alt

উপ-সম্পাদকীয়

নিশ্চিত হোক কৃষকের অধিকার

বশিরুল ইসলাম

: মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২

এটা দিবালোকের মতো আজ সত্য, আমাদের দেশের কৃষক উৎপাদিত পণ্যে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। অন্যদিকে বেশি দাম দিয়ে খুচরা বাজার থেকে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে ভোক্তারা। অর্থাৎ ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থার কারণে মাঠে কৃষক ও বাজারে ভোক্তাদের ঠকতে হচ্ছে। আসলে, কৃষকের এ দুর্দশা স্থায়ী রূপ পেয়েছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভুদের হাতে চালু হওয়া চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে। এর ফলে ব্রিটিশ শাসক ও বাংলার কৃষকদের মধ্যে কয়েক স্তরের মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রভু, জমিদার, জোতদার, নায়েব, বরকন্দাজ সবার ‘খাই’ মেটাতে উৎপাদক শ্রেণী কৃষক হয়ে পড়েছিল নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর।

এটা ঠিক, দেশ আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলছে। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কিন্তু আমাদের কৃষকেরা মধ্যস্বত্বভোগীদের সেই ‘চিরস্থায়ী দৌরাত্ম্য’ থেকে কতটা মুক্তি পেয়েছে? কেননা কৃষক চায় ন্যায্য মূল্য, ভোক্তা চায় কম মূল্য আর ব্যবসায়ী চায় বেশি মূল্য। এ তিন মূল্য সমন্বয় করে সবাইকে সন্তুষ্ট করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সাম্প্রতিক সময়ে তরমুজ এর দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা তাই প্রমাণ করে। কৃষক থেকে তরমুজ পিস হিসাবে কিনে কেজি দরে বেশি দামে বিক্রি করায় তার মূল কারণ। এ অসন্তোষ্টি দূরীকরণের জন্য মোবাইল কোর্ট পর্যন্ত বসাতে হয়েছে। তারপরও পুরোপুরি সুরাহা মিলছে না। প্রশ্ন আসতে পারে কেন এমনটি হচ্ছে? সহজ উত্তর ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য এমনটি করছে।

এ ব্যবস্থার সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে আমাদের এখানকার মতো মুক্তবাজারি ব্যবস্থা। ফলে রংপুরের আলুচাষি উৎপাদিত ফসল উৎপাদিত খরচের চেয়েও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

অনেক সময়ে দাম নির্ধারণ থেকে শুরু করে নানা বিষয়েই এমন বাস্তবতা তৈরি হয়, যার ফলে কৃষকের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, যা বিভিন্ন সময়ের পত্রপত্রিকাতেও এসেছে। এমনকি বাম্পার ফলনের পরেও কৃষকের লাভ করা তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠে আসে না। অথচ কৃষকেরা ঋণ গ্রহণসহ নানা বিপর্যস্ত মোকাবিলা করে উৎপাদন করে, তার পরেও যদি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

যদি কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি পাইকারি ও খুচরা বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করার উপায় থাকত, তবে মধ্যস্বত্বভোগীরা অতি মুনাফা করতে পারত না। তাই দেশের বাজার তদারকি সংস্থাগুলোকে কৃষক পর্যায় থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে জোরদার মনিটরিং করতে হবে। এতে কৃষকও লাভবান হবে। সঙ্গে লাভবান হবে ভোক্তারাও।

এ ছাড়া, কৃষককদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হলে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের সরাসরি বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক কৃষক সংগঠন তৈরি করে গ্রুপ মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে করা যেতে পারে। তবে এ কাজটি করা কঠিন। কারণ কৃষক সংঘবদ্ধ থাকতে চায় না। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বেশ সংঘবদ্ধ। মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মীরা উৎপাদনের পেছনে যে পরিমাণ শ্রম ও সময় ব্যয় করে তার কিছুটা সময় যদি ফসল বিক্রয়ে সহায়তা করতে পারত তবে কৃষক কিছুটা লাভবান হতো। যদিও বিপণন কাজটি করার দায়িত্ব বর্তায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওপর। কিন্তু কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সেট-আপ ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ে নাই। আছে শুধু জেলা পর্যায়ে সীমিত জনবল নিয়ে। জেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং করতেই তাদের হিমশিম খেতে হয়। ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ে দেখবে কে? তাই উপজেলা পর্যায়ে কৃষি বিপণন কর্মকর্তার জনবলসহ একটা পূর্ণাঙ্গ সেট-আপ দরকার। সে পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।

শুধু কৃষিতে ভর্তুকি, সার, বীজ সরবরাহ করলেই হবে না। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য যেন কৃষক পায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রকে নানামুখী অর্থনৈতিক ভর্তুকি এবং প্রণোদনা দিয়ে বাঁচাতে হবে আমাদের দেশের কৃষি শিল্পকে, আর বাঁচিয়ে রাখতে হবে এ দেশের উজ্জ্বল সন্তান কৃষকদের। নয়তো খাদ্যের তীব্র সংকটে নাজেহাল হবে দেশ। নয়তো শ্রীলঙ্কা মতো একসময় হাহাকারে কাঁদবে দেশ।

[লেখক : উপপরিচালক

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়]

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নিশ্চিত হোক কৃষকের অধিকার

বশিরুল ইসলাম

মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২

এটা দিবালোকের মতো আজ সত্য, আমাদের দেশের কৃষক উৎপাদিত পণ্যে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। অন্যদিকে বেশি দাম দিয়ে খুচরা বাজার থেকে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে ভোক্তারা। অর্থাৎ ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থার কারণে মাঠে কৃষক ও বাজারে ভোক্তাদের ঠকতে হচ্ছে। আসলে, কৃষকের এ দুর্দশা স্থায়ী রূপ পেয়েছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভুদের হাতে চালু হওয়া চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে। এর ফলে ব্রিটিশ শাসক ও বাংলার কৃষকদের মধ্যে কয়েক স্তরের মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রভু, জমিদার, জোতদার, নায়েব, বরকন্দাজ সবার ‘খাই’ মেটাতে উৎপাদক শ্রেণী কৃষক হয়ে পড়েছিল নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর।

এটা ঠিক, দেশ আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলছে। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কিন্তু আমাদের কৃষকেরা মধ্যস্বত্বভোগীদের সেই ‘চিরস্থায়ী দৌরাত্ম্য’ থেকে কতটা মুক্তি পেয়েছে? কেননা কৃষক চায় ন্যায্য মূল্য, ভোক্তা চায় কম মূল্য আর ব্যবসায়ী চায় বেশি মূল্য। এ তিন মূল্য সমন্বয় করে সবাইকে সন্তুষ্ট করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সাম্প্রতিক সময়ে তরমুজ এর দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা তাই প্রমাণ করে। কৃষক থেকে তরমুজ পিস হিসাবে কিনে কেজি দরে বেশি দামে বিক্রি করায় তার মূল কারণ। এ অসন্তোষ্টি দূরীকরণের জন্য মোবাইল কোর্ট পর্যন্ত বসাতে হয়েছে। তারপরও পুরোপুরি সুরাহা মিলছে না। প্রশ্ন আসতে পারে কেন এমনটি হচ্ছে? সহজ উত্তর ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য এমনটি করছে।

এ ব্যবস্থার সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে আমাদের এখানকার মতো মুক্তবাজারি ব্যবস্থা। ফলে রংপুরের আলুচাষি উৎপাদিত ফসল উৎপাদিত খরচের চেয়েও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

অনেক সময়ে দাম নির্ধারণ থেকে শুরু করে নানা বিষয়েই এমন বাস্তবতা তৈরি হয়, যার ফলে কৃষকের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, যা বিভিন্ন সময়ের পত্রপত্রিকাতেও এসেছে। এমনকি বাম্পার ফলনের পরেও কৃষকের লাভ করা তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠে আসে না। অথচ কৃষকেরা ঋণ গ্রহণসহ নানা বিপর্যস্ত মোকাবিলা করে উৎপাদন করে, তার পরেও যদি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

যদি কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি পাইকারি ও খুচরা বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করার উপায় থাকত, তবে মধ্যস্বত্বভোগীরা অতি মুনাফা করতে পারত না। তাই দেশের বাজার তদারকি সংস্থাগুলোকে কৃষক পর্যায় থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে জোরদার মনিটরিং করতে হবে। এতে কৃষকও লাভবান হবে। সঙ্গে লাভবান হবে ভোক্তারাও।

এ ছাড়া, কৃষককদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হলে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের সরাসরি বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক কৃষক সংগঠন তৈরি করে গ্রুপ মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে করা যেতে পারে। তবে এ কাজটি করা কঠিন। কারণ কৃষক সংঘবদ্ধ থাকতে চায় না। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বেশ সংঘবদ্ধ। মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মীরা উৎপাদনের পেছনে যে পরিমাণ শ্রম ও সময় ব্যয় করে তার কিছুটা সময় যদি ফসল বিক্রয়ে সহায়তা করতে পারত তবে কৃষক কিছুটা লাভবান হতো। যদিও বিপণন কাজটি করার দায়িত্ব বর্তায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওপর। কিন্তু কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সেট-আপ ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ে নাই। আছে শুধু জেলা পর্যায়ে সীমিত জনবল নিয়ে। জেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং করতেই তাদের হিমশিম খেতে হয়। ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ে দেখবে কে? তাই উপজেলা পর্যায়ে কৃষি বিপণন কর্মকর্তার জনবলসহ একটা পূর্ণাঙ্গ সেট-আপ দরকার। সে পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।

শুধু কৃষিতে ভর্তুকি, সার, বীজ সরবরাহ করলেই হবে না। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য যেন কৃষক পায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রকে নানামুখী অর্থনৈতিক ভর্তুকি এবং প্রণোদনা দিয়ে বাঁচাতে হবে আমাদের দেশের কৃষি শিল্পকে, আর বাঁচিয়ে রাখতে হবে এ দেশের উজ্জ্বল সন্তান কৃষকদের। নয়তো খাদ্যের তীব্র সংকটে নাজেহাল হবে দেশ। নয়তো শ্রীলঙ্কা মতো একসময় হাহাকারে কাঁদবে দেশ।

[লেখক : উপপরিচালক

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top