alt

ক্যাম্পাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৫ বছরে পদার্পণ

খালেদ মাহমুদ ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

১০৫ বছরে পদার্পণ করেছে ঐতিহ্যবাহী ও দেশসেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের সব সোনালি অর্জন আর ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ এ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগারও বলা হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে।

আজ ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সকাল ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সম্মুখস্থ পায়রা চত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৯.৩০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ শোভাযাত্রা সহকারে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে সমবেত হবেন। স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে সকাল ৯.৪৫ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ পায়রা চত্বরে গমন করবেন। সকাল ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সম্মুখস্থ পায়রা চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সং ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশিত হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সকাল ১০.৩০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’ নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এমপি। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।

আলোচনা সভার শুরুতে দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ‘স্মরণিকা’ ও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের ২য় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধান অতিথিসহ অতিথিবৃন্দ।

দিবসটি উপলক্ষে ঢাবি ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল সাজে। বিশেষ এই দিনটি ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), প্রশাসনিক ভবনসহ কয়েকটি ভবন লাল, সবুজ, নীল রঙের বাতির আলোয় সাজানো হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আসলে ভালো লাগা অনেকগুণ বেড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংকট-সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়। ক্যাম্পাসের বর্ণিল সাজ মুগ্ধতা ছড়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসের এই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে যেন নববধূর সাজে বসে আছে প্রিয় শিক্ষাঙ্গন, প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। পৃথিবীর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সত্য, সুন্দর আর সমৃদ্ধির বাতি জ্বালিয়ে রাখুক আমাদের বিদ্যাপীঠ।

দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‌‘জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের উচ্চশিক্ষায় যে স্বীকৃত কাঠামো থাকা দরকার তা এখনো জাতীয়ভাবে সুনির্দিষ্ট করা যায়নি। বৈশ্বিক মানদণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা ও করণীয় ইতোমধ্যে আমরা নির্ধারণ করতে পেরেছি। সেই অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত করতে একাডেমিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ভৌত অবকাঠামোগত মাস্টারপ্ল্যানসহ বহুমাত্রিক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ এবং পূর্ব বাংলার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিকাশের লক্ষ্যে ২০ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এর আগে ভাইস রয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ওই বছরের ২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যারিস্টার আর. নাথানের নেতৃত্বে ডি. আর. কুচলার, ড. রাসবিহারী ঘোষ, নবাব সৈয়দ আলী চৌধুরী, নবাব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দচন্দ্র রায়, ঢাকা মাদ্রাসার (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) তত্ত্বাবধায়ক শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, মোহাম্মদ আলী (আলীগড়), ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ.এ.টি. আর্চিবল্ড, জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়, প্রেসিডেন্সি কলেজের (কলকাতা) অধ্যক্ষ এইচ. এইচ. আর. জেম্স্, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডব্লিউ. পিক এবং সংস্কৃত কলেজের (কলকাতা) অধ্যক্ষ সতীশ্চন্দ্র আচার্যকে সদস্য করে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হয়।

১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাস করে ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০’।

ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সে সময়ের ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবনগুলো ও ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিভাগগুলো ছিল— সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারসি ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং আইন।

প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। যেসব প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তারা হলেন— হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ. সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, জি এইচ ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ এ জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, এ এফ রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সর্বক্ষেত্রেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীসহ শহীদ হয়েছেন অনেকে।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৬০টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ২০টি আবাসিক হল, ৩টি হোস্টেল ও ১৯৮টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩৮০০০+ ও শিক্ষক সংখ্যা ২০০০+।

ছবি

কর্মবিরতিতে অচল ঢাবি, অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

ছবি

রাবি-ব্র্যাক এআইএসপি কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠিত

ছবি

মুক্তিযোদ্ধাদের কটুক্তির প্রতিবাদে জবিতে মানববন্ধন

ছবি

দ্বিতীয় দিনের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে অচল জবি

ছবি

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন শুরু ঢাবি শিক্ষার্থীদের

ছবি

সর্বজনীন পেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে বশেমুরকৃবি শিক্ষকদের সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি

ছবি

প্রত্যয় স্কিম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বয়কট করল শিক্ষক সমিতি

ছবি

কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে জবিতে বিক্ষোভ মিছিল

ক্লাস বর্জনের ঘোষণা শাবিপ্রবি শিক্ষকদের

ছবি

পেনশন স্কিম : কাল থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ছবি

কাল থেকে জবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ : শিক্ষক সমিতি

ছবি

জবি রোভার ইন কাউন্সিলের নেতৃত্বে রাকিব-মেহেদি

ছবি

২০১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা জবির, গবেষণায় বরাদ্দ ৯ কোটি

ছবি

দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ঢাবি শিক্ষকদের কর্মবিরতি

ছবি

খাসি তুমি কার!

ছবি

ঈদের ছুটিতে হলে অবস্থান করায় ছাত্রীদের ডেকে শাসালেন জবির হল প্রভোস্ট

ছবি

ঢাবিতে বাজেট ২০২৪-২৫: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি শীর্ষক সভা

ছবি

তীব্র গরমে লম্বা লাইনে ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের

কোটা পুনবর্হালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী আন্দোলনে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জাবি শিক্ষার্থীকে হেনস্থা করে হলচু্্য: তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে গাফিলতির অভিযোগ

ছবি

কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাবি

ছবি

প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইউনিলিভারের ‘অ্যাওয়্যার ওয়েভ’ ক্যাম্পেইন

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ

ছবি

নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু হলো ওয়াইল্ড লাইফ অলিম্পিয়াড ২০২৪ এর আঞ্চলিকপর্ব

ছবি

কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছবি

ছুটিতে ইবির আবাসিক হল খোলা রাখার দাবিতে স্মারকলিপি ও প্রধান ফটক অবরোধ

ছবি

ঈদের ছুটিতে বন্ধ ক্যাম্পাসে গাছ কাটার মহাযজ্ঞ

ছবি

স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা হবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের : জবি উপাচার্য

ছবি

জবিতে প্রজেক্ট শেষেও স্হাপনা না সরিয়ে ক্লাসরুম দখলে রাখার অভিযোগ

ছবি

নামাজ পড়ানোর অনুমতি পেল জবির ইমাম

অবৈধভাবে দখলকৃত রাস্তা উন্মুক্তকরণসহ ১১‌ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

ছবি

জবিতে বসবাস করা কর্মচারীদের আবাসস্থল ত্যাগের নির্দেশ

ছবি

উদ্ভাবন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়- ঢাবি উপাচার্য

ছবি

জবির নতুন সহকারী প্রক্টরের দায়িত্বে দেওয়ান বদরুল

ছবি

জবির মসজিদে মধ্যরাতে ঘুমন্ত নারী, ইমামকে সাময়িক অব্যাহতি ও তদন্ত কমিটি

tab

ক্যাম্পাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৫ বছরে পদার্পণ

খালেদ মাহমুদ ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

১০৫ বছরে পদার্পণ করেছে ঐতিহ্যবাহী ও দেশসেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের সব সোনালি অর্জন আর ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ এ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগারও বলা হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে।

আজ ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সকাল ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সম্মুখস্থ পায়রা চত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৯.৩০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ শোভাযাত্রা সহকারে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে সমবেত হবেন। স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে সকাল ৯.৪৫ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ পায়রা চত্বরে গমন করবেন। সকাল ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সম্মুখস্থ পায়রা চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সং ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশিত হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সকাল ১০.৩০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’ নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এমপি। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।

আলোচনা সভার শুরুতে দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ‘স্মরণিকা’ ও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের ২য় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধান অতিথিসহ অতিথিবৃন্দ।

দিবসটি উপলক্ষে ঢাবি ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল সাজে। বিশেষ এই দিনটি ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), প্রশাসনিক ভবনসহ কয়েকটি ভবন লাল, সবুজ, নীল রঙের বাতির আলোয় সাজানো হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আসলে ভালো লাগা অনেকগুণ বেড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংকট-সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়। ক্যাম্পাসের বর্ণিল সাজ মুগ্ধতা ছড়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসের এই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে যেন নববধূর সাজে বসে আছে প্রিয় শিক্ষাঙ্গন, প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। পৃথিবীর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সত্য, সুন্দর আর সমৃদ্ধির বাতি জ্বালিয়ে রাখুক আমাদের বিদ্যাপীঠ।

দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‌‘জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের উচ্চশিক্ষায় যে স্বীকৃত কাঠামো থাকা দরকার তা এখনো জাতীয়ভাবে সুনির্দিষ্ট করা যায়নি। বৈশ্বিক মানদণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা ও করণীয় ইতোমধ্যে আমরা নির্ধারণ করতে পেরেছি। সেই অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত করতে একাডেমিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ভৌত অবকাঠামোগত মাস্টারপ্ল্যানসহ বহুমাত্রিক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ এবং পূর্ব বাংলার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিকাশের লক্ষ্যে ২০ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এর আগে ভাইস রয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ওই বছরের ২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যারিস্টার আর. নাথানের নেতৃত্বে ডি. আর. কুচলার, ড. রাসবিহারী ঘোষ, নবাব সৈয়দ আলী চৌধুরী, নবাব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দচন্দ্র রায়, ঢাকা মাদ্রাসার (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) তত্ত্বাবধায়ক শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, মোহাম্মদ আলী (আলীগড়), ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ.এ.টি. আর্চিবল্ড, জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়, প্রেসিডেন্সি কলেজের (কলকাতা) অধ্যক্ষ এইচ. এইচ. আর. জেম্স্, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডব্লিউ. পিক এবং সংস্কৃত কলেজের (কলকাতা) অধ্যক্ষ সতীশ্চন্দ্র আচার্যকে সদস্য করে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হয়।

১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাস করে ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০’।

ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সে সময়ের ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবনগুলো ও ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিভাগগুলো ছিল— সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারসি ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং আইন।

প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। যেসব প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তারা হলেন— হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ. সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, জি এইচ ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ এ জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, এ এফ রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সর্বক্ষেত্রেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীসহ শহীদ হয়েছেন অনেকে।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৮৪টি বিভাগ, ৬০টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ২০টি আবাসিক হল, ৩টি হোস্টেল ও ১৯৮টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩৮০০০+ ও শিক্ষক সংখ্যা ২০০০+।

back to top