বাংলাদেশে নদী মানে শুধু জলপ্রবাহ নয়, নদী মানে এক অভ্যন্তরীণ জীবনবোধ, এক সংস্কৃতির আধার, এক জাতির হৃদস্পন্দন। নদী মানে আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এই নদীপ্রেমী দেশ আজ এক দুঃসহ বাস্তবতার মুখোমুখি নদী দখল। নদীশাসন এবং তার অবাধ দখলের ফলে আজ আমাদের নিকটতম প্রাণপ্রবাহ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রশ্ন উঠছে, কবে থামবে নদী দখল?
নদী দখলের বিষয়টি শুধু যে পরিবেশগত সংকট, তা নয়, এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক এক জটিল মিশ্রণও। নদী বেদখল হচ্ছে, কারণ নদীর পাড়ে বাড়ি, ব্যবসা বা শিল্প স্থাপন করার জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবাধে ভূমি দখল করে নিচ্ছেন। ধীরে ধীরে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে এবং নদীর অস্তিত্বে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষত, দেশের বৃহত্তর নদীগুলোর পাড়ে অবৈধ দখল ও অবকাঠামো নির্মাণের ঘটনা বাড়ছে, যার ফলে জলপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে এবং নদীর পরিবেশীয় ভারসাম্য ভেঙে পড়ছে।
নদী দখল শুধু পরিবেশগত বিপর্যয়ই ডেকে আনে না, বরং এটি বাংলাদেশের জনগণের জীবিকার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। কৃষি, মৎস্য এবং নৌপরিবহন—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাত নদীর ওপর নির্ভরশীল। নদী বেদখলের কারণে এই তিনটি খাতের ওপর চাপ পড়ছে, যার ফলে দেশের লাখো মানুষ জীবনযাত্রার জন্য কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। কৃষকরা নদী ভাঙন এবং পানির স্বাভাবিক প্রবাহের অভাবে তাদের ফসল হারাচ্ছেন, মৎস্যজীবীরা পাচ্ছেন না প্রাকৃতিক জলাধার, আর নৌকার শ্রমিকরা খুঁজে পাচ্ছেন না নিরাপদ নৌপথ।
এই সংকটের শিকড় অনেক গভীরে। দেশে অবাধে নদী দখল এবং পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতারা, এবং অসংখ্য ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুরা দায়ী। কিছু ক্ষেত্রে, জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাবও এই সমস্যাকে আরও গভীর করছে। নদী দখলের কারণে কিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতি বাড়ছে, যেখানে একদিকে নদী সংকুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে সারা দেশের জলবায়ু পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
তবে নদী দখলের বিরুদ্ধে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নদী রক্ষায় উদ্যোগী হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে নদী রক্ষা আন্দোলনও উঠছে। সম্প্রতি কিছু এলাকায় নদী দখল উচ্ছেদে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। নদীকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকারের পাশাপাশি সচেতন নাগরিক সমাজেরও ভূমিকা বাড়ানো জরুরি। বিশেষভাবে নদী ও তার পাড়ে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান এবং এর প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
নদী আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের অস্তিত্ব। নদী বেদখল হলে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, জীবনযাত্রার মান, এবং পরিবেশের সামঞ্জস্যও বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাই আমাদের প্রশ্ন থাকা উচিত, কবে থামবে নদী দখল? উত্তরের জন্য আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে নদী তার প্রকৃত পথ ফিরে পায়, আর আমরা এক নতুন আশায় দেখতে পারি, নদীকে বাঁচানোর সংগ্রাম সফল হবে।
আবু রায়হান
শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ
বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশে নদী মানে শুধু জলপ্রবাহ নয়, নদী মানে এক অভ্যন্তরীণ জীবনবোধ, এক সংস্কৃতির আধার, এক জাতির হৃদস্পন্দন। নদী মানে আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এই নদীপ্রেমী দেশ আজ এক দুঃসহ বাস্তবতার মুখোমুখি নদী দখল। নদীশাসন এবং তার অবাধ দখলের ফলে আজ আমাদের নিকটতম প্রাণপ্রবাহ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রশ্ন উঠছে, কবে থামবে নদী দখল?
নদী দখলের বিষয়টি শুধু যে পরিবেশগত সংকট, তা নয়, এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক এক জটিল মিশ্রণও। নদী বেদখল হচ্ছে, কারণ নদীর পাড়ে বাড়ি, ব্যবসা বা শিল্প স্থাপন করার জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবাধে ভূমি দখল করে নিচ্ছেন। ধীরে ধীরে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে এবং নদীর অস্তিত্বে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষত, দেশের বৃহত্তর নদীগুলোর পাড়ে অবৈধ দখল ও অবকাঠামো নির্মাণের ঘটনা বাড়ছে, যার ফলে জলপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে এবং নদীর পরিবেশীয় ভারসাম্য ভেঙে পড়ছে।
নদী দখল শুধু পরিবেশগত বিপর্যয়ই ডেকে আনে না, বরং এটি বাংলাদেশের জনগণের জীবিকার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। কৃষি, মৎস্য এবং নৌপরিবহন—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাত নদীর ওপর নির্ভরশীল। নদী বেদখলের কারণে এই তিনটি খাতের ওপর চাপ পড়ছে, যার ফলে দেশের লাখো মানুষ জীবনযাত্রার জন্য কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। কৃষকরা নদী ভাঙন এবং পানির স্বাভাবিক প্রবাহের অভাবে তাদের ফসল হারাচ্ছেন, মৎস্যজীবীরা পাচ্ছেন না প্রাকৃতিক জলাধার, আর নৌকার শ্রমিকরা খুঁজে পাচ্ছেন না নিরাপদ নৌপথ।
এই সংকটের শিকড় অনেক গভীরে। দেশে অবাধে নদী দখল এবং পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতারা, এবং অসংখ্য ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুরা দায়ী। কিছু ক্ষেত্রে, জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাবও এই সমস্যাকে আরও গভীর করছে। নদী দখলের কারণে কিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতি বাড়ছে, যেখানে একদিকে নদী সংকুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে সারা দেশের জলবায়ু পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
তবে নদী দখলের বিরুদ্ধে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নদী রক্ষায় উদ্যোগী হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে নদী রক্ষা আন্দোলনও উঠছে। সম্প্রতি কিছু এলাকায় নদী দখল উচ্ছেদে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। নদীকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকারের পাশাপাশি সচেতন নাগরিক সমাজেরও ভূমিকা বাড়ানো জরুরি। বিশেষভাবে নদী ও তার পাড়ে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান এবং এর প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
নদী আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের অস্তিত্ব। নদী বেদখল হলে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, জীবনযাত্রার মান, এবং পরিবেশের সামঞ্জস্যও বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাই আমাদের প্রশ্ন থাকা উচিত, কবে থামবে নদী দখল? উত্তরের জন্য আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে নদী তার প্রকৃত পথ ফিরে পায়, আর আমরা এক নতুন আশায় দেখতে পারি, নদীকে বাঁচানোর সংগ্রাম সফল হবে।
আবু রায়হান
শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ