alt

উপ-সম্পাদকীয়

যাযাবর বেদে সম্প্রদায়

সামসুজ্জামান

: মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
image

বিচিত্র জাত বেদে সম্প্রদায় ধর্মে ইসলাম, আচারে হিন্দু। মনসা পূজা করে, মঙ্গলচী, ধর্মীয় ব্রত করে। কালী দুর্গাকে ভূমিষ্ট হয়ে প্রণাম করে। হিন্দু পুরাণ কথা তাদের কন্ঠস্থ। বিয়ে হিন্দু-মুসলমান কারও সাথে হয় না, নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেই আবদ্ধ। বিয়ে হয় মোল্লার কাছে ইসলামি পদ্ধতিতে, মরলে পোড়ায় না, কবর দেয়।

শারীরিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তারা আদি অস্ট্রাল বংশোদ্ভূত। নৃতাত্ত্বিক বিবেচনায় বেদেরা অনার্য। এদের এ দেশে আসা নিয়ে অনেক মতবাদ প্রচলিত আছে। কারও মতে তারা আরাকানের মলতং শান্তা নৃগোত্র থেকে এসেছে। আবার কেউ বলে এরা সাঁওতালদের বিছিন্ন অংশ। যারা পারস্যের সাথে বেদেদের সম্পর্ক খোঁজেন তাদের মতে বেদেরা সাতমতকে আরবের আলযাদিয়া নামক স্থান থেকে এদিকে এসেছে। যাই হোক, বেদেরা কোনো এক সময় সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় প্রতিকূলতার জন্যই ঘরবাড়ির মায়া ছেড়ে বাধ্য হয়ে যাযাবর জীবন বেছে নিয়েছে। শত শত বছর অভিযোজিত হয়ে আজও তারা টিকে আছে এ ভূমিতে।

প্রতিটি বেদে পরিবারের আছে নিজস্ব নৌকা। কয়েকটি নৌকা দিয়ে তৈরি হয় একটি দল। আর কয়েকটি দল নিয়ে একেকটি বহর। প্রতিটি বেদে বহরে থাকে একজন সর্দার। বহরের নিয়মনীতি, প্রত্যেক দলের বাণিজ্য, এলাকা সবই নির্ধারণ করেন সর্দার। বিয়ে এবং অন্যান্য উৎসবে সর্দারকে দিতে হয় অর্থ কিংবা বিশেষ উপহার। সাধারণত কার্তিক মাসের ৫ তারিখ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সারা দেশের সমস্ত দল মুন্সীগঞ্জ বা চট্টগ্রামে মিলিত হয়ে থাকে। তখন সমস্ত বহরের নেতারা মিলে গোত্রীয় সর্দার নির্ধারণ করে থাকেন।

তাবিজ-কবজ বিক্রি, জাদুটোনা আর সাপখেলা দেখিয়ে যাদের জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা সেই ছিন্নমূল, অসহায় ও অধিকার বঞ্চিতরাই হচ্ছে বেদে সম্প্রদায়। যারা রাস্তার পাশে ফাঁকা মাঠে, স্কুলের মাঠে, রেললাইনের পাশে, নদীর ধারে অতিথি পাখির মতো অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলে। আবার একদিন উধাও হয়ে যায়; কেউ তাদের খবর রাখে না। বর্তমানে তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। নদীর রূপ বদনের সাথে সাথে তাদের চলার পরিধিও ছোট হয়ে আসছে। অনেকেই ছাড়তে শুরু করেছে নদী; কিন্তু যাবে কোথায়?

তাছাড়া তাদের মূল ব্যবসা, ঝাড়ফুঁক, শিঙ্গা লাগানো, ব্যথা দূর করতে গরুর শিং দিয়ে রক্ত টেনে আনা, দাঁতের চিকিৎসা, বানর খেলা, জাদু দেখানো এখন মামুলি হয়ে গেছে। মানুষ এখন এসবের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাইতো বেঁচে থাকতে অনেক বেদে পরিবারই তাদের পেশা পরিবর্তন করেছে।

[লেখক : ব্যবসায়ী]

বিয়েতে মিতব্যয়িতা

এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বঞ্চনার কথা

রোহিঙ্গা সমস্যা : বাহবা, ব্যর্থতা ও ভবিষ্যতের ভয়

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

প্রযুক্তির ফাঁদে শৈশব : স্ক্রিন টাইম গিলে খাচ্ছে খেলার মাঠ

রমগদ্য : সিরাজগঞ্জে ‘ব্রিটিশ প্রেতাত্মা’

বামপন্থা : নীতির সঙ্গে নেতৃত্বের ভূমিকা

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : জনশিক্ষা ও সুশাসনের পথ

ইমাম রইস উদ্দিন হত্যাকাণ্ড : সুবিচার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব

কারাগার, সংশোধনাগার ও ভবঘুরে কেন্দ্রগুলোর সংস্কার কি হবে

জ্বালানির বদল, জীবিকার ঝুঁকি

প্রসঙ্গ : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি

দেশটা কারো বাপের নয়!

বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা

আর কত ধর্ষণের খবর শুনতে হবে?

সংস্কারের স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার রাজনীতি

মধুমাসের স্মৃতি ও দেশীয় ফলের রসাল সমারোহ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিঙ্গের রাজনীতি বা বিবাদ নয়, চাই মানবিকতার নিবিড় বন্ধন

বাজেট : বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার স্থবিরতা

রম্যগদ্য: “বাঙালি আমরা, নহি তো মেষ...”

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

tab

উপ-সম্পাদকীয়

যাযাবর বেদে সম্প্রদায়

সামসুজ্জামান

image

মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩

বিচিত্র জাত বেদে সম্প্রদায় ধর্মে ইসলাম, আচারে হিন্দু। মনসা পূজা করে, মঙ্গলচী, ধর্মীয় ব্রত করে। কালী দুর্গাকে ভূমিষ্ট হয়ে প্রণাম করে। হিন্দু পুরাণ কথা তাদের কন্ঠস্থ। বিয়ে হিন্দু-মুসলমান কারও সাথে হয় না, নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেই আবদ্ধ। বিয়ে হয় মোল্লার কাছে ইসলামি পদ্ধতিতে, মরলে পোড়ায় না, কবর দেয়।

শারীরিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তারা আদি অস্ট্রাল বংশোদ্ভূত। নৃতাত্ত্বিক বিবেচনায় বেদেরা অনার্য। এদের এ দেশে আসা নিয়ে অনেক মতবাদ প্রচলিত আছে। কারও মতে তারা আরাকানের মলতং শান্তা নৃগোত্র থেকে এসেছে। আবার কেউ বলে এরা সাঁওতালদের বিছিন্ন অংশ। যারা পারস্যের সাথে বেদেদের সম্পর্ক খোঁজেন তাদের মতে বেদেরা সাতমতকে আরবের আলযাদিয়া নামক স্থান থেকে এদিকে এসেছে। যাই হোক, বেদেরা কোনো এক সময় সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় প্রতিকূলতার জন্যই ঘরবাড়ির মায়া ছেড়ে বাধ্য হয়ে যাযাবর জীবন বেছে নিয়েছে। শত শত বছর অভিযোজিত হয়ে আজও তারা টিকে আছে এ ভূমিতে।

প্রতিটি বেদে পরিবারের আছে নিজস্ব নৌকা। কয়েকটি নৌকা দিয়ে তৈরি হয় একটি দল। আর কয়েকটি দল নিয়ে একেকটি বহর। প্রতিটি বেদে বহরে থাকে একজন সর্দার। বহরের নিয়মনীতি, প্রত্যেক দলের বাণিজ্য, এলাকা সবই নির্ধারণ করেন সর্দার। বিয়ে এবং অন্যান্য উৎসবে সর্দারকে দিতে হয় অর্থ কিংবা বিশেষ উপহার। সাধারণত কার্তিক মাসের ৫ তারিখ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সারা দেশের সমস্ত দল মুন্সীগঞ্জ বা চট্টগ্রামে মিলিত হয়ে থাকে। তখন সমস্ত বহরের নেতারা মিলে গোত্রীয় সর্দার নির্ধারণ করে থাকেন।

তাবিজ-কবজ বিক্রি, জাদুটোনা আর সাপখেলা দেখিয়ে যাদের জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা সেই ছিন্নমূল, অসহায় ও অধিকার বঞ্চিতরাই হচ্ছে বেদে সম্প্রদায়। যারা রাস্তার পাশে ফাঁকা মাঠে, স্কুলের মাঠে, রেললাইনের পাশে, নদীর ধারে অতিথি পাখির মতো অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলে। আবার একদিন উধাও হয়ে যায়; কেউ তাদের খবর রাখে না। বর্তমানে তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। নদীর রূপ বদনের সাথে সাথে তাদের চলার পরিধিও ছোট হয়ে আসছে। অনেকেই ছাড়তে শুরু করেছে নদী; কিন্তু যাবে কোথায়?

তাছাড়া তাদের মূল ব্যবসা, ঝাড়ফুঁক, শিঙ্গা লাগানো, ব্যথা দূর করতে গরুর শিং দিয়ে রক্ত টেনে আনা, দাঁতের চিকিৎসা, বানর খেলা, জাদু দেখানো এখন মামুলি হয়ে গেছে। মানুষ এখন এসবের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাইতো বেঁচে থাকতে অনেক বেদে পরিবারই তাদের পেশা পরিবর্তন করেছে।

[লেখক : ব্যবসায়ী]

back to top