শাহ মো. জিয়াউদ্দিন
ধর্মসংক্রান্ত বিষয়ে লেখার ক্ষেত্রে দেশের লেখকদের সতর্ক থাকতে হয়। ধর্মসংক্রান্ত বিষয়ে লিখতে বা বলতে গিয়ে অনেকেই আইনি জটিলতা পড়েছেন। তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা ধর্মকে কটাক্ষ করার দায়ে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সৃষ্টি করছে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। ধর্মকে (যে কোন ধর্ম) অবজ্ঞা বা অবমূল্যায়নের দায়ে সামাজিক অস্থিরতা, সহিংসতাসহ নানা ঘটনাই ঘটতে দেখা যায়।
আগের যে কোন সময়ের চাইতে ধর্ম বিষয়টি এখন অনেক সংবেদনশীল। আর এই সংবেদশীল হওয়ার পেছনে যে কৌশলটি কাজ করেছে তা হলো, বাণিজ্যিক কাজে ধর্মের ব্যবহার করা হয়। তাই ধর্ম নিয়ে একটু সমালোচনা করলেই তাকে ধর্মহীন বা নাস্তিক আখ্যায় আখ্যায়িত করা হয়। ধর্মসংক্রান্ত ব্যবহারের নিয়ে কিছু বলার দায়ে অনেকেই ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী হয়েছেন। অনেককেই খাটতে হয়েছে বা হচ্ছে জেলহাজত।
অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধর্মহীন বলে আখ্যা দিচ্ছে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী। অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে খুনও করাটাকে অন্যায় মনে করেন না মৌলবাদীরা। তাই সরকারের উচিত ধর্মকে অবজ্ঞা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ধর্মের অপব্যবহার হয় কি কি করলে তার একটি সুনির্দিষ্ট সঙ্গা বা ব্যাখ্যা নির্ধারণ করা। কারণ ধর্মকে ব্যবহার করে রমরমা ব্যবসা করা হচ্ছে। শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে চলছে সুদের রমরমা ব্যবসা। শ্বেতচন্দন ললাটে মেখে আর তুলসির মালা গলায় পরিধান করার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ হয়ে যান দৈ মিষ্টি বিক্রেতা। ধর্মীয় নামানুসারে গড়ে উঠছে দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ধর্মীয় নাম দেয়ার পেছনে মূল কারণ হলো অধিক মুনাফা আহরণ করার একটি কৌশল। এ ধরনের কর্মকান্ডকে কি ধর্মের অপব্যবহার বলা যায় না? ধর্মের অপব্যবহার ধর্ম অবমাননার সমতুল্য বিষয়।
একটি ছোট ঘটনা এখানে বর্ণনা করছি তা হলো, কয়েক দিন আগে বাজারে আমলকি কিনছি। দোকানিকে বললাম, ২০০ গ্রাম আমলকি দিতে। দোকানি ২০০ গ্রাম আমলকি মেপে দিল। আমি বললাম, ওজন ঠিক আছে। দোকানি বলল, কম থাকলে আপনার লাভ। আমি বললাম, কি করে আমার লাভ? দোকানি প্রতি উত্তরে বলল, কম দিলে আখিরাতে তার মাসুল আমাকেই দিতে হবে। আমি বললাম, ভাই আপনার আমলকি রেখে দিন। পাশে এক ভদ্র লোকও আমলকি কিনছিলেন, তিনি বললেন দোকানি তো ঠিক কথাই বলেছে।
আমি ভদ্রলোককে বললাম, “দোকানি ঠিক বলেনি কারণ সামান্য কটা আমলকি বিক্রির জন্য ধর্মকে ব্যবহার করাটা অযৌক্তিক। এই দোকানি সামান্য মুনাফার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করছে। ধর্ম হলো পবিত্র বিষয় তাই ধর্মকে যত্রতত্র ব্যবহার করাটা ঠিক না।”
অনেক কথা কাটাকাটির পর আমলকি কিনলাম। কিছু দূরে গিয়ে অন্য দোকানে মেপে দেখলাম ২০ গ্রাম কম। বিষয়টি কি দাঁড়াল? দোকানি কি তার ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে এই কাজটি করেছে না ধর্মকে ব্যবহার করে লোক ঠকাচ্ছে? কারণ এই দোকানির ধর্মের প্রতি কোন আস্থা নেই তাই লাভের আশায় সে ধর্মকে ব্যবহার করছে।
সামাজিক জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক ধর্ম অনুশীলনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখনে ধর্মসংক্রান্ত অনেক পোস্ট দেখা যায়। এই পোস্টগুলোর মধ্যে কোনটা অবমাননাকর আর কোনটা ধর্ম অনুশীলনের তা বুঝাতে সমস্যায় পড়তে হয় অনেক সময়। জনপ্রিয় বাংলা সংগীত, “বকুল ফুল, বকুল ফুল সোনা দিয়ে হাত কেন বান্ধাইলি, শালুক ফুলের লাজ নাই রাইতে শালুক ফোটে, যার সঙ্গে যার ভালোবাসা সেই তো মজা লুটে রে”
গানটি প্যারোডি বানানো হয়েছে, এ রকম করে “যুবক কুল যুবক কুল মোবাইল দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি, আরে রে রেরে, যুবক কুলের লাজ নাই মসজিদে না ছুটে গো (২), আল্লাহর সঙ্গে যার ভালোবাসা সেই তো সেজদায় লুটে, মোয়াজ্জিনের মধুর সুরে আজানের সুর তুলে লো, ঘুম ধরিয়া যুবক দলে দুঃখে পরান ফাটে থো, বকুল ফুল ... , ফজরের ও তিলাওয়াতে নাচন নাচন লাগে লো, আরে রে রে রে, আগের মতো নারী কুলের তেলওয়াত নাই ঘরে ঘরে লো, আরে রে রে রে। যারা বাংলা জনপ্রিয় সংগীতের সঙ্গে ধর্মীয় বিষয় বাণিয়ে প্যারোডি করে গাইলেন। এতে কি ধর্মের অবমাননা হয়নি?
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, নারীদের অযাচিতভাবে টেনে আনা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, প্যারোডিকারীদের বিরোধী কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বা এদের ৫৭ ধারায় শাস্তিও দেয়া হয় না। ইসলাম ধর্মকে যথেচ্ছার ব্যবহার করে সারা দেশে মৌলবাদীদের বিচরণ ক্ষেত্র বানালে ধর্মের কোন উন্নতি হবে না। বরং এ ধরনের অপব্যবহারের কারণে মানুষের মধ্যে ধর্ম পালনের অনীহাও দেখা দিতে পারে।
আড্ডা চায়ের দোকান, মাকের্ট, অফিস-আদালত সর্বত্র ধর্মের ব্যবহারের ফলে ধর্মটাই হয়ে গেছে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। ধর্মের যত্রতত্র ব্যবহারটাও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়। কিন্তু এই আঘাতের কি কোন প্রতিকার নাই?
[লেখক : উন্নয়নকর্মী]
                                        
                                        
                                        
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            শাহ মো. জিয়াউদ্দিন
বুধবার, ১৮ মে ২০২২
ধর্মসংক্রান্ত বিষয়ে লেখার ক্ষেত্রে দেশের লেখকদের সতর্ক থাকতে হয়। ধর্মসংক্রান্ত বিষয়ে লিখতে বা বলতে গিয়ে অনেকেই আইনি জটিলতা পড়েছেন। তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা ধর্মকে কটাক্ষ করার দায়ে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সৃষ্টি করছে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। ধর্মকে (যে কোন ধর্ম) অবজ্ঞা বা অবমূল্যায়নের দায়ে সামাজিক অস্থিরতা, সহিংসতাসহ নানা ঘটনাই ঘটতে দেখা যায়।
আগের যে কোন সময়ের চাইতে ধর্ম বিষয়টি এখন অনেক সংবেদনশীল। আর এই সংবেদশীল হওয়ার পেছনে যে কৌশলটি কাজ করেছে তা হলো, বাণিজ্যিক কাজে ধর্মের ব্যবহার করা হয়। তাই ধর্ম নিয়ে একটু সমালোচনা করলেই তাকে ধর্মহীন বা নাস্তিক আখ্যায় আখ্যায়িত করা হয়। ধর্মসংক্রান্ত ব্যবহারের নিয়ে কিছু বলার দায়ে অনেকেই ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী হয়েছেন। অনেককেই খাটতে হয়েছে বা হচ্ছে জেলহাজত।
অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধর্মহীন বলে আখ্যা দিচ্ছে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী। অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে খুনও করাটাকে অন্যায় মনে করেন না মৌলবাদীরা। তাই সরকারের উচিত ধর্মকে অবজ্ঞা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ধর্মের অপব্যবহার হয় কি কি করলে তার একটি সুনির্দিষ্ট সঙ্গা বা ব্যাখ্যা নির্ধারণ করা। কারণ ধর্মকে ব্যবহার করে রমরমা ব্যবসা করা হচ্ছে। শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে চলছে সুদের রমরমা ব্যবসা। শ্বেতচন্দন ললাটে মেখে আর তুলসির মালা গলায় পরিধান করার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ হয়ে যান দৈ মিষ্টি বিক্রেতা। ধর্মীয় নামানুসারে গড়ে উঠছে দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ধর্মীয় নাম দেয়ার পেছনে মূল কারণ হলো অধিক মুনাফা আহরণ করার একটি কৌশল। এ ধরনের কর্মকান্ডকে কি ধর্মের অপব্যবহার বলা যায় না? ধর্মের অপব্যবহার ধর্ম অবমাননার সমতুল্য বিষয়।
একটি ছোট ঘটনা এখানে বর্ণনা করছি তা হলো, কয়েক দিন আগে বাজারে আমলকি কিনছি। দোকানিকে বললাম, ২০০ গ্রাম আমলকি দিতে। দোকানি ২০০ গ্রাম আমলকি মেপে দিল। আমি বললাম, ওজন ঠিক আছে। দোকানি বলল, কম থাকলে আপনার লাভ। আমি বললাম, কি করে আমার লাভ? দোকানি প্রতি উত্তরে বলল, কম দিলে আখিরাতে তার মাসুল আমাকেই দিতে হবে। আমি বললাম, ভাই আপনার আমলকি রেখে দিন। পাশে এক ভদ্র লোকও আমলকি কিনছিলেন, তিনি বললেন দোকানি তো ঠিক কথাই বলেছে।
আমি ভদ্রলোককে বললাম, “দোকানি ঠিক বলেনি কারণ সামান্য কটা আমলকি বিক্রির জন্য ধর্মকে ব্যবহার করাটা অযৌক্তিক। এই দোকানি সামান্য মুনাফার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করছে। ধর্ম হলো পবিত্র বিষয় তাই ধর্মকে যত্রতত্র ব্যবহার করাটা ঠিক না।”
অনেক কথা কাটাকাটির পর আমলকি কিনলাম। কিছু দূরে গিয়ে অন্য দোকানে মেপে দেখলাম ২০ গ্রাম কম। বিষয়টি কি দাঁড়াল? দোকানি কি তার ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে এই কাজটি করেছে না ধর্মকে ব্যবহার করে লোক ঠকাচ্ছে? কারণ এই দোকানির ধর্মের প্রতি কোন আস্থা নেই তাই লাভের আশায় সে ধর্মকে ব্যবহার করছে।
সামাজিক জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক ধর্ম অনুশীলনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখনে ধর্মসংক্রান্ত অনেক পোস্ট দেখা যায়। এই পোস্টগুলোর মধ্যে কোনটা অবমাননাকর আর কোনটা ধর্ম অনুশীলনের তা বুঝাতে সমস্যায় পড়তে হয় অনেক সময়। জনপ্রিয় বাংলা সংগীত, “বকুল ফুল, বকুল ফুল সোনা দিয়ে হাত কেন বান্ধাইলি, শালুক ফুলের লাজ নাই রাইতে শালুক ফোটে, যার সঙ্গে যার ভালোবাসা সেই তো মজা লুটে রে”
গানটি প্যারোডি বানানো হয়েছে, এ রকম করে “যুবক কুল যুবক কুল মোবাইল দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি, আরে রে রেরে, যুবক কুলের লাজ নাই মসজিদে না ছুটে গো (২), আল্লাহর সঙ্গে যার ভালোবাসা সেই তো সেজদায় লুটে, মোয়াজ্জিনের মধুর সুরে আজানের সুর তুলে লো, ঘুম ধরিয়া যুবক দলে দুঃখে পরান ফাটে থো, বকুল ফুল ... , ফজরের ও তিলাওয়াতে নাচন নাচন লাগে লো, আরে রে রে রে, আগের মতো নারী কুলের তেলওয়াত নাই ঘরে ঘরে লো, আরে রে রে রে। যারা বাংলা জনপ্রিয় সংগীতের সঙ্গে ধর্মীয় বিষয় বাণিয়ে প্যারোডি করে গাইলেন। এতে কি ধর্মের অবমাননা হয়নি?
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, নারীদের অযাচিতভাবে টেনে আনা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, প্যারোডিকারীদের বিরোধী কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বা এদের ৫৭ ধারায় শাস্তিও দেয়া হয় না। ইসলাম ধর্মকে যথেচ্ছার ব্যবহার করে সারা দেশে মৌলবাদীদের বিচরণ ক্ষেত্র বানালে ধর্মের কোন উন্নতি হবে না। বরং এ ধরনের অপব্যবহারের কারণে মানুষের মধ্যে ধর্ম পালনের অনীহাও দেখা দিতে পারে।
আড্ডা চায়ের দোকান, মাকের্ট, অফিস-আদালত সর্বত্র ধর্মের ব্যবহারের ফলে ধর্মটাই হয়ে গেছে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। ধর্মের যত্রতত্র ব্যবহারটাও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়। কিন্তু এই আঘাতের কি কোন প্রতিকার নাই?
[লেখক : উন্নয়নকর্মী]