা গোবিন্দরাজ কেশব দেব একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রাজত্ব করেন। এরপর হাথকের পুত্র গুহক জৈন্তার রাজা নিযুক্ত হন। গুহক তার তিন পুত্রকে সমানভাবে রাজত্ব ভাগ করে দিলে লুব্দুকের নামানুসারে তার অংশের নাম হয় লাউড়। লাউড় রাজ্য বর্তমান লাউড়ের পাহাড় এবং সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। পরবর্তী সময়ে লাউড়ের রাজত্ব করেন আচার্য্য পরিবারের অরুণাচার্য্য বিজয় মানিক্য। সর্বশেষ দিব্যসিংহ।

পঞ্চদশ শতাব্দীতে বৈষ্ণব সাধক অদ্বৈতাচার্য্যর পিতা কুবেরাচার্য্য বা কুবের মিশ্র তর্ক পঞ্চানন রাজা দিব্য সিংহের মন্ত্রী ছিলেন। কুবেরাচার্য্য ছিলেন প-িত শাস্ত্রবিদ ও সভাপ-িত। কিন্তু মন্ত্রী কুবেরাচার্য্যরে পর পর ছয়টি সন্তান মারা যাওয়ায় তার মনে ছিল প্রচ- কষ্ট। তাই তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ভারতে চলে যান। পরবর্তী সময়ে রাজা দিব্য সিংহের আহ্বানে তিনি পুনরায় লাউড়ে ফিরে আসেন। কিছুকাল পর ১৪৩৫ খ্রিস্টাব্দে তার স্ত্রী নাভা দেবীর গর্ভে এক সন্তান লাভ করেন। কমলের মতো সুন্দর বলে তার নাম রাখেন কমলাক্ষ। কমলাক্ষের মাতা নাভাদেবী স্বপ্নে দেখতে পান তার ক্রোড়স্থ শিশু শঙ্খচক্র গদাপদ্বধারী মহাবিষ্ণু। এ পবিত্র স্থানটি সম্পর্কে অদ্বৈত প্রকাশ, অদ্বৈত মঙ্গলসহ বহু বৈষ্ণবীয় গ্রন্থে বিস্তর বর্ণনা রয়েছে।

চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিকে বলা হয় মহা বারণী। “বারুণী যোগেতে স্নান বহু ফলপ্রদ।” তাই প্রতি বছর বারুণী যোগে জাদুকাটা নদীর তীরে সনাতন ধর্মাবলম্বী বহু লোকের সমাগম হয় স্নানযাত্রা মহোৎসবে। সব তীর্থ বারবার স্নানে যে পুণ্য লাভ হয় পণতীর্থ একবার স্নানে সেই পূণ্য লাভ হয়ে থাকে। কারণ সেখানে সপ্ত গঙ্গা একসঙ্গে প্রবাহিত হয় উক্ত তিথিতে। তাই সব তীর্থ স্নান করলেও পণতীর্থে স্নান আবশ্যক। তাই বলা হয় সব তীর্থ বারবার পণতীর্থ একবার। তীর্থগণও পণ করে গিয়েছিলেন পৃথিবী যতদিন বর্তমান থাকবে ততদিন প্রতি বছর মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে তীর্থগণের আগমন ঘটবে এ স্থানে। সেই থেকে আজ অবধি উক্ত তিথিতে সপ্ত গঙ্গা প্রবাহিত হন।

প্রতি বছর মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে পুণ্যস্নানের জন্য এ স্থানে কয়েক লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে এখানে ভক্তরা স্নান ও তর্পণ করেন, সারা রাত ধরে মন্দিরগুলোতে চলে কীর্তন। এই পুণ্যতীর্থ প্রতি বছর গঙ্গাস্নান একবারই হয়ে থাকে। এই দিন ও ক্ষণের জন্য ভক্তরা অধীর আগ্রহে থাকেন পুরো বছর।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

একটি সফর, একাধিক সংকেত : কে পেল কোন বার্তা?

দেশের কারা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণ : আস্থা ফেরাতে সংস্কার, না দায়মুক্তির প্রহসন?

রম্যগদ্য : চাঁদাবাজি চলছে, চলবে

বায়ুদূষণ : নীরব ঘাতক

ইসরায়েলের কৌশলগত ঔদ্ধত্য

পরিবার : সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

ব্যাকবেঞ্চারদের পৃথিবী : ব্যর্থতার গায়ে সাফল্যের ছাপ

আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পঁচা রোগ

শিশুদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : স্কুল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা ও সংকট

প্রশিক্ষণ থেকে কেন বাদ নারী কৃষকরা?

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

লই গো বুক পেতে অনল-বাণ!

সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ

আমেরিকার অলিগার্কি পতনের আখ্যান

রম্যগদ্য : ‘উহু উহু, তোরে মাফ করা যায় না...’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট : সংকোচন, সংকট ও সম্ভাবনার প্রতিফলন

আম রপ্তানি : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

সামাজিকমাধ্যম গুরুত্বহীন নয়

জমির শ্রেণী চেনার উপায় ও পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন

বাংলাদেশ : “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”

নতুন নোট, নতুন বিতর্ক

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হতাশা ও উপজেলা পর্যায়ের অদক্ষতা : কে নেবে দায়িত্ব?

তরল সম্পর্কের গোলকধাঁধা

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

বাজেটে বৈষম্য কমানোর কোনো স্পষ্ট প্রতিফলন আছে কি

চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কী হবে

রম্যগদ্য : ‘নির্বাচন, না নীর-বচন...’

প্লাস্টিক দূষণ নয়, প্রকৃতির পাশে দাঁড়ান

কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা

নাম ও মর্যাদা : অর্থবহ নামকরণে বৈষম্য রোধের আহ্বান

ডিজিটাল পুঁজিবাদের যুগে নগর বাংলাদেশের শ্রেণী কাঠামো

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জাদুকাটা নদীতে পণতীর্থ গঙ্গাস্নান

এস ডি সুব্রত

image

সোমবার, ২৮ মার্চ ২০২২

লোকসংস্কৃতি ও লোক ঐতিহ্যের অন্যতম আধার সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার অন্তর্গত জাদুকাটা নদী যার উৎপত্তি ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে। সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে তীর্থস্থান হিসেবে বিশেষ মাহাত্ম্য বহন করে এই জাদুকাটা নদী। স্থানটি পুণ্যতীর্থ ধাম হিসেবে সর্বজন পরিচিত। শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদ মহাবিষ্ণুর অবতার শ্রীল অদ্বৈত আচার্য ঠাকুরের আবির্ভাব স্থল বা লীলাভূমি এ পণতীর্থ ধাম। এ বছর ২০২২ সালে ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে এই পণতীর্থ গঙ্গা স্নান।

অদ্বৈত আচর্য ঠাকুরের মূল আবির্ভাব ভূমি তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের নবগ্রামে। নবগ্রাম ছিল লাউড় রাজ্যের লাউড়ের গড় এলাকা। কিন্তু নবগ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বহু আগে। বর্তমানে অদ্বৈত আচার্য ঠাকুরের যে মন্দিরটি রয়েছে, তা জাদুকাটা নদীর তীরবর্তী লাউড়ের গড়ের পাশের রাজারগাঁও গ্রামে। অদ্বৈত আচার্যের স্মৃতিচিহ্ন বিজড়িত স্থানটি সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে মহা তীর্থস্থান। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, প্রাচীন শ্রীহট্ট এক সময় জৈন্তা রাজ্যের অংশ ছিল। পরবর্তী সময়ে তিনটি অংশে বিভক্ত হয়। রাজ্য তিনটির নাম ছিল জৈন্তা, গৌড় ও লাউড়। জৈন্তাপুরের দশম রাজা গোবিন্দরাজ কেশব দেব একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রাজত্ব করেন। এরপর হাথকের পুত্র গুহক জৈন্তার রাজা নিযুক্ত হন। গুহক তার তিন পুত্রকে সমানভাবে রাজত্ব ভাগ করে দিলে লুব্দুকের নামানুসারে তার অংশের নাম হয় লাউড়। লাউড় রাজ্য বর্তমান লাউড়ের পাহাড় এবং সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। পরবর্তী সময়ে লাউড়ের রাজত্ব করেন আচার্য্য পরিবারের অরুণাচার্য্য বিজয় মানিক্য। সর্বশেষ দিব্যসিংহ।

পঞ্চদশ শতাব্দীতে বৈষ্ণব সাধক অদ্বৈতাচার্য্যর পিতা কুবেরাচার্য্য বা কুবের মিশ্র তর্ক পঞ্চানন রাজা দিব্য সিংহের মন্ত্রী ছিলেন। কুবেরাচার্য্য ছিলেন প-িত শাস্ত্রবিদ ও সভাপ-িত। কিন্তু মন্ত্রী কুবেরাচার্য্যরে পর পর ছয়টি সন্তান মারা যাওয়ায় তার মনে ছিল প্রচ- কষ্ট। তাই তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ভারতে চলে যান। পরবর্তী সময়ে রাজা দিব্য সিংহের আহ্বানে তিনি পুনরায় লাউড়ে ফিরে আসেন। কিছুকাল পর ১৪৩৫ খ্রিস্টাব্দে তার স্ত্রী নাভা দেবীর গর্ভে এক সন্তান লাভ করেন। কমলের মতো সুন্দর বলে তার নাম রাখেন কমলাক্ষ। কমলাক্ষের মাতা নাভাদেবী স্বপ্নে দেখতে পান তার ক্রোড়স্থ শিশু শঙ্খচক্র গদাপদ্বধারী মহাবিষ্ণু। এ পবিত্র স্থানটি সম্পর্কে অদ্বৈত প্রকাশ, অদ্বৈত মঙ্গলসহ বহু বৈষ্ণবীয় গ্রন্থে বিস্তর বর্ণনা রয়েছে।

চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিকে বলা হয় মহা বারণী। “বারুণী যোগেতে স্নান বহু ফলপ্রদ।” তাই প্রতি বছর বারুণী যোগে জাদুকাটা নদীর তীরে সনাতন ধর্মাবলম্বী বহু লোকের সমাগম হয় স্নানযাত্রা মহোৎসবে। সব তীর্থ বারবার স্নানে যে পুণ্য লাভ হয় পণতীর্থ একবার স্নানে সেই পূণ্য লাভ হয়ে থাকে। কারণ সেখানে সপ্ত গঙ্গা একসঙ্গে প্রবাহিত হয় উক্ত তিথিতে। তাই সব তীর্থ স্নান করলেও পণতীর্থে স্নান আবশ্যক। তাই বলা হয় সব তীর্থ বারবার পণতীর্থ একবার। তীর্থগণও পণ করে গিয়েছিলেন পৃথিবী যতদিন বর্তমান থাকবে ততদিন প্রতি বছর মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে তীর্থগণের আগমন ঘটবে এ স্থানে। সেই থেকে আজ অবধি উক্ত তিথিতে সপ্ত গঙ্গা প্রবাহিত হন।

প্রতি বছর মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে পুণ্যস্নানের জন্য এ স্থানে কয়েক লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে এখানে ভক্তরা স্নান ও তর্পণ করেন, সারা রাত ধরে মন্দিরগুলোতে চলে কীর্তন। এই পুণ্যতীর্থ প্রতি বছর গঙ্গাস্নান একবারই হয়ে থাকে। এই দিন ও ক্ষণের জন্য ভক্তরা অধীর আগ্রহে থাকেন পুরো বছর।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top