মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
আর্সেনিক এক নীরব ঘাতক
পানির অপর নাম জীবন। গ্রামাঞ্চলে বাড়ির পাশের নলকূপের পানি সাধারণত নিরাপদ মনে করেই মানুষ পানি পান করে। নলকূপের পানিতে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক রয়েছে কিনা পরীক্ষা না করে বোঝার উপায় নেই। আর্সেনিক মূলত এক প্রকার রাসায়নিক উপাদান। পানিতে স্বল্প মাত্রায় আর্সেনিক সব সময় থাকে। কিন্তু যখনই এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখনই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতি লিটার পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা ০.০১ মিলিগ্রাম এবং বাংলাদেশ পানির সহনীয় মাত্রা ০.০৫ মিলিগ্রাম। সে প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি। বর্তমানে আমাদের দেশে আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করছে প্রায় দুই কোটি মানুষ। ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৪ জেলায় নলকূপের পানিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক পাওয়া গেছে। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি খুবই কম। ২০০৩ সালে দেশের ২৯% নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া যায়। এছাড়া এখন পর্যন্ত দেশে আর কোনো সমীক্ষা হয়নি।
২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘গণ বিষের’ উদাহরণ বাংলাদেশের আর্সেনিক পরিস্থিতি। বাংলাদেশের প্রতিবছর আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার কারণে ৪৩ হাজার মানুষ মারা যায়। তবে এ তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু আর্সেনিকের কারণে বছরে কত মানুষের মৃত্যু হয় তার কোন পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিতে পারেনি। ২০১২ সালে সরকার একটি জরিপ করেছিল। তখন ৬৫ হাজার ৯১০ জন আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর আর্সেনিক সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। বরং দিন দিন এই নীরব ঘাতকের তৎপরতা বেড়ে চলছে, যা আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা। আর্সেনিক দূষিত হয় মূলত প্রাকৃতিক কারণে। মাটির নিচে আর্সেনিকের খনিজ থাকে। এই খনিজ ভূ-গর্ভের পানির স্তরের সংস্পর্শে এলে তা পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে।
এছাড়া আমাদের দেশে কৃষি উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করে। ফলে বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে দূষিত করছে নদী, নালা, খাল-বিল এবং সমুদ্রের পানি। এই অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার আর্সেনিক দূষণের অন্যতম কারণ। আর্সেনিক বিষক্রিয়া তাৎক্ষণিক বুঝা যায় না। সেটা বোঝা যায় কয়েক বছর পর। আর্সেনিকযুক্ত পানি দীর্ঘদিন পান করলে ধীরে ধীরে আমাদের শরীরে নানা রকম রোগের উপসর্গ তৈরি করে। আর্সেনিকের কোন গন্ধও নেই। তাই আমরা সহজে তা উপলব্ধি করতে পারিনা। এক পর্যায়ে এসে আমরা লক্ষ করতে পারি হাতে-পায়ে এক ধরনের ক্ষত বা ঘা দেখা দেয়, যা আর্সেনিকোসিস রোগ নামে পরিচিত। আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর জিহ্বা, মাড়ি, ঠোঁট লাল ভাব দেখা দেয় এবং ক্ষুধামন্দা, অরুচি, বমিবমি ভাব হয়। এমনকি ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে। যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই আর্সেনিক দূষণ সমাধানে চাই সরকারের কঠোর পদক্ষেপ। আর সেই পদক্ষেপগুলো বাস্তবে রূপান্তরিত করে আর্সেনিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।
গভীর নলকূপের খাবারের পানি এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করতে হবে। বৃষ্টির পানিতে আর্সেনিক থাকার আশঙ্কা নেই। তাই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে হবে। গ্রামাঞ্চলের পুকুরের পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করতে হবে। নলকূপের পানি পরীক্ষা করে ব্যবহার করতে হবে এবং আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলো লাল রং লাগিয়ে চিহ্নিত করে দিতে হবে। যাতে করে সবাই সচেতন থাকতে পারে এই নীরব ঘাতক থেকে। রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে আর্সেনিক সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং আর্সেনিক এর কারণে কী কী ক্ষতি হতে পারে তা উপস্থাপন করতে হবে। তাহলে মানুষ সচেতন হতে বাধ্য হবে। সুতরাং পরিশেষে বলতে চাই, আর্সেনিক রোগ কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। তাই একজন থেকে অন্যজনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তা কেবল খাবারের পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাই জনগণকে অধিক সচেতন হতে হবে এবং নিরাপদ পানি গ্রহণ করতে হবে। যেসব এলাকায় আর্সেনিকের মাত্রা বেশি, সেই আক্রান্ত এলাকাগুলোতে সরকারকে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে সম্ভব এই নীরব ঘাতক থেকে রেহাই পাওয়া। কেননা, সুন্দর ও সুস্থতা জীবন সবার কাম্য।
সায়েম আহমাদ
পিয়াজ আর কত ঝাঁজ ছড়াবে
অর্থনীতিবিদরা মুদ্রাস্ফীতিকে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে গণ্য করেন। কারণ মুদ্রাস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, মধ্য ও নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দেয় এবং ভোক্তাদের জীবনমানকে দুর্বিষহ করে তোলে। মানুষ একসময় হতাশায় নিমজ্জিত হয় এবং সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। পিয়াজের মূল্যবৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির অস্থিরতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের পিয়াজ ও আলুর মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পাইকারি বাজারে পিয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি ডাবল সেঞ্চুরি অতিক্রম করেছিল এবং মফস্বল এলাকায় এখনও সেঞ্চুরির কাছাকাছি অবস্থান করছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, পিয়াজের মূল্য সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। এগুলো যে ফাঁকা বুলি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাজারে শুধু পিয়াজই ঝাঁজ ছড়ায়নি। পিয়াজের পর চাল এবং চালের পর আলু উত্তাপ ছড়াচ্ছে। শাকসবজির বাজারেও আগুন। দ্রব্যমূল্যের আগুনে জ্বলছে ভোক্তা সাধারণ। করোনা মহামারীর মধ্যে এমনিতেই সব মানুষের আয় রোজগার কম। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। কৃষকও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এর মধ্যে লাভবান হচ্ছে মধ্যসত্ত্বভোগী ফরিয়া ও সিন্ডিকেট চক্র। তাদের দৌরাত্ম এতটাই প্রবল, এদের হাতে জিম্মি খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সাধারণ। সরকার যতই বলুক তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, আসলে মনে হয় সিন্ডিকেট চক্র সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার যা করছে, তা পুরোটাই লোক দেখানো নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে দ্রব্যমূল্যের উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কৃষকরা পিয়াজসহ অন্যান্য শস্য উৎপাদন করে ন্যায্য মূল্য পায় না, ফলে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। সরকার যদি কৃষকদের ন্যায্য মূল্য ও প্রণোদনা দিত তাহলে পিয়াজের ঝাঁজ এত হতো না।
মো. জিল্লুর রহমান
সতীশ সরকার রোড,
গেন্ডারিয়া, ঢাকা।
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
আর্সেনিক এক নীরব ঘাতক
পানির অপর নাম জীবন। গ্রামাঞ্চলে বাড়ির পাশের নলকূপের পানি সাধারণত নিরাপদ মনে করেই মানুষ পানি পান করে। নলকূপের পানিতে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক রয়েছে কিনা পরীক্ষা না করে বোঝার উপায় নেই। আর্সেনিক মূলত এক প্রকার রাসায়নিক উপাদান। পানিতে স্বল্প মাত্রায় আর্সেনিক সব সময় থাকে। কিন্তু যখনই এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখনই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতি লিটার পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা ০.০১ মিলিগ্রাম এবং বাংলাদেশ পানির সহনীয় মাত্রা ০.০৫ মিলিগ্রাম। সে প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি। বর্তমানে আমাদের দেশে আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করছে প্রায় দুই কোটি মানুষ। ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৪ জেলায় নলকূপের পানিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক পাওয়া গেছে। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি খুবই কম। ২০০৩ সালে দেশের ২৯% নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া যায়। এছাড়া এখন পর্যন্ত দেশে আর কোনো সমীক্ষা হয়নি।
২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘গণ বিষের’ উদাহরণ বাংলাদেশের আর্সেনিক পরিস্থিতি। বাংলাদেশের প্রতিবছর আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার কারণে ৪৩ হাজার মানুষ মারা যায়। তবে এ তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু আর্সেনিকের কারণে বছরে কত মানুষের মৃত্যু হয় তার কোন পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিতে পারেনি। ২০১২ সালে সরকার একটি জরিপ করেছিল। তখন ৬৫ হাজার ৯১০ জন আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর আর্সেনিক সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। বরং দিন দিন এই নীরব ঘাতকের তৎপরতা বেড়ে চলছে, যা আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা। আর্সেনিক দূষিত হয় মূলত প্রাকৃতিক কারণে। মাটির নিচে আর্সেনিকের খনিজ থাকে। এই খনিজ ভূ-গর্ভের পানির স্তরের সংস্পর্শে এলে তা পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে।
এছাড়া আমাদের দেশে কৃষি উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করে। ফলে বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে দূষিত করছে নদী, নালা, খাল-বিল এবং সমুদ্রের পানি। এই অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার আর্সেনিক দূষণের অন্যতম কারণ। আর্সেনিক বিষক্রিয়া তাৎক্ষণিক বুঝা যায় না। সেটা বোঝা যায় কয়েক বছর পর। আর্সেনিকযুক্ত পানি দীর্ঘদিন পান করলে ধীরে ধীরে আমাদের শরীরে নানা রকম রোগের উপসর্গ তৈরি করে। আর্সেনিকের কোন গন্ধও নেই। তাই আমরা সহজে তা উপলব্ধি করতে পারিনা। এক পর্যায়ে এসে আমরা লক্ষ করতে পারি হাতে-পায়ে এক ধরনের ক্ষত বা ঘা দেখা দেয়, যা আর্সেনিকোসিস রোগ নামে পরিচিত। আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর জিহ্বা, মাড়ি, ঠোঁট লাল ভাব দেখা দেয় এবং ক্ষুধামন্দা, অরুচি, বমিবমি ভাব হয়। এমনকি ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে। যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই আর্সেনিক দূষণ সমাধানে চাই সরকারের কঠোর পদক্ষেপ। আর সেই পদক্ষেপগুলো বাস্তবে রূপান্তরিত করে আর্সেনিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।
গভীর নলকূপের খাবারের পানি এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করতে হবে। বৃষ্টির পানিতে আর্সেনিক থাকার আশঙ্কা নেই। তাই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে হবে। গ্রামাঞ্চলের পুকুরের পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করতে হবে। নলকূপের পানি পরীক্ষা করে ব্যবহার করতে হবে এবং আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলো লাল রং লাগিয়ে চিহ্নিত করে দিতে হবে। যাতে করে সবাই সচেতন থাকতে পারে এই নীরব ঘাতক থেকে। রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে আর্সেনিক সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং আর্সেনিক এর কারণে কী কী ক্ষতি হতে পারে তা উপস্থাপন করতে হবে। তাহলে মানুষ সচেতন হতে বাধ্য হবে। সুতরাং পরিশেষে বলতে চাই, আর্সেনিক রোগ কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। তাই একজন থেকে অন্যজনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তা কেবল খাবারের পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাই জনগণকে অধিক সচেতন হতে হবে এবং নিরাপদ পানি গ্রহণ করতে হবে। যেসব এলাকায় আর্সেনিকের মাত্রা বেশি, সেই আক্রান্ত এলাকাগুলোতে সরকারকে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে সম্ভব এই নীরব ঘাতক থেকে রেহাই পাওয়া। কেননা, সুন্দর ও সুস্থতা জীবন সবার কাম্য।
সায়েম আহমাদ
পিয়াজ আর কত ঝাঁজ ছড়াবে
অর্থনীতিবিদরা মুদ্রাস্ফীতিকে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে গণ্য করেন। কারণ মুদ্রাস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, মধ্য ও নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দেয় এবং ভোক্তাদের জীবনমানকে দুর্বিষহ করে তোলে। মানুষ একসময় হতাশায় নিমজ্জিত হয় এবং সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। পিয়াজের মূল্যবৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির অস্থিরতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের পিয়াজ ও আলুর মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পাইকারি বাজারে পিয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি ডাবল সেঞ্চুরি অতিক্রম করেছিল এবং মফস্বল এলাকায় এখনও সেঞ্চুরির কাছাকাছি অবস্থান করছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, পিয়াজের মূল্য সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। এগুলো যে ফাঁকা বুলি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাজারে শুধু পিয়াজই ঝাঁজ ছড়ায়নি। পিয়াজের পর চাল এবং চালের পর আলু উত্তাপ ছড়াচ্ছে। শাকসবজির বাজারেও আগুন। দ্রব্যমূল্যের আগুনে জ্বলছে ভোক্তা সাধারণ। করোনা মহামারীর মধ্যে এমনিতেই সব মানুষের আয় রোজগার কম। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। কৃষকও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এর মধ্যে লাভবান হচ্ছে মধ্যসত্ত্বভোগী ফরিয়া ও সিন্ডিকেট চক্র। তাদের দৌরাত্ম এতটাই প্রবল, এদের হাতে জিম্মি খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সাধারণ। সরকার যতই বলুক তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, আসলে মনে হয় সিন্ডিকেট চক্র সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার যা করছে, তা পুরোটাই লোক দেখানো নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে দ্রব্যমূল্যের উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কৃষকরা পিয়াজসহ অন্যান্য শস্য উৎপাদন করে ন্যায্য মূল্য পায় না, ফলে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। সরকার যদি কৃষকদের ন্যায্য মূল্য ও প্রণোদনা দিত তাহলে পিয়াজের ঝাঁজ এত হতো না।
মো. জিল্লুর রহমান
সতীশ সরকার রোড,
গেন্ডারিয়া, ঢাকা।