কুয়াশা কুয়াশা বেলাটা তখনও আড়মোড়া ভাঙেনি। নিকানো উঠোনের লোহার কড়াইয়ে ফুটছে সদ্য গাছ পাড়া খেজুর রস। একটা লম্বাটে লোহার ডাবু হাতা ভরে সেই ফুটন্ত রস কড়াই থেকে খানিকটা উঁচুতে তুলে দেখছে নলেনটা ঠিকমত হচ্ছে কিনা। রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার ছত্রগাছা গ্রামের বিশাল এক খেজুরবাগানের মাঝে বসে এই আয়োজন প্রকৃতিতে শীতের আগমন টের পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ভোরে ও সাঁঝের বেলা শীতের আমেজ একটু একটু করে অনুভূত হচ্ছে উত্তরের জেলা রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রামে। শীতের সকল আয়োজনের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের রস ও গুড়। এরইমধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে গাছিদের।
এমনই একটা সময়ে রাজশাহীতে আয়োজন করা হলো খেজুর গুড় উৎপাদনকারী এবং ব্যবসায়ীদের প্রথম জাতীয় সম্মেলন। রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার ছত্রগাছা গ্রামের বিশাল এক খেজুরবাগানের মাঝে বসে এই আয়োজন।
গত শনিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ব্যতিক্রমী এই সম্মেলনে যাঁরা আসেন, তাঁদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন বা করছেন। তাঁরা চাকরির দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়েছেন। সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের ছত্রাগাছা গ্রামের রাস্তা দিয়ে মাঠের দিকে যেতেই চোখে পড়ল খেজুরগাছের সঙ্গে হেলান দেওয়া একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা রয়েছে, ‘খেজুর গুড় উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের প্রথম সম্মেলন-২০২৪।’ তাতে তিরচিহ্ন দিয়ে পথ দেখানো রয়েছে। হাতের ডান পাশে এক সারি খেজুরগাছ, বাঁ পাশে বড় একটি পুকুর। মাঝখানে সরু পথ চলে গেছে ওই খেজুরবাগানের দিকে। দুই মিনিটের পথ টেনে নিয়ে গেল সেই বাগানে। সেখানেই শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। বাগানের উত্তর পাশে মরিচখেত, পশ্চিম পাশে লাউমাচা, পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে খেজুরগাছের সারি। মাঝখানে মঞ্চ।
পাশেই সকালের তাজা খেজুরের রস। অন্য পাশে খেজুর গুড়ের চা যে যতবার পারছেন, পেয়ালায় ভরছেন।
সম্মেলনের আয়োজক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক গুড় ব্যাপারীদের আড্ডাখানা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১৭০ জন উৎপাদক ও ব্যবসায়ী এতে যোগ দেন। অন্যতম আয়োজক মো. শাহাবুদ্দিন জানান, এরই মধ্যে সামান্য পরিসরে খেজুরগুড় বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই পুরো দমে শুরু হবে উৎপাদন। তার আগে এই সম্মেলন আয়োজনের উদ্দেশ্য, মানসম্মত গুড় উৎপাদনে করণীয় বিষয়ে সব ব্যবসায়ীদের জানানো। প্রথমবার এমন আয়োজন হলেও ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।
শনিবার সকালে অতিথিদের আপ্যায়নে ছিল খেজুরের রস। পরে চা, তা–ও খেজুরের গুড়ের। ভাত খাওয়ার পর ডেজার্ট হিসেবে ছিল ঘ্রাণ ছড়ানো নতুন খেজুরের গুড়। শেষ আকর্ষণ ছিল খেজুর রসের হাঁড়ি ভাঙা। পুরস্কার ছিল খেজুরপাতার শীতলপাটি। ছবি তোলার ফ্রেম বানানো হয়েছিল খেজুরপাতা দিয়েই।
‘ঐতিহ্যের পথে, প্রজন্মের সাথে’ এই স্লোগানে আয়োজিত সম্মেলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসেন নতুন উদ্যোক্তা রাসেল জামান। তিনি বলেন, কীভাবে ব্যবসার প্রসার বাড়ানো যায় এবং প্যাকেজিং নিয়ে বেশ কিছু সেশন ছিল। যেগুলো থেকে দারুণ উপকৃত হয়েছি।
‘নান্দনিক বাজার’ এর কর্ণধার ঝিনাইদহের উদ্যোক্তা লিখন আহমেদ। তিনি বলেন, অফলাইন ও অনলাইন দুই ধরনের ব্যবসায়ীরাই এসেছেন সম্মেলনে। আমাদের ব্যবসার মূল চ্যালেঞ্জ মান ও সুনাম ধরে রাখা। এই সম্মেলনে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও ভোক্তা অধিকার আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে খেজুর গুড়ের ইতিবাচক– নেতিবাচক প্রচার নিয়ে কথা বললেন আল মদিনা হানি অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আকমল হোসেন মাহমুদ। নাটোরের তাহমিনুর রহমান বললেন, আইনের ভাষায় ভেজাল খাদ্য কী, ভেজাল প্রমাণ হলে কী শাস্তি হতে পারে, খেজুর গুড় উৎপাদন ও বিপণনকারীদের কী সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত। গুড়ের গুণগত মান ঠিক রাখার প্রক্রিয়া নিয়ে বললেন পালকি ফুড লিমিটেডের সারোয়ার জাহান। তাঁর কথা, গুড় ভালো করতে হলে ভালো গাছ, ভালো গাছি লাগবে। তিনি বলেন, ‘ইউরোপে গুড়ের চকলেটের চাহিদা রয়েছে। আমরা করতে পারলে এই গুড়কে ঘিরে দেশে শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে পারে।’
সন্মেলনে উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের ন্যায্য মূল্যে ভেজালমুক্ত গুড় ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের সম্মেলনে। আগামীতেও এমন আয়োজন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা
সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
কুয়াশা কুয়াশা বেলাটা তখনও আড়মোড়া ভাঙেনি। নিকানো উঠোনের লোহার কড়াইয়ে ফুটছে সদ্য গাছ পাড়া খেজুর রস। একটা লম্বাটে লোহার ডাবু হাতা ভরে সেই ফুটন্ত রস কড়াই থেকে খানিকটা উঁচুতে তুলে দেখছে নলেনটা ঠিকমত হচ্ছে কিনা। রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার ছত্রগাছা গ্রামের বিশাল এক খেজুরবাগানের মাঝে বসে এই আয়োজন প্রকৃতিতে শীতের আগমন টের পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ভোরে ও সাঁঝের বেলা শীতের আমেজ একটু একটু করে অনুভূত হচ্ছে উত্তরের জেলা রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রামে। শীতের সকল আয়োজনের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের রস ও গুড়। এরইমধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে গাছিদের।
এমনই একটা সময়ে রাজশাহীতে আয়োজন করা হলো খেজুর গুড় উৎপাদনকারী এবং ব্যবসায়ীদের প্রথম জাতীয় সম্মেলন। রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার ছত্রগাছা গ্রামের বিশাল এক খেজুরবাগানের মাঝে বসে এই আয়োজন।
গত শনিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ব্যতিক্রমী এই সম্মেলনে যাঁরা আসেন, তাঁদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন বা করছেন। তাঁরা চাকরির দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়েছেন। সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের ছত্রাগাছা গ্রামের রাস্তা দিয়ে মাঠের দিকে যেতেই চোখে পড়ল খেজুরগাছের সঙ্গে হেলান দেওয়া একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা রয়েছে, ‘খেজুর গুড় উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের প্রথম সম্মেলন-২০২৪।’ তাতে তিরচিহ্ন দিয়ে পথ দেখানো রয়েছে। হাতের ডান পাশে এক সারি খেজুরগাছ, বাঁ পাশে বড় একটি পুকুর। মাঝখানে সরু পথ চলে গেছে ওই খেজুরবাগানের দিকে। দুই মিনিটের পথ টেনে নিয়ে গেল সেই বাগানে। সেখানেই শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। বাগানের উত্তর পাশে মরিচখেত, পশ্চিম পাশে লাউমাচা, পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে খেজুরগাছের সারি। মাঝখানে মঞ্চ।
পাশেই সকালের তাজা খেজুরের রস। অন্য পাশে খেজুর গুড়ের চা যে যতবার পারছেন, পেয়ালায় ভরছেন।
সম্মেলনের আয়োজক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক গুড় ব্যাপারীদের আড্ডাখানা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১৭০ জন উৎপাদক ও ব্যবসায়ী এতে যোগ দেন। অন্যতম আয়োজক মো. শাহাবুদ্দিন জানান, এরই মধ্যে সামান্য পরিসরে খেজুরগুড় বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই পুরো দমে শুরু হবে উৎপাদন। তার আগে এই সম্মেলন আয়োজনের উদ্দেশ্য, মানসম্মত গুড় উৎপাদনে করণীয় বিষয়ে সব ব্যবসায়ীদের জানানো। প্রথমবার এমন আয়োজন হলেও ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।
শনিবার সকালে অতিথিদের আপ্যায়নে ছিল খেজুরের রস। পরে চা, তা–ও খেজুরের গুড়ের। ভাত খাওয়ার পর ডেজার্ট হিসেবে ছিল ঘ্রাণ ছড়ানো নতুন খেজুরের গুড়। শেষ আকর্ষণ ছিল খেজুর রসের হাঁড়ি ভাঙা। পুরস্কার ছিল খেজুরপাতার শীতলপাটি। ছবি তোলার ফ্রেম বানানো হয়েছিল খেজুরপাতা দিয়েই।
‘ঐতিহ্যের পথে, প্রজন্মের সাথে’ এই স্লোগানে আয়োজিত সম্মেলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসেন নতুন উদ্যোক্তা রাসেল জামান। তিনি বলেন, কীভাবে ব্যবসার প্রসার বাড়ানো যায় এবং প্যাকেজিং নিয়ে বেশ কিছু সেশন ছিল। যেগুলো থেকে দারুণ উপকৃত হয়েছি।
‘নান্দনিক বাজার’ এর কর্ণধার ঝিনাইদহের উদ্যোক্তা লিখন আহমেদ। তিনি বলেন, অফলাইন ও অনলাইন দুই ধরনের ব্যবসায়ীরাই এসেছেন সম্মেলনে। আমাদের ব্যবসার মূল চ্যালেঞ্জ মান ও সুনাম ধরে রাখা। এই সম্মেলনে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও ভোক্তা অধিকার আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে খেজুর গুড়ের ইতিবাচক– নেতিবাচক প্রচার নিয়ে কথা বললেন আল মদিনা হানি অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আকমল হোসেন মাহমুদ। নাটোরের তাহমিনুর রহমান বললেন, আইনের ভাষায় ভেজাল খাদ্য কী, ভেজাল প্রমাণ হলে কী শাস্তি হতে পারে, খেজুর গুড় উৎপাদন ও বিপণনকারীদের কী সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত। গুড়ের গুণগত মান ঠিক রাখার প্রক্রিয়া নিয়ে বললেন পালকি ফুড লিমিটেডের সারোয়ার জাহান। তাঁর কথা, গুড় ভালো করতে হলে ভালো গাছ, ভালো গাছি লাগবে। তিনি বলেন, ‘ইউরোপে গুড়ের চকলেটের চাহিদা রয়েছে। আমরা করতে পারলে এই গুড়কে ঘিরে দেশে শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে পারে।’
সন্মেলনে উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের ন্যায্য মূল্যে ভেজালমুক্ত গুড় ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের সম্মেলনে। আগামীতেও এমন আয়োজন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা