alt

সাময়িকী

রেমন্ড কারবার-এর গল্প

প্রয়োজনে ডাক দিও

ভাষান্তর: মহসীন হাবিব

: বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

বসন্তের সময় আমরা লোকজনের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু যখন জুলাই মাস এলো এবং স্কুল বন্ধ হলো, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পলো আলটু থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় যাবো। আমাদের ছেলে রিচার্ড ওয়াশিংটনে নানির কাছে গেল। সেখানে সে সামার সেশনের জন্য কাজ করে টাকা আয় করবে। তার নানি সেখানে কাজ ঠিক করে রেখেছেন। পরিশ্রমের কাজ, কিন্তু রিচার্ড করতে চাচ্ছিল। ওর মা জড়িয়ে ধরে কন্না করলো, ছেলেকে চুমা দিল, এবং ওর নানির জন্য একটি চিঠি লিখে রিচার্ডের হাতে দিল। তারপর আমাদের যাওয়ার জন্য জিনিসপত্র গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমি রিচার্ডকে বাস স্টপেজে নিয়ে গেলাম। টিকেট কিনে রিচার্ডের হাতে দিলাম এবং বেঞ্চে বসে দুজনে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম।

‘তুমি আর মা কি আলাদা হতে যাচ্ছো’, রিচার্ড প্রশ্ন করলো। দিনটি ছিল শনিবার যে কারণে রাস্তায় অত গাড়ি ছিল না।

‘চেষ্টা করছি সেটা যেন না হয়, আমরা সেটা চাই না। আর সেকারণেই আমরা এখান থেকে সরে যাচ্ছি, যাতে কারো সঙ্গে দেখা না হয়। আমার ধারণা সে কারণেই তুমিও দূরে সঙ্গে যাচ্ছো। টাকা আয় করতে না।’

‘তুমি কি এখনো মাকে ভালোবাসো’

‘অবশ্যই ভালোবাসি। এবং তোমার সেটা এখনই জানা উচিত। অনেকের মতো আমাদের সমস্যা আছে, আবার দায়িত্বও আছে। তাই দূরে গিয়ে চেষ্টা করবো কোনো একটা পথ বের করা যায় কি না। কিন্তু আমাদের নিয়ে এত ভেবো না। চিন্তা করো যে এটি একটি সামার ভ্যাকেশন। ওখানে মাছ ধরার দারুণ ব্যাপার আছে, মাছ ধরবে মাঝে মাঝে।’

‘ওয়াটারস্কি! আমি ওয়াটারস্কি শিখব।’

‘আমি নিজেও কোনোদিন এটা করিনি, তুমি আমার জন্যও একটু শিখে এসো, পারবে না’

কিছুক্ষণ পর বাস এলো। আমরা উঠে দাঁড়ালাম। ওকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলাম, গুড বাই’।

‘গুডবাই ড্যাড’, রিচার্ড মুখ ফিরিয়ে নিল যাতে আমি ওর চোখের পানি দেখতে না পাই।

বাড়িতে ফিরে এসে দেখলাম ড্রইং রুমে স্যুটকেসগুলো গোছানো। ন্যান্সি পাকঘরে কফি খাচ্ছে তরুণ দম্পতি সঙ্গে নিয়ে। ওরাই পুরো সামারে আমাদের বাড়িতে থাকবে।

ওদের সঙ্গে পরিচিত হলাম। লিজ এবং জেরি। দুজনই ম্যাথমেটিকসে গ্রাজুয়েশন করেছে। ওদের সঙ্গে কফি খেয়ে আমি জিনিসপত্র গাড়িতে ওঠাতে চলে এলাম।

পলো আলটু থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকায় নতুন বাড়িটি ভাড়া নেওয়ার তিন সপ্তাহ আগে আমি ড্রাইভ করে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে ছিল সুসান। সুসানের কাছে আমি প্রায়ই যাই। আমরা ওই শহরের একটি মোটেলে তিন রাত থেকেছি। সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন দেখে ওকে সঙ্গে নিয়েই আমি বাসাটা ভাড়া করতে গিয়েছি। ও আমাকে চেক লিখে দিতে দেখেছে। মোটেলে ফিরে এসে বিছানায় গা হেলিয়ে দিয়ে নিজের কপালে হাত দিয়ে সুসান বলেছে, ‘আমি সত্যিই তোমার বউকে হিংসা করি। মানুষ সবসময় অন্য অন্য নারীর কথা বলে, কিন্তু বউ যে কত সুবিধা পায় এবং কত ক্ষমতাশালী তা কেই দেখে না। এসব নিয়ে আগে কখনো ভাবিনি। সে তোমার সঙ্গে এই সামারে ওখানে থাকবে! আহা, ওখানে আমি যদি হতাম! তোমার পাশে!’

ন্যান্সি লম্বা মানুষ, বাদামী চুল। সে অত্যন্ত বিনয়ী, উদার এবং স্পিরিটসম্পন্ন মানুষ। পরে আমাদের মধ্যে সেই উদারতা, স্পিরিটের ঘাটতি দেখা দিল। ন্যান্সি যে লোকটির কাছে যেতে শুরু করল সে আমারই একজন কলিগ। তার স্ত্রীর সঙ্গে তালাক হয়ে গেছে। সে সব সময় থ্রিপিস স্যুট প্যান্ট টাই পরে। চুল ধূসর হয়ে এসেছে। কিন্তু প্রচুর মদ খায়। ছাত্রছাত্রীরা বলে তার নাকি মাঝে মাঝেই হাত কাঁপে। আমার সম্পর্কের কথা ন্যান্সি জানার অল্প কিছুদিন পর এক হলিডের অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে ন্যান্সির সম্পর্ক তৈরি হয়।

আমরা রওয়ানা হলাম। বেশ খানিক পথ এসে হাইওয়ের পাশের একটি ছোট কফি হাউসে দাঁড়ালাম। কফি হাউসের সামনে সাইনডোর্বে লেখা, ‘ইট এন্ড গ্যাস’। সাইন দেখে আমরা হাসলাম। ভেতরে ঢুকে দুজনে জানালার পাশে বসলাম।

‘ন্যান্সি, দেখ একটা হামিংবার্ড।’

সে তাকাতে তাকাতে পাখিটা সরে গেছে। বলল, ‘কই, আমি তো দেখছি না।’

‘এক মুহূর্ত আগে ছিল’, আমি বললাম। ওই দেখ আরেকটা, মনে হয় আগেরটা না।’

আমরা হামিংবার্ড দেখতে দেখতে ওয়েটার আমাদের অর্ডার করা খাবার নিয়ে আসল। ততক্ষণে পাখি দেওয়ালের ওপাশে চলে গেছে।

‘এটি একটি ভালো লক্ষণ। হামিংবার্ড দেখলে ভাগ্য ভালো হয়’, আমি বললাম।

‘আমিও কোথাও শুনেছি, ঠিক মনে নেই। ওকে, এই ভাগ্য আমরা ব্যবহার করতে পারি। কী বল’

আমি বললাম,‘হ্যা ভালো লক্ষণ। ভাগ্য ভালো যে আমরা এখানে থেমেছিলাম।’

ন্যান্সি মাথা নেড়ে সায় দিয়ে স্যান্ডউইচে কামড় দিল।

সন্ধ্যার কিছু আগে আমরা ইউরেকায় পৌঁছলাম। পথে সেই মোটেলটা পার হলাম যেখানে তিন রাত আমি সুসানকে নিয়ে কাটিয়েছি।

ন্যান্সি বলল,‘খুব সুন্দর এলাকা। আমি আমাদের হাউসটা দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।’

‘এই তো পৌঁছে গেছি।’ গাড়ি বাক নিয়ে পৌঁছে বললাম, ‘এটাই। চলো বের হই।’

আমরা গাড়ি থেকে নেমে বারান্দায় উঠলাম। লাইট জ¦াললাম। ভেতরে দুইটি বেডরুম। একটি বাথরুম, একটি লিভিং রুম। আর একটা ফায়ারপ্লেস।

‘পছন্দ হয়েছে’

‘ওয়ান্ডারফুল’, ন্যান্সি বলল। ‘আমি খুবই খুশি’, সে গিয়ে রেফ্রিজারেটর খুলল। ‘ থ্যাঙ্কস গড, সবকিছু পরিষ্কার। আমার কোনো ধোয়ামোছা করতে হবে না।’

‘বিছানার চাদরগুলোও একেবারে পরিচ্ছন্ন। চেক করেছি।’ আমি বললাম।

ন্যান্সি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ‘এখন আমাদের কিছু শুকনো খড়ি কিনতে হবে ফায়ারপ্লেসের জন্য। এরকম রাতে ফায়ারপ্লেসে আগুন না থাকলে চলে না।’

‘কালকে গিয়ে কিনবো। সেই সঙ্গে শহরটাও ঘুরে দেখবো আমরা।’

ন্যান্সি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,‘এরকম একটি জায়গায় এসে আমি খুবই খুশি।’

‘আমিও’, ওর দিকে হাত প্রসারিত করলাম। ন্যান্সি কাছে এলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ন্যান্সি কাঁপছে। আমি ওর দুই গালে চুমু খেলাম।

কয়েকদিন কেটে গেল। ইউরেকা শহরে ঘোরাফেরা করলাম। বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করলাম। ওইদিন রাতে দুজন ফায়ারপ্লেসের কাছে বসে একটা কুকুর কেনার কথা আলোচনা করলাম।

‘আমি ছোট বাচ্চা কুকুর চাই না’, ন্যান্সি বলল। ‘তবে একটা কুকুর চাই। অনেকদিন হলো আমাদের কোনো কুকুর নেই। একটা কুকুর হলে আমরা ভালোমতো পুষতে পারবো।’

‘কিন্তু আমরা যখন চলে যাবো, যখন সামারের সময় ফুরিয়ে যাবে’ আমি বললাম।

‘তখন দেখা যাবে। এখন উপযুক্ত একটা কুকুর দরকার। না দেখে বুঝতে পারবো না কোন ধরনের কুকুর দরকার।’

ন্যান্সি ওর মাকে ফোন করল। ওর মা বরল, রিচার্ড ভালোই আছে এবং কাজ করছে। ওর মাও ভালো আছে। ন্যান্সি বলল, আমররাও ভালো আছি, ‘এখানে ওষুধের মতো কাজ হচ্ছে।’

জুলাই মাসের মাঝামাঝি একদিন গাড়ি চালিয়ে ফেরার সময় দেখলাম কতগুলো লোক লেকে মাছ ধরছে। আমি গাড়ি থামালাম, ‘চলো ওরা কী মাছ ধরছে দেখি। আমরাও তো মাছ ধরতে পারি!’

‘হ্যা, আমরা অনেক কাল মাছ ধরি না। সেই যে রিচার্ড ছোট থাকতে আমরা মাউন্ট ষাস্তায় গিয়েছিলাম মাছ ধরতে, তোমার মনে আছে’

‘খুব মনে আছে, চলো দেখি ওরা কী মাছ ধরলো।’

একজনের ঘাড়ের কাছে দাঁড়ালাম। সে স্যালমন এবং বেশ কয়েক ধরনের মাছ ধরেছে।

‘আধার হিসাবে কী দিচ্ছ’ ন্যান্সি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো।

‘যে কোনো কিছু, এই ধরো স্যালমন মাছের ডিম, কেঁচো, নানা পোকামাকড়, ভুট্টার বীজ- এসব। আধার গেঁথে নিচে ফেলে দাও, কিছুক্ষণ তাকিয়ে অপেক্ষা করো, দেখবে কাজ হয়েছে।’

খানিক সময় মাছ ধরা দেখে তারপর লোকটাকে আমরা বললাম, ‘থ্যাঙ্কস, গুডলাক।’

লোকটিও উত্তরে বলল, ‘তোমাদের দুজনের জন্য শুভকামনা রইল।’

আমরা একটা ক্রীড়া সরঞ্জামের দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। ভেতরে ¯িœকার, বড়শি, নাইলনের সুতা, সবই পাওয়া যায়। আমরা পরদিন মাছ ধরতে যাওয়ার প্ল্যান করলাম।

রাতে আমরাও খাবার খেলাম। প্লেটগুলো ধোয়ামোছা করে তারপর দুজনে ফায়ারপ্লেসের কাছে গিয়ে বসলাম। খানিক সময় পর ন্যান্সি মাথা নেড়ে বলল, ‘কাজ হচ্ছে না!’

‘একথা বলছ কেন, কী কাজ হচ্ছে না’ আমি বললাম। ‘অর্থ কী’

‘এর অর্থ হলো কাজ হচ্ছে না! সমস্যার মুখোমুখি হও!’, সে মাথা নেড়ে বলল।‘আমি কাল সকালে মাছ ধরতে যাবো না। আমার কোনো কুকুরও দরকার নেই! আমি মা এবং রিচার্ডকে দেখতে যাবো! একা। আমি একাকীত্ব চাই। আমি রিচার্ডকে মিস করছি।’ সে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকল। ‘আমার ছেলেটা প্রায় বড় হয়ে গেল! আমি ওকে প্রচ- মিস করছি!’

‘এবং ডেল, তুমি ডেল শ্রোয়েডারকেও মিস করছো! তোমার বয়ফ্রেন্ড!’

‘আজ রাতে আমি সবাইকেই মিস করছি! আমি তোমাকেও মিস করছি। তোমাকে আমি বহুকাল ধরে মিস করছি! তুমি আমার কাছ থেকে কী করে যেন হারিয়ে গেছ! আমি ব্যাখ্যা করতে পারছি না! তুমি এখন আর আমার নও!’

‘ন্যান্সি!’

‘না’, সে মাথা দোলাতে থাকল। ‘আমি কাল রিচার্ড এবং মায়ের কাছে যাবো। আমি চলে যাওয়ার পর তুমি তোমার বান্ধবী সুসানকে ফোন করতে পারো!’

‘আমি তা করবো না’ বললাম। ‘আমার তেমন কোনো ইচ্ছা নেই।’

‘তুমি অবশ্যই কল করবে’, সে বলল।

‘আর তুমি কল করবে ডেলকে’, আমি বাধ্য হয়েই বললাম।

সে তার জামার হাতায় চোখ মুছতে মুছতে বলল, ‘তোমার যা ইচ্ছা ভাবতে পারো। আমি কোনো বাতিকগ্রস্ত হতে চাই না। কিন্তু আমি কাল ওয়াশিংটন যাচ্ছি অবশ্যই। আমি এখন বিছানায় যাবো। আর পারছি না! আমি দুঃখিত, আমি সত্যিই আমাদের দুজনের জন্যই দুঃখিত, ড্যান! ওই মাছ ধরা লোকটি আমাদের জন্য সৌভাগ্য কামনা করেছে। আমিও আমাদের সৌভাগ্য কামনা করি। কিন্তু আমি আর পারছি না!’ ন্যান্সি উঠে বাথরুমে চলে গেল। আমি উঠে গিয়ে বারান্দার সিঁড়িতে বসে একটি সিগারেট ধরালাম। অন্ধকার রাত, কিন্তু পরিষ্কার আকাশ। আমি সুসানের কথা ভাবলাম। ন্যান্সির বাথরুম থেকে বের হওয়ার শব্দ পেলাম। আমি উঠে গিয়ে ফায়ারপ্লেসে কিছু খড়ি দিলাম। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। ঘন কুয়াশা। বাইরে কী যেন একটা নড়াচড়া করতে দেখতে পেলাম। আমি জানালার কাছে গিয়ে ভালো করে দেখলাম। দেখলাম, একটা ঘোড়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার ঘাস খেতে শুরু করলো। একটু পর আরো একটি ঘোড়া দেখা গেল গাড়ি বারান্দার দিকে ঘাস খেতে খেতে আগাচ্ছে। তৃতীয় আরেকটি ঘোড়াও দেখা গেল। বারান্দায় এসে লাইট জ¦ালালাম। দেখলাম বিশাল সাইজের সাদা সাদা ঘোড়াগুলো। ঘাড় ভরা চুল।

আমি বেডরুমে গিয়ে ন্যান্সিকে ডাকলাম। দেখলাম তার চোখদুটো তখনো ভেজা, ফুলে আছে।

‘ন্যান্সি, হানি, চলো দ্যাখো সামনের বারান্দার কাছে কী দৃশ্য। বিশ^াস করতে পারবে না। তোমার অবশ্যই দেখা উচিত। তাড়াতাড়ি ওঠো। ’

‘কী সেটা, আমাকে কোনো ধোঁকা দিও না!’

‘হানি, তুমি নিজেই দ্যাখ, আমি তোমাকে কোনো ধোঁকা দিচ্ছি না।’

ন্যান্সি এসে জানালা দিয়ে তাকালো, মাই গড! কী সুন্দর ওরা! কোথা থেকে আসল, ড্যান! কী সুন্দর!’

‘আশেপাশের কোনো ফার্ম থেকে ছুটে গেছে,’ আমি বললাম। ‘পুলিশকে ফোন করবো যাতে ওদের মালিকসহ এসে নিয়ে যেেত পারে। কিন্তু তার আগে আমি চাই তুমি দ্যাখো।’

‘ওরা কী কামড় দেয়! আমি একটু আদর করতে চাই! একটু হাতিয়ে দিতে চাই! ’

‘আমার মনে হয় না কামড় দেবে। কামড়ানোর মতো ওদের ভাবভঙ্গি না। কিন্তু একটা গরম কাপড় পরে নামো, বাইরে ঠা-া আছে।’

ন্যান্সি নেমে পাগলের মতো ঘোড়ার গায়ে হাত দিয়ে আদর করতে থাকল। ঘোড়ার কেশগুলো হাতড়াতে থাকল,‘আহা, তোমরা কোথা থেকে এলে! কোথায় থাকো!’

বেশ খানিক পর আমি বললাম, ‘এখন আমার বোধহয় পুলিশে ফোন করা উচিত।’

‘না, আরেকটু পরে করো!’

পুলিশ এলো, ফার্মের মালিকও এলো। ন্যান্সি উচ্চৈঃস্বরে ওদের বলল, ঘোড়াগুলোকে ব্যথা দিও না প্লিজ!

পরদিন দুপুরবেলা স্যুটকেস গোছানো হয়েছে। আমি ন্যান্সিকে ছোট্টা এয়ারপোর্টে নিয়ে গেলাম।

‘তোমার মাকে আমার শুভেচ্ছা দিও, রিচার্ডকে বলো, বাবা আদর দিয়েছে এবং বাবা তোমাকে মিস করে।’

‘সেও তোমাকে খুব ভালোবাসে। আমার মনে হয় পরের সামারে তুমি তাকে দেখতে পাবে।’

আমি মাথা নাড়লাম।

সে কাছে এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, ‘গুড বাই! গতরাতের জন্য আমি খুশি, ওই ঘোড়াগুলো, আমাদের দুজনের আলোচনা, সবকিছুর জন্য খুশি। আমি ভুলবো না,’ সে কাঁদতে শুরু করলো।

‘এমনটি হবে আমি আশা করিনি, আমাকে চিঠি লিখ। লিখবে’

‘লিখব, অনেক বড় চিঠি, আমি হাই স্কুলে থাকতে তোমাকে যে চিঠি লিখতাম, তারচেয়েও বড় চিঠি।’

‘আমি অপেক্ষায় থাকবো’, বললাম।

এরপর সে আমার দুই গালে হাত বুলালো। তারপর ফিরে প্লেনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।

বিদায় প্রিয়তম! মনে মনে বললাম। জেট ইঞ্জিন চালু না হওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করলাম।

ফিরে এলাম। তখনো বাইরের ঘোড়ার পায়ের দাগগুলো দেখা যাচ্ছে। ঘরে ঢুকে কোট খুলে রেখে টেলিফোন তুলে সুসানের নাম্বারে রিং করলাম।

লেখক পরিচিতি:

রেমন্ড কারবার (১৯৩৮-১৯৮৮) আমেরিকার কবি এবং ছোটগল্পকার। তাঁর ‘উইল ইউ প্লিজ বি কোয়াই, প্লিজ’,‘হোয়াট উই টক এবাউট’, ‘হোয়েন ইউ টক এবাউট লাভ’ উল্লেখযোগ্য রচনা। - অনুবাদক

ছবি

সম্পত্তি বিতর্ক: কেন পদত্যাগ করতে হলো টিউলিপ সিদ্দিককে

ছবি

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ফেব্রুয়ারিতে

ছবি

মধুসূদনের সাহিত্যে নৈরাশ্যবাদ

ছবি

বিদূষী নবনীতা বনাম মানুষ নবনীতা

ছবি

দুটি অণুগল্প

ছবি

উপমা-চিত্রে দ্যোতনার সঞ্চারণ

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মাকারিও

ছবি

আমার সহযাত্রী

ছবি

নাগিব মাহফুজের নির্বাচিত ১০ স্বপ্ন

ছবি

একটি ভাঙ্গা থালা

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কবিতা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বাদশা আকবর

ছবি

নগুগি ওয়া থিয়াঙ্গ’ও প্রতিরোধ এবং পুনর্জাগরণের প্রতীক নগুগি ওয়া থিয়াঙ্গ’ও

ছবি

সাহিত্যের ভবিষ্যৎ

ছবি

হৃদয় প্রক্ষালক কবি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

ছবি

বহুবাচনিকতা ও শিল্পের নন্দন

ছবি

সেদিন দু’দ- এই বাংলার তীর

ছবি

বিকল্প জীবন

সাময়িকী কবিতা

ছবি

হার না মানা নারী জীবনের উপাখ্যান

ছবি

কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা

ছবি

‘যে-কোনো দেশে ভাল সাহিত্য-অনুবাদক খুব কম’

ছবি

দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড-এর কবি এলিয়ট

ছবি

আর এক সুন্দর সকালবেলায়

ছবি

আবার নরকুম্ভির ও মডার্নিজম

ছবি

আত্মজীবনীর আত্মপ্রকাশ প্রসঙ্গে

ছবি

আসাদের অঙ্ক

ছবি

র্যাঁবোর কবিতায় প্রতীকী জীবনের ছায়া

ছবি

ভাষা সংস্কৃতি সাক্ষরতা

ছবি

হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কবিতার আভিজাত্য

ছবি

চেশোয়া মিওশ-এর কবিতা

ছবি

সিলভিয়া প্লাথের মৃত্যু, নিঃসঙ্গতা ও আত্মবিনাশ

ছবি

সমসাময়িক মার্কিনি ‘সহস্রাব্দের কণ্ঠস্বর’

সাময়িকী কবিতা

tab

সাময়িকী

রেমন্ড কারবার-এর গল্প

প্রয়োজনে ডাক দিও

ভাষান্তর: মহসীন হাবিব

বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

বসন্তের সময় আমরা লোকজনের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু যখন জুলাই মাস এলো এবং স্কুল বন্ধ হলো, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পলো আলটু থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় যাবো। আমাদের ছেলে রিচার্ড ওয়াশিংটনে নানির কাছে গেল। সেখানে সে সামার সেশনের জন্য কাজ করে টাকা আয় করবে। তার নানি সেখানে কাজ ঠিক করে রেখেছেন। পরিশ্রমের কাজ, কিন্তু রিচার্ড করতে চাচ্ছিল। ওর মা জড়িয়ে ধরে কন্না করলো, ছেলেকে চুমা দিল, এবং ওর নানির জন্য একটি চিঠি লিখে রিচার্ডের হাতে দিল। তারপর আমাদের যাওয়ার জন্য জিনিসপত্র গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমি রিচার্ডকে বাস স্টপেজে নিয়ে গেলাম। টিকেট কিনে রিচার্ডের হাতে দিলাম এবং বেঞ্চে বসে দুজনে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম।

‘তুমি আর মা কি আলাদা হতে যাচ্ছো’, রিচার্ড প্রশ্ন করলো। দিনটি ছিল শনিবার যে কারণে রাস্তায় অত গাড়ি ছিল না।

‘চেষ্টা করছি সেটা যেন না হয়, আমরা সেটা চাই না। আর সেকারণেই আমরা এখান থেকে সরে যাচ্ছি, যাতে কারো সঙ্গে দেখা না হয়। আমার ধারণা সে কারণেই তুমিও দূরে সঙ্গে যাচ্ছো। টাকা আয় করতে না।’

‘তুমি কি এখনো মাকে ভালোবাসো’

‘অবশ্যই ভালোবাসি। এবং তোমার সেটা এখনই জানা উচিত। অনেকের মতো আমাদের সমস্যা আছে, আবার দায়িত্বও আছে। তাই দূরে গিয়ে চেষ্টা করবো কোনো একটা পথ বের করা যায় কি না। কিন্তু আমাদের নিয়ে এত ভেবো না। চিন্তা করো যে এটি একটি সামার ভ্যাকেশন। ওখানে মাছ ধরার দারুণ ব্যাপার আছে, মাছ ধরবে মাঝে মাঝে।’

‘ওয়াটারস্কি! আমি ওয়াটারস্কি শিখব।’

‘আমি নিজেও কোনোদিন এটা করিনি, তুমি আমার জন্যও একটু শিখে এসো, পারবে না’

কিছুক্ষণ পর বাস এলো। আমরা উঠে দাঁড়ালাম। ওকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলাম, গুড বাই’।

‘গুডবাই ড্যাড’, রিচার্ড মুখ ফিরিয়ে নিল যাতে আমি ওর চোখের পানি দেখতে না পাই।

বাড়িতে ফিরে এসে দেখলাম ড্রইং রুমে স্যুটকেসগুলো গোছানো। ন্যান্সি পাকঘরে কফি খাচ্ছে তরুণ দম্পতি সঙ্গে নিয়ে। ওরাই পুরো সামারে আমাদের বাড়িতে থাকবে।

ওদের সঙ্গে পরিচিত হলাম। লিজ এবং জেরি। দুজনই ম্যাথমেটিকসে গ্রাজুয়েশন করেছে। ওদের সঙ্গে কফি খেয়ে আমি জিনিসপত্র গাড়িতে ওঠাতে চলে এলাম।

পলো আলটু থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকায় নতুন বাড়িটি ভাড়া নেওয়ার তিন সপ্তাহ আগে আমি ড্রাইভ করে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে ছিল সুসান। সুসানের কাছে আমি প্রায়ই যাই। আমরা ওই শহরের একটি মোটেলে তিন রাত থেকেছি। সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন দেখে ওকে সঙ্গে নিয়েই আমি বাসাটা ভাড়া করতে গিয়েছি। ও আমাকে চেক লিখে দিতে দেখেছে। মোটেলে ফিরে এসে বিছানায় গা হেলিয়ে দিয়ে নিজের কপালে হাত দিয়ে সুসান বলেছে, ‘আমি সত্যিই তোমার বউকে হিংসা করি। মানুষ সবসময় অন্য অন্য নারীর কথা বলে, কিন্তু বউ যে কত সুবিধা পায় এবং কত ক্ষমতাশালী তা কেই দেখে না। এসব নিয়ে আগে কখনো ভাবিনি। সে তোমার সঙ্গে এই সামারে ওখানে থাকবে! আহা, ওখানে আমি যদি হতাম! তোমার পাশে!’

ন্যান্সি লম্বা মানুষ, বাদামী চুল। সে অত্যন্ত বিনয়ী, উদার এবং স্পিরিটসম্পন্ন মানুষ। পরে আমাদের মধ্যে সেই উদারতা, স্পিরিটের ঘাটতি দেখা দিল। ন্যান্সি যে লোকটির কাছে যেতে শুরু করল সে আমারই একজন কলিগ। তার স্ত্রীর সঙ্গে তালাক হয়ে গেছে। সে সব সময় থ্রিপিস স্যুট প্যান্ট টাই পরে। চুল ধূসর হয়ে এসেছে। কিন্তু প্রচুর মদ খায়। ছাত্রছাত্রীরা বলে তার নাকি মাঝে মাঝেই হাত কাঁপে। আমার সম্পর্কের কথা ন্যান্সি জানার অল্প কিছুদিন পর এক হলিডের অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে ন্যান্সির সম্পর্ক তৈরি হয়।

আমরা রওয়ানা হলাম। বেশ খানিক পথ এসে হাইওয়ের পাশের একটি ছোট কফি হাউসে দাঁড়ালাম। কফি হাউসের সামনে সাইনডোর্বে লেখা, ‘ইট এন্ড গ্যাস’। সাইন দেখে আমরা হাসলাম। ভেতরে ঢুকে দুজনে জানালার পাশে বসলাম।

‘ন্যান্সি, দেখ একটা হামিংবার্ড।’

সে তাকাতে তাকাতে পাখিটা সরে গেছে। বলল, ‘কই, আমি তো দেখছি না।’

‘এক মুহূর্ত আগে ছিল’, আমি বললাম। ওই দেখ আরেকটা, মনে হয় আগেরটা না।’

আমরা হামিংবার্ড দেখতে দেখতে ওয়েটার আমাদের অর্ডার করা খাবার নিয়ে আসল। ততক্ষণে পাখি দেওয়ালের ওপাশে চলে গেছে।

‘এটি একটি ভালো লক্ষণ। হামিংবার্ড দেখলে ভাগ্য ভালো হয়’, আমি বললাম।

‘আমিও কোথাও শুনেছি, ঠিক মনে নেই। ওকে, এই ভাগ্য আমরা ব্যবহার করতে পারি। কী বল’

আমি বললাম,‘হ্যা ভালো লক্ষণ। ভাগ্য ভালো যে আমরা এখানে থেমেছিলাম।’

ন্যান্সি মাথা নেড়ে সায় দিয়ে স্যান্ডউইচে কামড় দিল।

সন্ধ্যার কিছু আগে আমরা ইউরেকায় পৌঁছলাম। পথে সেই মোটেলটা পার হলাম যেখানে তিন রাত আমি সুসানকে নিয়ে কাটিয়েছি।

ন্যান্সি বলল,‘খুব সুন্দর এলাকা। আমি আমাদের হাউসটা দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।’

‘এই তো পৌঁছে গেছি।’ গাড়ি বাক নিয়ে পৌঁছে বললাম, ‘এটাই। চলো বের হই।’

আমরা গাড়ি থেকে নেমে বারান্দায় উঠলাম। লাইট জ¦াললাম। ভেতরে দুইটি বেডরুম। একটি বাথরুম, একটি লিভিং রুম। আর একটা ফায়ারপ্লেস।

‘পছন্দ হয়েছে’

‘ওয়ান্ডারফুল’, ন্যান্সি বলল। ‘আমি খুবই খুশি’, সে গিয়ে রেফ্রিজারেটর খুলল। ‘ থ্যাঙ্কস গড, সবকিছু পরিষ্কার। আমার কোনো ধোয়ামোছা করতে হবে না।’

‘বিছানার চাদরগুলোও একেবারে পরিচ্ছন্ন। চেক করেছি।’ আমি বললাম।

ন্যান্সি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ‘এখন আমাদের কিছু শুকনো খড়ি কিনতে হবে ফায়ারপ্লেসের জন্য। এরকম রাতে ফায়ারপ্লেসে আগুন না থাকলে চলে না।’

‘কালকে গিয়ে কিনবো। সেই সঙ্গে শহরটাও ঘুরে দেখবো আমরা।’

ন্যান্সি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,‘এরকম একটি জায়গায় এসে আমি খুবই খুশি।’

‘আমিও’, ওর দিকে হাত প্রসারিত করলাম। ন্যান্সি কাছে এলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ন্যান্সি কাঁপছে। আমি ওর দুই গালে চুমু খেলাম।

কয়েকদিন কেটে গেল। ইউরেকা শহরে ঘোরাফেরা করলাম। বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করলাম। ওইদিন রাতে দুজন ফায়ারপ্লেসের কাছে বসে একটা কুকুর কেনার কথা আলোচনা করলাম।

‘আমি ছোট বাচ্চা কুকুর চাই না’, ন্যান্সি বলল। ‘তবে একটা কুকুর চাই। অনেকদিন হলো আমাদের কোনো কুকুর নেই। একটা কুকুর হলে আমরা ভালোমতো পুষতে পারবো।’

‘কিন্তু আমরা যখন চলে যাবো, যখন সামারের সময় ফুরিয়ে যাবে’ আমি বললাম।

‘তখন দেখা যাবে। এখন উপযুক্ত একটা কুকুর দরকার। না দেখে বুঝতে পারবো না কোন ধরনের কুকুর দরকার।’

ন্যান্সি ওর মাকে ফোন করল। ওর মা বরল, রিচার্ড ভালোই আছে এবং কাজ করছে। ওর মাও ভালো আছে। ন্যান্সি বলল, আমররাও ভালো আছি, ‘এখানে ওষুধের মতো কাজ হচ্ছে।’

জুলাই মাসের মাঝামাঝি একদিন গাড়ি চালিয়ে ফেরার সময় দেখলাম কতগুলো লোক লেকে মাছ ধরছে। আমি গাড়ি থামালাম, ‘চলো ওরা কী মাছ ধরছে দেখি। আমরাও তো মাছ ধরতে পারি!’

‘হ্যা, আমরা অনেক কাল মাছ ধরি না। সেই যে রিচার্ড ছোট থাকতে আমরা মাউন্ট ষাস্তায় গিয়েছিলাম মাছ ধরতে, তোমার মনে আছে’

‘খুব মনে আছে, চলো দেখি ওরা কী মাছ ধরলো।’

একজনের ঘাড়ের কাছে দাঁড়ালাম। সে স্যালমন এবং বেশ কয়েক ধরনের মাছ ধরেছে।

‘আধার হিসাবে কী দিচ্ছ’ ন্যান্সি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো।

‘যে কোনো কিছু, এই ধরো স্যালমন মাছের ডিম, কেঁচো, নানা পোকামাকড়, ভুট্টার বীজ- এসব। আধার গেঁথে নিচে ফেলে দাও, কিছুক্ষণ তাকিয়ে অপেক্ষা করো, দেখবে কাজ হয়েছে।’

খানিক সময় মাছ ধরা দেখে তারপর লোকটাকে আমরা বললাম, ‘থ্যাঙ্কস, গুডলাক।’

লোকটিও উত্তরে বলল, ‘তোমাদের দুজনের জন্য শুভকামনা রইল।’

আমরা একটা ক্রীড়া সরঞ্জামের দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। ভেতরে ¯িœকার, বড়শি, নাইলনের সুতা, সবই পাওয়া যায়। আমরা পরদিন মাছ ধরতে যাওয়ার প্ল্যান করলাম।

রাতে আমরাও খাবার খেলাম। প্লেটগুলো ধোয়ামোছা করে তারপর দুজনে ফায়ারপ্লেসের কাছে গিয়ে বসলাম। খানিক সময় পর ন্যান্সি মাথা নেড়ে বলল, ‘কাজ হচ্ছে না!’

‘একথা বলছ কেন, কী কাজ হচ্ছে না’ আমি বললাম। ‘অর্থ কী’

‘এর অর্থ হলো কাজ হচ্ছে না! সমস্যার মুখোমুখি হও!’, সে মাথা নেড়ে বলল।‘আমি কাল সকালে মাছ ধরতে যাবো না। আমার কোনো কুকুরও দরকার নেই! আমি মা এবং রিচার্ডকে দেখতে যাবো! একা। আমি একাকীত্ব চাই। আমি রিচার্ডকে মিস করছি।’ সে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকল। ‘আমার ছেলেটা প্রায় বড় হয়ে গেল! আমি ওকে প্রচ- মিস করছি!’

‘এবং ডেল, তুমি ডেল শ্রোয়েডারকেও মিস করছো! তোমার বয়ফ্রেন্ড!’

‘আজ রাতে আমি সবাইকেই মিস করছি! আমি তোমাকেও মিস করছি। তোমাকে আমি বহুকাল ধরে মিস করছি! তুমি আমার কাছ থেকে কী করে যেন হারিয়ে গেছ! আমি ব্যাখ্যা করতে পারছি না! তুমি এখন আর আমার নও!’

‘ন্যান্সি!’

‘না’, সে মাথা দোলাতে থাকল। ‘আমি কাল রিচার্ড এবং মায়ের কাছে যাবো। আমি চলে যাওয়ার পর তুমি তোমার বান্ধবী সুসানকে ফোন করতে পারো!’

‘আমি তা করবো না’ বললাম। ‘আমার তেমন কোনো ইচ্ছা নেই।’

‘তুমি অবশ্যই কল করবে’, সে বলল।

‘আর তুমি কল করবে ডেলকে’, আমি বাধ্য হয়েই বললাম।

সে তার জামার হাতায় চোখ মুছতে মুছতে বলল, ‘তোমার যা ইচ্ছা ভাবতে পারো। আমি কোনো বাতিকগ্রস্ত হতে চাই না। কিন্তু আমি কাল ওয়াশিংটন যাচ্ছি অবশ্যই। আমি এখন বিছানায় যাবো। আর পারছি না! আমি দুঃখিত, আমি সত্যিই আমাদের দুজনের জন্যই দুঃখিত, ড্যান! ওই মাছ ধরা লোকটি আমাদের জন্য সৌভাগ্য কামনা করেছে। আমিও আমাদের সৌভাগ্য কামনা করি। কিন্তু আমি আর পারছি না!’ ন্যান্সি উঠে বাথরুমে চলে গেল। আমি উঠে গিয়ে বারান্দার সিঁড়িতে বসে একটি সিগারেট ধরালাম। অন্ধকার রাত, কিন্তু পরিষ্কার আকাশ। আমি সুসানের কথা ভাবলাম। ন্যান্সির বাথরুম থেকে বের হওয়ার শব্দ পেলাম। আমি উঠে গিয়ে ফায়ারপ্লেসে কিছু খড়ি দিলাম। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। ঘন কুয়াশা। বাইরে কী যেন একটা নড়াচড়া করতে দেখতে পেলাম। আমি জানালার কাছে গিয়ে ভালো করে দেখলাম। দেখলাম, একটা ঘোড়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার ঘাস খেতে শুরু করলো। একটু পর আরো একটি ঘোড়া দেখা গেল গাড়ি বারান্দার দিকে ঘাস খেতে খেতে আগাচ্ছে। তৃতীয় আরেকটি ঘোড়াও দেখা গেল। বারান্দায় এসে লাইট জ¦ালালাম। দেখলাম বিশাল সাইজের সাদা সাদা ঘোড়াগুলো। ঘাড় ভরা চুল।

আমি বেডরুমে গিয়ে ন্যান্সিকে ডাকলাম। দেখলাম তার চোখদুটো তখনো ভেজা, ফুলে আছে।

‘ন্যান্সি, হানি, চলো দ্যাখো সামনের বারান্দার কাছে কী দৃশ্য। বিশ^াস করতে পারবে না। তোমার অবশ্যই দেখা উচিত। তাড়াতাড়ি ওঠো। ’

‘কী সেটা, আমাকে কোনো ধোঁকা দিও না!’

‘হানি, তুমি নিজেই দ্যাখ, আমি তোমাকে কোনো ধোঁকা দিচ্ছি না।’

ন্যান্সি এসে জানালা দিয়ে তাকালো, মাই গড! কী সুন্দর ওরা! কোথা থেকে আসল, ড্যান! কী সুন্দর!’

‘আশেপাশের কোনো ফার্ম থেকে ছুটে গেছে,’ আমি বললাম। ‘পুলিশকে ফোন করবো যাতে ওদের মালিকসহ এসে নিয়ে যেেত পারে। কিন্তু তার আগে আমি চাই তুমি দ্যাখো।’

‘ওরা কী কামড় দেয়! আমি একটু আদর করতে চাই! একটু হাতিয়ে দিতে চাই! ’

‘আমার মনে হয় না কামড় দেবে। কামড়ানোর মতো ওদের ভাবভঙ্গি না। কিন্তু একটা গরম কাপড় পরে নামো, বাইরে ঠা-া আছে।’

ন্যান্সি নেমে পাগলের মতো ঘোড়ার গায়ে হাত দিয়ে আদর করতে থাকল। ঘোড়ার কেশগুলো হাতড়াতে থাকল,‘আহা, তোমরা কোথা থেকে এলে! কোথায় থাকো!’

বেশ খানিক পর আমি বললাম, ‘এখন আমার বোধহয় পুলিশে ফোন করা উচিত।’

‘না, আরেকটু পরে করো!’

পুলিশ এলো, ফার্মের মালিকও এলো। ন্যান্সি উচ্চৈঃস্বরে ওদের বলল, ঘোড়াগুলোকে ব্যথা দিও না প্লিজ!

পরদিন দুপুরবেলা স্যুটকেস গোছানো হয়েছে। আমি ন্যান্সিকে ছোট্টা এয়ারপোর্টে নিয়ে গেলাম।

‘তোমার মাকে আমার শুভেচ্ছা দিও, রিচার্ডকে বলো, বাবা আদর দিয়েছে এবং বাবা তোমাকে মিস করে।’

‘সেও তোমাকে খুব ভালোবাসে। আমার মনে হয় পরের সামারে তুমি তাকে দেখতে পাবে।’

আমি মাথা নাড়লাম।

সে কাছে এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, ‘গুড বাই! গতরাতের জন্য আমি খুশি, ওই ঘোড়াগুলো, আমাদের দুজনের আলোচনা, সবকিছুর জন্য খুশি। আমি ভুলবো না,’ সে কাঁদতে শুরু করলো।

‘এমনটি হবে আমি আশা করিনি, আমাকে চিঠি লিখ। লিখবে’

‘লিখব, অনেক বড় চিঠি, আমি হাই স্কুলে থাকতে তোমাকে যে চিঠি লিখতাম, তারচেয়েও বড় চিঠি।’

‘আমি অপেক্ষায় থাকবো’, বললাম।

এরপর সে আমার দুই গালে হাত বুলালো। তারপর ফিরে প্লেনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।

বিদায় প্রিয়তম! মনে মনে বললাম। জেট ইঞ্জিন চালু না হওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করলাম।

ফিরে এলাম। তখনো বাইরের ঘোড়ার পায়ের দাগগুলো দেখা যাচ্ছে। ঘরে ঢুকে কোট খুলে রেখে টেলিফোন তুলে সুসানের নাম্বারে রিং করলাম।

লেখক পরিচিতি:

রেমন্ড কারবার (১৯৩৮-১৯৮৮) আমেরিকার কবি এবং ছোটগল্পকার। তাঁর ‘উইল ইউ প্লিজ বি কোয়াই, প্লিজ’,‘হোয়াট উই টক এবাউট’, ‘হোয়েন ইউ টক এবাউট লাভ’ উল্লেখযোগ্য রচনা। - অনুবাদক

back to top