রিসতিয়াক আহমেদ
প্রতিটি কবির প্রেমিক হৃদয়ে থাকে নিবেদনের আকাক্সক্ষা। প্রেমের কবি প্রতিটি উপকরণে খুঁজে পান প্রেম। আপাত স্বাভাবিক অবস্থার ভেতর যখন প্রকৃত অস্বাভাবিকে অস্থির হয়ে পড়েন, তখনই নির্ভার লাভ করে প্রেমিকার আশ্রয়। আর তাই কবির হৃদয়ে যে প্রেম, তা শুধু নারীপ্রেমে সীমাবদ্ধ থাকে না। যে প্রেমিকাকে কবি কল্পনা করেন, তা শুধু একটি যৌবনদীপ্ত নারীর অবয়ব নয়। প্রকৃতির সকল উপকরণে নিজের প্রেমকে বিলীন করে দেন। প্রেম হয় দেহ ছেড়ে দেহাতীত বিষয়। কবি আব্দুল্লাহ জামিল যেহেতু একজন বাঙালি। তাই তার বসবাস চলে এই হাজার বছর ধরে বাঙালি সমাজে আর ভৌগোলিকতায় গৌড়ীয় সমতটে। তাই তার প্রেমিকা হয়ে ওঠে গৌরী। কবি আব্দুল্লাহ জামিলের এই ‘স্বনির্বাচন’ কাব্যসংকলনে রয়েছে তাঁর সাতটি কাব্যগ্রন্থ থেকে বাছাইকৃত কবিতাসন্তান। যার ভেতর ‘অরণ্যে যাবো গৌরী’ এবং ‘চলো অসম্ভবে যাই’ কাব্যগ্রন্থ দুটি নিবেদনধর্মী গৌরী সিরিজ। যেখানে একজন কবির যাপন প্রেমিকাকে নিবেদনের মাধ্যমে উঠে এসেছে। উঠে এসেছে প্রেমের বহুমাত্রিক দিকগুলো। গ্রহণ-বর্জনের সহাবস্থান, আশ্রয়ের আকুতি এমনকি অস্তিত্বের সংকট। প্রকাশভঙ্গিতে রোমান্টিকতা যেমন রয়েছে, তেমনি বাস্তবের ভেতর দিতে পরাবাস্তবধর্মীও। বাংলার উপকরণের ভেতর দিয়েই কবি আব্দুল্লাহ জামিলের প্রতীক, উপমায় রয়েছে ভিন্নতা ? যা পাঠককে খুঁজে নিতে তার এই সারল্য বয়ান সাহায্য করে।
১. কিন্তু অভিমানী ঠোঁটেরা তোলে বঞ্চিত অভিযোগ
শুনে বলো, ‘শুধু বেশি বেশি!’
২. অনুভবে তুমি যে ঝাঁকানো শ্যাম্পেইনের বোতল
শুধু ছিপি খোলার অপেক্ষা মাত্র, গৌরী।
৩. গৌরী, তোমাতে আমাতে আছে বেনাইন ভালোবাসা
কবিতাগুলোয় আব্দুল্লাহ জামিলের উচ্চারণের স্বকীয়তা বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এবং পাঠ আগ্রহ তৈরি করে। তাতে প্রেমিক হৃদয়েও যেন যাতনা অবসানের অনুষঙ্গ একাকার থাকে।
‘স্বপ্নের ফানুশ পুড়ে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে বাছাইকৃত কবিতাগুলোতে রয়েছে কবির আর্তচিৎকার। যেন জীবন্ত লাশের আখ্যান। রয়েছে স্মৃতিকাতরতায় আক্রান্ত হয়ে স্মৃতিচারণ।
১. আচমকা থেমে গেলে সব
প্রবেশের পথে ভুল করে ফেলে রাখা জং ধরা রক্তাক্ত খুর
কারোর পা কেটে গিয়ে যেনো লাল রক্ত পড়ে আছে।
২. অশ্রাব্য বাক্যের কিছু বজ্রপাত ঘটে
গেছো-শামুকের খোলাসে ফাটল ধরিয়ে আহত করে।
৩. আর আশা নিরাশার ঘুম চোখে আশা পূরণের ব্যর্থ স্বপ্ন দ্যাখে।
সহজাত কবিহৃদয়, সহজে বেদনার্ত হয়ে ওঠে। মানবিক হয়ে ওঠে। তাই তার কবিতারা হয়ে ওঠে বিষাদের সন্তান। তাই তার শিল্প খোঁজে প্রশান্তির নীড়। পাঠক হৃদয় স্পর্শ করতে কবি তখন অনুভব করেন পঙ্ক্তির সাবলীলতা। আব্দুল্লাহ জামিলের কবিতা সেই স্বতঃস্ফূর্ততাকে আশ্রয় করে ডানা মেলেছে।
‘কোলাজ কার্টুন’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো প্রচলনের ভেতর দিয়ে স্বতন্ত্র। কখনো কখনো রয়েছে তীব্র তিরস্কার। যেকোনো শব্দকে কবিতা করে তোলার নীরিক্ষা। সাধারণ অর্থকে ভিন্ন অর্থে পরিচালনা করার ক্ষমতা।
১. আইন-কানুনকে কে যেনো ধর্ষণ করেছে
খুন হয়ে গেছে নীতিকথা
মন্ত্রীপাড়ায় নিষিদ্ধ হয়েছে ইনকামট্যাক্স ইন্সপেক্টর।
২. যতই ভালোবাসার বান ছুঁড়ে মারি
ততই তা ভালোবাসার বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে।
৩. যেনো তোমার শাড়ির বিছানো আঁচলে
নিশ্চিন্তে ঘুমায় চিরনিদ্রায় নিরীহ মানুষেরা।
৪. আকাক্সক্ষার মরুভূমির তপ্ত বালিতে
ইচ্ছেগুলো সব আজ মমি হয়ে আছে।
৫. মনের রাস্তায় কার্ফিউ দিয়েছি আজ
এখানে কারো আসতে মানা।
এখানে কবিহৃদয়কে নিরীহ মানুষের অসহায় প্রস্থান আক্রান্ত করেছে। ইচ্ছার অপমৃত্যু তীব্র ভাষা পেয়েছে। প্রত্যাখ্যাত ভালোবাসা গুমরে মরেছে। এসব কিছু কবি উচ্চারণ করতে পিছপা হননি। স্পষ্টবাদিতা তাই কবিঠোঁটের মৌলিক অলঙ্কার হয়ে ওঠে।
‘আড়মোড়া ভাঙে ঘুমন্ত শহর’ কাব্যগ্রন্থে এই অন্তঃসারশূন্য এই নাগরিক জীবনের কথা উঠে এসেছে। যেন ‘জেনে শুনে বিষ করেছি পান’।
১. যুগ যুগ ধরে এই পথে হেঁটে হেঁটে
স্বর্গের রাস্তা ধরবো বলে
পৌঁছে গেছি নীলিমার কোণে।
২. এই সময়ে বিমূর্ত বিজ্ঞজন
সকলই উদ্ধারকারী অবতারের অপেক্ষায়
৩. ভারাক্রান্ত বিকেলের অভিমানী চোখে চেয়ে দেখা
দিন শেষে ক্লান্ত সূর্য ডোবা।
৪. কতটা নিরাপত্তাহীনতা কাউকে কাউকে করে
নীতিবর্জিত পদলেহনকারী?
৫. কখনোবা যোগাযোগবিহীন সময়
সীমান্তের কাছে অরণ্যে রাত্রিযাপন
হয়তোবা প্রয়োজন শেষে
প্রতিটা আকাক্সক্ষা ধরা দেয়।
কবি স্বর্গ খুঁজতে গিয়ে আকাশের নীলাভ সৌন্দর্যে হারিযে যান। আবার অভিমান ঘনিয়ে এলে ক্লান্ত সূর্যের ডুবে যাওয়াকে কবি গভীর পর্যবেক্ষণ করেন। আবার নিরাপত্তাহীনতা যে মানুষকে নীতিবর্জিত পদলেহনকারী করে তোলে তা সরস ভাষায় বর্ণিত। ঠিকানা হারানো মানুষ অরণ্যে আশ্রয় খোঁজে কিংবা সময় শেষ হয়ে গেলে আকাক্সক্ষারা প্রত্যাবর্তন করে। এমনতর অগণিত অনুষঙ্গ, অসংখ্য বিষয়ের সমাহার এই কাব্যগ্রন্থ।
‘অতল মন’ কাব্যগ্রন্থ বলা যেতে পারে অনুকাব্যের সিরিজ। যেখানে ছোট্ট পরিসরে উঠে এসেছে প্রেমের সারল্য বাণী।
১. আঙ্গিনায় এখন অনেক নতুন গাছ জন্মেছে
জ্বলন্ত সিগারেট হাতে এখনও ব্যর্থ প্রেমিক বসে থাকে
এমন শীতের রাতে।
২. কার সাথে মিলন হবার নয়?
এই প্রশ্ন জাগতিক এক প্রেমের উপাখ্যান রচনা করে।
৩. এই শরীরী ভাষা দুর্বোধ্য
ভালোবাসা কেবল মুখ থুবড়ে পড়ে।
‘জীবনের বকেয়া বিল’ কাব্যগ্রন্থে উঠে এসেছে কবির জীবনবোধ। জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন শৈল্পিকতার মধ্য দিয়ে।
১. ওহিই যদি নাজিল হবে তাইলে ডাকলে কেনো?
কেনো অযথা দরদী সেজে দেখাও ভড়ং?
২. মরুঝড়ে বারুদের ধুলো
ধিক্কার জমেছে আজ মেকি সভ্যতায়
৩. সরু গলিতে কেউ কি সরে গেলো?
কেউ কি অপেক্ষায় থাকছে একটু সূর্য বার্তার?
একাধারে সুচিকিৎক, বিশিষ্ট সঙ্গতিশিল্পী কবি আব্দুল্লাহ জামিলের ‘স্বনির্বাচন’ কাব্যসংকলন পাঠে দেখা যায় কবি প্রতিনিয়ত নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করেছেন। স্বভাব কবির মতো গ্রহণ করেছেন চারপাশের সবকিছুই। কিন্তু দেখেছেন ভিন্ন দৃষ্টিতে। আর সারল্য দিয়ে প্রবেশ করতে চেষ্টা করেছেন পাঠকহৃদয়ে। নিঃসন্দেহে পাঠক ‘স্বনির্বাচন’ পাঠে এক সুখানুভব অনুভব করবেন। শুধু বিস্ময় জাগে এতটা ব্যস্ততম জীবনে কবি এতগুলো শাখায় কীভাবে হেঁটে বেড়ান! আমরা তার আরো আরো নতুন কাব্যের অপেক্ষায়।
স্বনির্বাচন ॥ আব্দুল্লাহ জামিল ॥ প্রকাশক : গ্রন্থ কুটির ॥ প্রকাশকাল : একুশে বইমেলা ২০১৮ ॥ প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ ॥ মূল্য : ১৭৫ টাকা।
রিসতিয়াক আহমেদ
শনিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২১
প্রতিটি কবির প্রেমিক হৃদয়ে থাকে নিবেদনের আকাক্সক্ষা। প্রেমের কবি প্রতিটি উপকরণে খুঁজে পান প্রেম। আপাত স্বাভাবিক অবস্থার ভেতর যখন প্রকৃত অস্বাভাবিকে অস্থির হয়ে পড়েন, তখনই নির্ভার লাভ করে প্রেমিকার আশ্রয়। আর তাই কবির হৃদয়ে যে প্রেম, তা শুধু নারীপ্রেমে সীমাবদ্ধ থাকে না। যে প্রেমিকাকে কবি কল্পনা করেন, তা শুধু একটি যৌবনদীপ্ত নারীর অবয়ব নয়। প্রকৃতির সকল উপকরণে নিজের প্রেমকে বিলীন করে দেন। প্রেম হয় দেহ ছেড়ে দেহাতীত বিষয়। কবি আব্দুল্লাহ জামিল যেহেতু একজন বাঙালি। তাই তার বসবাস চলে এই হাজার বছর ধরে বাঙালি সমাজে আর ভৌগোলিকতায় গৌড়ীয় সমতটে। তাই তার প্রেমিকা হয়ে ওঠে গৌরী। কবি আব্দুল্লাহ জামিলের এই ‘স্বনির্বাচন’ কাব্যসংকলনে রয়েছে তাঁর সাতটি কাব্যগ্রন্থ থেকে বাছাইকৃত কবিতাসন্তান। যার ভেতর ‘অরণ্যে যাবো গৌরী’ এবং ‘চলো অসম্ভবে যাই’ কাব্যগ্রন্থ দুটি নিবেদনধর্মী গৌরী সিরিজ। যেখানে একজন কবির যাপন প্রেমিকাকে নিবেদনের মাধ্যমে উঠে এসেছে। উঠে এসেছে প্রেমের বহুমাত্রিক দিকগুলো। গ্রহণ-বর্জনের সহাবস্থান, আশ্রয়ের আকুতি এমনকি অস্তিত্বের সংকট। প্রকাশভঙ্গিতে রোমান্টিকতা যেমন রয়েছে, তেমনি বাস্তবের ভেতর দিতে পরাবাস্তবধর্মীও। বাংলার উপকরণের ভেতর দিয়েই কবি আব্দুল্লাহ জামিলের প্রতীক, উপমায় রয়েছে ভিন্নতা ? যা পাঠককে খুঁজে নিতে তার এই সারল্য বয়ান সাহায্য করে।
১. কিন্তু অভিমানী ঠোঁটেরা তোলে বঞ্চিত অভিযোগ
শুনে বলো, ‘শুধু বেশি বেশি!’
২. অনুভবে তুমি যে ঝাঁকানো শ্যাম্পেইনের বোতল
শুধু ছিপি খোলার অপেক্ষা মাত্র, গৌরী।
৩. গৌরী, তোমাতে আমাতে আছে বেনাইন ভালোবাসা
কবিতাগুলোয় আব্দুল্লাহ জামিলের উচ্চারণের স্বকীয়তা বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এবং পাঠ আগ্রহ তৈরি করে। তাতে প্রেমিক হৃদয়েও যেন যাতনা অবসানের অনুষঙ্গ একাকার থাকে।
‘স্বপ্নের ফানুশ পুড়ে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে বাছাইকৃত কবিতাগুলোতে রয়েছে কবির আর্তচিৎকার। যেন জীবন্ত লাশের আখ্যান। রয়েছে স্মৃতিকাতরতায় আক্রান্ত হয়ে স্মৃতিচারণ।
১. আচমকা থেমে গেলে সব
প্রবেশের পথে ভুল করে ফেলে রাখা জং ধরা রক্তাক্ত খুর
কারোর পা কেটে গিয়ে যেনো লাল রক্ত পড়ে আছে।
২. অশ্রাব্য বাক্যের কিছু বজ্রপাত ঘটে
গেছো-শামুকের খোলাসে ফাটল ধরিয়ে আহত করে।
৩. আর আশা নিরাশার ঘুম চোখে আশা পূরণের ব্যর্থ স্বপ্ন দ্যাখে।
সহজাত কবিহৃদয়, সহজে বেদনার্ত হয়ে ওঠে। মানবিক হয়ে ওঠে। তাই তার কবিতারা হয়ে ওঠে বিষাদের সন্তান। তাই তার শিল্প খোঁজে প্রশান্তির নীড়। পাঠক হৃদয় স্পর্শ করতে কবি তখন অনুভব করেন পঙ্ক্তির সাবলীলতা। আব্দুল্লাহ জামিলের কবিতা সেই স্বতঃস্ফূর্ততাকে আশ্রয় করে ডানা মেলেছে।
‘কোলাজ কার্টুন’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো প্রচলনের ভেতর দিয়ে স্বতন্ত্র। কখনো কখনো রয়েছে তীব্র তিরস্কার। যেকোনো শব্দকে কবিতা করে তোলার নীরিক্ষা। সাধারণ অর্থকে ভিন্ন অর্থে পরিচালনা করার ক্ষমতা।
১. আইন-কানুনকে কে যেনো ধর্ষণ করেছে
খুন হয়ে গেছে নীতিকথা
মন্ত্রীপাড়ায় নিষিদ্ধ হয়েছে ইনকামট্যাক্স ইন্সপেক্টর।
২. যতই ভালোবাসার বান ছুঁড়ে মারি
ততই তা ভালোবাসার বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে।
৩. যেনো তোমার শাড়ির বিছানো আঁচলে
নিশ্চিন্তে ঘুমায় চিরনিদ্রায় নিরীহ মানুষেরা।
৪. আকাক্সক্ষার মরুভূমির তপ্ত বালিতে
ইচ্ছেগুলো সব আজ মমি হয়ে আছে।
৫. মনের রাস্তায় কার্ফিউ দিয়েছি আজ
এখানে কারো আসতে মানা।
এখানে কবিহৃদয়কে নিরীহ মানুষের অসহায় প্রস্থান আক্রান্ত করেছে। ইচ্ছার অপমৃত্যু তীব্র ভাষা পেয়েছে। প্রত্যাখ্যাত ভালোবাসা গুমরে মরেছে। এসব কিছু কবি উচ্চারণ করতে পিছপা হননি। স্পষ্টবাদিতা তাই কবিঠোঁটের মৌলিক অলঙ্কার হয়ে ওঠে।
‘আড়মোড়া ভাঙে ঘুমন্ত শহর’ কাব্যগ্রন্থে এই অন্তঃসারশূন্য এই নাগরিক জীবনের কথা উঠে এসেছে। যেন ‘জেনে শুনে বিষ করেছি পান’।
১. যুগ যুগ ধরে এই পথে হেঁটে হেঁটে
স্বর্গের রাস্তা ধরবো বলে
পৌঁছে গেছি নীলিমার কোণে।
২. এই সময়ে বিমূর্ত বিজ্ঞজন
সকলই উদ্ধারকারী অবতারের অপেক্ষায়
৩. ভারাক্রান্ত বিকেলের অভিমানী চোখে চেয়ে দেখা
দিন শেষে ক্লান্ত সূর্য ডোবা।
৪. কতটা নিরাপত্তাহীনতা কাউকে কাউকে করে
নীতিবর্জিত পদলেহনকারী?
৫. কখনোবা যোগাযোগবিহীন সময়
সীমান্তের কাছে অরণ্যে রাত্রিযাপন
হয়তোবা প্রয়োজন শেষে
প্রতিটা আকাক্সক্ষা ধরা দেয়।
কবি স্বর্গ খুঁজতে গিয়ে আকাশের নীলাভ সৌন্দর্যে হারিযে যান। আবার অভিমান ঘনিয়ে এলে ক্লান্ত সূর্যের ডুবে যাওয়াকে কবি গভীর পর্যবেক্ষণ করেন। আবার নিরাপত্তাহীনতা যে মানুষকে নীতিবর্জিত পদলেহনকারী করে তোলে তা সরস ভাষায় বর্ণিত। ঠিকানা হারানো মানুষ অরণ্যে আশ্রয় খোঁজে কিংবা সময় শেষ হয়ে গেলে আকাক্সক্ষারা প্রত্যাবর্তন করে। এমনতর অগণিত অনুষঙ্গ, অসংখ্য বিষয়ের সমাহার এই কাব্যগ্রন্থ।
‘অতল মন’ কাব্যগ্রন্থ বলা যেতে পারে অনুকাব্যের সিরিজ। যেখানে ছোট্ট পরিসরে উঠে এসেছে প্রেমের সারল্য বাণী।
১. আঙ্গিনায় এখন অনেক নতুন গাছ জন্মেছে
জ্বলন্ত সিগারেট হাতে এখনও ব্যর্থ প্রেমিক বসে থাকে
এমন শীতের রাতে।
২. কার সাথে মিলন হবার নয়?
এই প্রশ্ন জাগতিক এক প্রেমের উপাখ্যান রচনা করে।
৩. এই শরীরী ভাষা দুর্বোধ্য
ভালোবাসা কেবল মুখ থুবড়ে পড়ে।
‘জীবনের বকেয়া বিল’ কাব্যগ্রন্থে উঠে এসেছে কবির জীবনবোধ। জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন শৈল্পিকতার মধ্য দিয়ে।
১. ওহিই যদি নাজিল হবে তাইলে ডাকলে কেনো?
কেনো অযথা দরদী সেজে দেখাও ভড়ং?
২. মরুঝড়ে বারুদের ধুলো
ধিক্কার জমেছে আজ মেকি সভ্যতায়
৩. সরু গলিতে কেউ কি সরে গেলো?
কেউ কি অপেক্ষায় থাকছে একটু সূর্য বার্তার?
একাধারে সুচিকিৎক, বিশিষ্ট সঙ্গতিশিল্পী কবি আব্দুল্লাহ জামিলের ‘স্বনির্বাচন’ কাব্যসংকলন পাঠে দেখা যায় কবি প্রতিনিয়ত নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করেছেন। স্বভাব কবির মতো গ্রহণ করেছেন চারপাশের সবকিছুই। কিন্তু দেখেছেন ভিন্ন দৃষ্টিতে। আর সারল্য দিয়ে প্রবেশ করতে চেষ্টা করেছেন পাঠকহৃদয়ে। নিঃসন্দেহে পাঠক ‘স্বনির্বাচন’ পাঠে এক সুখানুভব অনুভব করবেন। শুধু বিস্ময় জাগে এতটা ব্যস্ততম জীবনে কবি এতগুলো শাখায় কীভাবে হেঁটে বেড়ান! আমরা তার আরো আরো নতুন কাব্যের অপেক্ষায়।
স্বনির্বাচন ॥ আব্দুল্লাহ জামিল ॥ প্রকাশক : গ্রন্থ কুটির ॥ প্রকাশকাল : একুশে বইমেলা ২০১৮ ॥ প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ ॥ মূল্য : ১৭৫ টাকা।