মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
পারিবারিক সহিংসতা রোধে চাই সচেতনতা
পরিবার হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। যেখানে প্রাচীনকাল থেকে পরিবার তার সদস্যদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। পরিবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা নিঃস্বার্থে সদস্যদের সুরক্ষা দিয়ে আসছে। তবে করোনাকালীন মহামারী মধ্যে পারিবারিক সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া, মাদকাসক্তি ও যৌতুকের কারণে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। আবার পরিবারের সদস্যদের প্ররোচনায় কেউ আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এ সহিংসতা থেকে শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না। পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেলেও আমাদের সমাজে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। পারিবারিক সহিংসতা একটি অপরাধ এটি বেশিরভাগ মানুষ মানতে রাজি নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার খুবই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
আমাদের সমাজের নারীরা সহিংসতার শিকার বা অপমানিত হলে তা সহজে প্রকাশ করতে চান না। নিরাপত্তা ও মান-সম্মানের ভয়ে সহিংসতার শিকার নারীরা আদালতে মামলা করেন না। ফলে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাগুলো প্রকাশ না পাওয়ায় আইন থাকার পরেও সুফল মিলছে না। দেশে পারিবারিক সহিংসতা রোধে আইন থাকলেও সে আইনের প্রয়োগ করা হয় না। আর সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার কারণে আইনের সুফল পাচ্ছেন না। দেশে ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। তবে এ আইন দ্বারা নারী ও শিশু নির্যাতন রোধ করা যাচ্ছিল না।
এজন্য পারিবারিক সহিংসতা রোধে ৩৯টি মানবাধিকার সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ নাগরিক জোট। এ জোটের দাবির মুখে সরকার ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০ প্রণয়ন করে। দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে যত আইন ছিল সব শাস্তিনির্ভর। আইনগুলোর মাধ্যমে অপরাধীকে শুধু জেল-জরিমানার বিধান ছিল। তবে ২০১০ সালের প্রণীত আইনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা করা। যদি কোন নারী ও শিশু নির্যাতনের স্বীকার হয় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এই আইন তাকে সুরক্ষা দেবে।
পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে যেমন, রক্ত সম্পর্কীয়, বৈবাহিক সম্পর্কীয়, দত্তক বা যৌথ পরিবারের সদস্য এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক পরিবারের অপর কোন নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে। তবে এ আইনের আওতায় শাস্তিগুলো জামিনযোগ্য ও ও আপসযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। কারণ আইনের উদ্দেশ্য হলো পারিবারিক সহিংসতা কমিয়ে আনা বা প্রতিরোধ করা।
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০ দেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনের তুলনায় আধুনিক ও আলাদা। আইনটির উপকারভোগী ও বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ অনেক সময় পুরনো ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার জন্য অনেক সময় এর সুষ্ঠু প্রয়োগ হয় না। আর বিষয়গুলো পারিবারিক হওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আগাম কোন তথ্য থাকে না। ফলে পারিবারিক সহিংসতা কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের। কোন পরিবারে যদি দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রী বা অন্য কোন সদস্যের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব থাকে তাহলে সেটা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবেশী বা পরিবারে পারিবারিক কলহ বা সহিংসতা নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হলে বিরোধীয় উভয়পক্ষকে পারিবারিক সহিংসতা আইনের দিকগুলো জানাতে হবে। পারিবারিক সহিংসতা রোধে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে পারিবারিক সহিংসতা রোধে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
আবদুর রউফ
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০২০
পারিবারিক সহিংসতা রোধে চাই সচেতনতা
পরিবার হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। যেখানে প্রাচীনকাল থেকে পরিবার তার সদস্যদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। পরিবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা নিঃস্বার্থে সদস্যদের সুরক্ষা দিয়ে আসছে। তবে করোনাকালীন মহামারী মধ্যে পারিবারিক সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া, মাদকাসক্তি ও যৌতুকের কারণে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। আবার পরিবারের সদস্যদের প্ররোচনায় কেউ আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এ সহিংসতা থেকে শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না। পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেলেও আমাদের সমাজে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। পারিবারিক সহিংসতা একটি অপরাধ এটি বেশিরভাগ মানুষ মানতে রাজি নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার খুবই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
আমাদের সমাজের নারীরা সহিংসতার শিকার বা অপমানিত হলে তা সহজে প্রকাশ করতে চান না। নিরাপত্তা ও মান-সম্মানের ভয়ে সহিংসতার শিকার নারীরা আদালতে মামলা করেন না। ফলে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাগুলো প্রকাশ না পাওয়ায় আইন থাকার পরেও সুফল মিলছে না। দেশে পারিবারিক সহিংসতা রোধে আইন থাকলেও সে আইনের প্রয়োগ করা হয় না। আর সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার কারণে আইনের সুফল পাচ্ছেন না। দেশে ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। তবে এ আইন দ্বারা নারী ও শিশু নির্যাতন রোধ করা যাচ্ছিল না।
এজন্য পারিবারিক সহিংসতা রোধে ৩৯টি মানবাধিকার সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ নাগরিক জোট। এ জোটের দাবির মুখে সরকার ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০ প্রণয়ন করে। দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে যত আইন ছিল সব শাস্তিনির্ভর। আইনগুলোর মাধ্যমে অপরাধীকে শুধু জেল-জরিমানার বিধান ছিল। তবে ২০১০ সালের প্রণীত আইনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা করা। যদি কোন নারী ও শিশু নির্যাতনের স্বীকার হয় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এই আইন তাকে সুরক্ষা দেবে।
পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে যেমন, রক্ত সম্পর্কীয়, বৈবাহিক সম্পর্কীয়, দত্তক বা যৌথ পরিবারের সদস্য এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক পরিবারের অপর কোন নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে। তবে এ আইনের আওতায় শাস্তিগুলো জামিনযোগ্য ও ও আপসযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। কারণ আইনের উদ্দেশ্য হলো পারিবারিক সহিংসতা কমিয়ে আনা বা প্রতিরোধ করা।
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০ দেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনের তুলনায় আধুনিক ও আলাদা। আইনটির উপকারভোগী ও বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ অনেক সময় পুরনো ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার জন্য অনেক সময় এর সুষ্ঠু প্রয়োগ হয় না। আর বিষয়গুলো পারিবারিক হওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আগাম কোন তথ্য থাকে না। ফলে পারিবারিক সহিংসতা কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের। কোন পরিবারে যদি দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রী বা অন্য কোন সদস্যের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব থাকে তাহলে সেটা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবেশী বা পরিবারে পারিবারিক কলহ বা সহিংসতা নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হলে বিরোধীয় উভয়পক্ষকে পারিবারিক সহিংসতা আইনের দিকগুলো জানাতে হবে। পারিবারিক সহিংসতা রোধে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে পারিবারিক সহিংসতা রোধে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
আবদুর রউফ