alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে স্মার্ট স্কুল

ইকবাল হাসান

: শনিবার, ২০ মে ২০২৩

জ্ঞান ও দক্ষতার পাশাপাশি প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে জীবন ও জীবিকা। যে শিশুটি এখন মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ছে বিশ বছর পরে সে যখন কর্মক্ষেত্রে যাবে সে কী কাজ করবে আমরা তা জানি না। সমগ্র বিশ্ব যেহেতু প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে সে কারণে প্রযুক্তি-জ্ঞানে সমৃদ্ধ দক্ষ মানব সম্পদ ছাড়া নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে যে পারবে না তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেন। স্মাট বাংলাদেশের ভিত্তি ধরা হয়েছে চারটি। এগুলো হচ্ছে- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ। আসলে স্মার্ট নাগরিক বলতে আমরা কী বুঝি? আর এই স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার কি কোন ভূমিকা আছে? থাকলে এটা কিভাবে? এ বিষয়েই আজ আলোকপাত করার চেষ্টা করব।

জ্ঞান, দক্ষতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন দূরদর্শী, সংবেদনশীল, অভিযোজন-সক্ষম, মানবিক এবং যোগ্য বিশ্ব-নাগরিককেই স্মার্ট নাগরিক বলা যেতে পারে। সৃজনশীলতা, সুক্ষ চিন্তনদক্ষতা, খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং যোগাযোগ দক্ষতার মতো সফট স্কিল যেসব মানুষের মধ্যে থাকবে তাদেরই স্মার্ট নাগরিক বলা হবে। স্মার্ট নাগরিক চিন্তা কথা ও কাজে সৎ ও সহমর্মী হবে- তিনি অন্যের দুঃখ কষ্ট বুঝবেন, তিনি পরমতসহিষ্ণু হবেন, নিজের মতের পাশাপাশি বিরোধী মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় তিনি বিশ্বাস করেন। ভিন্নমত থাকলে তিনি সম্মান করেন। একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি সমস্যা নিরূপণ করতে পারেন, সমস্যা সমাধান করতে পারেন। তিনি যা বলতে চান, তা বুঝাতে পারেন অর্থাৎ যোগাযোগের দক্ষতা আছে। এ সমস্ত গুণাবলি যাদের আছে তারাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক হবে। স্মার্ট নাগরিক হলো এমন ব্যক্তিরা যারা তাদের জীবন ও তাদের আশপাশের মানুষের জীবন উন্নত করতে প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকেন।

এই স্মার্ট নাগরিক কী এমনি এমনি তৈরি হয়ে যাবে? নাকি আমাদের তৈরি করতে হবে? যদি তৈরি করতে হয় সেক্ষেত্রে কাকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে হলে অবশ্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্কুলকে সবার আগে স্মার্ট স্কুলে রূপান্তর করতে হবে। তার আগে আসুন জানি ঝগঅজঞ এর পূর্ণরূপ কী?

S=Specific (সুনির্দিষ্ট)

M=Measurable (পরিমাপযোগ্য)

A=Achieviable (অর্জনযোগ্য)

R=Reliable (নির্ভরযোগ্য)

T=Time Bound (সুনির্দিষ্ট সময়)

অর্থাৎ আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমরা যে সবাই কার্যক্রম গ্রহণ করব তা যখন সুনির্দিষ্ট হবে, পরিমাপযোগ্য হবে, অর্জনযোগ্য হবে, নির্ভরযোগ্য হবে এবং সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হবে তখনই প্রতিষ্ঠানটি স্মার্ট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হবে। একটা স্মার্ট স্কুলে পাঁচ ধরনের স্টেকহোল্ডার থাকে। স্মার্ট শিক্ষার্থী, স্মার্ট শিক্ষক, স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট অভিভাবক ও স্মার্ট মনিটরিং সিস্টেম। এই পাঁচ ধরনের স্টেকহোল্ডারদের সব কার্যক্রম যখন সুনিদির্ষ্ট হবে, পরিমাপযোগ্য হবে, অর্জনযোগ্য হবে, নির্ভরযোগ্য হবে এবং সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হবে তখন এ প্রতিষ্ঠানটি স্মার্ট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হবে।

প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক তৈরির কারখানা হলো আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সে কারণে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ে আসতে হবে স্মার্ট প্রযুক্তির আওতায়। প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল শিক্ষা ছাড়াও স্মার্ট বাংলাদেশ হয়তো গঠন করা যাবে তবে সেটা টেকসই হবে না। কারণ ডিজিটাল শিক্ষার বাইরে থাকা মানুষ স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম হবে না। স্মার্ট নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নতুন কারিকুলাম চালু করা হয়েছে। এই কারিকুলামের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা স্মার্ট শিক্ষার্থী তৈরি করতে সক্ষম হব।

স্মার্ট স্কুলের শিক্ষার্থীদের জানতে হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের বুদ্ধি ও ইচ্ছা শক্তি দিয়ে কিভাবে দৈনন্দিন কাজকর্ম ও বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। স্মার্ট স্কুলের শিক্ষার্থীরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইন্টারনেট অব থিংস, ব্লক চেইন, রোবটিক্স, মেশিন লার্নিং এবং ডাটা বিশ্লেষণ এসব প্রযুক্তির ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। সৃজনশীলতা, সুক্ষ চিন্তনদক্ষতা, খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা, সহোযোগিতা, সহমর্মিতা এবং যোগাযোগ দক্ষতার মতো সফট স্কিল স্মার্ট স্কুলের শিক্ষার্থীরা অর্জন করতে পারবে। এর ফলে সে ভালো মানুষ হিসেবে যে কোন পেশায় সমাজে সফলভাবে নিজের এবং অন্যের মঙ্গল করতে পারবে।

স্মার্ট স্কুলের শিক্ষক ও হবে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সমৃদ্ধ দক্ষ মানুষ। ইন্টারনেট অব থিংস, ব্লক চেইন, রোবটিক্স, মেশিন লার্নিং এবং ডাটা বিশ্লেষণ এসব প্রযুক্তির ব্যবহার করে দৈনন্দিন কাজকর্ম কিভাবে করতে হবে সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শেখানোর কত দক্ষতা একজন স্মার্ট শিক্ষকের থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা, সূক্ষ্ম চিন্তনদক্ষতা, খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং যোগাযোগ দক্ষতার মতো সফট স্কিল যদি তৈরি করতে পারেন তবেই তিনি স্মার্ট শিক্ষক। ছাত্র-ছাত্রীদের মনে কৌতূহল ও প্রশ্ন জাগিয়ে তোলাও একজন স্মার্ট শিক্ষকের বড় দায়িত্ব। তারচেয়েও বড় কাজ হলো ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে স্বপ্ন তৈরি করা এবং তাদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে যাওয়া।

স্মার্ট শিক্ষার্থী তৈরির ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবক কেউ হতে হবে স্মার্ট। স্মার্ট অভিভাবক তার সন্তানকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের প্রতিষ্ঠাগুলো ফলাফলকেন্দ্রীক হয়ে উঠেছে। যে প্রতিষ্ঠানের ফলাফল ভালো সেই প্রতিষ্ঠান ভালো। যে প্রতিষ্ঠানের ফলাফল খারাপ সেই প্রতিষ্ঠান খারাপ। এই মানদ- ঠিক করার ক্ষেত্রে অভিভাবক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু ভালো রেজাল্টই যে একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না এটা অভিভাবককে বুঝতে হবে। সব অভিভাবকের লক্ষ্য তার সন্তান যেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা বিসিএস অফিসার হয়।

সৃজনশীলতা, সূক্ষ্ম চিন্তনদক্ষতা, খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং যোগাযোগ দক্ষতার মতো সফট স্কিল কতটুকু উন্নত হলো সে বিষয়ে গুরুত্ব দেন না। ফলে যখন কোন ডাক্তারের মধ্যে নৈতিকতা থাকে না সে রোগী মারা যাওয়ার পরও শুধুমাত্র টাকার জন্য আরও ৫ দিন রোগীকে আইসিইউতে রাখে। নৈতিকতাহীন ইঞ্জিনিয়ার রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ঢালাই করে। নৈতিকতাহীন আমলা সোনার পরিবর্তে খাদ দিয়ে দেয়। তারচেয়েও বড় সমস্যা হলো প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির কারণে কে কোন পেশায় যাবে তা বলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে অভিভাবকদের বুঝতে হবে তার সন্তানটি যাতে যে কোন পরিস্থিতে খাপ খাওয়াতে পারে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। অনাগত যে কোন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে সে দিকে অভিভাবকদের অধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। যেহেতু শিক্ষর্থী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বাড়িতেই বেশি সময় থাকে। সে কারণে অভিভবক যদি সচেতন না হয় কোনভাবেই স্মার্ট শিক্ষার্থী তৈরি করা সম্ভব নয়।

স্মার্ট নাগরিক বলতে আমরা কী বুঝি? আর এই স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার কি কোন ভূমিকা আছে? থাকলে এটা কিভাবে?

অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ তার এক লেখায় বলেন, স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা হবে সম্পূর্ণ ক্লাউডনির্ভর। এখানে কোনো ধরনের হার্ডওয়ারের প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন শিক্ষাব্যবস্থাকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমত, স্কুল ইন ক্লাউড। দ্বিতীয়ত কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং তৃতীয়ত, রিজিওয়াল স্কুল ইন ক্লাউড। এগুলোর প্রতিটি একেকেটি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটিকে ট্রেনিং টুল হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে ট্রেনিয়ের বিষয়গুলো থাকবে। শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা এখান থেকে শিখতে পারবে।

স্কুল ইন ক্লাউডে প্রথমে একটি স্কুলকে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় নিয়ে এসে এখানে ভালো ভালো শিক্ষকের লেকচার আপলোড করা যেতে পারে। এই লেকচারগুলো অন্য শিক্ষকরা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সেগুলো তারা ব্যবহার করতে পারেন অথবা তারা নতুন করে তৈরি করতে পারেন। এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটি কিভাবে ব্যবহার করা হবে তাও এর মধ্যে থাকবে। এর ফলে খুব সহজে অনেক বেশি শিক্ষককে এই স্কুল ইন ক্লাউডের মাধ্যমে সংযুক্ত করে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যাবে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরাও জড়িত থাকবে। তারা লেকচারগুলো দেখবে, তাদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবে, অন্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা করবে। তিনি আরো বলেন আমরা যদি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে স্কুল ইন ক্লাউড, কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং রিজিওনাল স্কুল ইন ক্লাউডে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারি, তাহলে দেশের সব শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় চলে আসবে। আমি মনে করি স্যারের প্রস্তাবনা বিবেচনা করা যেতে পারে।

মোট কথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে আগামী প্রজন্ম স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। শিক্ষা বিভাগকে কম গুরুত্ব দিয়ে স্মার্ট নাগরিক তৈরির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। সে কারণে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে চাই স্মার্ট স্কুল।

[লেখক: উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার,

গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী]

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে স্মার্ট স্কুল

ইকবাল হাসান

শনিবার, ২০ মে ২০২৩

জ্ঞান ও দক্ষতার পাশাপাশি প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে জীবন ও জীবিকা। যে শিশুটি এখন মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ছে বিশ বছর পরে সে যখন কর্মক্ষেত্রে যাবে সে কী কাজ করবে আমরা তা জানি না। সমগ্র বিশ্ব যেহেতু প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে সে কারণে প্রযুক্তি-জ্ঞানে সমৃদ্ধ দক্ষ মানব সম্পদ ছাড়া নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে যে পারবে না তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেন। স্মাট বাংলাদেশের ভিত্তি ধরা হয়েছে চারটি। এগুলো হচ্ছে- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ। আসলে স্মার্ট নাগরিক বলতে আমরা কী বুঝি? আর এই স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার কি কোন ভূমিকা আছে? থাকলে এটা কিভাবে? এ বিষয়েই আজ আলোকপাত করার চেষ্টা করব।

জ্ঞান, দক্ষতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন দূরদর্শী, সংবেদনশীল, অভিযোজন-সক্ষম, মানবিক এবং যোগ্য বিশ্ব-নাগরিককেই স্মার্ট নাগরিক বলা যেতে পারে। সৃজনশীলতা, সুক্ষ চিন্তনদক্ষতা, খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং যোগাযোগ দক্ষতার মতো সফট স্কিল যেসব মানুষের মধ্যে থাকবে তাদেরই স্মার্ট নাগরিক বলা হবে। স্মার্ট নাগরিক চিন্তা কথা ও কাজে সৎ ও সহমর্মী হবে- তিনি অন্যের দুঃখ কষ্ট বুঝবেন, তিনি পরমতসহিষ্ণু হবেন, নিজের মতের পাশাপাশি বিরোধী মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় তিনি বিশ্বাস করেন। ভিন্নমত থাকলে তিনি সম্মান করেন। একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি সমস্যা নিরূপণ করতে পারেন, সমস্যা সমাধান করতে পারেন। তিনি যা বলতে চান, তা বুঝাতে পারেন অর্থাৎ যোগাযোগের দক্ষতা আছে। এ সমস্ত গুণাবলি যাদের আছে তারাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক হবে। স্মার্ট নাগরিক হলো এমন ব্যক্তিরা যারা তাদের জীবন ও তাদের আশপাশের মানুষের জীবন উন্নত করতে প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকেন।

এই স্মার্ট নাগরিক কী এমনি এমনি তৈরি হয়ে যাবে? নাকি আমাদের তৈরি করতে হবে? যদি তৈরি করতে হয় সেক্ষেত্রে কাকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে হলে অবশ্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্কুলকে সবার আগে স্মার্ট স্কুলে রূপান্তর করতে হবে। তার আগে আসুন জানি ঝগঅজঞ এর পূর্ণরূপ কী?

S=Specific (সুনির্দিষ্ট)

M=Measurable (পরিমাপযোগ্য)

A=Achieviable (অর্জনযোগ্য)

R=Reliable (নির্ভরযোগ্য)

T=Time Bound (সুনির্দিষ্ট সময়)

অর্থাৎ আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমরা যে সবাই কার্যক্রম গ্রহণ করব তা যখন সুনির্দিষ্ট হবে, পরিমাপযোগ্য হবে, অর্জনযোগ্য হবে, নির্ভরযোগ্য হবে এবং সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হবে তখনই প্রতিষ্ঠানটি স্মার্ট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হবে। একটা স্মার্ট স্কুলে পাঁচ ধরনের স্টেকহোল্ডার থাকে। স্মার্ট শিক্ষার্থী, স্মার্ট শিক্ষক, স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট অভিভাবক ও স্মার্ট মনিটরিং সিস্টেম। এই পাঁচ ধরনের স্টেকহোল্ডারদের সব কার্যক্রম যখন সুনিদির্ষ্ট হবে, পরিমাপযোগ্য হবে, অর্জনযোগ্য হবে, নির্ভরযোগ্য হবে এবং সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হবে তখন এ প্রতিষ্ঠানটি স্মার্ট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হবে।

প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক তৈরির কারখানা হলো আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সে কারণে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ে আসতে হবে স্মার্ট প্রযুক্তির আওতায়। প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল শিক্ষা ছাড়াও স্মার্ট বাংলাদেশ হয়তো গঠন করা যাবে তবে সেটা টেকসই হবে না। কারণ ডিজিটাল শিক্ষার বাইরে থাকা মানুষ স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম হবে না। স্মার্ট নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নতুন কারিকুলাম চালু করা হয়েছে। এই কারিকুলামের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা স্মার্ট শিক্ষার্থী তৈরি করতে সক্ষম হব।

স্মার্ট স্কুলের শিক্ষার্থীদের জানতে হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের বুদ্ধি ও ইচ্ছা শক্তি দিয়ে কিভাবে দৈনন্দিন কাজকর্ম ও বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। স্মার্ট স্কুলের শিক্ষার্থীরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইন্টারনেট অব থিংস, ব্লক চেইন, রোবটিক্স, মেশিন লার্নিং এবং ডাটা বিশ্লেষণ এসব প্রযুক্তির ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। সৃজনশীলতা, সুক্ষ চিন্তনদক্ষতা, খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা, সহোযোগিতা, সহমর্মিতা এবং যোগাযোগ দক্ষতার মতো সফট স্কিল স্মার্ট স্কুলের শিক্ষার্থীরা অর্জন করতে পারবে। এর ফলে সে ভালো মানুষ হিসেবে যে কোন পেশায় সমাজে সফলভাবে নিজের এবং অন্যের মঙ্গল করতে পারবে।

স্মার্ট স্কুলের শিক্ষক ও হবে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সমৃদ্ধ দক্ষ মানুষ। ইন্টারনেট অব থিংস, ব্লক চেইন, রোবটিক্স, মেশিন লার্নিং এবং ডাটা বিশ্লেষণ এসব প্রযুক্তির ব্যবহার করে দৈনন্দিন কাজকর্ম কিভাবে করতে হবে সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শেখানোর কত দক্ষতা একজন স্মার্ট শিক্ষকের থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা, সূক্ষ্ম চিন্তনদক্ষতা, খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং যোগাযোগ দক্ষতার মতো সফট স্কিল যদি তৈরি করতে পারেন তবেই তিনি স্মার্ট শিক্ষক। ছাত্র-ছাত্রীদের মনে কৌতূহল ও প্রশ্ন জাগিয়ে তোলাও একজন স্মার্ট শিক্ষকের বড় দায়িত্ব। তারচেয়েও বড় কাজ হলো ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে স্বপ্ন তৈরি করা এবং তাদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে যাওয়া।

স্মার্ট শিক্ষার্থী তৈরির ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবক কেউ হতে হবে স্মার্ট। স্মার্ট অভিভাবক তার সন্তানকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের প্রতিষ্ঠাগুলো ফলাফলকেন্দ্রীক হয়ে উঠেছে। যে প্রতিষ্ঠানের ফলাফল ভালো সেই প্রতিষ্ঠান ভালো। যে প্রতিষ্ঠানের ফলাফল খারাপ সেই প্রতিষ্ঠান খারাপ। এই মানদ- ঠিক করার ক্ষেত্রে অভিভাবক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু ভালো রেজাল্টই যে একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না এটা অভিভাবককে বুঝতে হবে। সব অভিভাবকের লক্ষ্য তার সন্তান যেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা বিসিএস অফিসার হয়।

সৃজনশীলতা, সূক্ষ্ম চিন্তনদক্ষতা, খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং যোগাযোগ দক্ষতার মতো সফট স্কিল কতটুকু উন্নত হলো সে বিষয়ে গুরুত্ব দেন না। ফলে যখন কোন ডাক্তারের মধ্যে নৈতিকতা থাকে না সে রোগী মারা যাওয়ার পরও শুধুমাত্র টাকার জন্য আরও ৫ দিন রোগীকে আইসিইউতে রাখে। নৈতিকতাহীন ইঞ্জিনিয়ার রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ঢালাই করে। নৈতিকতাহীন আমলা সোনার পরিবর্তে খাদ দিয়ে দেয়। তারচেয়েও বড় সমস্যা হলো প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির কারণে কে কোন পেশায় যাবে তা বলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে অভিভাবকদের বুঝতে হবে তার সন্তানটি যাতে যে কোন পরিস্থিতে খাপ খাওয়াতে পারে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। অনাগত যে কোন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে সে দিকে অভিভাবকদের অধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। যেহেতু শিক্ষর্থী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বাড়িতেই বেশি সময় থাকে। সে কারণে অভিভবক যদি সচেতন না হয় কোনভাবেই স্মার্ট শিক্ষার্থী তৈরি করা সম্ভব নয়।

স্মার্ট নাগরিক বলতে আমরা কী বুঝি? আর এই স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার কি কোন ভূমিকা আছে? থাকলে এটা কিভাবে?

অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ তার এক লেখায় বলেন, স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা হবে সম্পূর্ণ ক্লাউডনির্ভর। এখানে কোনো ধরনের হার্ডওয়ারের প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন শিক্ষাব্যবস্থাকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমত, স্কুল ইন ক্লাউড। দ্বিতীয়ত কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং তৃতীয়ত, রিজিওয়াল স্কুল ইন ক্লাউড। এগুলোর প্রতিটি একেকেটি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটিকে ট্রেনিং টুল হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে ট্রেনিয়ের বিষয়গুলো থাকবে। শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা এখান থেকে শিখতে পারবে।

স্কুল ইন ক্লাউডে প্রথমে একটি স্কুলকে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় নিয়ে এসে এখানে ভালো ভালো শিক্ষকের লেকচার আপলোড করা যেতে পারে। এই লেকচারগুলো অন্য শিক্ষকরা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সেগুলো তারা ব্যবহার করতে পারেন অথবা তারা নতুন করে তৈরি করতে পারেন। এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটি কিভাবে ব্যবহার করা হবে তাও এর মধ্যে থাকবে। এর ফলে খুব সহজে অনেক বেশি শিক্ষককে এই স্কুল ইন ক্লাউডের মাধ্যমে সংযুক্ত করে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যাবে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরাও জড়িত থাকবে। তারা লেকচারগুলো দেখবে, তাদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবে, অন্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা করবে। তিনি আরো বলেন আমরা যদি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে স্কুল ইন ক্লাউড, কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং রিজিওনাল স্কুল ইন ক্লাউডে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারি, তাহলে দেশের সব শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় চলে আসবে। আমি মনে করি স্যারের প্রস্তাবনা বিবেচনা করা যেতে পারে।

মোট কথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে আগামী প্রজন্ম স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। শিক্ষা বিভাগকে কম গুরুত্ব দিয়ে স্মার্ট নাগরিক তৈরির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। সে কারণে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে চাই স্মার্ট স্কুল।

[লেখক: উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার,

গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী]

back to top