সা’দাত হাসান মান্টোর গল্প
অনুবাদ:হাইকেল হাশমী
প্ল্যাটফর্মে শাহাব, সাইদ আর আব্বাস চেঁচামেচি করছে। আমার এই বন্ধুরা আমাকে ছাড়তে স্টেশনে এসেছে। ট্রেন আস্তে আস্তে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলতে শুরু করছে তখনই শাহাব জানালা দিয়ে আমাকে বললো, “আব্বাস বলছে বাসায় গিয়ে নিজে ‘উনি’কে আমাদের সালাম দিও”।
“ও তো পাগল, আচ্ছা খোদা হাফেজ”। আমি আমার আলিগড় কলেজের বন্ধুদের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি এই কথা বলে তার সাথে হাত মিলিয়ে আমার সিটে বসে পড়লাম। এই শহর আলিগড় যার সুন্দর বিদ্যায় ভরপুর পরিবেশ থেকে আমি বেশ অনেক দিনের জন্য দূরে সরে যাচ্ছি। আমার মন ভীষণ খারাপ। যদিও শাহাব কলেজে অনেক বিরক্ত করে কিন্তু ওকে ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুভূতি এখন পীড়াদায়ক মনে হচ্ছে। আমার চিন্তা হলো যে অমৃতসরে আমি এমন জব্বর বন্ধুকুল পাবো কি না। এই দুঃখের অনুভব করে আমি আমার মাথাকে ঝাঁকি দিলাম যেন আমার মস্তিষ্কের অন্ধ কূপ থেকে এই ভাবনাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারি। আমি আমার পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটি সিগারেট ধরিয়ে, আমার মাথা সিটের পিছের অংশে ঠেকিয়ে, সিগারেটের ধোঁয়া দিয়ে গোল আকৃতি বানানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম। সিটের অন্য প্রান্তে আর একজন বসে আছে। মানসিকভাবে আমি একদম ফাঁকা, জানি না কেন? সিগারেটের ধোঁয়া যেটা আমি আমার মুখ দিয়ে গোল আকৃতি করে বের করার চেষ্টা করছি বাতাসের কারণে জানালা দিয়ে কোনো নৃত্যরত নর্তকীর মতো বের হয়ে যাচ্ছে। আমি অনেকক্ষণ কাঁপা কাঁপা ধোঁয়া দেখতে থাকলাম আর চিন্তা করলাম- এটাই নাচের সম্পূর্ণতা।
“নাচের সম্পূর্ণতা”। এই বাক্য হঠাৎ আমার মাথায় জন্ম নিয়েছে। আমি আমার এই অনন্য ভাবনা থেকে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
“আমি কি পাগল?”
ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে এখন ময়দানে দৌড়াচ্ছে। লোহার রেললাইন পিছনে রয়ে গেছে অথবা দেখা যাচ্ছে না। রেললাইনের পাশে গাছগুলো মনে হচ্ছে দৌড়িয়ে একের অন্যকে ধরার চেষ্টা করছে।
“নাচের সম্পূর্ণতা”।
আমি গাছে দৌড়ঝাপ দেখছি। হঠাৎ এই বিস্ময়কর বাক্য শুনে আমি চমকে উঠলাম। ওটা বোধয় আমার সহযাত্রী জিজ্ঞেস করেছে। নিশ্চয় সেই এই অদ্ভুত প্রশ্ন আমাকেই করেছে।
“আপনি কি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন?”
“জি হ্যাঁ, আমি কি পাগল?”
সে আর একবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো। ট্রেন ছাড়ার আগে আমি শাহাবকে বলেছিলাম, “সে তো একদম পাগল, আচ্ছা খোদা হাফেজ”।
আমার মনে হয় এই ভদ্রলোক মনে করেছে যে আমি তাকে পাগল বলেছি। আমি হেসে দিলাম এবং অনেক সন্মানের সাথে তাকে উত্তর দিলাম, “আপনি বোধহয় ভুল বুঝেছেন। ট্রেন ছাড়ার সময় আমি আমার বন্ধুকে পাগল বলে সম্বোধন করেছিলাম। সে তো পুরা পাগল। মাফ করবেন এই কথা আমি আপনাকে বলিনি”।
আমার এই যৌক্তিক উত্তর শুনে আমার সহযাত্রী যে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো চুপ হয়ে গেল। এটা দেখে আমি আশ্বস্ত হলাম যে কথাটা আর বাড়েনি, ব্যাপারটি এখানেই শেষ হয়ে গেল। আসলে আমি একটু গরম মেজাজের মানুষ, অনেক সময় খুব ছোট কথায় আমার মাথা গরম হয়ে যায়। এর আগেও ভ্রমণের সময় অন্য যাত্রীদের সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে। আমি এই ঝগড়ার তিক্ত পরিণাম জানি তাই এই ব্যপারের এখানেই মীমাংসা হয়ে গেল তাতেই আমি খুশি। আমি তার সাথে একটি ভালো সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে কথাবার্তা শুরু করলাম। সাধারণ কথাবার্তা যেটা সহযাত্রীদের সাথে বলা হয়।
“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?” আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
“আমি? আমি দিল্লি যাচ্ছি। আপনি কোথায় নামবেন?”
“আমার রাস্তা অনেক দীর্ঘ, আমি আমৃতসর যাচ্ছি”।
“আমৃতসর?”
“জি, হ্যাঁ”।
“আমি কয়েকবার ওই শহরে গিয়েছি। বেশ জাঁকজমক পূর্ণ জায়গা। কাপড় ব্যবসার কেন্দ্র। আপনি কি ওখানে কলেজে পড়েন?”
“জি”। আমি মিথ্যা কথা বললাম কারণ ওর প্রশ্ন আমার কাছে খুব বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়নি। তাছাড়া আমার ভয় যদি ওকে বলতাম যে আমি আলীগড় কলেজে পড়ি তখন সে আমাকে কতো রকমের প্রশ্ন করতো, কী পড়ি, কোন বিষয়ে পড়ি, কলেজে কী কী বিভাগ আছে। একবার এমন আমার সাথে ঘটেছিল যখন একজন সহযাত্রী আমাকে এই সব প্রশ্ন করে আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল।
“কোন কলেজে? আমার মনে হয় ওখানে অনেকগুলো কলেজ আছে”, সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো।
আমি সাথে সাথে উত্তর দিলাম, “খালসা কলেজে”।
“আচ্ছা ওটাই যেটা অ্যান্ডরসন বানিয়েছিল”।
“অ্যান্ডরসন, কিন্তু ওটা তো শিখদের কলেজ”, আমি বিস্ময়ের সাথে উত্তর দিলাম।
“আমার জানা আছে মিস্টার, অ্যান্ডরসন শিখ হয়ে গিয়েছিল। আপনি বোধয় শিখ ইতিহাস পড়েননি”।
“হতে পারে”।
এই কথোপকথন আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং মনে হলো না তাই আমি জানালা থেকে বাইরে দেখতে লাগলাম। ট্রেন এখন ইউ-পির বিশাল খোলা জায়গা দিয়ে নির্বিঘেœ নিজের গন্তব্যের দিকে ছুটে যাচ্ছে। লোহার ভারি চাকা আর লোহার রেললাইন, মাঝে মাঝে বিশাল কাঠের টুকরা তার উপর চলন্ত ট্রেন একটি অদ্ভুত একই রকমের শব্দ সৃষ্টি করে চলছে। এই শব্দের অনুরণন ট্রেন লাইনের পাশে গাছ আর খাম্বা থেকে বাড়ি খেয়ে সন্ধ্যা বেলার ঠা-া বাতাসে এক রকমের কম্পন সৃষ্টি করছে।
আমি এমনি এমনি আমার হাত জানালা থেকে বের করলাম আর বাতাসের জোরালো তরঙ্গ আমার হাতকে বিপরীত দিকে ঠেলে দিলো। এই ঠা-া বাতাস আমার কাছে খুব ভালো লাগলো। তাই আমি এই খেলায় ব্যস্ত হয়ে আমার সহযাত্রী আর তার কথোপকথন সব কিছু ভুলে গেলাম। আমার হাতে বাতাসের চাপ বেশ আরামদায়ক কিন্তু একটু পরে আমি এই খেলা থেকে ক্লান্ত হয়ে গেলাম আর বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। অস্ত যাওয়া সূর্যের কিরণ মাঠে বিভিন্ন জায়গায় গর্তে জমা পানির উপর জরির কাজের মতো ঝিলমিল করছে। মনে হলো যেন ধূসর মাটিতে কেউ বড়ো বড়ো আয়না লাগিয়ে দিয়েছে। ইলেট্রিকের তারের উপর নীলকণ্ঠ আর চড়–ই পাখি লাইন করে বসে আছে। এই দৃশ্যটা খুবই মনোরম।
“আমি কি পাগল?”
এই শব্দ আমার মনের উপর ছেটানো রঙকে এলোমেলো করে দিল যেটা একটি মনোরম ছবি আঁকতে যাচ্ছিল। ওই সহযাত্রী আমাকে এই প্রশ্নটি করেছে। আমি ঘুরে দেখলাম, সে আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার মনে হলো আমি ভুল শুনেছি তাই তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কি কিছু বললেন?”
সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার মাথা নেড়ে বললো, “কিছু না, মনে হয় আপনি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না”।
এবার আমি ওকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম। তার বয়স বিশ বাইশ বছর হবে। সুন্দরভাবে দাঁড়ি কমানো। মসৃণ গাল মাংস দিয়ে ভরা। চুল থেকে দামী তেলের ঘ্রাণ আসছে। চুল কপালের উল্টো দিক করে আঁচড়ানো যার কারণে তার কপাল বেশ বড়ো লাগছে। সে একটি কোট পরে আছে আর সাদা শার্ট কিন্তু টাই পরেনি। এটা আমার ভালো করে মনে আছে। আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম তখনই সে আবার বললো, “আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছি”। তার রহস্যময় কণ্ঠে আমি বেশ আশ্চর্য হলাম। সে আমাকে কী জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছে? এই চিন্তা করে আমি একটু নুয়ে তার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম। “জি বলুন কী বলতে চাচ্ছেন?”
“আমি কি পাগল?”
আমি আরও বিস্মিত হলাম। বুঝে উঠতে পারছি না তাকে কী উত্তর দিবো। এখন আপনিই বলেন যে লোককে দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে, আপনার আর আমার মতো লাগছে, তাকে আমি কী বলতে পারি।
“আপনি... আপনি?, আমি তোতলিয়ে বললাম।
“হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি... আপনি বলেন না”, সে গম্ভীরভাবে আমাকে বললো।
“কিন্তু কেন? আপনি তো বেশ স্বাভাবিক মানুষ”।
“আপনি আপনার মতামত দিতে বেশি তাড়াহুড়া করেন না। আবার চিন্তা করে উত্তর দিন যে আমি কি আসলেই পাগল?”
এটাতে চিন্তা করার কিছুই ছিল না তবুও আমি তার মুখ নিবিড়ভাবে দেখলাম। আসলে আমি দুটি জিনিস জানতে চাচ্ছিলাম, প্রথম, সে কি আমার সাথে ঠাট্টা করছে? দ্বিতীয়, তার মুখের অভিব্যক্তি যদি বলে দেয় যে সে আসলেই কি পাগল। আমি আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছি যে পাগলদের চোখ সাধারণত লাল হয়। কিন্তু তার চোখ তো একদম সাদা। মনে হচ্ছে সাদা চিনি দিয়ে তৈরি। আমি তার মুখ দেখে কিছুই অনুমান করতে পারলাম না।
“আমার মনে হয় কেউ আপনাকে প্রচ-ভাবে সন্দেহে ফেলে দিয়েছে” আমি তাকে বললাম। আমি জানি ইদানীং অর্ধ শিক্ষিত ডাক্তাররা যে কোনো মানুষের নাড়ি দেখে বলে দেয় যে তুমি পাগল, না হয় ডিপ্রেসড অথবা দুর্বল মানসিক রোগে ভুগছো।
“আমিও একই কথা চিন্তা করি কিন্তু আপনি কি একেবারে নিশ্চিত যে আমি পাগল না?” সে বললো।
“আমি নিশ্চিত, যে লোক আপনাকে এই কথা বলেছে সে নিজেই পাগল”, আমি বললাম।
“না সে তো পাগল না, একদম সুস্থ মানুষ”।
“উনি কে?”
“আমার বাবা”।
“আপনার বাবা?”
“জি, উনি বলেন যে আমি পাগল কিন্তু আমি আমার মধ্যে এমন কোনো লক্ষণ পাই না। আজ থেকে প্রায় এক বছর আগে আমি তার চোখে পাগল ছিলাম না। যেই না আমার বিয়ে হলো বাবা বলতে লাগলেন যে মোহন পাগল। এটার পরিণাম হলো যে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাদের মেয়েকে আমার বাসা থেকে নিয়ে গেলেন। এখন তাকে আর আমার বাসায় আসতে দেন না। এটা কতো দুঃখের কথা আমি আমার বউয়ের সাথে দশ পনোরো দিনও থাকতে পারলাম না”।
এই কথা বলার সময় আসলেই তাকে বেশ দুঃখী মনে হচ্ছিলো। আমিও দুঃখী হয়ে গেলাম কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না যে তাকে পাগল বানিয়ে ওর বাবার কী লাভ হলো বরং তার জীবনকে তিক্ততায় ভরে দিলো।
“কিন্তু আপনার বাবা এমনটা কেন করলো?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“মিস্টার সে একদম বেনিয়া, এক নম্বরের বেনিয়া। সে শুধু টাকা চিনে। আমি তার রক্ত কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না তার শুধু টাকা চাই। সে আমকে কেন পাগল বানালো তার পিছেও নিশ্চয় কোনো রহস্য আছে। সে এতো স্বার্থপর যে সে চায় না তার মারা যাওয়ার পরেও আমি তার সম্পত্তির মধ্যে অংশ পাই। দেখেন আমি তিন বছর হলো বি-এ পাস করেছি। যদিও এখনো কোনো চাকরি পাইনি, কিন্তু তার তো উচিৎ আমার হাত খরচ দেয়া”।
“অবশ্যই”, আমি তাকে সমর্থন করলাম।
“কিন্তু সে আমাকে মাত্র পাঁচ টাকা মাসে দেয়। আসলে সে আমার যৌবনের রঙের উপর তার লোভের কালি মেখে দিয়েছে। আমি আগ্রা শহরে পড়ে আছি আর আমার বউ দিল্লিতে। বেনিয়া বাবা আমার আর ওর মাঝে একটি দূরত্ব সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। সে অনেক সুন্দর আর বেশ শিক্ষিত। কিন্তু সেও কী করবে? হয়ত সেও আমাকে পাগল মনে করে। কিন্তু এখন আমি এটার মীমাংসা করতে চাই। আমি আমার তিনটি কোট আর দুটি প্যান্ট বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আমি দিল্লি যাচ্ছি। যা ঘটবে তা দেখে নিবো”।
“আপনি কি নিজের বউয়ের কাছে যাচ্ছেন?” আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
“আমি তার বাসায় বিনা অনুমতি নিয়েই ঢুকে যাবো। সেখান থেকে আমার বউকে না নিয়ে বের হবো না। আমি পাগল হলে পাগল। আমার বিশ্বাস শুশিলা, এই নাম বলে সে একটু লজ্জা পেয়ে গেল, আমার সাথে চলে আসবে। আমি তার জন্য একটি উলের জাম্পার কিনেছি। ওটা সে অনেক পছন্দ করবে। আপনি কি ওটা দেখতে চান?”
“যদি আপনাকে বাক্স বা ট্রাঙ্ক খোলার কষ্ট না করতে হয় তবে দেখান”, আমি বললাম।
“না ভাই, ওটা তো আমি আমার শার্টের নিচে পরে আছি”। এটা বলে সে উঠে দাঁড়ালো এবং তার কোট নামিয়ে দিল। তারপর শার্টটি প্যান্টের ভিতর থেকে বের করে ওটাও নামিয়ে দিল। সে আসলেই একটি রঙ্গিন ফিতা দেয়া জাম্পার পরে আছে।
“কি আপনার পছন্দ হয়েছে? এটা আমি এই জন্যে পরে আছি যদি শুশিলা এটা না নেয় তাহলে আমি এটা পরেই থাকবো”।
এই লেডিজ জাম্পারে তাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছিল!
লেখক পরিচিতি :
সা’দাত হাসান মান্টো একজন উর্দুভাষী বিশ^খ্যাত পাঞ্জাবি লেখক। তিনি ২২টি ছোটগল্পের সংকলন, একটি উপন্যাস, পাঁচটি রেডিও নাটকের সিরিজ, তিনটি প্রবন্ধের সংকলন এবং ব্যক্তিগত স্কেচের দুটি সংগ্রহ রেখে গেছেন। তাঁর সেরা ছোটগল্পগুলি লেখক এবং সমালোচকদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদায় প্রশংসিত। মুুদ্রিত গল্পটি মূল উর্দু গল্প “মেরা হামসাফার”-এর অনুবাদ।
সা’দাত হাসান মান্টোর গল্প
অনুবাদ:হাইকেল হাশমী
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
প্ল্যাটফর্মে শাহাব, সাইদ আর আব্বাস চেঁচামেচি করছে। আমার এই বন্ধুরা আমাকে ছাড়তে স্টেশনে এসেছে। ট্রেন আস্তে আস্তে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলতে শুরু করছে তখনই শাহাব জানালা দিয়ে আমাকে বললো, “আব্বাস বলছে বাসায় গিয়ে নিজে ‘উনি’কে আমাদের সালাম দিও”।
“ও তো পাগল, আচ্ছা খোদা হাফেজ”। আমি আমার আলিগড় কলেজের বন্ধুদের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি এই কথা বলে তার সাথে হাত মিলিয়ে আমার সিটে বসে পড়লাম। এই শহর আলিগড় যার সুন্দর বিদ্যায় ভরপুর পরিবেশ থেকে আমি বেশ অনেক দিনের জন্য দূরে সরে যাচ্ছি। আমার মন ভীষণ খারাপ। যদিও শাহাব কলেজে অনেক বিরক্ত করে কিন্তু ওকে ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুভূতি এখন পীড়াদায়ক মনে হচ্ছে। আমার চিন্তা হলো যে অমৃতসরে আমি এমন জব্বর বন্ধুকুল পাবো কি না। এই দুঃখের অনুভব করে আমি আমার মাথাকে ঝাঁকি দিলাম যেন আমার মস্তিষ্কের অন্ধ কূপ থেকে এই ভাবনাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারি। আমি আমার পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটি সিগারেট ধরিয়ে, আমার মাথা সিটের পিছের অংশে ঠেকিয়ে, সিগারেটের ধোঁয়া দিয়ে গোল আকৃতি বানানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম। সিটের অন্য প্রান্তে আর একজন বসে আছে। মানসিকভাবে আমি একদম ফাঁকা, জানি না কেন? সিগারেটের ধোঁয়া যেটা আমি আমার মুখ দিয়ে গোল আকৃতি করে বের করার চেষ্টা করছি বাতাসের কারণে জানালা দিয়ে কোনো নৃত্যরত নর্তকীর মতো বের হয়ে যাচ্ছে। আমি অনেকক্ষণ কাঁপা কাঁপা ধোঁয়া দেখতে থাকলাম আর চিন্তা করলাম- এটাই নাচের সম্পূর্ণতা।
“নাচের সম্পূর্ণতা”। এই বাক্য হঠাৎ আমার মাথায় জন্ম নিয়েছে। আমি আমার এই অনন্য ভাবনা থেকে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
“আমি কি পাগল?”
ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে এখন ময়দানে দৌড়াচ্ছে। লোহার রেললাইন পিছনে রয়ে গেছে অথবা দেখা যাচ্ছে না। রেললাইনের পাশে গাছগুলো মনে হচ্ছে দৌড়িয়ে একের অন্যকে ধরার চেষ্টা করছে।
“নাচের সম্পূর্ণতা”।
আমি গাছে দৌড়ঝাপ দেখছি। হঠাৎ এই বিস্ময়কর বাক্য শুনে আমি চমকে উঠলাম। ওটা বোধয় আমার সহযাত্রী জিজ্ঞেস করেছে। নিশ্চয় সেই এই অদ্ভুত প্রশ্ন আমাকেই করেছে।
“আপনি কি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন?”
“জি হ্যাঁ, আমি কি পাগল?”
সে আর একবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো। ট্রেন ছাড়ার আগে আমি শাহাবকে বলেছিলাম, “সে তো একদম পাগল, আচ্ছা খোদা হাফেজ”।
আমার মনে হয় এই ভদ্রলোক মনে করেছে যে আমি তাকে পাগল বলেছি। আমি হেসে দিলাম এবং অনেক সন্মানের সাথে তাকে উত্তর দিলাম, “আপনি বোধহয় ভুল বুঝেছেন। ট্রেন ছাড়ার সময় আমি আমার বন্ধুকে পাগল বলে সম্বোধন করেছিলাম। সে তো পুরা পাগল। মাফ করবেন এই কথা আমি আপনাকে বলিনি”।
আমার এই যৌক্তিক উত্তর শুনে আমার সহযাত্রী যে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো চুপ হয়ে গেল। এটা দেখে আমি আশ্বস্ত হলাম যে কথাটা আর বাড়েনি, ব্যাপারটি এখানেই শেষ হয়ে গেল। আসলে আমি একটু গরম মেজাজের মানুষ, অনেক সময় খুব ছোট কথায় আমার মাথা গরম হয়ে যায়। এর আগেও ভ্রমণের সময় অন্য যাত্রীদের সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে। আমি এই ঝগড়ার তিক্ত পরিণাম জানি তাই এই ব্যপারের এখানেই মীমাংসা হয়ে গেল তাতেই আমি খুশি। আমি তার সাথে একটি ভালো সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে কথাবার্তা শুরু করলাম। সাধারণ কথাবার্তা যেটা সহযাত্রীদের সাথে বলা হয়।
“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?” আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
“আমি? আমি দিল্লি যাচ্ছি। আপনি কোথায় নামবেন?”
“আমার রাস্তা অনেক দীর্ঘ, আমি আমৃতসর যাচ্ছি”।
“আমৃতসর?”
“জি, হ্যাঁ”।
“আমি কয়েকবার ওই শহরে গিয়েছি। বেশ জাঁকজমক পূর্ণ জায়গা। কাপড় ব্যবসার কেন্দ্র। আপনি কি ওখানে কলেজে পড়েন?”
“জি”। আমি মিথ্যা কথা বললাম কারণ ওর প্রশ্ন আমার কাছে খুব বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়নি। তাছাড়া আমার ভয় যদি ওকে বলতাম যে আমি আলীগড় কলেজে পড়ি তখন সে আমাকে কতো রকমের প্রশ্ন করতো, কী পড়ি, কোন বিষয়ে পড়ি, কলেজে কী কী বিভাগ আছে। একবার এমন আমার সাথে ঘটেছিল যখন একজন সহযাত্রী আমাকে এই সব প্রশ্ন করে আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল।
“কোন কলেজে? আমার মনে হয় ওখানে অনেকগুলো কলেজ আছে”, সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো।
আমি সাথে সাথে উত্তর দিলাম, “খালসা কলেজে”।
“আচ্ছা ওটাই যেটা অ্যান্ডরসন বানিয়েছিল”।
“অ্যান্ডরসন, কিন্তু ওটা তো শিখদের কলেজ”, আমি বিস্ময়ের সাথে উত্তর দিলাম।
“আমার জানা আছে মিস্টার, অ্যান্ডরসন শিখ হয়ে গিয়েছিল। আপনি বোধয় শিখ ইতিহাস পড়েননি”।
“হতে পারে”।
এই কথোপকথন আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং মনে হলো না তাই আমি জানালা থেকে বাইরে দেখতে লাগলাম। ট্রেন এখন ইউ-পির বিশাল খোলা জায়গা দিয়ে নির্বিঘেœ নিজের গন্তব্যের দিকে ছুটে যাচ্ছে। লোহার ভারি চাকা আর লোহার রেললাইন, মাঝে মাঝে বিশাল কাঠের টুকরা তার উপর চলন্ত ট্রেন একটি অদ্ভুত একই রকমের শব্দ সৃষ্টি করে চলছে। এই শব্দের অনুরণন ট্রেন লাইনের পাশে গাছ আর খাম্বা থেকে বাড়ি খেয়ে সন্ধ্যা বেলার ঠা-া বাতাসে এক রকমের কম্পন সৃষ্টি করছে।
আমি এমনি এমনি আমার হাত জানালা থেকে বের করলাম আর বাতাসের জোরালো তরঙ্গ আমার হাতকে বিপরীত দিকে ঠেলে দিলো। এই ঠা-া বাতাস আমার কাছে খুব ভালো লাগলো। তাই আমি এই খেলায় ব্যস্ত হয়ে আমার সহযাত্রী আর তার কথোপকথন সব কিছু ভুলে গেলাম। আমার হাতে বাতাসের চাপ বেশ আরামদায়ক কিন্তু একটু পরে আমি এই খেলা থেকে ক্লান্ত হয়ে গেলাম আর বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। অস্ত যাওয়া সূর্যের কিরণ মাঠে বিভিন্ন জায়গায় গর্তে জমা পানির উপর জরির কাজের মতো ঝিলমিল করছে। মনে হলো যেন ধূসর মাটিতে কেউ বড়ো বড়ো আয়না লাগিয়ে দিয়েছে। ইলেট্রিকের তারের উপর নীলকণ্ঠ আর চড়–ই পাখি লাইন করে বসে আছে। এই দৃশ্যটা খুবই মনোরম।
“আমি কি পাগল?”
এই শব্দ আমার মনের উপর ছেটানো রঙকে এলোমেলো করে দিল যেটা একটি মনোরম ছবি আঁকতে যাচ্ছিল। ওই সহযাত্রী আমাকে এই প্রশ্নটি করেছে। আমি ঘুরে দেখলাম, সে আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার মনে হলো আমি ভুল শুনেছি তাই তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কি কিছু বললেন?”
সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার মাথা নেড়ে বললো, “কিছু না, মনে হয় আপনি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না”।
এবার আমি ওকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম। তার বয়স বিশ বাইশ বছর হবে। সুন্দরভাবে দাঁড়ি কমানো। মসৃণ গাল মাংস দিয়ে ভরা। চুল থেকে দামী তেলের ঘ্রাণ আসছে। চুল কপালের উল্টো দিক করে আঁচড়ানো যার কারণে তার কপাল বেশ বড়ো লাগছে। সে একটি কোট পরে আছে আর সাদা শার্ট কিন্তু টাই পরেনি। এটা আমার ভালো করে মনে আছে। আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম তখনই সে আবার বললো, “আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছি”। তার রহস্যময় কণ্ঠে আমি বেশ আশ্চর্য হলাম। সে আমাকে কী জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছে? এই চিন্তা করে আমি একটু নুয়ে তার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম। “জি বলুন কী বলতে চাচ্ছেন?”
“আমি কি পাগল?”
আমি আরও বিস্মিত হলাম। বুঝে উঠতে পারছি না তাকে কী উত্তর দিবো। এখন আপনিই বলেন যে লোককে দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে, আপনার আর আমার মতো লাগছে, তাকে আমি কী বলতে পারি।
“আপনি... আপনি?, আমি তোতলিয়ে বললাম।
“হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি... আপনি বলেন না”, সে গম্ভীরভাবে আমাকে বললো।
“কিন্তু কেন? আপনি তো বেশ স্বাভাবিক মানুষ”।
“আপনি আপনার মতামত দিতে বেশি তাড়াহুড়া করেন না। আবার চিন্তা করে উত্তর দিন যে আমি কি আসলেই পাগল?”
এটাতে চিন্তা করার কিছুই ছিল না তবুও আমি তার মুখ নিবিড়ভাবে দেখলাম। আসলে আমি দুটি জিনিস জানতে চাচ্ছিলাম, প্রথম, সে কি আমার সাথে ঠাট্টা করছে? দ্বিতীয়, তার মুখের অভিব্যক্তি যদি বলে দেয় যে সে আসলেই কি পাগল। আমি আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছি যে পাগলদের চোখ সাধারণত লাল হয়। কিন্তু তার চোখ তো একদম সাদা। মনে হচ্ছে সাদা চিনি দিয়ে তৈরি। আমি তার মুখ দেখে কিছুই অনুমান করতে পারলাম না।
“আমার মনে হয় কেউ আপনাকে প্রচ-ভাবে সন্দেহে ফেলে দিয়েছে” আমি তাকে বললাম। আমি জানি ইদানীং অর্ধ শিক্ষিত ডাক্তাররা যে কোনো মানুষের নাড়ি দেখে বলে দেয় যে তুমি পাগল, না হয় ডিপ্রেসড অথবা দুর্বল মানসিক রোগে ভুগছো।
“আমিও একই কথা চিন্তা করি কিন্তু আপনি কি একেবারে নিশ্চিত যে আমি পাগল না?” সে বললো।
“আমি নিশ্চিত, যে লোক আপনাকে এই কথা বলেছে সে নিজেই পাগল”, আমি বললাম।
“না সে তো পাগল না, একদম সুস্থ মানুষ”।
“উনি কে?”
“আমার বাবা”।
“আপনার বাবা?”
“জি, উনি বলেন যে আমি পাগল কিন্তু আমি আমার মধ্যে এমন কোনো লক্ষণ পাই না। আজ থেকে প্রায় এক বছর আগে আমি তার চোখে পাগল ছিলাম না। যেই না আমার বিয়ে হলো বাবা বলতে লাগলেন যে মোহন পাগল। এটার পরিণাম হলো যে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাদের মেয়েকে আমার বাসা থেকে নিয়ে গেলেন। এখন তাকে আর আমার বাসায় আসতে দেন না। এটা কতো দুঃখের কথা আমি আমার বউয়ের সাথে দশ পনোরো দিনও থাকতে পারলাম না”।
এই কথা বলার সময় আসলেই তাকে বেশ দুঃখী মনে হচ্ছিলো। আমিও দুঃখী হয়ে গেলাম কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না যে তাকে পাগল বানিয়ে ওর বাবার কী লাভ হলো বরং তার জীবনকে তিক্ততায় ভরে দিলো।
“কিন্তু আপনার বাবা এমনটা কেন করলো?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“মিস্টার সে একদম বেনিয়া, এক নম্বরের বেনিয়া। সে শুধু টাকা চিনে। আমি তার রক্ত কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না তার শুধু টাকা চাই। সে আমকে কেন পাগল বানালো তার পিছেও নিশ্চয় কোনো রহস্য আছে। সে এতো স্বার্থপর যে সে চায় না তার মারা যাওয়ার পরেও আমি তার সম্পত্তির মধ্যে অংশ পাই। দেখেন আমি তিন বছর হলো বি-এ পাস করেছি। যদিও এখনো কোনো চাকরি পাইনি, কিন্তু তার তো উচিৎ আমার হাত খরচ দেয়া”।
“অবশ্যই”, আমি তাকে সমর্থন করলাম।
“কিন্তু সে আমাকে মাত্র পাঁচ টাকা মাসে দেয়। আসলে সে আমার যৌবনের রঙের উপর তার লোভের কালি মেখে দিয়েছে। আমি আগ্রা শহরে পড়ে আছি আর আমার বউ দিল্লিতে। বেনিয়া বাবা আমার আর ওর মাঝে একটি দূরত্ব সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। সে অনেক সুন্দর আর বেশ শিক্ষিত। কিন্তু সেও কী করবে? হয়ত সেও আমাকে পাগল মনে করে। কিন্তু এখন আমি এটার মীমাংসা করতে চাই। আমি আমার তিনটি কোট আর দুটি প্যান্ট বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আমি দিল্লি যাচ্ছি। যা ঘটবে তা দেখে নিবো”।
“আপনি কি নিজের বউয়ের কাছে যাচ্ছেন?” আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
“আমি তার বাসায় বিনা অনুমতি নিয়েই ঢুকে যাবো। সেখান থেকে আমার বউকে না নিয়ে বের হবো না। আমি পাগল হলে পাগল। আমার বিশ্বাস শুশিলা, এই নাম বলে সে একটু লজ্জা পেয়ে গেল, আমার সাথে চলে আসবে। আমি তার জন্য একটি উলের জাম্পার কিনেছি। ওটা সে অনেক পছন্দ করবে। আপনি কি ওটা দেখতে চান?”
“যদি আপনাকে বাক্স বা ট্রাঙ্ক খোলার কষ্ট না করতে হয় তবে দেখান”, আমি বললাম।
“না ভাই, ওটা তো আমি আমার শার্টের নিচে পরে আছি”। এটা বলে সে উঠে দাঁড়ালো এবং তার কোট নামিয়ে দিল। তারপর শার্টটি প্যান্টের ভিতর থেকে বের করে ওটাও নামিয়ে দিল। সে আসলেই একটি রঙ্গিন ফিতা দেয়া জাম্পার পরে আছে।
“কি আপনার পছন্দ হয়েছে? এটা আমি এই জন্যে পরে আছি যদি শুশিলা এটা না নেয় তাহলে আমি এটা পরেই থাকবো”।
এই লেডিজ জাম্পারে তাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছিল!
লেখক পরিচিতি :
সা’দাত হাসান মান্টো একজন উর্দুভাষী বিশ^খ্যাত পাঞ্জাবি লেখক। তিনি ২২টি ছোটগল্পের সংকলন, একটি উপন্যাস, পাঁচটি রেডিও নাটকের সিরিজ, তিনটি প্রবন্ধের সংকলন এবং ব্যক্তিগত স্কেচের দুটি সংগ্রহ রেখে গেছেন। তাঁর সেরা ছোটগল্পগুলি লেখক এবং সমালোচকদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদায় প্রশংসিত। মুুদ্রিত গল্পটি মূল উর্দু গল্প “মেরা হামসাফার”-এর অনুবাদ।