ভূমিকা ও অনুবাদ: কামরুল ইসলাম
আদোনিস / জন্ম : ১ জানুয়ারি ১৯৩০
আরব কবি, অনুবাদক, এডিটর এবং তাত্ত্বিক আদোনিস জন্মগ্রহণ করেন সিরিয়ার কাসাবিন গ্রামে এক কৃষক পরিবারে। ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। তিনি ছিলেন ছয় ভাইবোনের সবার বড়। পারিবারিক নাম আলি আহমাদ সাঈদ ইসবার। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর মতো সচ্ছল পরিবার না হলেও তাঁর পিতা তাঁকে পড়তে শেখান এবং যখন পারিবারিক খামারে কাজ করতেন ছেলেকে কবিতা মুখস্থ করাতেন। পাশর্^বর্তী শহরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ভিজিটে এলে আদোনিস প্রেসিডেন্টকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। তখন তাঁর ১৪ বছর বয়স। অতঃপর প্রেসিডেন্ট কিশোরের অনুরোধে তাঁকে স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। প্রেসিডেন্টের সহায়তায় আদোনিস একটি ফরাসি হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং পরে দামেস্ক বিশ^বিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
গ্রিক মিথোলজির উর্বরতার দেবতা আদোনিস; এই নামে তিনি লেখালেখি শুরু করেন, যখন তাঁর নিজের নামে কেউ তাঁর কবিতা ছাপছিল ন্।া রাজনৈতিক কর্মকা-ের জন্য এক বছর জেল খাটার পর তিনি বৈরুতে পাড়ি জমান, সেখানে তিনি অনেক উঁচুমানের নির্বাসিত লেখক-শিল্পীদের সান্নিধ্যে আসেন। পরে তিনি সেইন্ট জোসেফ বিশ^বিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
আরবি কবিতার পুরনো ঐতিহ্য ও প্রথাগত গঠন ভেঙে তিনি ফ্রী ভার্স এবং গদ্য কবিতা নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। যদিও তাঁর পথ এখন অনেক দূরের। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি নোবেল পুরস্কারের জন্য নমিনেশন পেয়ে আসছেন, কিন্তু এতোদিন পরেও তাঁকে তা দেওয়া হয়নি। নির্বাসন ও রূপান্তর তাঁর কবিতার মূলসুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর মতে- “Poetry that reaches all the people is essentially superficial. Realpoetry requires effort because it requires the reader to become, like the poet, a creator.”
২০১০ সালে McGrath তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেনঘবি New York Times এর জন্য। সেখানে তিনি বলেছিলেন,“I wanted to draw on Arab tradition and mythology without being tied to it” তিনি আরও বলেছেন- “I wanted to break the linearity of poetic text — to mess with it, if you will. The poem is meant to be a network rather than a single rope of thought.”
আরবি ভাষা ও কবিতার আধুনিকায়নে তাঁর ভূমিকা অগ্রগণ্য। আরববিশ্বে তাঁর চেয়ে বড় কবি আর কেউ নেই, এমনকি পৃথিবীর জীবন্ত কবিদের মধ্যে তাঁর স্থান সবার ওপরে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতা সংকলনগুলো: Adonis: Selected Poems (2010, translated by Khaled Mattawa), Mihyar of Damascus: His Songs (2008), If Only the Sea Could Sleep (2002), and The Blood of Adonis (1971), এই কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি The International Poetry Forum’s Syria-Lebanon Award পান। তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ An Introduction to Arab Poetics (2003).
অনূদিত কবিতাগুলো Selected Poems (Yale University Press, 2010) এর অন্তর্ভুক্ত। ইংরেজিতে Khaled Mattawa.
প্রারম্ভিক কথা
আমি তখন বালক ছিলাম,
একদা এক অদ্ভুত চেহারার মানুষ
আমার পাশে এসে দাঁড়াল
সে কিছুই বলল না আমরা হাঁটলাম
প্রত্যেকেই আমরা একে অপরের দিকে নীরবে তাকাচ্ছি
আমাদের পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে এক অদ্ভুত নদী ছুটে চলেছে
আমরা একে অপরের কাছাকাছি এসেছি আমাদের শুভ আচরণে
এবং সেই পাতাগুলো বাতাসে উড়ছে
অতঃপর আমরা আলাদা হয়ে যাই,
ধরিত্রী লিখিত একটি অরণ্য জল পেতে থাকে
ঋতু পরিবর্তনের মাধ্যমে
একদা যে শিশু ছিল, সামনে এসে দাঁড়ায়
এখন কী আমাদের একত্রিত করবে,
আর এ ব্যাপারে আমাদের কী বলার আছে?
আরেক নূহ
১.
বৃষ্টি ও কাদায় আমরা সেই বিশাল কিস্তিতে যাত্রা করেছি
আমাদের দাঁড়গুলো ঈশ^রের প্রতিশ্রুতি।
আমরা বেঁচে আছি- এবং অবশিষ্ট সব মানুষই মৃত।
আকাশছোঁয়া শবের দড়া-দড়িতে আমাদের জীবন বাঁধা
এবং আমরা বিশালকায় ঢেউয়ের ওপর দিয়ে ছুটে চলেছি।
কিন্তু স্বর্গ ও আমাদের মাঝখানে একটি খোলা পথ আছে
একটি গর্ত-বন্দর যা বেঁচে থাকার প্রার্থনার জন্য।
হে প্রভু, সমস্ত মানুষ ও জন্তুদের মধ্যে আমাদেরই শুধু
কেন বাঁচালে? কোথায় তুমি এখন আমাদের নিয়ে গিয়ে ফেলবে?
তোমার অন্য কোনো ভূমিতে, আমাদের আদি বাসভূমে?
মৃত্যুর পাতার স্তূপ, জীবনের খোলা বাতাসে?
আমাদের ভেতরে, আমাদের ধমনীতে, প্রবাহিত সূর্যের ভয়।
আলো আমাদের হতাশ করেছে,
প্রভু, আমরা আগামীতে যে নতুন জীবন শুরু করবো
সে-বিষয়েও হতাশ।
ধরিত্রী এবং তার বংশধরদের জন্য
আমরা যদি কেবল সৃষ্টির চারাগাছ না হতাম,
যদি আমরা কেবল কাদা কিংবা অঙ্গার হয়ে থাকতাম
কিংবা এর মধ্যবর্তী কোনোকিছু,
তাহলে আমাদের দেখতে হতো না
এই জগৎ, এর সৃষ্টিকর্তা, এবং এর নরক, আরেকবার।
২
যদি সময় নতুনভাবে শুরু হতো
এবং সমুদ্রগুলো ডুবিযে দিত জীবনের অবয়ব
এবং ধরিত্রী আলোড়িত হতো, এবং দেবতা
আমার দিকে দৌড়ে এসে মিনতি করতো, “নূহ, প্রাণিদের বাঁচাও!”
আমি তার অনুরোধ নিয়ে মাথা ঘামাতাম না
মৃতদের চোখ থেকে কাদা ও নুড়ি-পাথর সরিয়ে
আমি আমার কিস্তিতে চড়ে যাত্রা করতাম।
আমি মহাপ্লাবনের কাছে তাদের অস্তিত্বের গভীরতা খুলে দিতাম,
এবং তাদের ধমনীর ভেতরে আমি চুপিচুপি বলতাম
আমরা ধুধু প্রান্তর থেকে ফিরে এসেছি,
আমরা গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছি,
আমরা বহু যুগের আকাশকে পরিবর্তন করেছি,
আমরা ভয়কে প্রশ্রয় না দিয়ে যাত্রা চালিয়ে যাচ্ছি-
আমরা সেই দেবতার কোনো কথাই শুনছি না।
আমাদের বোঝাপড়া স্বয়ং মৃত্যুর সাথে।
আমাদের কিনারগুলো পরিচিত ও আনন্দময় হতাশা
একটা বরফ-শীতল লৌহ জলের সমুদ্র যা আমরা বাধাহীনভাবে
একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাড়ি দিয়ে চলে যাই,
ওই দেবতা ও তার কথা আমরা পরোয়া করিনি,
অন্য কোনো নতুন প্রভুর প্রত্যাশায়।
সংগীতআমাদের চোখের পাতা বেজে ওঠে
এবং সেইসাথে শব্দের মৃত্যু-যন্ত্রণা,
আমি এখন কোলাহলময় খোলা ময়দানে,
ঘোড়ার পৃষ্ঠদেশ থেকে একজন বীর নোংরা ছড়াল।
আমার ফুসফুসই আমার কবিতা, আমার চোখ আমার বই;
আমি এখন শব্দের চামড়ার নিচে,
দীপ্তিময় সমুদ্র-ফেনার তীরে-
এই স্বাক্ষরিত দুঃখগাথা রেখে
একজন কবি যে গান গাইল এবং মরে গেল
কবিদের সামনাসামনি,
সেগুলি আকাশের কিনারে উড্ডীন পাখিদের জন্য রয়ে গেল।
শৈশবগাথা
এমনকি বাতাসও চায়
টানাগাড়ি হতে
যা প্রজাপতিরা টেনে নিয়ে যাবে।
আমি প্রথমবারের মতো
স্মরণ করতে পারি আমার পাগলামিকে
যা মনের উপাধানে ঠেস দিয়ে আছে।
তখন আমি আমার শরীরের সাথে
কথা বলছিলাম
এবং আমার শরীর ছিল একটি ধারণা মাত্র
যা আমি লাল কালিতে লিখেছিলাম।
লাল হলো সূর্যের সবচেয়ে সুন্দর মসনদ
এবং অন্য রঙেরা
লাল কার্পেটের ওপরে উপসনা করে যাচ্ছে।
রাত হলো আরেকটি মোমবাতি।
প্রত্যেকটি শাখায়, একটি বাহু,
একটি খোলা জায়গায় বাহিত বার্তা
বাতাসের দেহ কর্তৃক প্রতিধ্বনিত হচ্ছে
সূর্য কুয়াশার ভেতর তার পোশাক পরিধানের জিদ করে
যখন সে আমার সাথে দেখা করে:
আমি কি আলোর দ্বারা তিরস্কৃত হচ্ছি?
হে আমার অতীত দিনগুলি-
তারা তাদের ঘুমের মধ্যে হেঁটে বেড়াত
এবং আমি তাদের ওপর হেলান দিয়ে থাকতাম।
স্বপ্ন এবং ভালোবাসা দুটো প্যারেনথেসিস
এদের মধ্যে আমি আমার দেহকে স্থাপন করেছি
এবং আমি পৃথিবীকে আবিষ্কার করছি।
অনেকবার
আমি দেখেছি বাতাস তার ঘাসের দুটো
পা নিয়ে উড়ছে
এবং রাস্তাটা বাতাসের তৈরি পা নিয়ে নাচছে।
আমার শুভেচ্ছা হলো সেই ফুলগুলো
যা আমার দিনগুলোকে রঞ্জিত করে যাচ্ছে।
আমি জখম হয়েছিলাম জীবনের প্রারম্ভেই
এবং আমি তখনই শিখেছিলাম যে
আমি এই ক্ষতগুলোরই সৃষ্টি।
আমি আজও সেই শিশুটিকে অনুসরণ করি
যে এখনো আমার ভেতরে হেঁটে বেড়ায়।
সে এখন একটি আলোর তৈরি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে
সে খুঁজছে বিশ্রামের জন্য একটি কোনা
রাত্রির মুখম-ল আবার পাঠ করার জন্য।
যদি চাঁদ একটি বাড়ি হতো
আমার পা তার চৌকাঠ স্পর্শ করতে অস্বীকার করতো
তারা ধুলোকণা দ্বারা তাড়িত
আমাকেও বহন করে নিয়ে যাচ্ছে ঋতুগুলির হাওয়ায়
আমি হাঁটি,
আমার এক হাত বাতাসের ভেতর
অন্য হাত আমার কল্পনার বেণীসমূহে
আদর করে যাচ্ছে।
মহাশূন্যের ময়দানে একটি তারকা
একটি নুড়ি-পাথরের মতো।
সে একা
যে দিগন্তের সাথে সংযুক্ত
সে-ই পারে নতুন রাস্তা বানাতে।
একটি চাঁদ, একজন বৃদ্ধ মানুষ
তার আসন হলো রাত
এবং আলো তার হেঁটে বেড়ানোর লাঠি।
আমি যে বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলাম
সেই বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে
আমি যে দেহ ফেলে রেখে এসেছি তাকে আমি কী বলবো?
কেবল সন্ধ্যার পথের ওপর ফেলে যাওয়া পদচিহ্ন
এবং যে তারাগুলো এর ওপরে মিটমিট করে জ¦লছে
তারা ছাড়া কেউ-ই আমার বাল্যকালকে বর্ণনা করতে পারবে না।
আমার শৈশবকাল যেন এখনো জন্ম নিচ্ছে
একটি আলোর তালুতে
তার নাম আমি জানি না
এবং জানি না কে আমার নাম রাখে।
ওই নদী থেকেই সে একটি আয়না তৈরি করলো
এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলো তার দুঃখ সম্বন্ধে।
সে দুঃখ থেকে বৃষ্টি তৈরি করলো
এবং মেঘগুলোকে অনুসরণ করলো।
তোমার শৈশবকাল একটি গ্রাম।
তুমি যতোদূরেই যাও না কেন
তুমি কখনোই এর সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না।
তার দিনগুলো যেন হ্রদ,
তার স্মৃতিগুলো ভাসমান দেহ।
তুমি যে অতীতের পাহাড়গুলো থেকে নেমে আসছো,
তুমি আবার সেখানে কীভাবে উঠবে এবং কেন?
সময় একটি দরজা
আমি তা খুলতে পারি না।
আমার জাদু পুরনো হয়ে গেছে
আমার মুগ্ধ করার ক্ষমতা ঘুমিয়ে।
আমি একটি গ্রামে জন্মেছিলাম,
সেটি খুব ছোট এবং মাতৃগর্ভের মতো গোপনীয়।
আমি কখনো তা ত্যাগ করিনি।
তটভূমি নয় আমি সমুদ্র ভালোবাসি।
ভূমিকা ও অনুবাদ: কামরুল ইসলাম
আদোনিস / জন্ম : ১ জানুয়ারি ১৯৩০
বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
আরব কবি, অনুবাদক, এডিটর এবং তাত্ত্বিক আদোনিস জন্মগ্রহণ করেন সিরিয়ার কাসাবিন গ্রামে এক কৃষক পরিবারে। ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। তিনি ছিলেন ছয় ভাইবোনের সবার বড়। পারিবারিক নাম আলি আহমাদ সাঈদ ইসবার। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর মতো সচ্ছল পরিবার না হলেও তাঁর পিতা তাঁকে পড়তে শেখান এবং যখন পারিবারিক খামারে কাজ করতেন ছেলেকে কবিতা মুখস্থ করাতেন। পাশর্^বর্তী শহরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ভিজিটে এলে আদোনিস প্রেসিডেন্টকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। তখন তাঁর ১৪ বছর বয়স। অতঃপর প্রেসিডেন্ট কিশোরের অনুরোধে তাঁকে স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। প্রেসিডেন্টের সহায়তায় আদোনিস একটি ফরাসি হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং পরে দামেস্ক বিশ^বিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
গ্রিক মিথোলজির উর্বরতার দেবতা আদোনিস; এই নামে তিনি লেখালেখি শুরু করেন, যখন তাঁর নিজের নামে কেউ তাঁর কবিতা ছাপছিল ন্।া রাজনৈতিক কর্মকা-ের জন্য এক বছর জেল খাটার পর তিনি বৈরুতে পাড়ি জমান, সেখানে তিনি অনেক উঁচুমানের নির্বাসিত লেখক-শিল্পীদের সান্নিধ্যে আসেন। পরে তিনি সেইন্ট জোসেফ বিশ^বিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
আরবি কবিতার পুরনো ঐতিহ্য ও প্রথাগত গঠন ভেঙে তিনি ফ্রী ভার্স এবং গদ্য কবিতা নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। যদিও তাঁর পথ এখন অনেক দূরের। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি নোবেল পুরস্কারের জন্য নমিনেশন পেয়ে আসছেন, কিন্তু এতোদিন পরেও তাঁকে তা দেওয়া হয়নি। নির্বাসন ও রূপান্তর তাঁর কবিতার মূলসুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর মতে- “Poetry that reaches all the people is essentially superficial. Realpoetry requires effort because it requires the reader to become, like the poet, a creator.”
২০১০ সালে McGrath তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেনঘবি New York Times এর জন্য। সেখানে তিনি বলেছিলেন,“I wanted to draw on Arab tradition and mythology without being tied to it” তিনি আরও বলেছেন- “I wanted to break the linearity of poetic text — to mess with it, if you will. The poem is meant to be a network rather than a single rope of thought.”
আরবি ভাষা ও কবিতার আধুনিকায়নে তাঁর ভূমিকা অগ্রগণ্য। আরববিশ্বে তাঁর চেয়ে বড় কবি আর কেউ নেই, এমনকি পৃথিবীর জীবন্ত কবিদের মধ্যে তাঁর স্থান সবার ওপরে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতা সংকলনগুলো: Adonis: Selected Poems (2010, translated by Khaled Mattawa), Mihyar of Damascus: His Songs (2008), If Only the Sea Could Sleep (2002), and The Blood of Adonis (1971), এই কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি The International Poetry Forum’s Syria-Lebanon Award পান। তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ An Introduction to Arab Poetics (2003).
অনূদিত কবিতাগুলো Selected Poems (Yale University Press, 2010) এর অন্তর্ভুক্ত। ইংরেজিতে Khaled Mattawa.
প্রারম্ভিক কথা
আমি তখন বালক ছিলাম,
একদা এক অদ্ভুত চেহারার মানুষ
আমার পাশে এসে দাঁড়াল
সে কিছুই বলল না আমরা হাঁটলাম
প্রত্যেকেই আমরা একে অপরের দিকে নীরবে তাকাচ্ছি
আমাদের পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে এক অদ্ভুত নদী ছুটে চলেছে
আমরা একে অপরের কাছাকাছি এসেছি আমাদের শুভ আচরণে
এবং সেই পাতাগুলো বাতাসে উড়ছে
অতঃপর আমরা আলাদা হয়ে যাই,
ধরিত্রী লিখিত একটি অরণ্য জল পেতে থাকে
ঋতু পরিবর্তনের মাধ্যমে
একদা যে শিশু ছিল, সামনে এসে দাঁড়ায়
এখন কী আমাদের একত্রিত করবে,
আর এ ব্যাপারে আমাদের কী বলার আছে?
আরেক নূহ
১.
বৃষ্টি ও কাদায় আমরা সেই বিশাল কিস্তিতে যাত্রা করেছি
আমাদের দাঁড়গুলো ঈশ^রের প্রতিশ্রুতি।
আমরা বেঁচে আছি- এবং অবশিষ্ট সব মানুষই মৃত।
আকাশছোঁয়া শবের দড়া-দড়িতে আমাদের জীবন বাঁধা
এবং আমরা বিশালকায় ঢেউয়ের ওপর দিয়ে ছুটে চলেছি।
কিন্তু স্বর্গ ও আমাদের মাঝখানে একটি খোলা পথ আছে
একটি গর্ত-বন্দর যা বেঁচে থাকার প্রার্থনার জন্য।
হে প্রভু, সমস্ত মানুষ ও জন্তুদের মধ্যে আমাদেরই শুধু
কেন বাঁচালে? কোথায় তুমি এখন আমাদের নিয়ে গিয়ে ফেলবে?
তোমার অন্য কোনো ভূমিতে, আমাদের আদি বাসভূমে?
মৃত্যুর পাতার স্তূপ, জীবনের খোলা বাতাসে?
আমাদের ভেতরে, আমাদের ধমনীতে, প্রবাহিত সূর্যের ভয়।
আলো আমাদের হতাশ করেছে,
প্রভু, আমরা আগামীতে যে নতুন জীবন শুরু করবো
সে-বিষয়েও হতাশ।
ধরিত্রী এবং তার বংশধরদের জন্য
আমরা যদি কেবল সৃষ্টির চারাগাছ না হতাম,
যদি আমরা কেবল কাদা কিংবা অঙ্গার হয়ে থাকতাম
কিংবা এর মধ্যবর্তী কোনোকিছু,
তাহলে আমাদের দেখতে হতো না
এই জগৎ, এর সৃষ্টিকর্তা, এবং এর নরক, আরেকবার।
২
যদি সময় নতুনভাবে শুরু হতো
এবং সমুদ্রগুলো ডুবিযে দিত জীবনের অবয়ব
এবং ধরিত্রী আলোড়িত হতো, এবং দেবতা
আমার দিকে দৌড়ে এসে মিনতি করতো, “নূহ, প্রাণিদের বাঁচাও!”
আমি তার অনুরোধ নিয়ে মাথা ঘামাতাম না
মৃতদের চোখ থেকে কাদা ও নুড়ি-পাথর সরিয়ে
আমি আমার কিস্তিতে চড়ে যাত্রা করতাম।
আমি মহাপ্লাবনের কাছে তাদের অস্তিত্বের গভীরতা খুলে দিতাম,
এবং তাদের ধমনীর ভেতরে আমি চুপিচুপি বলতাম
আমরা ধুধু প্রান্তর থেকে ফিরে এসেছি,
আমরা গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছি,
আমরা বহু যুগের আকাশকে পরিবর্তন করেছি,
আমরা ভয়কে প্রশ্রয় না দিয়ে যাত্রা চালিয়ে যাচ্ছি-
আমরা সেই দেবতার কোনো কথাই শুনছি না।
আমাদের বোঝাপড়া স্বয়ং মৃত্যুর সাথে।
আমাদের কিনারগুলো পরিচিত ও আনন্দময় হতাশা
একটা বরফ-শীতল লৌহ জলের সমুদ্র যা আমরা বাধাহীনভাবে
একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাড়ি দিয়ে চলে যাই,
ওই দেবতা ও তার কথা আমরা পরোয়া করিনি,
অন্য কোনো নতুন প্রভুর প্রত্যাশায়।
সংগীতআমাদের চোখের পাতা বেজে ওঠে
এবং সেইসাথে শব্দের মৃত্যু-যন্ত্রণা,
আমি এখন কোলাহলময় খোলা ময়দানে,
ঘোড়ার পৃষ্ঠদেশ থেকে একজন বীর নোংরা ছড়াল।
আমার ফুসফুসই আমার কবিতা, আমার চোখ আমার বই;
আমি এখন শব্দের চামড়ার নিচে,
দীপ্তিময় সমুদ্র-ফেনার তীরে-
এই স্বাক্ষরিত দুঃখগাথা রেখে
একজন কবি যে গান গাইল এবং মরে গেল
কবিদের সামনাসামনি,
সেগুলি আকাশের কিনারে উড্ডীন পাখিদের জন্য রয়ে গেল।
শৈশবগাথা
এমনকি বাতাসও চায়
টানাগাড়ি হতে
যা প্রজাপতিরা টেনে নিয়ে যাবে।
আমি প্রথমবারের মতো
স্মরণ করতে পারি আমার পাগলামিকে
যা মনের উপাধানে ঠেস দিয়ে আছে।
তখন আমি আমার শরীরের সাথে
কথা বলছিলাম
এবং আমার শরীর ছিল একটি ধারণা মাত্র
যা আমি লাল কালিতে লিখেছিলাম।
লাল হলো সূর্যের সবচেয়ে সুন্দর মসনদ
এবং অন্য রঙেরা
লাল কার্পেটের ওপরে উপসনা করে যাচ্ছে।
রাত হলো আরেকটি মোমবাতি।
প্রত্যেকটি শাখায়, একটি বাহু,
একটি খোলা জায়গায় বাহিত বার্তা
বাতাসের দেহ কর্তৃক প্রতিধ্বনিত হচ্ছে
সূর্য কুয়াশার ভেতর তার পোশাক পরিধানের জিদ করে
যখন সে আমার সাথে দেখা করে:
আমি কি আলোর দ্বারা তিরস্কৃত হচ্ছি?
হে আমার অতীত দিনগুলি-
তারা তাদের ঘুমের মধ্যে হেঁটে বেড়াত
এবং আমি তাদের ওপর হেলান দিয়ে থাকতাম।
স্বপ্ন এবং ভালোবাসা দুটো প্যারেনথেসিস
এদের মধ্যে আমি আমার দেহকে স্থাপন করেছি
এবং আমি পৃথিবীকে আবিষ্কার করছি।
অনেকবার
আমি দেখেছি বাতাস তার ঘাসের দুটো
পা নিয়ে উড়ছে
এবং রাস্তাটা বাতাসের তৈরি পা নিয়ে নাচছে।
আমার শুভেচ্ছা হলো সেই ফুলগুলো
যা আমার দিনগুলোকে রঞ্জিত করে যাচ্ছে।
আমি জখম হয়েছিলাম জীবনের প্রারম্ভেই
এবং আমি তখনই শিখেছিলাম যে
আমি এই ক্ষতগুলোরই সৃষ্টি।
আমি আজও সেই শিশুটিকে অনুসরণ করি
যে এখনো আমার ভেতরে হেঁটে বেড়ায়।
সে এখন একটি আলোর তৈরি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে
সে খুঁজছে বিশ্রামের জন্য একটি কোনা
রাত্রির মুখম-ল আবার পাঠ করার জন্য।
যদি চাঁদ একটি বাড়ি হতো
আমার পা তার চৌকাঠ স্পর্শ করতে অস্বীকার করতো
তারা ধুলোকণা দ্বারা তাড়িত
আমাকেও বহন করে নিয়ে যাচ্ছে ঋতুগুলির হাওয়ায়
আমি হাঁটি,
আমার এক হাত বাতাসের ভেতর
অন্য হাত আমার কল্পনার বেণীসমূহে
আদর করে যাচ্ছে।
মহাশূন্যের ময়দানে একটি তারকা
একটি নুড়ি-পাথরের মতো।
সে একা
যে দিগন্তের সাথে সংযুক্ত
সে-ই পারে নতুন রাস্তা বানাতে।
একটি চাঁদ, একজন বৃদ্ধ মানুষ
তার আসন হলো রাত
এবং আলো তার হেঁটে বেড়ানোর লাঠি।
আমি যে বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলাম
সেই বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে
আমি যে দেহ ফেলে রেখে এসেছি তাকে আমি কী বলবো?
কেবল সন্ধ্যার পথের ওপর ফেলে যাওয়া পদচিহ্ন
এবং যে তারাগুলো এর ওপরে মিটমিট করে জ¦লছে
তারা ছাড়া কেউ-ই আমার বাল্যকালকে বর্ণনা করতে পারবে না।
আমার শৈশবকাল যেন এখনো জন্ম নিচ্ছে
একটি আলোর তালুতে
তার নাম আমি জানি না
এবং জানি না কে আমার নাম রাখে।
ওই নদী থেকেই সে একটি আয়না তৈরি করলো
এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলো তার দুঃখ সম্বন্ধে।
সে দুঃখ থেকে বৃষ্টি তৈরি করলো
এবং মেঘগুলোকে অনুসরণ করলো।
তোমার শৈশবকাল একটি গ্রাম।
তুমি যতোদূরেই যাও না কেন
তুমি কখনোই এর সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না।
তার দিনগুলো যেন হ্রদ,
তার স্মৃতিগুলো ভাসমান দেহ।
তুমি যে অতীতের পাহাড়গুলো থেকে নেমে আসছো,
তুমি আবার সেখানে কীভাবে উঠবে এবং কেন?
সময় একটি দরজা
আমি তা খুলতে পারি না।
আমার জাদু পুরনো হয়ে গেছে
আমার মুগ্ধ করার ক্ষমতা ঘুমিয়ে।
আমি একটি গ্রামে জন্মেছিলাম,
সেটি খুব ছোট এবং মাতৃগর্ভের মতো গোপনীয়।
আমি কখনো তা ত্যাগ করিনি।
তটভূমি নয় আমি সমুদ্র ভালোবাসি।