খুলনা নগরের গল্লামারীতে ময়ূর নদে পাশাপাশি দুটি সেতু নির্মাণ করা হয় ব্রিটিশ আমলে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় নতুন করে সেখানে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ২০১৫ সালে সেখানে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে নিম্নœমান, স্বল্প উচ্চতা ও পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় শুরু থেকেই সেতুটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা।
পরে নতুন সেতুটিও ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে চারলেনের সেতু নির্মাণ প্রকল্প নেয় সওজ বিভাগ। তবে দু’দফা মেয়াদ বাড়িয়ে সেতু দুটির কাজ এখনও শেষ করা যায়নি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কংক্রিটের সাব-কনস্ট্রাকশনের ওপর স্টিল অবকাঠামোর সেতু দুটির প্রতিটির দৈর্ঘ্য হবে ৬৮ দশমিক ৭০ মিটার ও প্রস্থ ১৩ দশমিক ৭০ মিটার। নদীর পানির সীমা থেকে সেতুর উচ্চতা হবে পাঁচ মিটার। কংক্রিটের প্রতিটি সাব-কনস্ট্রাকশনে ১৬টি পাইল হবে। প্রতিটি পাইলের দৈর্ঘ্য হবে ৪৮ মিটার। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় চার বছর। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মেয়াদ সমাপ্তের মাত্র নয় মাস আগে দেয়া হয় কার্যাদেশ।
এ কারণে দ্বিতীয় দফায় নয় মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়। বাড়তি মেয়াদের সময় বাকি রয়েছে মাত্র ছয় মাস। এরমধ্যে কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। স্টিল স্ট্রাকচারের নকশা জটিলতায় এখন নির্মাণকাজ বন্ধ।
এ ব্যাপারে সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক অপূর্ব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘সেতু প্রকল্পের ময়ূর নদের দুই পাশে কংক্রিটের সাব-কনস্ট্রাকশনের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু নকশা এখনও অনুমোদন হয়নি। ফলে স্টিলের অবকাঠামো নির্মাণে সরঞ্জাম আনা সম্ভব হয়নি। এ কারণে কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।’
কাজের ভৌত অগ্রগতি ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ দাবি করে অপূর্ব বলেন, ‘দুটি সেতুর মধ্যে বেশি পুরনো সেতুটি ভেঙে সেখানে নির্মাণ শুরু করা হয়। তবে পাশে থাকা অন্য সেতু ভাঙা হয়নি। সেটি দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। যেটির কাজ শুরু হয়েছে, সেটি চালু না করে অন্যটির কাজ শুরুর অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না।’
তবে কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ আবার শুরু হবে তা তিনি জানাতে পারেননি।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এ প্রকল্পের আওতায় গল্লামারী ময়ূর নদের আগের সেতুর স্থলেই দুটি সেতু নির্মিত হচ্ছে। যার মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ৩০ জুন। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৫ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত। সাড়ে ৬৭ কোটি টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। তবে ২০২০ সালের ১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয় তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর।
একনেকে অনুমোদনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিতে তিন বছর কেন বিলম্ব! এমন প্রশ্নের জবাবে সওজ অধিদপ্তরের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন জানান, তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। তাই এ ব্যাপারে তিনি বলতে পারবেন না।
গল্লামারী সেতুর নির্মাণকাজ থেমে যায়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘পুরনো একটি সেতু ভেঙে ওই অংশে নদের দুই পাশে কংক্রিটের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন সেখানে স্টিলের তৈরি সেতুর স্ট্রাকচার এনে বসানো হবে। সেতুর স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজও চলছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে ওই অংশে সেতুর স্ট্রাকচার বসানো হলে সেখানে যান চলাচল শুরু হবে। এরপর পাশে থাকা অন্য সেতুটি ভেঙে সেখানে স্টিলের সেতুর আরেকটি স্ট্রাকচার বসানো হবে। আমরা প্রতিনিয়ত ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছি।’
এদিকে নগরবাসী বলছেন, প্রতিদিন এ সেতু দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন ও লোকজন চলাচল করায় তীব্র যানজট এবং ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। খুলনা নগরের অন্যতম প্রবেশপথ গল্লামারী। এ এলাকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, পাইকারি ও খুচরা বৃহৎ বাজার এবং জনবসতি গড়ে উঠেছে। এছাড়া সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন রুটের বাস-ট্রাক, ইজিবাইক এবং নানা পরিবহন ও বিপুলসংখ্যক মানুষ চলাচল করে।
কিন্তু জিরো পয়েন্ট-গল্লামারী সড়কের ময়ূর নদের ওপর দুটি সেতুর একটি ভেঙে কাজ শুরু হওয়ায় অন্যটির ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। সেটি এখন ফেলে রাখা হয়েছে। কাজই শেষ হচ্ছে না। সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে রাস্তাজুড়ে নির্মাণসামগ্রী রাখা, অস্থায়ী কাঁচাবাজার, স্থাপনা ও সেতুর দুই পাশের ফেন্সিং ডিভাইডারের কারণে সড়কের প্রশস্ততা কমে গেছে। এতে প্রতিদিনই ওই এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে তারা জানান।
বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
খুলনা নগরের গল্লামারীতে ময়ূর নদে পাশাপাশি দুটি সেতু নির্মাণ করা হয় ব্রিটিশ আমলে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় নতুন করে সেখানে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ২০১৫ সালে সেখানে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে নিম্নœমান, স্বল্প উচ্চতা ও পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় শুরু থেকেই সেতুটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা।
পরে নতুন সেতুটিও ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে চারলেনের সেতু নির্মাণ প্রকল্প নেয় সওজ বিভাগ। তবে দু’দফা মেয়াদ বাড়িয়ে সেতু দুটির কাজ এখনও শেষ করা যায়নি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কংক্রিটের সাব-কনস্ট্রাকশনের ওপর স্টিল অবকাঠামোর সেতু দুটির প্রতিটির দৈর্ঘ্য হবে ৬৮ দশমিক ৭০ মিটার ও প্রস্থ ১৩ দশমিক ৭০ মিটার। নদীর পানির সীমা থেকে সেতুর উচ্চতা হবে পাঁচ মিটার। কংক্রিটের প্রতিটি সাব-কনস্ট্রাকশনে ১৬টি পাইল হবে। প্রতিটি পাইলের দৈর্ঘ্য হবে ৪৮ মিটার। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় চার বছর। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মেয়াদ সমাপ্তের মাত্র নয় মাস আগে দেয়া হয় কার্যাদেশ।
এ কারণে দ্বিতীয় দফায় নয় মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়। বাড়তি মেয়াদের সময় বাকি রয়েছে মাত্র ছয় মাস। এরমধ্যে কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। স্টিল স্ট্রাকচারের নকশা জটিলতায় এখন নির্মাণকাজ বন্ধ।
এ ব্যাপারে সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক অপূর্ব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘সেতু প্রকল্পের ময়ূর নদের দুই পাশে কংক্রিটের সাব-কনস্ট্রাকশনের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু নকশা এখনও অনুমোদন হয়নি। ফলে স্টিলের অবকাঠামো নির্মাণে সরঞ্জাম আনা সম্ভব হয়নি। এ কারণে কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।’
কাজের ভৌত অগ্রগতি ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ দাবি করে অপূর্ব বলেন, ‘দুটি সেতুর মধ্যে বেশি পুরনো সেতুটি ভেঙে সেখানে নির্মাণ শুরু করা হয়। তবে পাশে থাকা অন্য সেতু ভাঙা হয়নি। সেটি দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। যেটির কাজ শুরু হয়েছে, সেটি চালু না করে অন্যটির কাজ শুরুর অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না।’
তবে কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ আবার শুরু হবে তা তিনি জানাতে পারেননি।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এ প্রকল্পের আওতায় গল্লামারী ময়ূর নদের আগের সেতুর স্থলেই দুটি সেতু নির্মিত হচ্ছে। যার মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ৩০ জুন। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৫ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত। সাড়ে ৬৭ কোটি টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। তবে ২০২০ সালের ১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয় তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর।
একনেকে অনুমোদনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিতে তিন বছর কেন বিলম্ব! এমন প্রশ্নের জবাবে সওজ অধিদপ্তরের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন জানান, তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। তাই এ ব্যাপারে তিনি বলতে পারবেন না।
গল্লামারী সেতুর নির্মাণকাজ থেমে যায়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘পুরনো একটি সেতু ভেঙে ওই অংশে নদের দুই পাশে কংক্রিটের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন সেখানে স্টিলের তৈরি সেতুর স্ট্রাকচার এনে বসানো হবে। সেতুর স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজও চলছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে ওই অংশে সেতুর স্ট্রাকচার বসানো হলে সেখানে যান চলাচল শুরু হবে। এরপর পাশে থাকা অন্য সেতুটি ভেঙে সেখানে স্টিলের সেতুর আরেকটি স্ট্রাকচার বসানো হবে। আমরা প্রতিনিয়ত ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছি।’
এদিকে নগরবাসী বলছেন, প্রতিদিন এ সেতু দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন ও লোকজন চলাচল করায় তীব্র যানজট এবং ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। খুলনা নগরের অন্যতম প্রবেশপথ গল্লামারী। এ এলাকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, পাইকারি ও খুচরা বৃহৎ বাজার এবং জনবসতি গড়ে উঠেছে। এছাড়া সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন রুটের বাস-ট্রাক, ইজিবাইক এবং নানা পরিবহন ও বিপুলসংখ্যক মানুষ চলাচল করে।
কিন্তু জিরো পয়েন্ট-গল্লামারী সড়কের ময়ূর নদের ওপর দুটি সেতুর একটি ভেঙে কাজ শুরু হওয়ায় অন্যটির ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। সেটি এখন ফেলে রাখা হয়েছে। কাজই শেষ হচ্ছে না। সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে রাস্তাজুড়ে নির্মাণসামগ্রী রাখা, অস্থায়ী কাঁচাবাজার, স্থাপনা ও সেতুর দুই পাশের ফেন্সিং ডিভাইডারের কারণে সড়কের প্রশস্ততা কমে গেছে। এতে প্রতিদিনই ওই এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে তারা জানান।