প্রিয়জনের ছবি হাতে কারখানার সামনে নিখোঁজদের স্বজনরা
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে গাজী গ্রুপের টায়ার তৈরি কারখানায় দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুন ২৪ ঘন্টা পরও জ্বলছে। সোমবার সন্ধ্যায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও আগুন নেভা পর্যন্ত কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম।
সোমবার সকাল থেকে নিখোঁজদের সন্ধ্যানে কারখানার সামনে ভীড় স্বজনরা। বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৭৫ জনের একটি তালিকা করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্স। তালিকার বাইরেও নিখোঁজ প্রিয়জনের ছবি হাতে সন্ধ্যানের আশায় অপেক্ষা করতে দেখা যায় অনেক স্বজনদের।
সন্ধ্যায় কারখানার মূল ফটকে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় এমন অন্তত ১০ জন স্বজনের। রবিবার রাত থেকে বড় বোন শিউলী বেগমের (৩৫) খোঁজে দাঁড়িয়ে আছেন মো. রায়হান। তিনি জানান, রবিবার রাত ৮টায় শিউলী ও তার স্বামী মো. নাহিদ কারখানায় আসে। আসার পর ভীড়ের মধ্যে দুজন আলাদা হয়ে যায়। আগুন লাগার পর নাহিদ বেরিয়ে আসতে পারলেও আটকা পরেন শিউলী।
বাবা ও বড় ভাইয়ের খোঁজে অপেক্ষা করছিল আপন নামে এক কিশোর। আপন জানান, তারা দুজন কারখানার শ্রমিক। রাতে তারা এক সাথে এসেছিল, এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ।
অন্যদিকে সোমবার দিনভর কারখানাটির বিভিন্ন অংশে লুটপাট করতে দেখা গেছে৷ যদিও কারখানাটির ভেতর ও বাইরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিত রয়েছেন৷
রোববার রাত নয়টার দিকে কারখানাটিতে আগুন দেওয়া হয়৷ এর আগে দুপুর থেকে লুটপাট চলতে থাকে।
এর আগে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কারখানাটিতে লুটপাট, ভাঙ্গচুর ও আগুন দেয়া হয়েছিল।
কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুরে কয়েকশ’ লোক কারখানায় ঢুকে পড়ে৷ তাদের বাধা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না৷ লুটপাটের সময় রাত নয়টার দিকে কারখানাটির ছয়তলা ভবনটির নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেয় লুটপাটকারীরা৷
দুপুরে লুটপাট শুরু হলে পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি বলে
অভিযোগ করেন তিনি৷ তবে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুলিশ কোন অবহেলা করেনি। আমরা কারখানার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ভবনটির সামনে সাংবাদিকদের দেওয়া এক ব্রিফিং করে ফায়ার সার্ভিস। এ সময় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, রোববার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আমরা আগুনের খবর পাই৷ যানজটের কারনে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ১১টা ৪০ বেজে যায়৷ তারপর থেকে আমরা অগ্নিনির্বাপনে কাজ শুরু করি৷
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুরোপুরি নেভানো যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে। তবে আগুন আর ছড়াবে না বলে আশা করছি। যেহেতু টায়ার তৈরির কাচামাল ও রাসায়নিক অত্যান্ত দাহ্য, সেই কারনে আগুন নেভাতে সময় লাগছে। আগুন নেভা পর্যন্ত কাজ চলবে।
নিখোঁজদের তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভিক্টিম লিস্ট তৈরির দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের৷ আগুন নির্বাপন করাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব৷ ভিক্টিম লিস্টের দিকে আমাদের নজর নেই৷ আমরা সকাল পর্যন্ত ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছি৷ তাদের স্বজনদের নিকট পাঠিয়ে দিয়েছি৷’
কারখানার প্রধান ফটকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তালিকা করছিলেন৷ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে ব্যাপারে কোনো তথ্য আমার জানা নেই৷ কেউ তালিকা করে থাকলে তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন৷ কেননা আমিও কিছুটা ডাউটের (সন্দেহ) মধ্যে পড়ে গেছি যে (তালিকা করার) এ তথ্যটা আপনাদের কে দিলো৷ আমরা তো কখনও কোনো অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোনো তালিকা করি না৷’
যদিও বেলা সোয়া একটায় এক ব্রিফিংএ লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেছিলেন, ফায়ার সার্ভিস থেকে ৯২ জন নিখোঁজের তালিকা করা হয়েছে।
প্রিয়জনের ছবি হাতে কারখানার সামনে নিখোঁজদের স্বজনরা
সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০২৪
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে গাজী গ্রুপের টায়ার তৈরি কারখানায় দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুন ২৪ ঘন্টা পরও জ্বলছে। সোমবার সন্ধ্যায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও আগুন নেভা পর্যন্ত কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম।
সোমবার সকাল থেকে নিখোঁজদের সন্ধ্যানে কারখানার সামনে ভীড় স্বজনরা। বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৭৫ জনের একটি তালিকা করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্স। তালিকার বাইরেও নিখোঁজ প্রিয়জনের ছবি হাতে সন্ধ্যানের আশায় অপেক্ষা করতে দেখা যায় অনেক স্বজনদের।
সন্ধ্যায় কারখানার মূল ফটকে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় এমন অন্তত ১০ জন স্বজনের। রবিবার রাত থেকে বড় বোন শিউলী বেগমের (৩৫) খোঁজে দাঁড়িয়ে আছেন মো. রায়হান। তিনি জানান, রবিবার রাত ৮টায় শিউলী ও তার স্বামী মো. নাহিদ কারখানায় আসে। আসার পর ভীড়ের মধ্যে দুজন আলাদা হয়ে যায়। আগুন লাগার পর নাহিদ বেরিয়ে আসতে পারলেও আটকা পরেন শিউলী।
বাবা ও বড় ভাইয়ের খোঁজে অপেক্ষা করছিল আপন নামে এক কিশোর। আপন জানান, তারা দুজন কারখানার শ্রমিক। রাতে তারা এক সাথে এসেছিল, এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ।
অন্যদিকে সোমবার দিনভর কারখানাটির বিভিন্ন অংশে লুটপাট করতে দেখা গেছে৷ যদিও কারখানাটির ভেতর ও বাইরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিত রয়েছেন৷
রোববার রাত নয়টার দিকে কারখানাটিতে আগুন দেওয়া হয়৷ এর আগে দুপুর থেকে লুটপাট চলতে থাকে।
এর আগে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কারখানাটিতে লুটপাট, ভাঙ্গচুর ও আগুন দেয়া হয়েছিল।
কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুরে কয়েকশ’ লোক কারখানায় ঢুকে পড়ে৷ তাদের বাধা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না৷ লুটপাটের সময় রাত নয়টার দিকে কারখানাটির ছয়তলা ভবনটির নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেয় লুটপাটকারীরা৷
দুপুরে লুটপাট শুরু হলে পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি বলে
অভিযোগ করেন তিনি৷ তবে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুলিশ কোন অবহেলা করেনি। আমরা কারখানার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ভবনটির সামনে সাংবাদিকদের দেওয়া এক ব্রিফিং করে ফায়ার সার্ভিস। এ সময় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, রোববার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আমরা আগুনের খবর পাই৷ যানজটের কারনে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ১১টা ৪০ বেজে যায়৷ তারপর থেকে আমরা অগ্নিনির্বাপনে কাজ শুরু করি৷
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুরোপুরি নেভানো যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে। তবে আগুন আর ছড়াবে না বলে আশা করছি। যেহেতু টায়ার তৈরির কাচামাল ও রাসায়নিক অত্যান্ত দাহ্য, সেই কারনে আগুন নেভাতে সময় লাগছে। আগুন নেভা পর্যন্ত কাজ চলবে।
নিখোঁজদের তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভিক্টিম লিস্ট তৈরির দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের৷ আগুন নির্বাপন করাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব৷ ভিক্টিম লিস্টের দিকে আমাদের নজর নেই৷ আমরা সকাল পর্যন্ত ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছি৷ তাদের স্বজনদের নিকট পাঠিয়ে দিয়েছি৷’
কারখানার প্রধান ফটকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তালিকা করছিলেন৷ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে ব্যাপারে কোনো তথ্য আমার জানা নেই৷ কেউ তালিকা করে থাকলে তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন৷ কেননা আমিও কিছুটা ডাউটের (সন্দেহ) মধ্যে পড়ে গেছি যে (তালিকা করার) এ তথ্যটা আপনাদের কে দিলো৷ আমরা তো কখনও কোনো অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোনো তালিকা করি না৷’
যদিও বেলা সোয়া একটায় এক ব্রিফিংএ লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেছিলেন, ফায়ার সার্ভিস থেকে ৯২ জন নিখোঁজের তালিকা করা হয়েছে।