alt

অর্থ-বাণিজ্য

৯৮ শতাংশ ট্যানারি মালিকের অভিযোগ চামড়া দাগযুক্ত ছিল: সিপিডির গবেষণা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

দেশে পশুর চামড়ার বাজারমূল্য কম হওয়ার অন্যতম কারণ, চামড়ার গুণগত মানের অবনতি। বিশেষ করে কোরবানির সময় দক্ষ লোক দিয়ে পশু জবাই না করায় ও দেরীতে লবণ যুক্ত করায় চামড়ার মান খারাপ হয়ে যায়।

ঢাকার হেমায়েতপুরে অবস্থিত ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো গত কোরবানির সময় যে চামড়া সংগ্রহ করেছিল তার মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ চামড়াই ছিল কমবেশি দাগযুক্ত। এ ছাড়া ৬৮ শতাংশ চামড়ায় ছোট-বড় কাটা ছিল

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার হেমায়েতপুরে অবস্থিত ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো গত কোরবানির সময় যে চামড়া সংগ্রহ করেছিল তার মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ চামড়াই ছিল কমবেশি দাগযুক্ত। এ ছাড়া ৬৮ শতাংশ চামড়ায় ছোট-বড় কাটা ছিল।

সম্প্রতি রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ‘বাংলাদেশের চামড়া সরবরাহ শৃঙ্খল: কাঁচা চামড়ার মান ও মূল্য নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক ওই জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

সিপিডি বলেছে, সঠিক উপায়ে জবাই না করলে এবং চামড়া ছাড়ানো না হলে চামড়ায় কাটা দাগ পড়ে, ছিঁড়ে যায় বা গঠনগত ক্ষতিসাধন হয়। এতে চামড়ার মান ভালো থাকে না বরং অনেক ক্ষেত্রেই নিম্নমানের বা অকেজো হয়ে যায়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক কারণেও মান কমে যায়। যেমন, ট্যানারিগুলো যেসব চামড়া সংগ্রহ করেছিল, তার মধ্যে ২৩ শতাংশ চামড়া গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘ সময় লবণ না দিয়ে রাখায় এমনটা হয়েছে। এসব চামড়ার মধ্যে ১৮ শতাংশ শেষ পর্যন্ত পচে গেছে।

৭ জুন দেশে ঈদ উল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদ্?যাপিত হয়। তখন ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, নাটোর ও ময়মনসিংহ- এই পাঁচ জেলায় জরিপটি পরিচালনা করে সিপিডি। এতে কাঁচা চামড়ার সরবরাহ শৃঙ্খলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ৭৬৮ অংশীজনের কাছ থেকে থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন কোরবানিদাতা, মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রতিনিধি, স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী, ব্যাপারী, আড়তদার ও ট্যানারিমালিক।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান লেদার বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এলএসবিপিসি) যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও বিটিএ চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ।

অনুষ্ঠানে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘চামড়ার মূল্য নির্ধারণে লবণসহ ও লবণছাড়া উভয় ধরনের দাম রাখা উচিত। আগামী বছর থেকেই এটি হতে পারে। লবণসহ চামড়ার দাম এতটা বেশি রাখা উচিত যেন তা চামড়ায় লবণ লাগানোর বিষয়ে উৎসাহ তৈরি করে।’ এ ছাড়া কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ অব্যাহত রাখা উচিত বলে জানান তিনি। চামড়া খাতে বিদেশি বিনিয়োগ নেই। চামড়া শিল্প নগরীতে বিদেশি কেউ জমি কিনতে পারে না। এসব জায়গায় শিথিলতা আনা প্রয়োজন।

সিপিডির জরিপে উঠে এসেছে, চলতি বছরের কোরবানি ঈদে ৫২ শতাংশ গরু জবাই করা হয়েছে রাস্তাঘাটে। এ ছাড়া খোলা মাঠে ২৬ শতাংশ, বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় সাড়ে ৮ শতাংশ ও বাগানের মধ্যে প্রায় ৯ শতাংশ গরু জবাই করা হয়েছে। এর বাইরে মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ গরু স্লটারহাউসে (পশু জবাইখানা) এবং ১ দশমিক ৬ শতাংশ পশু সরকার নির্ধারিত স্থানে জবাই করা হয়েছে।

দেশে ঈদ মৌসুমে গবাদিপশু জবাই ও চামড়া ছাড়ানোর কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ কসাইয়ের অভাব রয়েছে বলে জানায় সিপিডি। ঢাকায় ২০ লাখের বেশি গরু কোরবানি হলেও এ জেলায় প্রশিক্ষিত কসাইয়ের সংখ্যা মাত্র ১১ হাজার ৬০০।

জরিপে উঠে আসে, চলতি বছর ঈদুল আজহায় সময় প্রায় ৮২ শতাংশ পশু কোরবানি হয়েছে মাদ্রাসা বা মসজিদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই প্রশিক্ষিত নন। এ ছাড়া ১৩ শতাংশের বেশি পশু জবাই করেছেন কোরবানিদাতা নিজেই। মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ পশু পেশাদার কসাইয়ের মাধ্যমে জবাই করা হয়েছে।

দক্ষ লোক দিয়ে কাজ না করানোয় এবারের ঈদে অন্তত ২১ শতাংশ কোরবানিদাতার গরুর চামড়ায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গভীর কাটা-ছেঁড়া (ফ্লে কাট) হয়েছে। ফলে এসব চামড়ার তেমন দামই পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সিপিডির জরিপকারীরা কোরবানির সময় সরেজমিনে গিয়ে কাটা ও ছেঁড়া চামড়া ফেলে দেওয়া অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন।

কোরবানির পর (লবণ দেওয়ার আগে) দ্রুত চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও অবহেলার চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ৪৬ শতাংশ কোরবানিদাতা পশু জবাইয়ের পর চামড়া খোলা স্থানে ফেলে রেখেছিলেন। এ ছাড়া চামড়া সংগ্রহ করা মাদ্রাসা প্রতিনিধি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ৩৬ শতাংশ এবং ১৪ শতাংশ আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী দীর্ঘ সময় চামড়া খোলা জায়গায় সংরক্ষণ করেছেন। এ কারণে বৃষ্টি, সূর্যের অত্যধিক তাপ, ধুলাবালু ও রোগজীবাণুর সংক্রমণে অনেক চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয়েছে।

এদিকে সরকার প্রতিবছর লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়, কিন্তু কাঁচা চামড়া প্রতিবারই অনির্ধারিত দামেই বেচাকেনা হয়। কোরবানিদাতা, মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ যে কেউ লবণযুক্ত করে চামড়া সংরক্ষণ করতে পারলেও এ কাজে তাঁদের মধ্যে অনীহা দেখা গেছে।

জরিপমতো কোনো কোরবানিদাতাই নিজে চামড়ায় লবণ যুক্ত করেননি। ৮৩ শতাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ৩৭ শতাংশ মাদ্রাসা লবণ দেওয়া ছাড়াই চামড়া বিক্রি করেছে। অথচ এবারের ঈদুল আজহার সময় স্থানীয় পর্যায়ে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য সরকার বিনা মূল্যে ২০ কোটি টাকার লবণ সরবরাহ করেছিল। প্রায় ১১ হাজার ৫৭১ টন লবণ দেশের সব কটি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এতিমখানা, মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে বিতরণ করা হয়।

সিপিডি বলেছে, চলতি বছর কোরবানির পশুর চামড়ায় লবণ বিতরণকে ঘিরে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। যেমন অনেক মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং সরকারি বরাদ্দের লবণ পায়নি। আবার যারা পেয়েছে, তাদের অনেকেই চামড়ায় লবণ না দিয়ে কাঁচা চামড়া ও লবণ আলাদাভাবে বিক্রি করেছে।

৮ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭ প্রকল্প অনুমোদন একনেকে

ছবি

দেশে চালু হলো গুগল পে

ছবি

ইইউর বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চীনের কাছাকাছি বাংলাদেশ

ছবি

টিম গ্রুপের নতুন এমডি আফরোজা শাহীন

ছবি

বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫ : আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ ও অপার সম্ভাবনা

ছবি

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো ‘গুগল পে’

ছবি

বাজারে ভালো ডিসপ্লে ও দারুণ অডিওসমৃদ্ধ ভিভো ভি৫০ লাইট

ছবি

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল অর্থায়নে কাজ করবে ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রিয়শপ

ছবি

জুনে পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৩ বিলিয়নের বাজেট সহায়তা

এনবিআরের ৫ কর্মকর্তাকে ‘তাৎক্ষণিক বদলি’

বিদেশি ঋণ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত: আনিসুজ্জামান চৌধুরী

পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পাচ্ছে ৩০ প্রতিষ্ঠান

২১ দিনে এলো ১৯৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স

ছবি

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি মনিরুল মাওলা গ্রেপ্তার

ছবি

মিনিমাম ১,৫০০ টাকা বাড়তি ভাতা পাবেন চাকরিজীবীরা, অবসরভোগীরা পাবেন ৭৫০ টাকা

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন

ছবি

বাজেট নিয়ে সমালোচনায় জবাব দিলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ

ছবি

চামড়ার জুতা রপ্তানিতে সুখবর, চার মাসে বেড়েছে প্রায় ২৫ দশমিক ২৪ শতাংশ

শেয়ারবাজারে বড় পতন

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের ৪ অগ্রাধিকার: বিডা প্রধান

ছবি

আজ থেকে ফের কলমবিরতি শুরু করলো এনবিআর কর্মকর্তারা

ছবি

লক্ষ্য পূরণে প্রতিদিন ৪৫২৪ কোটি টাকা আদায় করতে হবে এনবিআরকে

ছবি

কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল, বললেন এনবিআর চেয়ারম্যান

ছবি

“দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য রয়েছে”—অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা

ছবি

সূচকের সঙ্গে বাড়লো লেনদেন, বাজার মূলধনে যোগ হলো ১৫০ কোটি টাকা

ছবি

বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ: আঙ্কটাড

ছবি

শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় ডিএসইর সতর্কবার্তা

ব্রোকারেজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মার্জিন ঋণ ও প্রভিশনের তথ্য তলব

ঋণগ্রস্ত পাঁচ কোম্পানির কার্যক্রম তদন্তে বিএসইসির বিশেষ কমিটি

বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা অনুমোদন দিল বিশ্বব্যাংক

ছবি

দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের বাজার প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার

ছবি

ব্যাংকের আর্থিক নিরীক্ষায় স্বাধীনতা ছিল না: আইসিএবি

‘রেইজ’ প্রকল্প পরিদর্শনে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল

ছবি

১১ মাসে রাজস্ব আদায় ৩ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা: এনবিআর

রাজস্ব খাত সংস্কার আলোচনা চালাতে কমিটি করেছে এনবিআর

পণ্য ও সেবার ব্যয় মেটাতে বিদেশে পাঠানো যাবে ১ লাখ ডলার

tab

অর্থ-বাণিজ্য

৯৮ শতাংশ ট্যানারি মালিকের অভিযোগ চামড়া দাগযুক্ত ছিল: সিপিডির গবেষণা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

দেশে পশুর চামড়ার বাজারমূল্য কম হওয়ার অন্যতম কারণ, চামড়ার গুণগত মানের অবনতি। বিশেষ করে কোরবানির সময় দক্ষ লোক দিয়ে পশু জবাই না করায় ও দেরীতে লবণ যুক্ত করায় চামড়ার মান খারাপ হয়ে যায়।

ঢাকার হেমায়েতপুরে অবস্থিত ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো গত কোরবানির সময় যে চামড়া সংগ্রহ করেছিল তার মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ চামড়াই ছিল কমবেশি দাগযুক্ত। এ ছাড়া ৬৮ শতাংশ চামড়ায় ছোট-বড় কাটা ছিল

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার হেমায়েতপুরে অবস্থিত ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো গত কোরবানির সময় যে চামড়া সংগ্রহ করেছিল তার মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ চামড়াই ছিল কমবেশি দাগযুক্ত। এ ছাড়া ৬৮ শতাংশ চামড়ায় ছোট-বড় কাটা ছিল।

সম্প্রতি রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ‘বাংলাদেশের চামড়া সরবরাহ শৃঙ্খল: কাঁচা চামড়ার মান ও মূল্য নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক ওই জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

সিপিডি বলেছে, সঠিক উপায়ে জবাই না করলে এবং চামড়া ছাড়ানো না হলে চামড়ায় কাটা দাগ পড়ে, ছিঁড়ে যায় বা গঠনগত ক্ষতিসাধন হয়। এতে চামড়ার মান ভালো থাকে না বরং অনেক ক্ষেত্রেই নিম্নমানের বা অকেজো হয়ে যায়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক কারণেও মান কমে যায়। যেমন, ট্যানারিগুলো যেসব চামড়া সংগ্রহ করেছিল, তার মধ্যে ২৩ শতাংশ চামড়া গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘ সময় লবণ না দিয়ে রাখায় এমনটা হয়েছে। এসব চামড়ার মধ্যে ১৮ শতাংশ শেষ পর্যন্ত পচে গেছে।

৭ জুন দেশে ঈদ উল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদ্?যাপিত হয়। তখন ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, নাটোর ও ময়মনসিংহ- এই পাঁচ জেলায় জরিপটি পরিচালনা করে সিপিডি। এতে কাঁচা চামড়ার সরবরাহ শৃঙ্খলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ৭৬৮ অংশীজনের কাছ থেকে থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন কোরবানিদাতা, মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রতিনিধি, স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী, ব্যাপারী, আড়তদার ও ট্যানারিমালিক।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান লেদার বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এলএসবিপিসি) যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও বিটিএ চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ।

অনুষ্ঠানে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘চামড়ার মূল্য নির্ধারণে লবণসহ ও লবণছাড়া উভয় ধরনের দাম রাখা উচিত। আগামী বছর থেকেই এটি হতে পারে। লবণসহ চামড়ার দাম এতটা বেশি রাখা উচিত যেন তা চামড়ায় লবণ লাগানোর বিষয়ে উৎসাহ তৈরি করে।’ এ ছাড়া কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ অব্যাহত রাখা উচিত বলে জানান তিনি। চামড়া খাতে বিদেশি বিনিয়োগ নেই। চামড়া শিল্প নগরীতে বিদেশি কেউ জমি কিনতে পারে না। এসব জায়গায় শিথিলতা আনা প্রয়োজন।

সিপিডির জরিপে উঠে এসেছে, চলতি বছরের কোরবানি ঈদে ৫২ শতাংশ গরু জবাই করা হয়েছে রাস্তাঘাটে। এ ছাড়া খোলা মাঠে ২৬ শতাংশ, বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় সাড়ে ৮ শতাংশ ও বাগানের মধ্যে প্রায় ৯ শতাংশ গরু জবাই করা হয়েছে। এর বাইরে মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ গরু স্লটারহাউসে (পশু জবাইখানা) এবং ১ দশমিক ৬ শতাংশ পশু সরকার নির্ধারিত স্থানে জবাই করা হয়েছে।

দেশে ঈদ মৌসুমে গবাদিপশু জবাই ও চামড়া ছাড়ানোর কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ কসাইয়ের অভাব রয়েছে বলে জানায় সিপিডি। ঢাকায় ২০ লাখের বেশি গরু কোরবানি হলেও এ জেলায় প্রশিক্ষিত কসাইয়ের সংখ্যা মাত্র ১১ হাজার ৬০০।

জরিপে উঠে আসে, চলতি বছর ঈদুল আজহায় সময় প্রায় ৮২ শতাংশ পশু কোরবানি হয়েছে মাদ্রাসা বা মসজিদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই প্রশিক্ষিত নন। এ ছাড়া ১৩ শতাংশের বেশি পশু জবাই করেছেন কোরবানিদাতা নিজেই। মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ পশু পেশাদার কসাইয়ের মাধ্যমে জবাই করা হয়েছে।

দক্ষ লোক দিয়ে কাজ না করানোয় এবারের ঈদে অন্তত ২১ শতাংশ কোরবানিদাতার গরুর চামড়ায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গভীর কাটা-ছেঁড়া (ফ্লে কাট) হয়েছে। ফলে এসব চামড়ার তেমন দামই পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সিপিডির জরিপকারীরা কোরবানির সময় সরেজমিনে গিয়ে কাটা ও ছেঁড়া চামড়া ফেলে দেওয়া অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন।

কোরবানির পর (লবণ দেওয়ার আগে) দ্রুত চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও অবহেলার চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ৪৬ শতাংশ কোরবানিদাতা পশু জবাইয়ের পর চামড়া খোলা স্থানে ফেলে রেখেছিলেন। এ ছাড়া চামড়া সংগ্রহ করা মাদ্রাসা প্রতিনিধি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ৩৬ শতাংশ এবং ১৪ শতাংশ আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী দীর্ঘ সময় চামড়া খোলা জায়গায় সংরক্ষণ করেছেন। এ কারণে বৃষ্টি, সূর্যের অত্যধিক তাপ, ধুলাবালু ও রোগজীবাণুর সংক্রমণে অনেক চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয়েছে।

এদিকে সরকার প্রতিবছর লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়, কিন্তু কাঁচা চামড়া প্রতিবারই অনির্ধারিত দামেই বেচাকেনা হয়। কোরবানিদাতা, মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ যে কেউ লবণযুক্ত করে চামড়া সংরক্ষণ করতে পারলেও এ কাজে তাঁদের মধ্যে অনীহা দেখা গেছে।

জরিপমতো কোনো কোরবানিদাতাই নিজে চামড়ায় লবণ যুক্ত করেননি। ৮৩ শতাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ৩৭ শতাংশ মাদ্রাসা লবণ দেওয়া ছাড়াই চামড়া বিক্রি করেছে। অথচ এবারের ঈদুল আজহার সময় স্থানীয় পর্যায়ে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য সরকার বিনা মূল্যে ২০ কোটি টাকার লবণ সরবরাহ করেছিল। প্রায় ১১ হাজার ৫৭১ টন লবণ দেশের সব কটি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এতিমখানা, মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে বিতরণ করা হয়।

সিপিডি বলেছে, চলতি বছর কোরবানির পশুর চামড়ায় লবণ বিতরণকে ঘিরে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। যেমন অনেক মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং সরকারি বরাদ্দের লবণ পায়নি। আবার যারা পেয়েছে, তাদের অনেকেই চামড়ায় লবণ না দিয়ে কাঁচা চামড়া ও লবণ আলাদাভাবে বিক্রি করেছে।

back to top