ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর শহরের এক এতিম পরিবারের আড়াই শতক জমি গত চার দশক ধরে দখল করে রেখেছেন পৌরসভার প্রভাবশালী সাবেক কমিশনার আব্দুর রশিদ। আদালতের রায়ে জমি ফেরতের নির্দেশ এলেও এখন পর্যন্ত ভূমি উদ্ধার হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মৃত জুড়ন বিশ্বাসের ভাইজি মোছাঃ বেবি খাতুন।
অসহায় এই নারী সম্প্রতি দর্শনা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে তার দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। জমি ভাড়ায় দিয়ে শুরু, জাল দলিলে দখল : বেবি খাতুন জানান, জীবননগর পৌর এলাকার মৃত জুড়ন বিশ্বাসের কন্যা নিঃসন্তান নৈজান নেছা ২৫ নম্বর মৌজার আরএস খতিয়ান নং–৭০৩, দাগ নং–৭০৬৩, ১৭৬৪ ও ১৭৭৮–এর মোট ৪৯.৫০ শতক জমির মালিক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি ওই জমির মধ্যে ১৭৭৮ দাগের আড়াই শতক জায়গায় একটি গুদামঘর নির্মাণ করে মাসিক ভাড়ায় দেন তৎকালীন পৌর কমিশনার আব্দুর রশিদের মা সাহেদা খাতুনের কাছে। নৈজান নেছা ১৯৮১ সালে মৃত্যুবরণ করলে, সুযোগ বুঝে সাহেদা খাতুন আরএস রেকর্ডে নিজের নাম মন্তব্য কলামে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২ জুন নৈজান নেছার নামে একটি জাল কবলা দলিল (নং ৩১৫০/৮২) তৈরি করে জমিটি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করান। পরে সেই দলিলের ভিত্তিতে তিনি তার সন্তান আব্দুর রশিদ, আনিসুজ্জামান ও হাসানুজ্জামানের নামে যথাক্রমে ১ শতক, ১ শতক ও ৫০ পয়েন্ট জমি নামজারি করান।
এরপর থেকেই জমিটি রশিদ কমিশনারের পরিবারের দখলে থাকে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আদালতের রায়েও জমি ফেরত মেলেনি: জাল দলিল প্রমাণিত হওয়ার পরও জমি ফেরত না পাওয়ায় ২০১৬ সালে বেবি খাতুন ও তার স্বজনরা চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। পাল্টা হিসেবে রশিদ কমিশনারও একই আদালতে বেবি খাতুনদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর আদালত উভয় মামলার রায় দেন। রায়ে বলা হয়, নৈজান নেছার উত্তরাধিকারীরাই জমির প্রকৃত মালিক এবং ১৯৮২ সালের ৩১৫০/৮২ নম্বর দলিলটি জাল ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
তবে আদালতের এ রায় কার্যকর হয়নি। জমি ফেরত না পেয়ে ২০২৪ সালে বেবি খাতুন জীবননগর পৌরসভায় জমি মাপার আবেদন করেন। সার্ভেয়ার নিয়োগ দেওয়া হলেও প্রতিবেদন গোপন রাখা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পৌরসভার অনীহা ও রাজনৈতিক প্রভাব:বেবি খাতুন বলেন, ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অঞ্জন তাকে জানান, আগের মেয়র জাহাঙ্গীরের দেওয়া প্রতিবেদনই চূড়ান্ত। পরবর্তীতে বর্তমান মেয়র রফিকুল ইসলামও জানান, নতুন প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব নয়। সার্ভেয়ারকেও প্রতিবেদন দিতে নিষেধ করা হয় বলে অভিযোগ করেন বেবি খাতুন। বরং তাকে একটি ভুল প্রতিবেদন সরবরাহ করা হয়। তিনি আরও বলেন, সাবেক কমিশনার আব্দুর রশিদের বিয়াই হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক কমিশনার আপেল মাহমুদ, যিনি প্রভাব খাটিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেন। ২০০৭ সালে আপেল মাহমুদ তার পরিবারের আরও ২৫ শতক জমি দখল করেন এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন বলেও অভিযোগ তার। অভিযুক্তের দাবি:অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক কমিশনার আব্দুর রশিদ বলেন,আমার মায়ের নামে বৈধ দলিল রয়েছে। আমরা সেই সূত্রেই জমির মালিক। মামলা চলমান, আদালতের রায় যা হবে, তখন দেখা যাবে।
তিনি আরও দাবি করেন,আওয়ামী লীগের সময় বেবি খাতুনের পক্ষের লোকজন আমার বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল। জীবননগর পৌর বিএনপির সভাপতি শাজাহান কবির বলেন,আইন সবার জন্য সমান। কেউ অন্যায় করলে তার দায় কেউ নেবে না। ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। অসহায় বেবির আর্তি:কান্নাজড়িত কণ্ঠে বেবি খাতুন বলেন,আমি এতিম, আমার কেউ নেই। ন্যায়বিচারের আশায় পৌরসভা, আদালত, প্রশাসন,সব জায়গায় ঘুরেছি। রশিদ কমিশনার ও তার স্বজনরা ক্ষমতার জোরে আমার জমি দখল করে রেখেছে। আদালতের রায় পেয়েও আমি অসহায়। আমি শুধু আমার জমিটুকু ফিরে পেতে চাই।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর শহরের এক এতিম পরিবারের আড়াই শতক জমি গত চার দশক ধরে দখল করে রেখেছেন পৌরসভার প্রভাবশালী সাবেক কমিশনার আব্দুর রশিদ। আদালতের রায়ে জমি ফেরতের নির্দেশ এলেও এখন পর্যন্ত ভূমি উদ্ধার হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মৃত জুড়ন বিশ্বাসের ভাইজি মোছাঃ বেবি খাতুন।
অসহায় এই নারী সম্প্রতি দর্শনা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে তার দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। জমি ভাড়ায় দিয়ে শুরু, জাল দলিলে দখল : বেবি খাতুন জানান, জীবননগর পৌর এলাকার মৃত জুড়ন বিশ্বাসের কন্যা নিঃসন্তান নৈজান নেছা ২৫ নম্বর মৌজার আরএস খতিয়ান নং–৭০৩, দাগ নং–৭০৬৩, ১৭৬৪ ও ১৭৭৮–এর মোট ৪৯.৫০ শতক জমির মালিক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি ওই জমির মধ্যে ১৭৭৮ দাগের আড়াই শতক জায়গায় একটি গুদামঘর নির্মাণ করে মাসিক ভাড়ায় দেন তৎকালীন পৌর কমিশনার আব্দুর রশিদের মা সাহেদা খাতুনের কাছে। নৈজান নেছা ১৯৮১ সালে মৃত্যুবরণ করলে, সুযোগ বুঝে সাহেদা খাতুন আরএস রেকর্ডে নিজের নাম মন্তব্য কলামে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২ জুন নৈজান নেছার নামে একটি জাল কবলা দলিল (নং ৩১৫০/৮২) তৈরি করে জমিটি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করান। পরে সেই দলিলের ভিত্তিতে তিনি তার সন্তান আব্দুর রশিদ, আনিসুজ্জামান ও হাসানুজ্জামানের নামে যথাক্রমে ১ শতক, ১ শতক ও ৫০ পয়েন্ট জমি নামজারি করান।
এরপর থেকেই জমিটি রশিদ কমিশনারের পরিবারের দখলে থাকে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আদালতের রায়েও জমি ফেরত মেলেনি: জাল দলিল প্রমাণিত হওয়ার পরও জমি ফেরত না পাওয়ায় ২০১৬ সালে বেবি খাতুন ও তার স্বজনরা চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। পাল্টা হিসেবে রশিদ কমিশনারও একই আদালতে বেবি খাতুনদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর আদালত উভয় মামলার রায় দেন। রায়ে বলা হয়, নৈজান নেছার উত্তরাধিকারীরাই জমির প্রকৃত মালিক এবং ১৯৮২ সালের ৩১৫০/৮২ নম্বর দলিলটি জাল ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
তবে আদালতের এ রায় কার্যকর হয়নি। জমি ফেরত না পেয়ে ২০২৪ সালে বেবি খাতুন জীবননগর পৌরসভায় জমি মাপার আবেদন করেন। সার্ভেয়ার নিয়োগ দেওয়া হলেও প্রতিবেদন গোপন রাখা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পৌরসভার অনীহা ও রাজনৈতিক প্রভাব:বেবি খাতুন বলেন, ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অঞ্জন তাকে জানান, আগের মেয়র জাহাঙ্গীরের দেওয়া প্রতিবেদনই চূড়ান্ত। পরবর্তীতে বর্তমান মেয়র রফিকুল ইসলামও জানান, নতুন প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব নয়। সার্ভেয়ারকেও প্রতিবেদন দিতে নিষেধ করা হয় বলে অভিযোগ করেন বেবি খাতুন। বরং তাকে একটি ভুল প্রতিবেদন সরবরাহ করা হয়। তিনি আরও বলেন, সাবেক কমিশনার আব্দুর রশিদের বিয়াই হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক কমিশনার আপেল মাহমুদ, যিনি প্রভাব খাটিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেন। ২০০৭ সালে আপেল মাহমুদ তার পরিবারের আরও ২৫ শতক জমি দখল করেন এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন বলেও অভিযোগ তার। অভিযুক্তের দাবি:অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক কমিশনার আব্দুর রশিদ বলেন,আমার মায়ের নামে বৈধ দলিল রয়েছে। আমরা সেই সূত্রেই জমির মালিক। মামলা চলমান, আদালতের রায় যা হবে, তখন দেখা যাবে।
তিনি আরও দাবি করেন,আওয়ামী লীগের সময় বেবি খাতুনের পক্ষের লোকজন আমার বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল। জীবননগর পৌর বিএনপির সভাপতি শাজাহান কবির বলেন,আইন সবার জন্য সমান। কেউ অন্যায় করলে তার দায় কেউ নেবে না। ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। অসহায় বেবির আর্তি:কান্নাজড়িত কণ্ঠে বেবি খাতুন বলেন,আমি এতিম, আমার কেউ নেই। ন্যায়বিচারের আশায় পৌরসভা, আদালত, প্রশাসন,সব জায়গায় ঘুরেছি। রশিদ কমিশনার ও তার স্বজনরা ক্ষমতার জোরে আমার জমি দখল করে রেখেছে। আদালতের রায় পেয়েও আমি অসহায়। আমি শুধু আমার জমিটুকু ফিরে পেতে চাই।