প্রতিবাদে কর্মবিরতির ঘোষণা
শনিবার রাজধানীর শাহবাগে প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পণ্ড করে দেয় পুলিশ -সংবাদ
১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে আন্দোলনকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপে করেছে পুলিশ। এ বাধার কারণে তারা শাহবাগে ‘কলম সমর্পণ’ পালন করতে পারেননি। এ সময় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন এবং তাদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষকরা।
পুলিশের বাধায় কর্মসূচি পালন করতে না পারায় আন্দোলনরত শিক্ষকরা আবার শহীদ মিনারে ফিরে যান, সেখানে শনিবার,(০৮ নভেম্বর ২০২৫) সকাল থেকে তারা অবস্থান নিয়েছেন। এদিন বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষকরা ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালনের জন্য মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও জলকামান ছুড়ে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয় বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর তরফে সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন,‘পুলিশের হামলায় শাহবাগে অনেক শিক্ষক আহত হয়েছেন।’
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, ‘শিক্ষকরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আহত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য এখনও আমরা পাইনি।’ বিকেল পৌনে ৫টার আরেক শিক্ষক নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘আমরা ৫০ জন শিক্ষককে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এসেছি। তারা সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেলে আহত।’
প্রতিবাদে সরকারি প্রাথমিকে কর্মবিরতির ঘোষণা
তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি চলাকালে ‘পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। আজ থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার বিকেলে মিছিলে পুলিশের বাধার কারণে শিক্ষকরা শাহবাগে তাদের পূর্বনির্ধারিত ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠি চার্জ, কাঁদুনে গ্যাসে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায় শিক্ষকদের।
পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফিরে গিয়ে কর্মবিরতি পালনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)’-এর সভাপতি মো. আবুল কাশেম। একই সঙ্গে তিন দাবিতে রাজধানী ঢাকায় তাদের আগের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিও চলতে থাকবে। ঘোষণার পর আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংগঠন ‘প্রাথমিক শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন, দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার (আজ) থেকে শহীদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে।
শহীদ মিনারে কর্মবিরতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (কাশেম-শাহিন) সভাপতি আবুল কাশেম দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষকদের ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে আসার আহ্বান জানিয়ে নেতা বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় ও যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত আগামীকাল (আজ) থেকে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।’ ‘সারাদেশের শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, প্রত্যেক প্রধান শিক্ষক-সহকারী শিক্ষক সবাই শিক্ষকের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে কর্মবিরতি পালন করবেন।’
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিকেল ৫টায় দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কিছু আন্দোলনকারী ‘কলম সমর্পণের’ নামে শাহবাগ থানার সামনে জড়ো হয়। আনুমানিক ৪টার সময় আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটা দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা প্রদান করলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।’
‘এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশের নির্দেশনা অমান্যকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তীতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন।’
‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’ জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে যেসব এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা মেনে চলার জন্য সবাইকে আবার অনুরোধ করা হয়েছে ডিএমপি ডিসির বিবৃতিতে।
লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করা প্রাথমিকের শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন ছাড়াও বাকি দুই দাবি হলো- চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
‘প্রাথমিক শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’ ছাড়াও এ মোর্চায় আছে, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)’, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি’ এবং ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)’। দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে সংহতি প্রকাশ করেন।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষকরা ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন। এর আগে শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিনের ন্যায্য তিন দফা দাবি এখনও পূরণ হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা শান্তিপূর্ণ কলম সমর্পণ কর্মসূচি পালন করবো। কর্মসূচি শেষে আমরা শহীদ মিনারে ফিরে আসবো।’
দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন। গত ২৪ এপ্রিল ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নিত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা।
পরে শনিবার থেকে ১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’। এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন।
এর তিন দাবি মানা না হলে আগামী ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না আসলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
প্রতিবাদে কর্মবিরতির ঘোষণা
শনিবার রাজধানীর শাহবাগে প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পণ্ড করে দেয় পুলিশ -সংবাদ
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে আন্দোলনকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপে করেছে পুলিশ। এ বাধার কারণে তারা শাহবাগে ‘কলম সমর্পণ’ পালন করতে পারেননি। এ সময় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন এবং তাদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষকরা।
পুলিশের বাধায় কর্মসূচি পালন করতে না পারায় আন্দোলনরত শিক্ষকরা আবার শহীদ মিনারে ফিরে যান, সেখানে শনিবার,(০৮ নভেম্বর ২০২৫) সকাল থেকে তারা অবস্থান নিয়েছেন। এদিন বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষকরা ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালনের জন্য মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও জলকামান ছুড়ে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয় বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর তরফে সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন,‘পুলিশের হামলায় শাহবাগে অনেক শিক্ষক আহত হয়েছেন।’
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, ‘শিক্ষকরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আহত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য এখনও আমরা পাইনি।’ বিকেল পৌনে ৫টার আরেক শিক্ষক নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘আমরা ৫০ জন শিক্ষককে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এসেছি। তারা সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেলে আহত।’
প্রতিবাদে সরকারি প্রাথমিকে কর্মবিরতির ঘোষণা
তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি চলাকালে ‘পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। আজ থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার বিকেলে মিছিলে পুলিশের বাধার কারণে শিক্ষকরা শাহবাগে তাদের পূর্বনির্ধারিত ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠি চার্জ, কাঁদুনে গ্যাসে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায় শিক্ষকদের।
পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফিরে গিয়ে কর্মবিরতি পালনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)’-এর সভাপতি মো. আবুল কাশেম। একই সঙ্গে তিন দাবিতে রাজধানী ঢাকায় তাদের আগের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিও চলতে থাকবে। ঘোষণার পর আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংগঠন ‘প্রাথমিক শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন, দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার (আজ) থেকে শহীদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে।
শহীদ মিনারে কর্মবিরতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (কাশেম-শাহিন) সভাপতি আবুল কাশেম দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষকদের ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে আসার আহ্বান জানিয়ে নেতা বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় ও যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত আগামীকাল (আজ) থেকে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।’ ‘সারাদেশের শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, প্রত্যেক প্রধান শিক্ষক-সহকারী শিক্ষক সবাই শিক্ষকের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে কর্মবিরতি পালন করবেন।’
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিকেল ৫টায় দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কিছু আন্দোলনকারী ‘কলম সমর্পণের’ নামে শাহবাগ থানার সামনে জড়ো হয়। আনুমানিক ৪টার সময় আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটা দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা প্রদান করলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।’
‘এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশের নির্দেশনা অমান্যকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তীতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন।’
‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’ জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে যেসব এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা মেনে চলার জন্য সবাইকে আবার অনুরোধ করা হয়েছে ডিএমপি ডিসির বিবৃতিতে।
লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করা প্রাথমিকের শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন ছাড়াও বাকি দুই দাবি হলো- চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
‘প্রাথমিক শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’ ছাড়াও এ মোর্চায় আছে, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)’, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি’ এবং ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)’। দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে সংহতি প্রকাশ করেন।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষকরা ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন। এর আগে শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিনের ন্যায্য তিন দফা দাবি এখনও পূরণ হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা শান্তিপূর্ণ কলম সমর্পণ কর্মসূচি পালন করবো। কর্মসূচি শেষে আমরা শহীদ মিনারে ফিরে আসবো।’
দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন। গত ২৪ এপ্রিল ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নিত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা।
পরে শনিবার থেকে ১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’। এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন।
এর তিন দাবি মানা না হলে আগামী ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না আসলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।