সম্প্রতি নীলফামারী জেলা প্রশাসকসহ সেনাপ্রধান বুড়ি তিস্তা নদী পুনঃখননের কাজ পরিদর্শন করেন -সংবাদ
দেশের উত্তর অঞ্চলের সর্ববৃহ তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প। তিস্তা ব্যারেজে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিসহ নীলফামারী জেলার কৃষিশিল্পকে বাঁচিয়ে স্বাবলম্বী ও টেকসই, বেগবান করতে ডিমলা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট ছোট শাখা নদ-নদীগুলোর পুনঃখননের জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। নদীর অধিকাংশ এলাকা ভূমি দস্যুদের করাল গ্রাসের কারণে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের চরম গাফিলতি ও অবহেলার কারণকে এ অবস্থার জন্য দায়ী করছেন নদী বিশেষজ্ঞরা। নাব্যতা ফেরাতে জরুরি ভিত্তিতে পুনঃখননের অতীব একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। চলতি শুকনো মৌসুমেই সংস্কারের দাবি তুলেছেন এলাকার সচেতন মহল।
মরতে বসা এ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত শাখা নদীগুলো হলো- নাউতার, বুড়িতিস্তা, কুমলাই ও ধুম নদী। এক সময়ের খরস্রোতা ছোট নদীগুলো প্রভাবশালীদের দখলের কারণে বাস্তবে নাই বললেই চলে।
পূর্বের অবস্থায় ফেরাতে নাউতারা ও ধুম নদী ইতিমধ্যে পুনঃখনন করা হলেও সেটা কোনো সুফলে আসেনি। পুনঃখননের পরেও এ নদী দুটির পানি শুকিয়ে জেগে উঠে বালু চরে পরিণত হয়েছে। এ দুটো নদী বুক জুড়ে ধান ও বিভিন্ন জাতের ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। এখন বুক জুড়ে ধান ও বিভিন্ন রকমের সবুজ ক্ষেতের সমারহ শোভা পাচ্ছে। পূর্বের কানায় কানায় ভরা টইটুম্বুর জলে ভরা নদী শুকিয়ে এখন বালু চর। ভূমিখোরদের চাষাবাদের আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। নদীতে পানি না থাকার সুযোগে একটি বালুখেকো চক্র নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রির করে জমজমাট ব্যবসা করে আসছে। ময়নুল হক নামের বালু ব্যবসায়ী বলেন , বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নদী থেকে বালু তুলে মহা ধুমধামে অবৈধ ব্যবসা করে চলছে।
দিন দিন নদীর গতিপথ বদলে যাচ্ছে বালু ও মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার কারণে। এ ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্যে হারিয়ে এর প্রভাবে নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হতে বসেছে সর্বোপরি এর ফলে ব্যহত হচ্ছে নদীমাত্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ধারার গতিপথ।
নদী বিশেষজ্ঞরা মতে, নদীগুলোকে পুনর্জীবিত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে নদী পুনঃখনন করে এগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ যথাযথ কার্যকরি ভূমিকা রাখার জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণকে।
প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর শুষ্ক মৌসুমে পুনঃখননের মাধ্যমে শাখা নদীগুলোর গতিপথ সচল রাখতে হবে এবং তদারকির জন্য জনবল কাঠামো তৈরি করে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
অনেক আগে থেকে নদীগুলো পূর্বে পুনঃখননের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। নামে মাত্র কাজ করা হয়েছিল যা কর্মপরিকল্পনা কাজের তুলনায় অতি সামান্য।
বরাদ্দকৃত অর্থের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভাগাভাগিতে যোগসাজসের কারণে নদীগুলো আগের মতোই মরা খালে রয়ে গেছে। নাম সর্বস্ব নদীগুলোকে পুজি করে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার একটি ক্ষেত্রের তৈরি হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় রুটিন মোতাবেক ইতোপূর্বে খনন কাজের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করা হলেও আত্মসৎকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। যার ফলে নদী খননের লক্ষ্য ও উদ্দেশে ভেস্তে গিয়ে নদী খননের উপকারিতার বদলে চরমভাবে ব্যাহত হয়ে সরকারের মোটা অংকের অর্থ ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তার পকেটে গেছে।
পাউবোর ডালিয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, দেশে ছোট নদ-নদী, খাল ও জলাশয় খনন করে পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একটি বড় আকারের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। সেই সময়ে ঐ প্রকল্পের অধীনে ১২ কোটি টাকা ব্যায়ে নাউতারা ও ধুম নদীর ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে পুনঃ খননের কাজ করে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। খননের কাজ সম্পন্ন হয় গত ২০২২ সালে।
স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধুম ও নাউতারা নদী খনন করে বালু-মাটি নিরাপথ দূরত্বে রাখার নিয়ম থাকলেও যেটুকু খনন করা হয় সব মাটি-বালু স্তুপ করে নদীর দুধারেই রেখে দেয়ার কারণে সেগুলো বৃষ্টির পানির তোড়ে পুনরায় নদীগর্ভে গিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে খননের কাজ শেষ না হতেই নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ভেস্তগেছে নদী খননের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। নাব্যতা ফিরে পাওয়ার পরিবর্তে চড়ে রূপান্তরিত হয়ে অকার্যকর হয়েছে। সে সুযোগে প্রভাবশালীরা যে যেভাবে পারে পশী শক্তি বলে নিজের আয়ত্তে নিয়ে অবৈধ দখল প্রতিষ্ঠিত করেছে।
নাউতারা ও ধুম নদী দুটো সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বালু ও পলি মাটি দ্বারা ভরাট হয়ে গেছে নদী দুটো। নদী তীরবর্তী প্রভাবশালী বাসিন্দারা দখল নিয়ে চাষাবাদ করছেন। আবার দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তিরাও নদী থেকে নিজ খেয়াল খুশি মতো অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন বিনা বাধায়।
ধুম নদীতেও একই অবস্থা অভ্যন্তরেও বাঁধ দিয়ে আবাদি জমি তৈরি করে ধান চাষ করা হয়েছে। আবার নদীর পাড় কেটে ট্রাক্টরে ভরে বিক্রি করছেন প্রভাবশালী বালু ব?্যবসায়ীরা। নদীর একপাশে বাধ দিলে অন্যপাশে বালুর স্তর জমে চর জেগে ওঠে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে একটি স্বার্থপর বালু ব্যবসায়ী মহল জমজমাট মাটি-বালুর ব্যবসা করছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, নদীর স্বাভাবিক গতিধারা বাধাগ্রস্ত করা দ-নীয় অপরাধ হলেও তা মানা হচ্ছে না।
ইতোমধ্যেই কুমলাই নামের নদীটির উৎসমুখে অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে এটাকে মেরে ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বুড়িতিস্তা নদীও নানা জটিলতার কারণে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে।
নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন , নদীগুলোর যেটুকু অস্তিত্ব রয়েছে, তা এখন দখলদার ও বালুখেকোদের কবলে রয়েছে। অপরিকল্পিত খনন আর পাউবো কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় নদীগুলো বালু মহলে পরিণত হয়েছে।
নদী রক্ষায় ‘রিভারাইন পিপল’ এর পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদের মতে, পাউবোর নদী খননের কার্যক্রম অপরিকল্পিত যা একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত নয়।
অপরিকল্পিত খননের বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, মাটির ধরনের কারণে এ অঞ্চলের নদী খননের পর সমস্যা হচ্ছে। নদীগুলোতে বালুর পরিমাণ বেশি। তাই খননের পরপরই আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এখন নদীগুলোতে পানির প্রবাহ ঠিক রাখাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নদী দখলকে ফৌজদারি কার্যবিধি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে দখলদার ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে ইতিমধ্যে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পাউবো, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সমন্বয়ে একটি দল এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। ওই দল ইতোমধ্যে কুমলাই নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখলদার ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। তালিকায় শতাধিক অবৈধ দখলদারের নাম চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার নাউতরা ও ধুম নদীর অবৈধ দখল ও দূষণ ও নাব্যতার বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেছেন।
এছাড়া বুড়ি তিস্তা পুনঃখননে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড মেঘা প্রকল্প হাতে নিলে বিগত ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে সৃষ্টি হয় একাধিক মামলা এর ফলে খনন কাজ অনিশ্চয়তা হয়ে পড়ে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইমরানুজ্জামান বলেন, এ উপজেলার নদীগুলোর নাব্যতা ফেরাতে ও পুনর্জীবিত করতে নদীর প্রস্থ পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণপূর্বক পরিকল্পিতভাবে পুনঃখনন খুবই জরুরি প্রয়োজন। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট রিলেটেড দপ্তরগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            সম্প্রতি নীলফামারী জেলা প্রশাসকসহ সেনাপ্রধান বুড়ি তিস্তা নদী পুনঃখননের কাজ পরিদর্শন করেন -সংবাদ
সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
দেশের উত্তর অঞ্চলের সর্ববৃহ তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প। তিস্তা ব্যারেজে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিসহ নীলফামারী জেলার কৃষিশিল্পকে বাঁচিয়ে স্বাবলম্বী ও টেকসই, বেগবান করতে ডিমলা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট ছোট শাখা নদ-নদীগুলোর পুনঃখননের জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। নদীর অধিকাংশ এলাকা ভূমি দস্যুদের করাল গ্রাসের কারণে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের চরম গাফিলতি ও অবহেলার কারণকে এ অবস্থার জন্য দায়ী করছেন নদী বিশেষজ্ঞরা। নাব্যতা ফেরাতে জরুরি ভিত্তিতে পুনঃখননের অতীব একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। চলতি শুকনো মৌসুমেই সংস্কারের দাবি তুলেছেন এলাকার সচেতন মহল।
মরতে বসা এ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত শাখা নদীগুলো হলো- নাউতার, বুড়িতিস্তা, কুমলাই ও ধুম নদী। এক সময়ের খরস্রোতা ছোট নদীগুলো প্রভাবশালীদের দখলের কারণে বাস্তবে নাই বললেই চলে।
পূর্বের অবস্থায় ফেরাতে নাউতারা ও ধুম নদী ইতিমধ্যে পুনঃখনন করা হলেও সেটা কোনো সুফলে আসেনি। পুনঃখননের পরেও এ নদী দুটির পানি শুকিয়ে জেগে উঠে বালু চরে পরিণত হয়েছে। এ দুটো নদী বুক জুড়ে ধান ও বিভিন্ন জাতের ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। এখন বুক জুড়ে ধান ও বিভিন্ন রকমের সবুজ ক্ষেতের সমারহ শোভা পাচ্ছে। পূর্বের কানায় কানায় ভরা টইটুম্বুর জলে ভরা নদী শুকিয়ে এখন বালু চর। ভূমিখোরদের চাষাবাদের আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। নদীতে পানি না থাকার সুযোগে একটি বালুখেকো চক্র নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রির করে জমজমাট ব্যবসা করে আসছে। ময়নুল হক নামের বালু ব্যবসায়ী বলেন , বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নদী থেকে বালু তুলে মহা ধুমধামে অবৈধ ব্যবসা করে চলছে।
দিন দিন নদীর গতিপথ বদলে যাচ্ছে বালু ও মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার কারণে। এ ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্যে হারিয়ে এর প্রভাবে নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হতে বসেছে সর্বোপরি এর ফলে ব্যহত হচ্ছে নদীমাত্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ধারার গতিপথ।
নদী বিশেষজ্ঞরা মতে, নদীগুলোকে পুনর্জীবিত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে নদী পুনঃখনন করে এগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ যথাযথ কার্যকরি ভূমিকা রাখার জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণকে।
প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর শুষ্ক মৌসুমে পুনঃখননের মাধ্যমে শাখা নদীগুলোর গতিপথ সচল রাখতে হবে এবং তদারকির জন্য জনবল কাঠামো তৈরি করে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
অনেক আগে থেকে নদীগুলো পূর্বে পুনঃখননের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। নামে মাত্র কাজ করা হয়েছিল যা কর্মপরিকল্পনা কাজের তুলনায় অতি সামান্য।
বরাদ্দকৃত অর্থের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভাগাভাগিতে যোগসাজসের কারণে নদীগুলো আগের মতোই মরা খালে রয়ে গেছে। নাম সর্বস্ব নদীগুলোকে পুজি করে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার একটি ক্ষেত্রের তৈরি হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় রুটিন মোতাবেক ইতোপূর্বে খনন কাজের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করা হলেও আত্মসৎকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। যার ফলে নদী খননের লক্ষ্য ও উদ্দেশে ভেস্তে গিয়ে নদী খননের উপকারিতার বদলে চরমভাবে ব্যাহত হয়ে সরকারের মোটা অংকের অর্থ ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তার পকেটে গেছে।
পাউবোর ডালিয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, দেশে ছোট নদ-নদী, খাল ও জলাশয় খনন করে পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একটি বড় আকারের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। সেই সময়ে ঐ প্রকল্পের অধীনে ১২ কোটি টাকা ব্যায়ে নাউতারা ও ধুম নদীর ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে পুনঃ খননের কাজ করে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। খননের কাজ সম্পন্ন হয় গত ২০২২ সালে।
স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধুম ও নাউতারা নদী খনন করে বালু-মাটি নিরাপথ দূরত্বে রাখার নিয়ম থাকলেও যেটুকু খনন করা হয় সব মাটি-বালু স্তুপ করে নদীর দুধারেই রেখে দেয়ার কারণে সেগুলো বৃষ্টির পানির তোড়ে পুনরায় নদীগর্ভে গিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে খননের কাজ শেষ না হতেই নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ভেস্তগেছে নদী খননের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। নাব্যতা ফিরে পাওয়ার পরিবর্তে চড়ে রূপান্তরিত হয়ে অকার্যকর হয়েছে। সে সুযোগে প্রভাবশালীরা যে যেভাবে পারে পশী শক্তি বলে নিজের আয়ত্তে নিয়ে অবৈধ দখল প্রতিষ্ঠিত করেছে।
নাউতারা ও ধুম নদী দুটো সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বালু ও পলি মাটি দ্বারা ভরাট হয়ে গেছে নদী দুটো। নদী তীরবর্তী প্রভাবশালী বাসিন্দারা দখল নিয়ে চাষাবাদ করছেন। আবার দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তিরাও নদী থেকে নিজ খেয়াল খুশি মতো অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন বিনা বাধায়।
ধুম নদীতেও একই অবস্থা অভ্যন্তরেও বাঁধ দিয়ে আবাদি জমি তৈরি করে ধান চাষ করা হয়েছে। আবার নদীর পাড় কেটে ট্রাক্টরে ভরে বিক্রি করছেন প্রভাবশালী বালু ব?্যবসায়ীরা। নদীর একপাশে বাধ দিলে অন্যপাশে বালুর স্তর জমে চর জেগে ওঠে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে একটি স্বার্থপর বালু ব্যবসায়ী মহল জমজমাট মাটি-বালুর ব্যবসা করছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, নদীর স্বাভাবিক গতিধারা বাধাগ্রস্ত করা দ-নীয় অপরাধ হলেও তা মানা হচ্ছে না।
ইতোমধ্যেই কুমলাই নামের নদীটির উৎসমুখে অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে এটাকে মেরে ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বুড়িতিস্তা নদীও নানা জটিলতার কারণে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে।
নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন , নদীগুলোর যেটুকু অস্তিত্ব রয়েছে, তা এখন দখলদার ও বালুখেকোদের কবলে রয়েছে। অপরিকল্পিত খনন আর পাউবো কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় নদীগুলো বালু মহলে পরিণত হয়েছে।
নদী রক্ষায় ‘রিভারাইন পিপল’ এর পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদের মতে, পাউবোর নদী খননের কার্যক্রম অপরিকল্পিত যা একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত নয়।
অপরিকল্পিত খননের বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, মাটির ধরনের কারণে এ অঞ্চলের নদী খননের পর সমস্যা হচ্ছে। নদীগুলোতে বালুর পরিমাণ বেশি। তাই খননের পরপরই আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এখন নদীগুলোতে পানির প্রবাহ ঠিক রাখাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নদী দখলকে ফৌজদারি কার্যবিধি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে দখলদার ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে ইতিমধ্যে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পাউবো, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সমন্বয়ে একটি দল এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। ওই দল ইতোমধ্যে কুমলাই নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখলদার ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। তালিকায় শতাধিক অবৈধ দখলদারের নাম চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার নাউতরা ও ধুম নদীর অবৈধ দখল ও দূষণ ও নাব্যতার বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেছেন।
এছাড়া বুড়ি তিস্তা পুনঃখননে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড মেঘা প্রকল্প হাতে নিলে বিগত ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে সৃষ্টি হয় একাধিক মামলা এর ফলে খনন কাজ অনিশ্চয়তা হয়ে পড়ে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইমরানুজ্জামান বলেন, এ উপজেলার নদীগুলোর নাব্যতা ফেরাতে ও পুনর্জীবিত করতে নদীর প্রস্থ পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণপূর্বক পরিকল্পিতভাবে পুনঃখনন খুবই জরুরি প্রয়োজন। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট রিলেটেড দপ্তরগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।