উত্তরবঙ্গবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হতে চলেছে। খুব শীঘ্রই আবারো শুরু হতে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া রেলপথ নির্মাণ কাজ। সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া এই নতুন রেলপথ উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আনতে যাচ্ছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এটি হতে পারে আরেকটি মাইলফলক। নতুন এই রেলপথ শুধু দুটি জেলার সংযোগই তৈরি করছে না, বরং গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন খাতে আনতে যাচ্ছে নতুন গতি ও দিগন্ত।
সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর একটি হিসেবে ‘কন্সট্রাকশন অব ডুয়েলগেজ রেললাইন ফ্রম বগুড়া টু শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ অব বাংলাদেশ রেলওয়ে’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল বিভাগ। যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৫৮০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানাচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ঢাকায় যাতায়াতের প্রধান ভরসা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে রেল ও সড়কপথ। কিন্তু অতিরিক্ত চাপ ও রুট জটিলতার কারণে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ছে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। নতুন এই রেলপথ সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া হয়ে উত্তরাঞ্চলের জেলা যেমন নওগাঁ, গাইবন্ধা, রংপুর, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, দিনাজপুর এবং পঞ্চগড়ের সঙ্গে ঢাকা ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দূরত্ব অনেক কমিয়ে আনবে। বিশেষ করে, সরাসরি সিরাজগঞ্জ-বগুড়া ট্রেন চলাচল শুরু হলে ঢাকা-বগুড়া যাত্রায় সময় কমবে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। কারণ বর্তমানে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের প্রকৃত দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার হওয়া সত্ত্বেও দুই জেলার মধ্যে সরাসরি কোন রেলপথ না থাকায় এই অঞ্চলের ট্রেনগুলোকে গন্তব্যে পৌঁছাতে পাবনা, সান্তাহার, নাটোর ও ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে ঢাকা থেকে বগুড়া পৌছাতে বর্তমানে ট্রেনে সময় লাগে প্রায় ৮ ঘন্টা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার কমে যাবে যার ফলে যাত্রার সময় নেমে আসবে মাত্র চার থেকে সাড়ে ৪ ঘন্টায়। এদিকে উত্তরবঙ্গ মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। শুকনো মরিচ, পাট, ধান, সবজি, আলু ও ভুট্টার মতো ফসলের বিশাল উৎপাদন হয় এই অঞ্চলে। কিন্তু পরিবহন সমস্যার কারণে অনেক সময়ই কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পান না। নতুন রেললাইন চালু হলে এই কৃষিপণ্যগুলো অল্প সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো যাবে। ফলে কৃষিপণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় আসবে গতি ও স্থিতিশীলতা।
সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠছে ছোট-বড় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জে টেক্সটাইল শিল্প ও বগুড়ায় অটোমোবাইল খাত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই রেললাইন এসব শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানি ও পণ্য পরিবহন সহজ করে দেবে, যা বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
এছাড়া গাইবন্ধা, রংপুর ও লালমনিরহাটের চরাঞ্চলগুলোতে উৎপাদিত হয় শুকনো মরিচ ও পাটের মত দেশের প্রধান অর্থকারী ফসলগুলো। এগুলো স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারসহ উত্তরবঙ্গের অনেক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে, যেখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। বগুড়ার মমইন রিসোর্ট, গাইবান্ধার এসকেএস ইন পার্ক এন্ড রিসোর্ট, মাটির নিচের বিস্ময় ফ্রেন্ডশীপ সেন্টার, রংপুরের ভিন্নজগৎ, দিনাজপুরের রাম সাগর কিংবা স্বপ্নপুরী, সব চলে আসবে ঢাকাবাসীসহ দক্ষিণাঞ্চলের ভ্রমণ পিপাসুদের হাতের নাগালে। তাই রেলপথ উন্নত হলে পর্যটকদের যাতায়াত হবে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। এতে স্থানীয় হোটেল, রিসোর্ট ও অন্যান্য পর্যটনখাত লাভবান হবে।
সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ নির্মাণের এই প্রকল্পের ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ ৭০% সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু এলাকায় মাটি ভরাট ও সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই রেলপথ বাস্তবায়িত হলে শুধুমাত্র যোগাযোগই নয়, উন্নয়নের গতি পাবে গোটা উত্তরাঞ্চল। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, পণ্য পরিবহনে সময় কমবে এবং শিক্ষা-চিকিৎসা ক্ষেত্রে রাজধানীমুখী চাপও কিছুটা কমে আসবে। সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ কেবল একটি অবকাঠামোগত প্রকল্প নয় এটি উত্তরাঞ্চলের জীবনে এক নতুন সূর্যোদয়। সঠিক পরিকল্পনা ও সময়মতো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সাফল্যের গল্প-গাঁথা।
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
উত্তরবঙ্গবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হতে চলেছে। খুব শীঘ্রই আবারো শুরু হতে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া রেলপথ নির্মাণ কাজ। সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া এই নতুন রেলপথ উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আনতে যাচ্ছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এটি হতে পারে আরেকটি মাইলফলক। নতুন এই রেলপথ শুধু দুটি জেলার সংযোগই তৈরি করছে না, বরং গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন খাতে আনতে যাচ্ছে নতুন গতি ও দিগন্ত।
সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর একটি হিসেবে ‘কন্সট্রাকশন অব ডুয়েলগেজ রেললাইন ফ্রম বগুড়া টু শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ অব বাংলাদেশ রেলওয়ে’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল বিভাগ। যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৫৮০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানাচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ঢাকায় যাতায়াতের প্রধান ভরসা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে রেল ও সড়কপথ। কিন্তু অতিরিক্ত চাপ ও রুট জটিলতার কারণে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ছে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। নতুন এই রেলপথ সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া হয়ে উত্তরাঞ্চলের জেলা যেমন নওগাঁ, গাইবন্ধা, রংপুর, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, দিনাজপুর এবং পঞ্চগড়ের সঙ্গে ঢাকা ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দূরত্ব অনেক কমিয়ে আনবে। বিশেষ করে, সরাসরি সিরাজগঞ্জ-বগুড়া ট্রেন চলাচল শুরু হলে ঢাকা-বগুড়া যাত্রায় সময় কমবে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। কারণ বর্তমানে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের প্রকৃত দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার হওয়া সত্ত্বেও দুই জেলার মধ্যে সরাসরি কোন রেলপথ না থাকায় এই অঞ্চলের ট্রেনগুলোকে গন্তব্যে পৌঁছাতে পাবনা, সান্তাহার, নাটোর ও ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে ঢাকা থেকে বগুড়া পৌছাতে বর্তমানে ট্রেনে সময় লাগে প্রায় ৮ ঘন্টা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার কমে যাবে যার ফলে যাত্রার সময় নেমে আসবে মাত্র চার থেকে সাড়ে ৪ ঘন্টায়। এদিকে উত্তরবঙ্গ মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। শুকনো মরিচ, পাট, ধান, সবজি, আলু ও ভুট্টার মতো ফসলের বিশাল উৎপাদন হয় এই অঞ্চলে। কিন্তু পরিবহন সমস্যার কারণে অনেক সময়ই কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পান না। নতুন রেললাইন চালু হলে এই কৃষিপণ্যগুলো অল্প সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো যাবে। ফলে কৃষিপণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় আসবে গতি ও স্থিতিশীলতা।
সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠছে ছোট-বড় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জে টেক্সটাইল শিল্প ও বগুড়ায় অটোমোবাইল খাত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই রেললাইন এসব শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানি ও পণ্য পরিবহন সহজ করে দেবে, যা বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
এছাড়া গাইবন্ধা, রংপুর ও লালমনিরহাটের চরাঞ্চলগুলোতে উৎপাদিত হয় শুকনো মরিচ ও পাটের মত দেশের প্রধান অর্থকারী ফসলগুলো। এগুলো স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারসহ উত্তরবঙ্গের অনেক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে, যেখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। বগুড়ার মমইন রিসোর্ট, গাইবান্ধার এসকেএস ইন পার্ক এন্ড রিসোর্ট, মাটির নিচের বিস্ময় ফ্রেন্ডশীপ সেন্টার, রংপুরের ভিন্নজগৎ, দিনাজপুরের রাম সাগর কিংবা স্বপ্নপুরী, সব চলে আসবে ঢাকাবাসীসহ দক্ষিণাঞ্চলের ভ্রমণ পিপাসুদের হাতের নাগালে। তাই রেলপথ উন্নত হলে পর্যটকদের যাতায়াত হবে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। এতে স্থানীয় হোটেল, রিসোর্ট ও অন্যান্য পর্যটনখাত লাভবান হবে।
সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ নির্মাণের এই প্রকল্পের ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ ৭০% সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু এলাকায় মাটি ভরাট ও সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই রেলপথ বাস্তবায়িত হলে শুধুমাত্র যোগাযোগই নয়, উন্নয়নের গতি পাবে গোটা উত্তরাঞ্চল। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, পণ্য পরিবহনে সময় কমবে এবং শিক্ষা-চিকিৎসা ক্ষেত্রে রাজধানীমুখী চাপও কিছুটা কমে আসবে। সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ কেবল একটি অবকাঠামোগত প্রকল্প নয় এটি উত্তরাঞ্চলের জীবনে এক নতুন সূর্যোদয়। সঠিক পরিকল্পনা ও সময়মতো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সাফল্যের গল্প-গাঁথা।