ঝিনাইগাতী (শেরপুর) : লোকালয়ে বুনো হাতি -সংবাদ
শেরপুর সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়জুড়ে আবারও দেখা দিয়েছে বন্য হাতির তাণ্ডব। ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় প্রতিনিয়ত নেমে আসছে বন্য হাতির দল। পাকা ও কাঁচা আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল খেয়ে ও পায়ে পিষে ধ্বংস করছে হাতির দল। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সীমান্তের কৃষকরা। কৃষকরা মশাল জ্বালিয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করলেও কোনোভাবেই ফসল রক্ষা করতে পারছেন না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শতাধিক কৃষকের ক্ষেত। অনেকেই চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছে।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৫ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত গত ৩০ বছরে শেরপুরের গারো পাহাড় এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৫৮ জন মানুষ, আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন শতাধিক গ্রামীণ মানুষ। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছে ৩২টি হাতিও।
বন্য হাতির আক্রমণে কেউ নিহত হলে বন বিভাগ ৩ লাখ, আহত হলে ১ লাখ এবং ফসল নষ্ট হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছে, এই ক্ষতিপূরণ বাস্তব ক্ষতির তুলনায় নগণ্য। প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে হাতির তাণ্ডবে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির দৈনিক প্রায় ২০০ কেজি খাবার প্রয়োজন। পাহাড়ে এখন আগের মতো ফলমূল, কলাগাছ, বাঁশঝাড় বা লতাগুল্ম নেই। ফলে খাদ্যের সন্ধানে হাতির দল লোকালয়ে নেমে আসছে, খাচ্ছে ধান, কাঁঠাল, কলা- যা পায়।
আশির দশক থেকে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, পাহাড় কাটা ও বসতি স্থাপনের কারণে হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হয়েছে। একসময় ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ পাহাড় এখন কৃষিজমি ও বসতিতে পরিণত হয়েছে। ফলে হাতিদের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, এবং তাদের লোকালয়ে প্রবেশ এখন নিয়মিত ঘটনা।
হাতির তাণ্ডব ঠেকাতে বন বিভাগ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঝিনাইগাতীর তাওয়াকুচা থেকে ছোট গজনী পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সোলার ফেন্সিং স্থাপন করেছিল। এছাড়া হাতির খাদ্যের বাগান তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সোলার ফেন্সিং অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং খাদ্যের বাগানও বিলুপ্ত হয়। ফলে উদ্যোগগুলো কোনো ফল দেয়নি।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “সরকার গারো পাহাড় এলাকায় হাতি চলাচলের জন্য অভয়াশ্রম স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে হাতির উপদ্রব কিছুটা কমবে বলে আশা করছি। তবে মানুষ ও হাতি দুই পক্ষেরই জীবন রক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) : লোকালয়ে বুনো হাতি -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
শেরপুর সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়জুড়ে আবারও দেখা দিয়েছে বন্য হাতির তাণ্ডব। ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় প্রতিনিয়ত নেমে আসছে বন্য হাতির দল। পাকা ও কাঁচা আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল খেয়ে ও পায়ে পিষে ধ্বংস করছে হাতির দল। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সীমান্তের কৃষকরা। কৃষকরা মশাল জ্বালিয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করলেও কোনোভাবেই ফসল রক্ষা করতে পারছেন না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শতাধিক কৃষকের ক্ষেত। অনেকেই চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছে।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৫ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত গত ৩০ বছরে শেরপুরের গারো পাহাড় এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৫৮ জন মানুষ, আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন শতাধিক গ্রামীণ মানুষ। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছে ৩২টি হাতিও।
বন্য হাতির আক্রমণে কেউ নিহত হলে বন বিভাগ ৩ লাখ, আহত হলে ১ লাখ এবং ফসল নষ্ট হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছে, এই ক্ষতিপূরণ বাস্তব ক্ষতির তুলনায় নগণ্য। প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে হাতির তাণ্ডবে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির দৈনিক প্রায় ২০০ কেজি খাবার প্রয়োজন। পাহাড়ে এখন আগের মতো ফলমূল, কলাগাছ, বাঁশঝাড় বা লতাগুল্ম নেই। ফলে খাদ্যের সন্ধানে হাতির দল লোকালয়ে নেমে আসছে, খাচ্ছে ধান, কাঁঠাল, কলা- যা পায়।
আশির দশক থেকে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, পাহাড় কাটা ও বসতি স্থাপনের কারণে হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হয়েছে। একসময় ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ পাহাড় এখন কৃষিজমি ও বসতিতে পরিণত হয়েছে। ফলে হাতিদের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, এবং তাদের লোকালয়ে প্রবেশ এখন নিয়মিত ঘটনা।
হাতির তাণ্ডব ঠেকাতে বন বিভাগ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঝিনাইগাতীর তাওয়াকুচা থেকে ছোট গজনী পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সোলার ফেন্সিং স্থাপন করেছিল। এছাড়া হাতির খাদ্যের বাগান তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সোলার ফেন্সিং অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং খাদ্যের বাগানও বিলুপ্ত হয়। ফলে উদ্যোগগুলো কোনো ফল দেয়নি।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “সরকার গারো পাহাড় এলাকায় হাতি চলাচলের জন্য অভয়াশ্রম স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে হাতির উপদ্রব কিছুটা কমবে বলে আশা করছি। তবে মানুষ ও হাতি দুই পক্ষেরই জীবন রক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।