সামসুজ্জামান
বিচিত্র জাত বেদে সম্প্রদায় ধর্মে ইসলাম, আচারে হিন্দু। মনসা পূজা করে, মঙ্গলচী, ধর্মীয় ব্রত করে। কালী দুর্গাকে ভূমিষ্ট হয়ে প্রণাম করে। হিন্দু পুরাণ কথা তাদের কন্ঠস্থ। বিয়ে হিন্দু-মুসলমান কারও সাথে হয় না, নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেই আবদ্ধ। বিয়ে হয় মোল্লার কাছে ইসলামি পদ্ধতিতে, মরলে পোড়ায় না, কবর দেয়।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তারা আদি অস্ট্রাল বংশোদ্ভূত। নৃতাত্ত্বিক বিবেচনায় বেদেরা অনার্য। এদের এ দেশে আসা নিয়ে অনেক মতবাদ প্রচলিত আছে। কারও মতে তারা আরাকানের মলতং শান্তা নৃগোত্র থেকে এসেছে। আবার কেউ বলে এরা সাঁওতালদের বিছিন্ন অংশ। যারা পারস্যের সাথে বেদেদের সম্পর্ক খোঁজেন তাদের মতে বেদেরা সাতমতকে আরবের আলযাদিয়া নামক স্থান থেকে এদিকে এসেছে। যাই হোক, বেদেরা কোনো এক সময় সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় প্রতিকূলতার জন্যই ঘরবাড়ির মায়া ছেড়ে বাধ্য হয়ে যাযাবর জীবন বেছে নিয়েছে। শত শত বছর অভিযোজিত হয়ে আজও তারা টিকে আছে এ ভূমিতে।
প্রতিটি বেদে পরিবারের আছে নিজস্ব নৌকা। কয়েকটি নৌকা দিয়ে তৈরি হয় একটি দল। আর কয়েকটি দল নিয়ে একেকটি বহর। প্রতিটি বেদে বহরে থাকে একজন সর্দার। বহরের নিয়মনীতি, প্রত্যেক দলের বাণিজ্য, এলাকা সবই নির্ধারণ করেন সর্দার। বিয়ে এবং অন্যান্য উৎসবে সর্দারকে দিতে হয় অর্থ কিংবা বিশেষ উপহার। সাধারণত কার্তিক মাসের ৫ তারিখ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সারা দেশের সমস্ত দল মুন্সীগঞ্জ বা চট্টগ্রামে মিলিত হয়ে থাকে। তখন সমস্ত বহরের নেতারা মিলে গোত্রীয় সর্দার নির্ধারণ করে থাকেন।
তাবিজ-কবজ বিক্রি, জাদুটোনা আর সাপখেলা দেখিয়ে যাদের জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা সেই ছিন্নমূল, অসহায় ও অধিকার বঞ্চিতরাই হচ্ছে বেদে সম্প্রদায়। যারা রাস্তার পাশে ফাঁকা মাঠে, স্কুলের মাঠে, রেললাইনের পাশে, নদীর ধারে অতিথি পাখির মতো অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলে। আবার একদিন উধাও হয়ে যায়; কেউ তাদের খবর রাখে না। বর্তমানে তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। নদীর রূপ বদনের সাথে সাথে তাদের চলার পরিধিও ছোট হয়ে আসছে। অনেকেই ছাড়তে শুরু করেছে নদী; কিন্তু যাবে কোথায়?
তাছাড়া তাদের মূল ব্যবসা, ঝাড়ফুঁক, শিঙ্গা লাগানো, ব্যথা দূর করতে গরুর শিং দিয়ে রক্ত টেনে আনা, দাঁতের চিকিৎসা, বানর খেলা, জাদু দেখানো এখন মামুলি হয়ে গেছে। মানুষ এখন এসবের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাইতো বেঁচে থাকতে অনেক বেদে পরিবারই তাদের পেশা পরিবর্তন করেছে।
[লেখক : ব্যবসায়ী]
সামসুজ্জামান
মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
বিচিত্র জাত বেদে সম্প্রদায় ধর্মে ইসলাম, আচারে হিন্দু। মনসা পূজা করে, মঙ্গলচী, ধর্মীয় ব্রত করে। কালী দুর্গাকে ভূমিষ্ট হয়ে প্রণাম করে। হিন্দু পুরাণ কথা তাদের কন্ঠস্থ। বিয়ে হিন্দু-মুসলমান কারও সাথে হয় না, নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেই আবদ্ধ। বিয়ে হয় মোল্লার কাছে ইসলামি পদ্ধতিতে, মরলে পোড়ায় না, কবর দেয়।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তারা আদি অস্ট্রাল বংশোদ্ভূত। নৃতাত্ত্বিক বিবেচনায় বেদেরা অনার্য। এদের এ দেশে আসা নিয়ে অনেক মতবাদ প্রচলিত আছে। কারও মতে তারা আরাকানের মলতং শান্তা নৃগোত্র থেকে এসেছে। আবার কেউ বলে এরা সাঁওতালদের বিছিন্ন অংশ। যারা পারস্যের সাথে বেদেদের সম্পর্ক খোঁজেন তাদের মতে বেদেরা সাতমতকে আরবের আলযাদিয়া নামক স্থান থেকে এদিকে এসেছে। যাই হোক, বেদেরা কোনো এক সময় সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় প্রতিকূলতার জন্যই ঘরবাড়ির মায়া ছেড়ে বাধ্য হয়ে যাযাবর জীবন বেছে নিয়েছে। শত শত বছর অভিযোজিত হয়ে আজও তারা টিকে আছে এ ভূমিতে।
প্রতিটি বেদে পরিবারের আছে নিজস্ব নৌকা। কয়েকটি নৌকা দিয়ে তৈরি হয় একটি দল। আর কয়েকটি দল নিয়ে একেকটি বহর। প্রতিটি বেদে বহরে থাকে একজন সর্দার। বহরের নিয়মনীতি, প্রত্যেক দলের বাণিজ্য, এলাকা সবই নির্ধারণ করেন সর্দার। বিয়ে এবং অন্যান্য উৎসবে সর্দারকে দিতে হয় অর্থ কিংবা বিশেষ উপহার। সাধারণত কার্তিক মাসের ৫ তারিখ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সারা দেশের সমস্ত দল মুন্সীগঞ্জ বা চট্টগ্রামে মিলিত হয়ে থাকে। তখন সমস্ত বহরের নেতারা মিলে গোত্রীয় সর্দার নির্ধারণ করে থাকেন।
তাবিজ-কবজ বিক্রি, জাদুটোনা আর সাপখেলা দেখিয়ে যাদের জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা সেই ছিন্নমূল, অসহায় ও অধিকার বঞ্চিতরাই হচ্ছে বেদে সম্প্রদায়। যারা রাস্তার পাশে ফাঁকা মাঠে, স্কুলের মাঠে, রেললাইনের পাশে, নদীর ধারে অতিথি পাখির মতো অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলে। আবার একদিন উধাও হয়ে যায়; কেউ তাদের খবর রাখে না। বর্তমানে তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। নদীর রূপ বদনের সাথে সাথে তাদের চলার পরিধিও ছোট হয়ে আসছে। অনেকেই ছাড়তে শুরু করেছে নদী; কিন্তু যাবে কোথায়?
তাছাড়া তাদের মূল ব্যবসা, ঝাড়ফুঁক, শিঙ্গা লাগানো, ব্যথা দূর করতে গরুর শিং দিয়ে রক্ত টেনে আনা, দাঁতের চিকিৎসা, বানর খেলা, জাদু দেখানো এখন মামুলি হয়ে গেছে। মানুষ এখন এসবের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাইতো বেঁচে থাকতে অনেক বেদে পরিবারই তাদের পেশা পরিবর্তন করেছে।
[লেখক : ব্যবসায়ী]