জিয়াউদ্দিন আহমেদ
ফেসবুকে নিজের স্ত্রী ডা. তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বিরুদ্ধে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ এনে স্বামী ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে অতিরিক্তি ইনসুলিন পুশ করে আত্মহত্যা করেছেন বলে পত্রিকার খবর। ২০০৯ সালে মিতুর সঙ্গে আকাশের পরিচয় হয় এবং ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর মিতু তার আমেরিকা প্রবাসী মায়ের কাছে চলে যায়; সম্প্রতি ওখান থেকে ফেরত আসলে ঘটনার পূর্ব রাতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যে কথাকাটাকাটি, হাতাহাতি হয়। এ ঘটনা জানার পর মিতুকে তার বাবা এসে ওই রাতেই তার চট্টগ্রাম শহরস্থ বাড়িতে নিয়ে যান এবং আকাশ পরে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যা ধর্মে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আকাশ তা মানেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি এমনভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে যাতে ডা. আকাশের প্রতি সমবেদনা, মিতুর প্রতি ঘৃণা জাগে। এ ঘটনার অন্তরালে ভিন্ন কোন বিষয় আছে কিনা তা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত না হলে জানা যাবে না।
সম্প্রতি পরকীয়া কোনও অপরাধ নয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ সংক্রান্ত দেড়শ’ বছরের পুরনো একটি আইন বাতিল করে সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণা দেয়। ব্রিটিশ আমলের এ আইন অনুযায়ী কোন বিবাহিত বা অবিবাহিত পুরুষ যদি অন্য কোন বিবাহিত নারীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে মর্মে জেনেশুনেও যৌন সম্পর্কে জড়িত হয় তাহলে তা ব্যভিচার বলে গণ্য হবে; তবে স্বামীর সম্মতি থাকলে বা স্বামীর জ্ঞাতসারে এ যৌন সম্পর্ক স্থাপন হলে তা ব্যভিচার হিসেবে বিবেচিত হবে না। অন্যদিকে স্বামীর সম্মতি না থাকলে এ যৌন সম্পর্ক ব্যভিচার হবে এবং ব্যভিচারের দায়ে পুরুষটির পাঁচ বছরের কারাদন্ড অথবা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান আছে। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, যে বিবাহিতা নারী স্বেচ্ছায যৌন সম্পর্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছে তার ক্ষেত্রে আইনে কোন শাস্তির বিধান নেই। অন্যদিকে ওই নারী রাজি না থাকলে উক্ত যৌন সম্পর্ক ব্যভিচার না হলেও ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে এবং ধর্ষণের জন্য পুরুষের বিচার হবে, পরকীয়ার জন্য নয়। ভারতে স্বামীর বিবাহবহির্ভূত প্রেমের কথা জানতে পেরে স্ত্রীর আত্মহত্যা, প্রেমের কাহিনী প্রচারিত হওয়ায় স্বামীর প্রেমিকার আত্মহত্যা, সমাজের সবাই সব কিছুর জন্য আত্মঘাতী প্রেমিকাকে দায়ী করলে আত্মহত্যা করে প্রেমিকার মা ও ভাই। এতগুলো আত্মহত্যার পর স্বামীকে নিম্ন আদালত দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিলে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করার পর পরকীয়া যে অপরাধ নয় তা সুপ্রিমকোর্ট ঘোষণা করেন।
ব্রিটিশদের প্রণীত ১৮৬০ সালের আইনটি ভারতে বাতিল হলেও একই আইন পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এখনও অনুসৃত হচ্ছে। পরকীয়া প্রেম নিয়ে বাংলাদেশের লোকজনের আদালতে শরণাপন্ন হওয়ার দৃষ্টান্ত খুবই কম; কারণ এখানে বউকে তালাক দেয়া তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। তালাক দেয়া এত সহজ হওয়া সত্ত্বেও ডা. আকাশ কেন আত্মহত্যা বেছে নিল তা বোধগম্য নয়। ডা. আকাশ নাকি ডা. মিতুর সঙ্গে অন্য পুরুষের মেলামেশার কিছু স্পর্শকাতর ছবিও ফেসবুকে দিয়েছেন; এমন প্রমাণাদি থাকলে তালাক দেয়া ডা. আকাশের পক্ষে সহজতর ছিল। তিন বছর একসঙ্গে চলাফেরা ও পরস্পরের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমেই তারা বিয়ে করতে সম্মত হয়েছিলেন। মিতুর এমনতর স্বভাব নাকি বিয়ের পূর্বেও ছিল, কিন্তু এমন স্বভাব থাকলে বিয়ের পূর্বে আকাশের চোখে একবার হলেও ধরা পড়ার কথা। বিয়ের পর অন্য প্রেমিকের সঙ্গে মিতুর সম্পর্ক স্পষ্ট হলে আকাশের অভিমানের বদলে ঘৃণা জন্মানোর কথা, স্ত্রীর প্রতি অভিমান করে আত্মহত্যা করার কথা নয়। আমাদের দেশে অনুসৃত আইনের চোখে মিতুর পরকীয়া ও পরকীয়া প্রেমের প্ররোচনায় আকাশের আত্মহত্যা কতটুকু শাস্তিযোগ্য অপরাধ তা বিচার্য। যৌন সম্পর্ক না হলে শুধু পরকীয়া প্রেম আইনের দৃষ্টিতে কোন অপরাধই নয়। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন মিডিয়া পরকীয়া সম্পর্কিত ব্যক্তিগত ঘটনা এমনভাবে রসিয়ে রসিয়ে প্রচার করে, আমাদের দেশের পুলিশ এমনভাবে টানাহেঁচড়া করে যাতে মনে হয় পরকীয়া প্রেম আইনের দৃষ্টিতে জঘন্যতম একটি অপরাধ।
ইংরেজ শাসনামলে প্রণীত এ আইনে সত্যিকার অর্থে স্ত্রীদের স্বামীর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। স্ত্রী স্বামীর অনুমোদন নিয়ে অন্য পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে অপরাধ হবে না মর্মে আইনে উল্লেখ থাকায় তা মেয়েদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে করা হয়। প্রেম-পিরিতি করবে স্ত্রী আর তার দেহ দানের অনুমতি দেবে স্বামী- যৌন সম্পর্ক স্থাপনে স্বামীর এমন প্রভুত্ব নারীদের জন্য অপমানজনক। তসলিমা নাসরিনও তার বিভিন্ন লেখায় একই কথা বলেছেন- দেহ যার তার ইচ্ছায় দেহদানে অন্যের হস্তক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য। তাই নারীদের কোন শাস্তির বিধান না থাকা সত্ত্বেও এই আইনের বিপক্ষে নারীদের অবস্থান। অন্যদিকে একই অপরাধে শুধু পুরুষকে দোষী সাব্যস্ত করার বিধান থাকায় এ আইনটি ত্রুটিপূর্ণ। কারণ বিবাহিতা নারী ও বিবাহিত পুরুষ অথবা বিবাহিতা নারী ও অবিবাহিত যুবক প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তার দায় সংশ্লিষ্ট নারী-পুরুষ উভয়ের; তাই সমঅপরাধে উভয়ের শাস্তি হওয়া সমীচীন। এছাড়াও একজন বিবাহিত পুরুষ কোন অবিবাহিত মেয়ে বা বিধবা মেয়ে অথবা স্বামী পরিত্যক্ত নারীর সঙ্গে প্রেম করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলেও এই আইনে পুরুষকে শাস্তি দেয়ার বিধান নেই। এসব বিবেচনায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট তাদের রায়ে উল্লেখ করেছে যে, শুধু পরকীয়া প্রেম কখনও অপরাধ হতে পারে না; পরকীয়া সম্পর্কের কারণে জীবনসঙ্গী যদি আত্মহত্যা করে এবং আদালতে তা প্রমাণ করা যায় তাহলেই এ প্রেম অপরাধের প্ররোচনা হিসেবে গণ্য হবে।
পরকীয়া প্রেমের পক্ষে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের রায়ে যাই বলা হোক না কেন, এই রায়ের ফলে পরকীয়া প্রেমের বিস্তৃতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও এই রায়ের কারণে অধিক হারে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটতে পারে বলেও সুপ্রিমকোর্ট উল্লেখ করেছে। এ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পরকীয়া সামাজিক সমস্যার কারণ হতে পারে, কিন্তু ফৌজদারি অপরাধ হতে পারে না। এমন বিবেচনার প্রধান কারণ হচ্ছে, পরকীয়া প্রেম পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হয় বলে তা অপরাধ নয়। কারণ মনের ওপর কারও জবরদস্তি চলে না। বিবাহবহির্ভূত প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনে প্রতিবন্ধকতা বেশি বলেই সম্ভবত পরকীয়া প্রেমে আকর্ষণও বেশি। ড. আহমেদ শরীফ বলতেন, ‘প্রেম কখনো স্বকীয়া হয় না, প্রেম মানেই পরকীয়া।’
এক সময় পতিব্রতা সতী নারীর জয়গানে পরিবার আর সমাজ ছিল উচ্চকণ্ঠ। পতিগত প্রাণ স্ত্রীর বন্দনা করে হাজার হাজার পৃষ্ঠা লেখা হয়েছে। নিজের বউকে ঘরে রেখে বৌদির পেছনে পেছনে পঞ্চবটি বনে আসায় ড. আহমেদ শরীফ লক্ষ্মণকে পরকীয়ার দায়ে দায়ী করেছেন। ভিন্ন চিত্রও আছে। দেড়শ’ বছর পূর্বে জন্ম নেয়া বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরকীয়ার বিরুদ্ধাচারণ করেছেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, কারও হৃদয়ে একবার কারও জন্য প্রেমের উদয় হলে সেই হৃদয়ে অন্য কারও জন্য আর কখনও প্রেম হতে পারে না। এ কারণেই বঙ্কিমচন্দ্র বিধবা বিবাহের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এক্ষেত্রে তার অভিমত ছিল- স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রেম সৃষ্টি হলে স্বামীর অবর্তমানে স্ত্রীর মধ্যে আবার আরেকজনের জন্য প্রেম হতেই পারে না। তার মতে প্রেম হচ্ছে প্রস্ফূটিত ফুল, ফুল ঝরে গেলে দ্বিতীয়বার আর ফোটে না। তাই বিধবা কোন নারীর আবার বিয়ের পর দ্বিতীয় স্বামীকে সেই নারী ভালোবাসার অভিনয় করতে পারে, কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসা বিধবার হৃদয়ে উদ্ভবই হবে না। তাই বঙ্কিমচন্দ্ররা পরকীয়া প্রেমের অস্তিত্বই স্বীকার করতেন না। কিন্তু পুরুষের হৃদয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বার প্রেম কিভাবে জন্মায় সেব্যাপারে বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন নীরব; পুরুষের বিপত্নীক থাকার পক্ষে বিধবা-বিবাহ বিরোধীরা কিন্তু একটি কথাও উচ্চারণ করেছেন বলে শুনিনি। তাই ইদানীংকালে পুরনো ধ্যান-ধারণা নিয়ে নর-নারীর মনোবিশ্লেষণ অনেকের নিকট আর গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না।
সমাজে প্রচুর ভাঙচুর হয়েছে এবং হচ্ছে। এ ভাঙচুরের কারণে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এখন রমনীকুল শুধু ঘরের পাকঘরে আবদ্ধ থাকে না। নারী-পুরুষ উভয়ই এখন একসঙ্গে কাজ করে, অফিসের প্রয়োজনে বাইরেও যায় একসঙ্গে। ধর্মের বাধা সত্ত্বেও নারী-পুরুষের মেলামেশার আঙ্গিনা এখন অনেক বড় হয়েছে। তবুও পরিবার আর সমাজকে রক্ষা করার প্রয়োজনে সবাই পরকীয়া শব্দটিকে অন্যের সম্মুখে অস্পৃশ্য মনে করে। আইনে আছে, স্ত্রীর পরকীয়ায় স্বামীর সম্মতি থাকলে সেই পরকীয়া অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে না। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষের যৌন সম্পর্কে স্বামী কখনও সম্মতি দিতে পারে না। প্রায় একশ’ বছর পূর্বে প্রকাশিত ডিএইচ লরেন্সের বিখ্যাত ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ উপন্যাসটিতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামীর অক্ষমতায় যৌন জীবনে অতৃপ্ত স্ত্রী কন্সট্যান্স চ্যাটার্লি বা লেডি চ্যাটার্লি তারই বেতনভোগী এক নিম্ন শ্রেণীর কর্মচারীর সঙ্গে দেহগত মিলনে তৃপ্ত হয়। স্বামী ক্লিফোর্ড চ্যাটার্লি তার স্ত্রীকে অভিজাত এক ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলায় সম্মতি কিন্তু দিয়েছিলেন।
পরকীয়া হচ্ছে অন্যের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। পরকীয়ায় এ প্রশ্রয়ে পারিবারিক-সামাজিক মূল্যবোধগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে অনেকে মনে করেন। তাদের অভিমত হচ্ছে, বিয়ের পবিত্রতা রক্ষায় পরকীয়া নিষিদ্ধ থাকা শ্রেয়। তবে আইন থাকলেও যে পরকীয়া হবে না তা ঠিক নয়। মানব সভ্যতার ইতিহাসে পরকীয়ায় ভূরিভূরি উদাহরণ রয়েছে। আইন থাকলে পরকীয়ায় মানুষের হয়তো কিছুটা ভয় থাকবে। পরকীয়ায় সংসার ভাঙছে, খুন-খারাপি হচ্ছে বলে কিন্তু পরকীয়া তৈরিতে মানুষ বিরত থাকছে না। তাই পরকীয়াকে ক্রিমিনালাইজ করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন অনেক মনোবিজ্ঞানী।
বিবাহিত জীবনের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য মানুষ পরকীয়ায় আনন্দ খোঁজে। ঘরে চারজন বউ থাকলেও পরকীয়া হতে পারে। দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর অহর্নিশ কলহ বিবাহবহির্ভূত পরকীয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে। অভিভাবকের তরফ থেকে জোর করে চাপিয়ে দেয়া অপছন্দের সঙ্গীকে এড়িয়ে অন্য নর বা নারীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রবণতাও অস্বীকার করা যায় না। আবার প্রেমের পরিণতি বিয়ে দিয়েও দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখা যায় না; প্রেমে লালিত আকাশচুম্বী প্রত্যাশা বিবাহোত্তর জীবনে না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত করে থাকে। মহানায়ক উত্তম কুমারও স্ত্রী ভিন্ন অন্য নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত জীবনযাপন করে সুখী ছিলেন। পরকীয়ার বিরুদ্ধে তাই একশ’টি যুক্তি দাঁড় করানো সম্ভব হলেও সমাজে পরকীয়ার অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আইন যেখানে নারীকে দোষী সাব্যস্ত করছে না সেখানে পরিবার বা সমাজ নারীকেই দোষী বানিয়ে বিচার করছে। অন্যদিকে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় স্বামীর সম্মতিতে পরকীয়া হলে নারী-পুরুষ কেউ আইনের চোখে অপরাধী নয়। পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক নৈতিকতা বিচারে অসামাজিক কর্ম হিসেবে গণ্য হতে পারে কিন্তু কোন মতেই তা অপরাধ নয়। এতদসত্ত্বেও বাংলাদেশে ব্রিটিশদের প্রণীত আইনটি ভারতের মতো বাতিল হবে বলে মনে হয় না।
[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন]
zeauddinahmed@gmail.com
জিয়াউদ্দিন আহমেদ
রোববার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
ফেসবুকে নিজের স্ত্রী ডা. তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বিরুদ্ধে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ এনে স্বামী ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে অতিরিক্তি ইনসুলিন পুশ করে আত্মহত্যা করেছেন বলে পত্রিকার খবর। ২০০৯ সালে মিতুর সঙ্গে আকাশের পরিচয় হয় এবং ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর মিতু তার আমেরিকা প্রবাসী মায়ের কাছে চলে যায়; সম্প্রতি ওখান থেকে ফেরত আসলে ঘটনার পূর্ব রাতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যে কথাকাটাকাটি, হাতাহাতি হয়। এ ঘটনা জানার পর মিতুকে তার বাবা এসে ওই রাতেই তার চট্টগ্রাম শহরস্থ বাড়িতে নিয়ে যান এবং আকাশ পরে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যা ধর্মে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আকাশ তা মানেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি এমনভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে যাতে ডা. আকাশের প্রতি সমবেদনা, মিতুর প্রতি ঘৃণা জাগে। এ ঘটনার অন্তরালে ভিন্ন কোন বিষয় আছে কিনা তা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত না হলে জানা যাবে না।
সম্প্রতি পরকীয়া কোনও অপরাধ নয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ সংক্রান্ত দেড়শ’ বছরের পুরনো একটি আইন বাতিল করে সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণা দেয়। ব্রিটিশ আমলের এ আইন অনুযায়ী কোন বিবাহিত বা অবিবাহিত পুরুষ যদি অন্য কোন বিবাহিত নারীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে মর্মে জেনেশুনেও যৌন সম্পর্কে জড়িত হয় তাহলে তা ব্যভিচার বলে গণ্য হবে; তবে স্বামীর সম্মতি থাকলে বা স্বামীর জ্ঞাতসারে এ যৌন সম্পর্ক স্থাপন হলে তা ব্যভিচার হিসেবে বিবেচিত হবে না। অন্যদিকে স্বামীর সম্মতি না থাকলে এ যৌন সম্পর্ক ব্যভিচার হবে এবং ব্যভিচারের দায়ে পুরুষটির পাঁচ বছরের কারাদন্ড অথবা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান আছে। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, যে বিবাহিতা নারী স্বেচ্ছায যৌন সম্পর্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছে তার ক্ষেত্রে আইনে কোন শাস্তির বিধান নেই। অন্যদিকে ওই নারী রাজি না থাকলে উক্ত যৌন সম্পর্ক ব্যভিচার না হলেও ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে এবং ধর্ষণের জন্য পুরুষের বিচার হবে, পরকীয়ার জন্য নয়। ভারতে স্বামীর বিবাহবহির্ভূত প্রেমের কথা জানতে পেরে স্ত্রীর আত্মহত্যা, প্রেমের কাহিনী প্রচারিত হওয়ায় স্বামীর প্রেমিকার আত্মহত্যা, সমাজের সবাই সব কিছুর জন্য আত্মঘাতী প্রেমিকাকে দায়ী করলে আত্মহত্যা করে প্রেমিকার মা ও ভাই। এতগুলো আত্মহত্যার পর স্বামীকে নিম্ন আদালত দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিলে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করার পর পরকীয়া যে অপরাধ নয় তা সুপ্রিমকোর্ট ঘোষণা করেন।
ব্রিটিশদের প্রণীত ১৮৬০ সালের আইনটি ভারতে বাতিল হলেও একই আইন পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এখনও অনুসৃত হচ্ছে। পরকীয়া প্রেম নিয়ে বাংলাদেশের লোকজনের আদালতে শরণাপন্ন হওয়ার দৃষ্টান্ত খুবই কম; কারণ এখানে বউকে তালাক দেয়া তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। তালাক দেয়া এত সহজ হওয়া সত্ত্বেও ডা. আকাশ কেন আত্মহত্যা বেছে নিল তা বোধগম্য নয়। ডা. আকাশ নাকি ডা. মিতুর সঙ্গে অন্য পুরুষের মেলামেশার কিছু স্পর্শকাতর ছবিও ফেসবুকে দিয়েছেন; এমন প্রমাণাদি থাকলে তালাক দেয়া ডা. আকাশের পক্ষে সহজতর ছিল। তিন বছর একসঙ্গে চলাফেরা ও পরস্পরের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমেই তারা বিয়ে করতে সম্মত হয়েছিলেন। মিতুর এমনতর স্বভাব নাকি বিয়ের পূর্বেও ছিল, কিন্তু এমন স্বভাব থাকলে বিয়ের পূর্বে আকাশের চোখে একবার হলেও ধরা পড়ার কথা। বিয়ের পর অন্য প্রেমিকের সঙ্গে মিতুর সম্পর্ক স্পষ্ট হলে আকাশের অভিমানের বদলে ঘৃণা জন্মানোর কথা, স্ত্রীর প্রতি অভিমান করে আত্মহত্যা করার কথা নয়। আমাদের দেশে অনুসৃত আইনের চোখে মিতুর পরকীয়া ও পরকীয়া প্রেমের প্ররোচনায় আকাশের আত্মহত্যা কতটুকু শাস্তিযোগ্য অপরাধ তা বিচার্য। যৌন সম্পর্ক না হলে শুধু পরকীয়া প্রেম আইনের দৃষ্টিতে কোন অপরাধই নয়। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন মিডিয়া পরকীয়া সম্পর্কিত ব্যক্তিগত ঘটনা এমনভাবে রসিয়ে রসিয়ে প্রচার করে, আমাদের দেশের পুলিশ এমনভাবে টানাহেঁচড়া করে যাতে মনে হয় পরকীয়া প্রেম আইনের দৃষ্টিতে জঘন্যতম একটি অপরাধ।
ইংরেজ শাসনামলে প্রণীত এ আইনে সত্যিকার অর্থে স্ত্রীদের স্বামীর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। স্ত্রী স্বামীর অনুমোদন নিয়ে অন্য পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে অপরাধ হবে না মর্মে আইনে উল্লেখ থাকায় তা মেয়েদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে করা হয়। প্রেম-পিরিতি করবে স্ত্রী আর তার দেহ দানের অনুমতি দেবে স্বামী- যৌন সম্পর্ক স্থাপনে স্বামীর এমন প্রভুত্ব নারীদের জন্য অপমানজনক। তসলিমা নাসরিনও তার বিভিন্ন লেখায় একই কথা বলেছেন- দেহ যার তার ইচ্ছায় দেহদানে অন্যের হস্তক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য। তাই নারীদের কোন শাস্তির বিধান না থাকা সত্ত্বেও এই আইনের বিপক্ষে নারীদের অবস্থান। অন্যদিকে একই অপরাধে শুধু পুরুষকে দোষী সাব্যস্ত করার বিধান থাকায় এ আইনটি ত্রুটিপূর্ণ। কারণ বিবাহিতা নারী ও বিবাহিত পুরুষ অথবা বিবাহিতা নারী ও অবিবাহিত যুবক প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তার দায় সংশ্লিষ্ট নারী-পুরুষ উভয়ের; তাই সমঅপরাধে উভয়ের শাস্তি হওয়া সমীচীন। এছাড়াও একজন বিবাহিত পুরুষ কোন অবিবাহিত মেয়ে বা বিধবা মেয়ে অথবা স্বামী পরিত্যক্ত নারীর সঙ্গে প্রেম করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলেও এই আইনে পুরুষকে শাস্তি দেয়ার বিধান নেই। এসব বিবেচনায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট তাদের রায়ে উল্লেখ করেছে যে, শুধু পরকীয়া প্রেম কখনও অপরাধ হতে পারে না; পরকীয়া সম্পর্কের কারণে জীবনসঙ্গী যদি আত্মহত্যা করে এবং আদালতে তা প্রমাণ করা যায় তাহলেই এ প্রেম অপরাধের প্ররোচনা হিসেবে গণ্য হবে।
পরকীয়া প্রেমের পক্ষে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের রায়ে যাই বলা হোক না কেন, এই রায়ের ফলে পরকীয়া প্রেমের বিস্তৃতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও এই রায়ের কারণে অধিক হারে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটতে পারে বলেও সুপ্রিমকোর্ট উল্লেখ করেছে। এ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পরকীয়া সামাজিক সমস্যার কারণ হতে পারে, কিন্তু ফৌজদারি অপরাধ হতে পারে না। এমন বিবেচনার প্রধান কারণ হচ্ছে, পরকীয়া প্রেম পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হয় বলে তা অপরাধ নয়। কারণ মনের ওপর কারও জবরদস্তি চলে না। বিবাহবহির্ভূত প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনে প্রতিবন্ধকতা বেশি বলেই সম্ভবত পরকীয়া প্রেমে আকর্ষণও বেশি। ড. আহমেদ শরীফ বলতেন, ‘প্রেম কখনো স্বকীয়া হয় না, প্রেম মানেই পরকীয়া।’
এক সময় পতিব্রতা সতী নারীর জয়গানে পরিবার আর সমাজ ছিল উচ্চকণ্ঠ। পতিগত প্রাণ স্ত্রীর বন্দনা করে হাজার হাজার পৃষ্ঠা লেখা হয়েছে। নিজের বউকে ঘরে রেখে বৌদির পেছনে পেছনে পঞ্চবটি বনে আসায় ড. আহমেদ শরীফ লক্ষ্মণকে পরকীয়ার দায়ে দায়ী করেছেন। ভিন্ন চিত্রও আছে। দেড়শ’ বছর পূর্বে জন্ম নেয়া বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরকীয়ার বিরুদ্ধাচারণ করেছেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, কারও হৃদয়ে একবার কারও জন্য প্রেমের উদয় হলে সেই হৃদয়ে অন্য কারও জন্য আর কখনও প্রেম হতে পারে না। এ কারণেই বঙ্কিমচন্দ্র বিধবা বিবাহের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এক্ষেত্রে তার অভিমত ছিল- স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রেম সৃষ্টি হলে স্বামীর অবর্তমানে স্ত্রীর মধ্যে আবার আরেকজনের জন্য প্রেম হতেই পারে না। তার মতে প্রেম হচ্ছে প্রস্ফূটিত ফুল, ফুল ঝরে গেলে দ্বিতীয়বার আর ফোটে না। তাই বিধবা কোন নারীর আবার বিয়ের পর দ্বিতীয় স্বামীকে সেই নারী ভালোবাসার অভিনয় করতে পারে, কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসা বিধবার হৃদয়ে উদ্ভবই হবে না। তাই বঙ্কিমচন্দ্ররা পরকীয়া প্রেমের অস্তিত্বই স্বীকার করতেন না। কিন্তু পুরুষের হৃদয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বার প্রেম কিভাবে জন্মায় সেব্যাপারে বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন নীরব; পুরুষের বিপত্নীক থাকার পক্ষে বিধবা-বিবাহ বিরোধীরা কিন্তু একটি কথাও উচ্চারণ করেছেন বলে শুনিনি। তাই ইদানীংকালে পুরনো ধ্যান-ধারণা নিয়ে নর-নারীর মনোবিশ্লেষণ অনেকের নিকট আর গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না।
সমাজে প্রচুর ভাঙচুর হয়েছে এবং হচ্ছে। এ ভাঙচুরের কারণে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এখন রমনীকুল শুধু ঘরের পাকঘরে আবদ্ধ থাকে না। নারী-পুরুষ উভয়ই এখন একসঙ্গে কাজ করে, অফিসের প্রয়োজনে বাইরেও যায় একসঙ্গে। ধর্মের বাধা সত্ত্বেও নারী-পুরুষের মেলামেশার আঙ্গিনা এখন অনেক বড় হয়েছে। তবুও পরিবার আর সমাজকে রক্ষা করার প্রয়োজনে সবাই পরকীয়া শব্দটিকে অন্যের সম্মুখে অস্পৃশ্য মনে করে। আইনে আছে, স্ত্রীর পরকীয়ায় স্বামীর সম্মতি থাকলে সেই পরকীয়া অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে না। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষের যৌন সম্পর্কে স্বামী কখনও সম্মতি দিতে পারে না। প্রায় একশ’ বছর পূর্বে প্রকাশিত ডিএইচ লরেন্সের বিখ্যাত ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ উপন্যাসটিতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামীর অক্ষমতায় যৌন জীবনে অতৃপ্ত স্ত্রী কন্সট্যান্স চ্যাটার্লি বা লেডি চ্যাটার্লি তারই বেতনভোগী এক নিম্ন শ্রেণীর কর্মচারীর সঙ্গে দেহগত মিলনে তৃপ্ত হয়। স্বামী ক্লিফোর্ড চ্যাটার্লি তার স্ত্রীকে অভিজাত এক ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলায় সম্মতি কিন্তু দিয়েছিলেন।
পরকীয়া হচ্ছে অন্যের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। পরকীয়ায় এ প্রশ্রয়ে পারিবারিক-সামাজিক মূল্যবোধগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে অনেকে মনে করেন। তাদের অভিমত হচ্ছে, বিয়ের পবিত্রতা রক্ষায় পরকীয়া নিষিদ্ধ থাকা শ্রেয়। তবে আইন থাকলেও যে পরকীয়া হবে না তা ঠিক নয়। মানব সভ্যতার ইতিহাসে পরকীয়ায় ভূরিভূরি উদাহরণ রয়েছে। আইন থাকলে পরকীয়ায় মানুষের হয়তো কিছুটা ভয় থাকবে। পরকীয়ায় সংসার ভাঙছে, খুন-খারাপি হচ্ছে বলে কিন্তু পরকীয়া তৈরিতে মানুষ বিরত থাকছে না। তাই পরকীয়াকে ক্রিমিনালাইজ করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন অনেক মনোবিজ্ঞানী।
বিবাহিত জীবনের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য মানুষ পরকীয়ায় আনন্দ খোঁজে। ঘরে চারজন বউ থাকলেও পরকীয়া হতে পারে। দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর অহর্নিশ কলহ বিবাহবহির্ভূত পরকীয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে। অভিভাবকের তরফ থেকে জোর করে চাপিয়ে দেয়া অপছন্দের সঙ্গীকে এড়িয়ে অন্য নর বা নারীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রবণতাও অস্বীকার করা যায় না। আবার প্রেমের পরিণতি বিয়ে দিয়েও দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখা যায় না; প্রেমে লালিত আকাশচুম্বী প্রত্যাশা বিবাহোত্তর জীবনে না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত করে থাকে। মহানায়ক উত্তম কুমারও স্ত্রী ভিন্ন অন্য নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত জীবনযাপন করে সুখী ছিলেন। পরকীয়ার বিরুদ্ধে তাই একশ’টি যুক্তি দাঁড় করানো সম্ভব হলেও সমাজে পরকীয়ার অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আইন যেখানে নারীকে দোষী সাব্যস্ত করছে না সেখানে পরিবার বা সমাজ নারীকেই দোষী বানিয়ে বিচার করছে। অন্যদিকে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় স্বামীর সম্মতিতে পরকীয়া হলে নারী-পুরুষ কেউ আইনের চোখে অপরাধী নয়। পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক নৈতিকতা বিচারে অসামাজিক কর্ম হিসেবে গণ্য হতে পারে কিন্তু কোন মতেই তা অপরাধ নয়। এতদসত্ত্বেও বাংলাদেশে ব্রিটিশদের প্রণীত আইনটি ভারতের মতো বাতিল হবে বলে মনে হয় না।
[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন]
zeauddinahmed@gmail.com