সংকটকে শক্তিতে রূপান্তর
কেউ যখন সংকটকে পরাজয় হিসেবে দেখে, কেউ তখন সেই সংকটকেই রূপ দেয় সম্ভাবনায়। তেমনই একজন সাহসী তরুণীর নাম আদিবা জেরিন।দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা আদিবা জেরিন বাবার টানপড়নের সংসারকে গতিশীল করার জন্য ঘরে বসেই শুরু করে অনলাইন কেক ব্যবসা,যা এখন তার স্বাবলম্বিতার বড় মাধ্যম। মাসে তিনি কেক বিক্রি করে আয় করছেন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা, আর এই আয় দিয়েই সামলাচ্ছেন নিজের পড়াশোনা,ছোট ভাই বোনের সংসার ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
করোনার মধ্যেই শুরু আত্মনির্ভরতার যাত্রা ২০২০ সালে। দেশজুড়ে করোনা মহামারির প্রভাবে থমকে গিয়েছিলো স্বাভাবিক জীবন। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল কর্মসংস্থান। ঠিক এমন সময়েই আদিবা নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন। ঘরে বসে রান্নার প্রতি আগ্রহ থেকে তিনি কেক বানানো শুরু করেন, এবং এরপরই ফেসবুকে একটি পেজ খুলে কেক বিক্রি শুরু করেন। প্রথম দিকে আশপাশের পরিচিত মানুষদের কাছ থেকেই অর্ডার পেতে শুরু করেন।ধীরে ধীরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তার হাতের তৈরি কেকের সুখ্যাতি। তার বানানো কেকের মান, স্বাদ ও নকশা ক্রেতাদের মন জয় করে নেয়।
এখন নবাবগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকে তিনি নিয়মিত অর্ডার পাচ্ছেন।শিক্ষার্থী, সংসার সামলানো আর ব্যবসা—সব একসাথে বর্তমানে আদিবা রংপুর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়, তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। পরিবারের সাপোর্ট ও নিজের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করেই এগিয়ে চলেছেন তিনি।
আদিবা জেরিন বলেন, শুরুতে ভয় লাগত—অর্ডার পাবো কি না, লোকজন কেমন রিভিউ দেবে। কিন্তু একের পর এক অর্ডার আসতে থাকল, মানুষ কেকের ছবি দিয়ে প্রশংসা করে। তখন বুঝলাম,আমি পারবো।
তিনি আরও বলেন,এই আয় দিয়েই নিজের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি। পাশাপাশি সংসারে কিছুটা সহযোগিতাও করতে পারছি। নিজে কিছু করতে পারার আনন্দই আলাদা। নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা
আদিবার মতে, মেয়েরা চাইলে ঘরে বসেও নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে গড়ে তুলতে পারে। সমাজে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তা জয় করার শক্তি নারীদের মাঝেই রয়েছে। তার কেক ব্যবসার এই সফলতা অনেক তরুণীর জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। আদিবার স্বপ্ন, ভবিষ্যতে নিজস্ব একটি বেকারি খুলতে চান—যেখানে তিনি আরও নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবেন। তিনি চান, অন্য মেয়েরাও যেন স্বাবলম্বী হতে পারে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
স্থানীয় এলাকাবাসী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা আদিবা জেরিনকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। সংসারের টানাপোড়েনের মধ্যেও সে হাল ছাড়েনি। নিজের পরিশ্রমে আজ সে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। তার তৈরি কেকগুলো শুধু সুস্বাদুই নয়, স্বাস্থ্যসম্মতও। আমরা চাই এলাকার অন্য মেয়েরাও তার মতো অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাক।
আদিবার ছোট বোন মারিয়া জেরিন বলেন, আমার আপু শুধু আমাদের সংসারই চালাচ্ছেন না, আমাদের পড়াশোনার খরচও দেখছেন। তার জন্যই আমি নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছি।আপু আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করে কাজ করেন। আমি চাই একদিন আমিও আপুর মতো নিজেকে গড়ে তুলতে পারি।
নবাবগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুশাররত জাহান বলেন, আদিবা জেরিনের মতো নারীরা আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। তিনি নিজের মেধা, পরিশ্রম ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে নারীরা চাইলে ঘরে বসেই স্বাবলম্বী হতে পারে। সরকার নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে। আদিবা জেরিন তার সুন্দর উদ্যোগের মাধ্যমে অন্য মেয়েদেরও উৎসাহিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সবসময় তার পাশে থাকবে
সংকটকে শক্তিতে রূপান্তর
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
কেউ যখন সংকটকে পরাজয় হিসেবে দেখে, কেউ তখন সেই সংকটকেই রূপ দেয় সম্ভাবনায়। তেমনই একজন সাহসী তরুণীর নাম আদিবা জেরিন।দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা আদিবা জেরিন বাবার টানপড়নের সংসারকে গতিশীল করার জন্য ঘরে বসেই শুরু করে অনলাইন কেক ব্যবসা,যা এখন তার স্বাবলম্বিতার বড় মাধ্যম। মাসে তিনি কেক বিক্রি করে আয় করছেন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা, আর এই আয় দিয়েই সামলাচ্ছেন নিজের পড়াশোনা,ছোট ভাই বোনের সংসার ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
করোনার মধ্যেই শুরু আত্মনির্ভরতার যাত্রা ২০২০ সালে। দেশজুড়ে করোনা মহামারির প্রভাবে থমকে গিয়েছিলো স্বাভাবিক জীবন। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল কর্মসংস্থান। ঠিক এমন সময়েই আদিবা নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন। ঘরে বসে রান্নার প্রতি আগ্রহ থেকে তিনি কেক বানানো শুরু করেন, এবং এরপরই ফেসবুকে একটি পেজ খুলে কেক বিক্রি শুরু করেন। প্রথম দিকে আশপাশের পরিচিত মানুষদের কাছ থেকেই অর্ডার পেতে শুরু করেন।ধীরে ধীরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তার হাতের তৈরি কেকের সুখ্যাতি। তার বানানো কেকের মান, স্বাদ ও নকশা ক্রেতাদের মন জয় করে নেয়।
এখন নবাবগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকে তিনি নিয়মিত অর্ডার পাচ্ছেন।শিক্ষার্থী, সংসার সামলানো আর ব্যবসা—সব একসাথে বর্তমানে আদিবা রংপুর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়, তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। পরিবারের সাপোর্ট ও নিজের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করেই এগিয়ে চলেছেন তিনি।
আদিবা জেরিন বলেন, শুরুতে ভয় লাগত—অর্ডার পাবো কি না, লোকজন কেমন রিভিউ দেবে। কিন্তু একের পর এক অর্ডার আসতে থাকল, মানুষ কেকের ছবি দিয়ে প্রশংসা করে। তখন বুঝলাম,আমি পারবো।
তিনি আরও বলেন,এই আয় দিয়েই নিজের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি। পাশাপাশি সংসারে কিছুটা সহযোগিতাও করতে পারছি। নিজে কিছু করতে পারার আনন্দই আলাদা। নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা
আদিবার মতে, মেয়েরা চাইলে ঘরে বসেও নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে গড়ে তুলতে পারে। সমাজে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তা জয় করার শক্তি নারীদের মাঝেই রয়েছে। তার কেক ব্যবসার এই সফলতা অনেক তরুণীর জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। আদিবার স্বপ্ন, ভবিষ্যতে নিজস্ব একটি বেকারি খুলতে চান—যেখানে তিনি আরও নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবেন। তিনি চান, অন্য মেয়েরাও যেন স্বাবলম্বী হতে পারে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
স্থানীয় এলাকাবাসী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা আদিবা জেরিনকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। সংসারের টানাপোড়েনের মধ্যেও সে হাল ছাড়েনি। নিজের পরিশ্রমে আজ সে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। তার তৈরি কেকগুলো শুধু সুস্বাদুই নয়, স্বাস্থ্যসম্মতও। আমরা চাই এলাকার অন্য মেয়েরাও তার মতো অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাক।
আদিবার ছোট বোন মারিয়া জেরিন বলেন, আমার আপু শুধু আমাদের সংসারই চালাচ্ছেন না, আমাদের পড়াশোনার খরচও দেখছেন। তার জন্যই আমি নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছি।আপু আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করে কাজ করেন। আমি চাই একদিন আমিও আপুর মতো নিজেকে গড়ে তুলতে পারি।
নবাবগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুশাররত জাহান বলেন, আদিবা জেরিনের মতো নারীরা আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। তিনি নিজের মেধা, পরিশ্রম ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে নারীরা চাইলে ঘরে বসেই স্বাবলম্বী হতে পারে। সরকার নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে। আদিবা জেরিন তার সুন্দর উদ্যোগের মাধ্যমে অন্য মেয়েদেরও উৎসাহিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সবসময় তার পাশে থাকবে