মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। তাই এ সরকারের ‘এত শক্তি প্রদর্শন’ মানায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, বিএনপিকে আদেশ করার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই।
এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না
‘জামায়াতকে দিয়ে সংলাপের আহ্বানে’ প্রশ্ন
সরকার রেফারি হয়ে হাত দিয়ে গোল দিয়ে দিয়েছে
দেশে গণভোটের প্রয়োজন নেই
শনিবার,(০৮ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্রদল আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর পূর্তি’ উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোট আয়োজন নিয়ে সৃষ্ট মতভেদ নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোকে দ্রুততম সময়ে সম্ভব হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভা’ থেকে আহ্বান জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
গত সোমবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ওই সভা শেষে ব্রিফিংয়ে আসেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, এ সংক্রান্ত আলোচনা দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে না।
এ প্রসঙ্গে একইদিনে ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক আট দলের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোট আয়োজন নিয়ে মতপার্থক্য নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চায় তারা। সেই সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘রেফারির’ ভূমিকায় থাকার আহ্বান জানান জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের মতে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘এভাবে সময় বেঁধে দেয়ারও’ এখতিয়ার নেই। শনিবার কাকরাইলের আলোচন সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটা আপনারা যেন সব সময় ইয়াদ (মনে) রাখেন। আপনাদের এ রকম কোনো এখতিয়ার নাই, আমাদের ডিকটেট (আদেশ) করার যে সাত দিনের ভিতরে আপনার সিদ্ধান্ত না হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের বোধহয় মানায় না।’
রেফরির ভূমিকা
রেফারি হওয়ার আহ্বান প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাচ্ছি, আমরা মনে করেছিলাম জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবেন।
অথচ এখন আপনারা রেফারি হয়ে হাত দিয়ে একটা গোল দিয়ে দিয়েছেন। এখন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সাত দিনের মধ্যে, না হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
এদিকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। মির্জা ফখরুল তখন তাকে বলেন, দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর এ বিষয়ে অবস্থান জানাবেন।
এরপর শনিবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সভায় এ বক্তব্য দেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সমর্থন করেছি, করব ওই সীমারেখার মধ্যে। আর যদি মনে করেন যে, আরেকটি রাজনৈতিক দল দিয়ে আমাদের আহ্বান জানাবেন আলোচনার জন্য। তারা কারা? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যদি আমাদের আহ্বান জানায় কোনো বিষয়ে আলোচনা করার জন্য, যে কোনো ইস্যুতে, আমরা সব সময় আলোচনায় আগ্রহী, যাব। কিন্তু অন্য কোনো একটি রাজনৈতিক দল দিয়ে আমাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে কেন?’
সরকারকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় কর্মকা- করার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে দলের গুরুতর আপত্তির কথা বলেছেন তিনি।
*জুলাই সনদে ‘পরিবর্তন’*
বিএনপির হয়ে তিনি জানান, গত ১৭ অক্টোবর যে জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো সই করেছিল, সেটি বিএনপি বাস্তবায়ন করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু ২৮ অক্টোবর (গত) জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব জমা দিয়েছে, তাতে তাদের আপত্তি রয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ, ওই প্রস্তাবের তফসিলে উল্লেখিত সনদে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এছাড়া সনদ বাস্তবায়নে গণভোট কবে হবে, তা নিয়েও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। বিএনপি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট করার পক্ষে। জামায়াত চায়, আগে গণভোট করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেয়ার পর তার আলোকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে আসার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিবকে ফোন করেন জামায়াতের নায়েবে আমির।
বিএনপি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেটা এনসিপি হোক, জামায়াত হোক বা অন্যান্য পার্টি হোক। সবার সঙ্গে আমরা গণতান্ত্রিক কালচার (সংস্কৃতি) হিসেবে রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং আলাপ-আলোচনা, সম্পর্ক রাখবো। কিন্তু কোনো বিষয়ে আলোচনা করার জন্য কোনো রেফারির ভূমিকায় কোনো দলকে দিয়ে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) আহ্বান জানাবেন ইনডাইরেক্টলি, সেটা বোধ হয় সঠিক হচ্ছে না।’
*আওয়ামী লীগের হাত ধরে*
জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আপনারা যারা ১৯৭১ সালে উল্টা দিকে যাত্রা করেছিলেন, ১৯৪৭ সালে বিপরীত দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন, জাতীয় পার্টির হাত ধরে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সাহেবের সহচর হয়েছিলেন, আপনারা আবার যদি আওয়ামী লীগের হাত ধরে পুনরুত্থান চান, কী পরিণত হবে, আল্লাহ মালুম। আপনারা যা শুরু করেছেন তাতে করে উৎসাহিত হবে পতিত ফ্যাসিস্ট। তাতে উৎসাহিত হবে বাংলাদেশে অন্য যে কোনো রকমের অগণতান্ত্রিক শক্তি। কিন্তু সেজন্য যদি আপনারা বলতে চান যে, আপনারা খেতে পারবেন না, সেজন্য ভাড়া ভাতে ছাই ছিটিয়ে দিবেন। সেটা বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো গ্রহণ করবে না। সেই সুযোগ দেবে না।’
জামায়াতের উদ্দেশ্যে বিএনপি এ নেতা আরও বলেন, ‘আপনারা ঘি খেতে চান, খান। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথের এই ময়দানকে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আর উত্তপ্ত হতে দেব না। ঠিক। আপনারা বলেছেন ১১ তারিখ পর্যন্ত আল্টিমেটাম। আল্টিমেটাম কারা দিচ্ছেন সরকারকে? তো সরকার তো আপনাদের পক্ষে সুপারিশ দিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তো আপনারা যা চান, তাই দিয়েছে। সেজন্য আপনারা তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে তাই কথা বলছেন।’
*গণভোটের প্রয়োজন নেই*
দেশে গণভোটের কোনো প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই গণভোটের মধ্য দিয়ে আইন প্রণীত হয়ে যাবে। এই গণভোটটার মধ্য দিয়ে সংবিধান পরিবর্তিত হয়ে যাবে। কিন্তু একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা সংসদ সদস্যদের ওপরে এবং আগামী সংসদের ওপরে আরোপিত হবে। যে জনগণ চায় এই সংস্কার বাস্তবায়ন হোক অথবা চায় না।’ নির্বাচনের দিন ছাড়া গণভোটের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আগামী ১৩ নভেম্বর সারাদেশে আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘১৩ তারিখ (আগামী) বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি রায় (রায়ের তারিখ) ঘোষণা হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেদিন নাকি লকডাউন সারা বাংলাদেশে। মানুষ বলে না যে, পাগলের সুখ মনে মনে। এই এক বছরের ভেতরে কীভাবে আপনাদের মনে হলো যে, ফ্যাসিস্ট পতিত শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির পক্ষে বাংলাদেশে লড়া, আপনারা আহ্বান করবেন আর জনগণ সাড়া দেবে? যদি দুঃসাহস থাকে আপনারা আসেন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের কীভাবে আপ্যায়ন করে দেখব। আমরা তো চাই, আপনারা এসে বিচারের মুখোমুখি হোন।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। সভা সঞ্চালনা করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। তাই এ সরকারের ‘এত শক্তি প্রদর্শন’ মানায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, বিএনপিকে আদেশ করার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই।
এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না
‘জামায়াতকে দিয়ে সংলাপের আহ্বানে’ প্রশ্ন
সরকার রেফারি হয়ে হাত দিয়ে গোল দিয়ে দিয়েছে
দেশে গণভোটের প্রয়োজন নেই
শনিবার,(০৮ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্রদল আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর পূর্তি’ উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোট আয়োজন নিয়ে সৃষ্ট মতভেদ নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোকে দ্রুততম সময়ে সম্ভব হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভা’ থেকে আহ্বান জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
গত সোমবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ওই সভা শেষে ব্রিফিংয়ে আসেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, এ সংক্রান্ত আলোচনা দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে না।
এ প্রসঙ্গে একইদিনে ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক আট দলের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোট আয়োজন নিয়ে মতপার্থক্য নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চায় তারা। সেই সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘রেফারির’ ভূমিকায় থাকার আহ্বান জানান জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের মতে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘এভাবে সময় বেঁধে দেয়ারও’ এখতিয়ার নেই। শনিবার কাকরাইলের আলোচন সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটা আপনারা যেন সব সময় ইয়াদ (মনে) রাখেন। আপনাদের এ রকম কোনো এখতিয়ার নাই, আমাদের ডিকটেট (আদেশ) করার যে সাত দিনের ভিতরে আপনার সিদ্ধান্ত না হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের বোধহয় মানায় না।’
রেফরির ভূমিকা
রেফারি হওয়ার আহ্বান প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাচ্ছি, আমরা মনে করেছিলাম জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবেন।
অথচ এখন আপনারা রেফারি হয়ে হাত দিয়ে একটা গোল দিয়ে দিয়েছেন। এখন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সাত দিনের মধ্যে, না হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
এদিকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। মির্জা ফখরুল তখন তাকে বলেন, দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর এ বিষয়ে অবস্থান জানাবেন।
এরপর শনিবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সভায় এ বক্তব্য দেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সমর্থন করেছি, করব ওই সীমারেখার মধ্যে। আর যদি মনে করেন যে, আরেকটি রাজনৈতিক দল দিয়ে আমাদের আহ্বান জানাবেন আলোচনার জন্য। তারা কারা? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যদি আমাদের আহ্বান জানায় কোনো বিষয়ে আলোচনা করার জন্য, যে কোনো ইস্যুতে, আমরা সব সময় আলোচনায় আগ্রহী, যাব। কিন্তু অন্য কোনো একটি রাজনৈতিক দল দিয়ে আমাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে কেন?’
সরকারকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় কর্মকা- করার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে দলের গুরুতর আপত্তির কথা বলেছেন তিনি।
*জুলাই সনদে ‘পরিবর্তন’*
বিএনপির হয়ে তিনি জানান, গত ১৭ অক্টোবর যে জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো সই করেছিল, সেটি বিএনপি বাস্তবায়ন করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু ২৮ অক্টোবর (গত) জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব জমা দিয়েছে, তাতে তাদের আপত্তি রয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ, ওই প্রস্তাবের তফসিলে উল্লেখিত সনদে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এছাড়া সনদ বাস্তবায়নে গণভোট কবে হবে, তা নিয়েও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। বিএনপি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট করার পক্ষে। জামায়াত চায়, আগে গণভোট করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেয়ার পর তার আলোকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে আসার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিবকে ফোন করেন জামায়াতের নায়েবে আমির।
বিএনপি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেটা এনসিপি হোক, জামায়াত হোক বা অন্যান্য পার্টি হোক। সবার সঙ্গে আমরা গণতান্ত্রিক কালচার (সংস্কৃতি) হিসেবে রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং আলাপ-আলোচনা, সম্পর্ক রাখবো। কিন্তু কোনো বিষয়ে আলোচনা করার জন্য কোনো রেফারির ভূমিকায় কোনো দলকে দিয়ে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) আহ্বান জানাবেন ইনডাইরেক্টলি, সেটা বোধ হয় সঠিক হচ্ছে না।’
*আওয়ামী লীগের হাত ধরে*
জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আপনারা যারা ১৯৭১ সালে উল্টা দিকে যাত্রা করেছিলেন, ১৯৪৭ সালে বিপরীত দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন, জাতীয় পার্টির হাত ধরে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সাহেবের সহচর হয়েছিলেন, আপনারা আবার যদি আওয়ামী লীগের হাত ধরে পুনরুত্থান চান, কী পরিণত হবে, আল্লাহ মালুম। আপনারা যা শুরু করেছেন তাতে করে উৎসাহিত হবে পতিত ফ্যাসিস্ট। তাতে উৎসাহিত হবে বাংলাদেশে অন্য যে কোনো রকমের অগণতান্ত্রিক শক্তি। কিন্তু সেজন্য যদি আপনারা বলতে চান যে, আপনারা খেতে পারবেন না, সেজন্য ভাড়া ভাতে ছাই ছিটিয়ে দিবেন। সেটা বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো গ্রহণ করবে না। সেই সুযোগ দেবে না।’
জামায়াতের উদ্দেশ্যে বিএনপি এ নেতা আরও বলেন, ‘আপনারা ঘি খেতে চান, খান। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথের এই ময়দানকে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আর উত্তপ্ত হতে দেব না। ঠিক। আপনারা বলেছেন ১১ তারিখ পর্যন্ত আল্টিমেটাম। আল্টিমেটাম কারা দিচ্ছেন সরকারকে? তো সরকার তো আপনাদের পক্ষে সুপারিশ দিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তো আপনারা যা চান, তাই দিয়েছে। সেজন্য আপনারা তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে তাই কথা বলছেন।’
*গণভোটের প্রয়োজন নেই*
দেশে গণভোটের কোনো প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই গণভোটের মধ্য দিয়ে আইন প্রণীত হয়ে যাবে। এই গণভোটটার মধ্য দিয়ে সংবিধান পরিবর্তিত হয়ে যাবে। কিন্তু একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা সংসদ সদস্যদের ওপরে এবং আগামী সংসদের ওপরে আরোপিত হবে। যে জনগণ চায় এই সংস্কার বাস্তবায়ন হোক অথবা চায় না।’ নির্বাচনের দিন ছাড়া গণভোটের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আগামী ১৩ নভেম্বর সারাদেশে আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘১৩ তারিখ (আগামী) বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি রায় (রায়ের তারিখ) ঘোষণা হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেদিন নাকি লকডাউন সারা বাংলাদেশে। মানুষ বলে না যে, পাগলের সুখ মনে মনে। এই এক বছরের ভেতরে কীভাবে আপনাদের মনে হলো যে, ফ্যাসিস্ট পতিত শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির পক্ষে বাংলাদেশে লড়া, আপনারা আহ্বান করবেন আর জনগণ সাড়া দেবে? যদি দুঃসাহস থাকে আপনারা আসেন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের কীভাবে আপ্যায়ন করে দেখব। আমরা তো চাই, আপনারা এসে বিচারের মুখোমুখি হোন।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। সভা সঞ্চালনা করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন।