মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শীতে কী হবে ছিন্নমূল মানুষের?
শীতকাল কারো জন্য সুখকর ও আশীর্বাদ হলেও অনেকের জন্য অভিশাপ। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও বস্তিতে বসবাসরত মানুষের জন্য শীত ভয়াবহ অভিশাপ। শীতকালে এই মানুষগুলো কি যে মানবেতর জীবন-যাপন করে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বস্তিতে বসবাস করা মানুষগুলো একটু কষ্ট করেও হলেও কোন রকম ঝুপড়ি বা টিনের চালে মাথা গোঁজতে পারে। যে মানুষগুলো একবারেই অসহায়, যাদের মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই নেই তাদের অবস্থা বিভিষিকাময়। এ কারণেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি, কমলাপুর রেলস্টেশন, রেললাইন, মহাখালী, সায়েদাবাদ ও কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা, গুলিস্তান, মতিঝিল, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, বেড়িবাঁধসহ নগরীর প্রায় সর্বত্রই এ রকম ঝুপড়ি চোখে পড়ে। এগুলো মূলত আশ্রয়হীন মানুষের ডেরা। কিছু মানুষ সাময়িক ডেরার ব্যবস্থা করলেও কিছু মানুষের ডেরারো ব্যবস্থা থাকে না। তারা মূলত নিঃস্ব বা ছিন্নমূল মানুষ।
এই ছিন্নমূল মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচেই রাত্রিযাপন করে। অনেকই এই খোলা আকাশের নিচেই বিবাহ এবং সন্তান জন্মদান প্রর্যন্ত করেছে। শীতকাল এই মানুষগুলো কষ্ট করে শুধু তাই নয় বরং সব ঋতুতে বাস্তুহারা ছিন্নমূল মানুষগুলো সীমাহীন কষ্ট করে। তবে শীতকাল তাদের কষ্টটা বহুুগুনে বেড়ে যায়। শুধু ঢাকা শহর নয় বরং সব জেলা শহরগুলোর রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় এরকম অসহায় মানুষের হরহামেসা দেখা মেলে। জেলা শহর গুলোতে সংখ্যাটা কম হলেও ঢাকা শহরে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা অগণিত। বস্তিশুমারি ও ভাসমান লোকগণনা ২০১৪ সালের ফলাফলে সরকারি হিসাব মতে ১৭ বছরের ব্যবধানে বস্তিতে ঝুপড়িবাসী পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৭৫ শতাংশ কমেছে। তবে একই সময়ের ব্যবধানে বস্তিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে আট লাখে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর তথ্য মতে, সারা দেশে এখন ২২ লাখ ৩২ হাজার ১১৪ জন মানুষ বস্তিতে থাকে। আর দেশে ছিন্নমূল বা ভাসমান মানুষ সংখ্যা ১৬ হাজার ৬২১ জন। এর আগে ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ বস্তিশুমারি হয়েছিল।
বর্তমান শুমারি অনুযায়ী দেশে এখন বস্তির সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৪৩। এসব বস্তিতে মোট ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬৯টি পরিবার বাস করে।
বস্তি বললেই চোখে ঝুপড়িঘর ভেসে আসে। কিন্তু বিবিএসের শুমারি বলছে, বস্তির সাড়ে ৬২ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৮৫টি পরিবার কাঁচা বা টিনের ঘরে বাস করে। আর আধা পাকা ঘরে বাস করে ১ লাখ ৫৭ হাজার ২৪৩টি পরিবার। ঝুপড়িঘরে বাস করে মাত্র ৩৬ হাজার ৮৭৫টি পরিবার। ১৯৯৭ সালের বস্তিশুমারি অনুযায়ী, তখন ১ লাখ ৪২ হাজার পরিবার ঝুপড়িতে থাকত।
শুমারি অনুযায়ী, ১৭ বছরের ব্যবধানে ভাসমান বা ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এবার মাত্র ১৬ হাজার ৬২১ জন ভাসমানের খোঁজ পেয়েছে বিবিএস। ১৯৯৭ সালে ভাসমান মানুষ ছিল ৩২ হাজার ৮১ জন।
ছিন্নমূল মানুষের উন্নয়নে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন গুলো বলছে ঢাকায় বসবাসকারী সরকারি হিসাবের চেয়ে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। কার্যত নিঃস্ব তারা। তাদের খোলা আকাশ আর ঝুপড়ি বস্তিতেই বসবাস করতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এরাই এক পর্যায়ে শেষ আশ্রয় ও অন্নের সংস্থান করতে রাজধানীর ফুটপাত বা বস্তিতে আশ্রয় নেয়। সেখানে মাঝে মধ্যেই চলে উচ্ছেদ অভিযান। ভেঙে দেওয়া হয় খুপরি ঘরগুলো। অনেক সময় বস্তি তুলে দিয়ে সেখানে তৈরি করা হয় অট্টালিকা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। নগরীর ৩০ শতাংশ মানুষ ঘিঞ্জি পরিবেশে বাস করে। তাদের সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা বা গোসলের কোনো ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, বর্তমানে ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রতিদিন এক হাজার ৪১৮ জন মানুষ বাড়ছে। বছরে বাড়ছে পাঁচ লাখের বেশি। এর একটি বড় অংশের আশ্রয় হচ্ছে রাজধানীর বস্তিতে।
বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীতে যুক্ত মানুষের অধিকাংশই হতদরিদ্র। এরা রিকশা ও ভ্যান চালিয়ে বা দিনমজুরি করে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্য নিয়ে ঢাকায় আসে। বাসাবাড়ি বা উন্নত স্থাপনায় থাকার সাধ্য না থাকায় অধিকাংশই ওঠে বস্তিতে। পরে বস্তি থেকে উচ্ছেদ হয়ে ফুটপাতের বাসিন্দা হয় তারা। নিরুপায় হয়েই এই মানুষগুলো ফুটপাতে বসবাস করে।
এই দিকে করোনা মহামারীর প্রভাবে এই ছিন্নমূল মানুষগুলোর উপার্জন কমে গেছে। অত্যন্ত কষ্ট করে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে বেচে আছে এই মানুষগুলো। আসন্ন শীতে করোনার দ্বিতৃীয় ঢেউ আসার আশস্কা করছে অনেকেই। যদি করোনা বাংলাদেশে মহামারী আকার ধারন করে তাহলে এই ছিন্নমূল মানুষগুলোর কি হবে?
অধিকাংশ মানুষ করোনা কি তা জানেনা। সাস্থ্য সুরক্ষা মেনে কি ভাবে চলতে হবে সে ব্যাপারে তারা সচেতন না। সরকারের পর সরকার পরিবর্তন হয় কিন্তু এই গরিব অসহায় ছিন্নমূল মানুষগুলোর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ শীতের তীব্রতা বাড়ার আগেই ছিন্নমূল মানুষগুলোর করোনার জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি, শীতের কষ্ট এবং কাজের অভাব এ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে একটি মানুষ যেন শীতে কষ্ট না করে সে বিষয়ে সরকারের কর্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সেই প্রত্যাশা করছি।
আব্দুর রউফ
শিক্ষার্থী : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
রোববার, ১৫ নভেম্বর ২০২০
শীতে কী হবে ছিন্নমূল মানুষের?
শীতকাল কারো জন্য সুখকর ও আশীর্বাদ হলেও অনেকের জন্য অভিশাপ। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও বস্তিতে বসবাসরত মানুষের জন্য শীত ভয়াবহ অভিশাপ। শীতকালে এই মানুষগুলো কি যে মানবেতর জীবন-যাপন করে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বস্তিতে বসবাস করা মানুষগুলো একটু কষ্ট করেও হলেও কোন রকম ঝুপড়ি বা টিনের চালে মাথা গোঁজতে পারে। যে মানুষগুলো একবারেই অসহায়, যাদের মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই নেই তাদের অবস্থা বিভিষিকাময়। এ কারণেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি, কমলাপুর রেলস্টেশন, রেললাইন, মহাখালী, সায়েদাবাদ ও কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা, গুলিস্তান, মতিঝিল, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, বেড়িবাঁধসহ নগরীর প্রায় সর্বত্রই এ রকম ঝুপড়ি চোখে পড়ে। এগুলো মূলত আশ্রয়হীন মানুষের ডেরা। কিছু মানুষ সাময়িক ডেরার ব্যবস্থা করলেও কিছু মানুষের ডেরারো ব্যবস্থা থাকে না। তারা মূলত নিঃস্ব বা ছিন্নমূল মানুষ।
এই ছিন্নমূল মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচেই রাত্রিযাপন করে। অনেকই এই খোলা আকাশের নিচেই বিবাহ এবং সন্তান জন্মদান প্রর্যন্ত করেছে। শীতকাল এই মানুষগুলো কষ্ট করে শুধু তাই নয় বরং সব ঋতুতে বাস্তুহারা ছিন্নমূল মানুষগুলো সীমাহীন কষ্ট করে। তবে শীতকাল তাদের কষ্টটা বহুুগুনে বেড়ে যায়। শুধু ঢাকা শহর নয় বরং সব জেলা শহরগুলোর রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় এরকম অসহায় মানুষের হরহামেসা দেখা মেলে। জেলা শহর গুলোতে সংখ্যাটা কম হলেও ঢাকা শহরে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা অগণিত। বস্তিশুমারি ও ভাসমান লোকগণনা ২০১৪ সালের ফলাফলে সরকারি হিসাব মতে ১৭ বছরের ব্যবধানে বস্তিতে ঝুপড়িবাসী পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৭৫ শতাংশ কমেছে। তবে একই সময়ের ব্যবধানে বস্তিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে আট লাখে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর তথ্য মতে, সারা দেশে এখন ২২ লাখ ৩২ হাজার ১১৪ জন মানুষ বস্তিতে থাকে। আর দেশে ছিন্নমূল বা ভাসমান মানুষ সংখ্যা ১৬ হাজার ৬২১ জন। এর আগে ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ বস্তিশুমারি হয়েছিল।
বর্তমান শুমারি অনুযায়ী দেশে এখন বস্তির সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৪৩। এসব বস্তিতে মোট ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬৯টি পরিবার বাস করে।
বস্তি বললেই চোখে ঝুপড়িঘর ভেসে আসে। কিন্তু বিবিএসের শুমারি বলছে, বস্তির সাড়ে ৬২ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৮৫টি পরিবার কাঁচা বা টিনের ঘরে বাস করে। আর আধা পাকা ঘরে বাস করে ১ লাখ ৫৭ হাজার ২৪৩টি পরিবার। ঝুপড়িঘরে বাস করে মাত্র ৩৬ হাজার ৮৭৫টি পরিবার। ১৯৯৭ সালের বস্তিশুমারি অনুযায়ী, তখন ১ লাখ ৪২ হাজার পরিবার ঝুপড়িতে থাকত।
শুমারি অনুযায়ী, ১৭ বছরের ব্যবধানে ভাসমান বা ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এবার মাত্র ১৬ হাজার ৬২১ জন ভাসমানের খোঁজ পেয়েছে বিবিএস। ১৯৯৭ সালে ভাসমান মানুষ ছিল ৩২ হাজার ৮১ জন।
ছিন্নমূল মানুষের উন্নয়নে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন গুলো বলছে ঢাকায় বসবাসকারী সরকারি হিসাবের চেয়ে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। কার্যত নিঃস্ব তারা। তাদের খোলা আকাশ আর ঝুপড়ি বস্তিতেই বসবাস করতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এরাই এক পর্যায়ে শেষ আশ্রয় ও অন্নের সংস্থান করতে রাজধানীর ফুটপাত বা বস্তিতে আশ্রয় নেয়। সেখানে মাঝে মধ্যেই চলে উচ্ছেদ অভিযান। ভেঙে দেওয়া হয় খুপরি ঘরগুলো। অনেক সময় বস্তি তুলে দিয়ে সেখানে তৈরি করা হয় অট্টালিকা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। নগরীর ৩০ শতাংশ মানুষ ঘিঞ্জি পরিবেশে বাস করে। তাদের সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা বা গোসলের কোনো ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, বর্তমানে ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রতিদিন এক হাজার ৪১৮ জন মানুষ বাড়ছে। বছরে বাড়ছে পাঁচ লাখের বেশি। এর একটি বড় অংশের আশ্রয় হচ্ছে রাজধানীর বস্তিতে।
বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীতে যুক্ত মানুষের অধিকাংশই হতদরিদ্র। এরা রিকশা ও ভ্যান চালিয়ে বা দিনমজুরি করে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্য নিয়ে ঢাকায় আসে। বাসাবাড়ি বা উন্নত স্থাপনায় থাকার সাধ্য না থাকায় অধিকাংশই ওঠে বস্তিতে। পরে বস্তি থেকে উচ্ছেদ হয়ে ফুটপাতের বাসিন্দা হয় তারা। নিরুপায় হয়েই এই মানুষগুলো ফুটপাতে বসবাস করে।
এই দিকে করোনা মহামারীর প্রভাবে এই ছিন্নমূল মানুষগুলোর উপার্জন কমে গেছে। অত্যন্ত কষ্ট করে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে বেচে আছে এই মানুষগুলো। আসন্ন শীতে করোনার দ্বিতৃীয় ঢেউ আসার আশস্কা করছে অনেকেই। যদি করোনা বাংলাদেশে মহামারী আকার ধারন করে তাহলে এই ছিন্নমূল মানুষগুলোর কি হবে?
অধিকাংশ মানুষ করোনা কি তা জানেনা। সাস্থ্য সুরক্ষা মেনে কি ভাবে চলতে হবে সে ব্যাপারে তারা সচেতন না। সরকারের পর সরকার পরিবর্তন হয় কিন্তু এই গরিব অসহায় ছিন্নমূল মানুষগুলোর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ শীতের তীব্রতা বাড়ার আগেই ছিন্নমূল মানুষগুলোর করোনার জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি, শীতের কষ্ট এবং কাজের অভাব এ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে একটি মানুষ যেন শীতে কষ্ট না করে সে বিষয়ে সরকারের কর্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সেই প্রত্যাশা করছি।
আব্দুর রউফ
শিক্ষার্থী : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়