alt

ঢাকা শহরে ছিনতাই প্রতিরোধে ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান

মোবাইল ও ব্যাগ নিরাপদ রাখতে রাজধানীবাসীকে পুলিশকে সহায়তার অনুরোধ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রাজধানীবাসীকে নিজের মোবাইল, পার্স বা ব্যাগ নিরাপদ রাখার মাধ্যমে পুলিশকে ছিনতাই প্রতিরোধে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য এসব সম্পদ নিজে নিরাপদ রাখতে জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, তিনি জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলস্বরূপ ছিনতাইয়ের ঘটনা কিছুটা কমেছে।

শেখ মো. সাজ্জাত আলী গত বুধবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। সভায় তিনি রাজধানী ঢাকার মধ্যে বেড়ে যাওয়া ছিনতাইয়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তার প্রতিরোধে ডিএমপির নেয়া পদক্ষেপের বিবরণ দেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, "আমরা আপনাদের সাহায্য করব। কিন্তু আপনারা নিজের মোবাইল, পার্স এবং ব্যাগ নিরাপদে রাখার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি এসব বিষয়ে সচেতন হন, তাহলে আপনি আমাদের সহযোগিতা করতে পারবেন।" এর মাধ্যমে তিনি জনগণকে তাদের ব্যক্তিগত সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং পুলিশকে ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সাজ্জাত আলী ছিনতাইয়ের মূল কারণ হিসেবে মাদকাসক্তির প্রতি নজর দেন। তিনি বলেন, “ইদানীং যে অপরাধটি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শঙ্কা সৃষ্টি করেছে, তা হলো ছিনতাই। এই অপরাধে জড়িত অধিকাংশই মাদকাসক্ত অল্প বয়সী ছেলেরা। ১৫ থেকে ২২ বছর বয়সী ছেলেরা মাদকে আসক্ত হয়ে এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ছিনতাইয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা।” ডিএমপি কমিশনার জানান, "বাসে বা প্রাইভেটকারে কেউ যখন মোবাইলে কথা বলেন, তখন ছিনতাইকারী তার মোবাইল নিয়ে দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের হাতেনাতে ধরা অনেক কঠিন কাজ, কারণ তারা সাধারণত খালি পায়ে বা সস্তা জুতো পরে থাকে, এবং তাদের দ্রুত পালানোর ক্ষমতা থাকে।"

সাজ্জাত আলী ঢাকাবাসীকে আরও বলেন, “আমরা দুঃখিত, কিন্তু আমাদের অফিসারদের কাছে বড় অস্ত্র থাকে, বুট পরা, ইউনিফর্ম পরা থাকে। কিন্তু ছিনতাইকারীরা অনেক দ্রুত দৌড়ে পালাতে পারে।” তাই তিনি ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ করেন, তারা যেন নিজের মোবাইল, পার্স বা ব্যাগ নিরাপদে রাখার জন্য সচেতন থাকেন।

ছিনতাই প্রতিরোধে গত এক সপ্তাহে পুলিশ পেট্রলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করেছে। ডিএমপি কমিশনার জানান, গত এক সপ্তাহে ছিনতাইয়ের ঘটনা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে এবং আশা করা হচ্ছে, পুলিশ আরও কার্যকরভাবে ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

এর আগে ২২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় ছিনতাই প্রতিরোধে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু করে ডিএমপি। অভিযানের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, ছিনতাইয়ের প্রবণতা না কমা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী ঢাকায় মানুষের সমস্যা ও বেকারত্বের কথা তুলে ধরেন এবং এই পরিস্থিতি পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, “ঢাকায় দুই থেকে আড়াই কোটি লোক বাস করছে, এর মধ্যে হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা বেশি। বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে, যার ফলে নানা সামাজিক সমস্যা পুলিশকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইদানীং ছোটখাটো দাবি আদায়ের জন্য কিছু গোষ্ঠী রাজপথে আন্দোলন শুরু করছে। তারা মনে করে, রাজপথ দখল করলে তাদের দাবিদাওয়া দ্রুত আদায় হবে, কিন্তু এর ফলে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়ছে।”

ঢাকার প্রধান সড়কগুলো যেমন মিরপুর রোড, এয়ারপোর্ট রোড এবং রামপুরা রোডের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ হলে পুরো শহর অচল হয়ে যায়।” এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধি পায় এবং পুলিশের জন্যও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

এ সময় ডিএমপি কমিশনার ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করেছেন, তারা যেন আন্দোলন ও দাবি আদায়ের জন্য রাজপথকে নয়, বরং খোলা মাঠ বা অডিটোরিয়াম ব্যবহার করে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “দাবির বিষয়ে সমস্যা সমাধান করতে হলে, সুষ্ঠু আলোচনা প্রয়োজন, যাতে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আরও ভঙ্গুর না করে ফেলি।”

ডিএমপির সদস্যদের প্রশিক্ষণের বিষয়েও তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমাদের পুলিশ সদস্যদের আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, যাতে তারা আরও দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।” বিশেষভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ সদস্যদের একযোগভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনার জানিয়ে দেন, ৫ আগস্টের পর ঢাকাবাসী পুলিশকর্মীদের নৈতিক মনোবল ভেঙে পড়ার বিষয়টি উপলব্ধি করেছে। তিনি বলেন, “যখন পুলিশ নিস্ক্রিয় থাকে, তখন তার ফলাফল কী হয়, তা ঢাকাবাসী মর্মে মর্মে বুঝেছে। আমরা আপনাদের সেবা দিতে চাই, কিন্তু ডিএমপি আপনাদের সহায়তা ছাড়া কাজ করতে পারবে না।”

তিনি ঢাকাবাসীকে তাদের সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানান এবং বলেন, “আপনারা আমাদের সেবা দেবেন এবং আমরা সবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে কাজ করবো। একসাথে কাজ করলে আমরা অবশ্যই ভালো থাকতে পারবো।”

এছাড়া, তিনি শহরের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উন্নতি অর্জনের আশা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, “আমরা সীমিত সংখ্যক পুলিশ নিয়ে কাজ করছি, তবে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে আমরা অবশ্যই সফল হবো।”

এভাবে ডিএমপি কমিশনার একদিকে ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে জনগণের সচেতনতা এবং সহায়তার গুরুত্বও ব্যাখ্যা করেছেন, যা ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করতে সহায়ক হবে।

ছবি

বদলগাছীতে প্রবাসীর বাড়িতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলা; আহত ২

ছবি

জামালপুরে ২২ হাজার পিস ইয়াবাসহ স্বামী-স্ত্রী গ্রেপ্তার

ছবি

সালিশ বৈঠকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

ছবি

মোহাম্মদপুরে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার ৩১, সারাদেশে ১৭২৬

কদমতলীতে ছুরিকাঘাতে আহত পোশাককর্মীর মৃত্যু

ছবি

কুমিল্লায় বিচারের নামে নারী নির্যাতন ইউপি মেম্বারের, ভিডিও ভাইরা

ছবি

যশোরে গুলি ছুড়ে পালানোর সময় দুই সন্ত্রাসীকে আটক করল জনতা

ছবি

মেয়েকে হত্যার দায়ে পিতার কারাদণ্ড

ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতের কন্যাকে দলবেঁধে ধর্ষণ: তিন আসামির কারাদণ্ড

ছবি

শিশুকে ঢাকা থেকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণ, কনস্টেবল কারাগারে

ছবি

রাজধানীর ১৫টির বেশি স্থানে ঝটিকা মিছিল, ১৩১ জন গ্রেপ্তার

ছবি

কবিরাজের কাছে জিন ছাড়াতে গিয়ে গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার

ছবি

চোলাই মদ বিক্রেতা গ্রেপ্তার

ছবি

৯০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের কর্মকর্তাসহ ৬ জনের কারাদণ্ড

ছবি

রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৪

ছবি

বিইউপি ছাত্রীকে ধর্ষণ: প্রধান আসামি সোহেল তিনদিনের রিমান্ডে

ছবি

পর্নো ভিডিও তৈরির অভিযোগে যুগল গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা

ছবি

চাঁদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্য আটক

ছবি

বেগমগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক কারবারী গ্রেপ্তার

পণ্য পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ, বেনাপোলের ৩ কর্মকর্তা বরখাস্ত

ছবি

মালিবাগে বোরকা পরে জুয়েলারি দোকানে চুরির ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার

ছবি

‘দুর্নীতি’: বেনাপোল কাস্টমসের সেই কর্মকর্তা বরখাস্ত

‘অবৈধ’ সম্পদ: সাবের চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের চার মামলা

ছবি

রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

ছবি

স্ত্রীকে হত্যা: লাশ ডিপ ফ্রিজে, স্বামী গ্রেপ্তার

ছবি

বাগেরহাটে একদিনের ব্যবধানে যুবদল নেতাসহ দুই খুন, রাজমিস্ত্রির মৃতদেহ উদ্ধার

সখীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত বিএনপি নেতা পলাতক

ছবি

মেঘনা ও পদ্মায় বিশেষ অভিযানে ৪৫ জেলে আটক

ছবি

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা,পুলিশ বলছে কিছু জানেনা

ছবি

দুর্নীতির মামলায় আসাদুজ্জামান নূরের জামিন নাকচ

ছবি

গোমতী সেতুর টোলের কার্যাদেশে ‘অনিয়ম’: হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

ছবি

হিরো আলম হত্যাচেষ্টা মামলা: ম্যাক্স অভির জামিন আবেদন নাকচ

ছবি

ছাত্রীনিবাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে আটকে মারধরের ঘটনায় পরিচালক রাজিয়া বেগমের জামিন

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় মদসহ ১১ বাংলাদেশি আটক

tab

ঢাকা শহরে ছিনতাই প্রতিরোধে ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান

মোবাইল ও ব্যাগ নিরাপদ রাখতে রাজধানীবাসীকে পুলিশকে সহায়তার অনুরোধ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রাজধানীবাসীকে নিজের মোবাইল, পার্স বা ব্যাগ নিরাপদ রাখার মাধ্যমে পুলিশকে ছিনতাই প্রতিরোধে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য এসব সম্পদ নিজে নিরাপদ রাখতে জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, তিনি জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলস্বরূপ ছিনতাইয়ের ঘটনা কিছুটা কমেছে।

শেখ মো. সাজ্জাত আলী গত বুধবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। সভায় তিনি রাজধানী ঢাকার মধ্যে বেড়ে যাওয়া ছিনতাইয়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তার প্রতিরোধে ডিএমপির নেয়া পদক্ষেপের বিবরণ দেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, "আমরা আপনাদের সাহায্য করব। কিন্তু আপনারা নিজের মোবাইল, পার্স এবং ব্যাগ নিরাপদে রাখার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি এসব বিষয়ে সচেতন হন, তাহলে আপনি আমাদের সহযোগিতা করতে পারবেন।" এর মাধ্যমে তিনি জনগণকে তাদের ব্যক্তিগত সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং পুলিশকে ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সাজ্জাত আলী ছিনতাইয়ের মূল কারণ হিসেবে মাদকাসক্তির প্রতি নজর দেন। তিনি বলেন, “ইদানীং যে অপরাধটি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শঙ্কা সৃষ্টি করেছে, তা হলো ছিনতাই। এই অপরাধে জড়িত অধিকাংশই মাদকাসক্ত অল্প বয়সী ছেলেরা। ১৫ থেকে ২২ বছর বয়সী ছেলেরা মাদকে আসক্ত হয়ে এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ছিনতাইয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা।” ডিএমপি কমিশনার জানান, "বাসে বা প্রাইভেটকারে কেউ যখন মোবাইলে কথা বলেন, তখন ছিনতাইকারী তার মোবাইল নিয়ে দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের হাতেনাতে ধরা অনেক কঠিন কাজ, কারণ তারা সাধারণত খালি পায়ে বা সস্তা জুতো পরে থাকে, এবং তাদের দ্রুত পালানোর ক্ষমতা থাকে।"

সাজ্জাত আলী ঢাকাবাসীকে আরও বলেন, “আমরা দুঃখিত, কিন্তু আমাদের অফিসারদের কাছে বড় অস্ত্র থাকে, বুট পরা, ইউনিফর্ম পরা থাকে। কিন্তু ছিনতাইকারীরা অনেক দ্রুত দৌড়ে পালাতে পারে।” তাই তিনি ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ করেন, তারা যেন নিজের মোবাইল, পার্স বা ব্যাগ নিরাপদে রাখার জন্য সচেতন থাকেন।

ছিনতাই প্রতিরোধে গত এক সপ্তাহে পুলিশ পেট্রলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করেছে। ডিএমপি কমিশনার জানান, গত এক সপ্তাহে ছিনতাইয়ের ঘটনা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে এবং আশা করা হচ্ছে, পুলিশ আরও কার্যকরভাবে ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

এর আগে ২২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় ছিনতাই প্রতিরোধে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু করে ডিএমপি। অভিযানের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, ছিনতাইয়ের প্রবণতা না কমা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী ঢাকায় মানুষের সমস্যা ও বেকারত্বের কথা তুলে ধরেন এবং এই পরিস্থিতি পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, “ঢাকায় দুই থেকে আড়াই কোটি লোক বাস করছে, এর মধ্যে হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা বেশি। বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে, যার ফলে নানা সামাজিক সমস্যা পুলিশকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইদানীং ছোটখাটো দাবি আদায়ের জন্য কিছু গোষ্ঠী রাজপথে আন্দোলন শুরু করছে। তারা মনে করে, রাজপথ দখল করলে তাদের দাবিদাওয়া দ্রুত আদায় হবে, কিন্তু এর ফলে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়ছে।”

ঢাকার প্রধান সড়কগুলো যেমন মিরপুর রোড, এয়ারপোর্ট রোড এবং রামপুরা রোডের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ হলে পুরো শহর অচল হয়ে যায়।” এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধি পায় এবং পুলিশের জন্যও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

এ সময় ডিএমপি কমিশনার ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করেছেন, তারা যেন আন্দোলন ও দাবি আদায়ের জন্য রাজপথকে নয়, বরং খোলা মাঠ বা অডিটোরিয়াম ব্যবহার করে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “দাবির বিষয়ে সমস্যা সমাধান করতে হলে, সুষ্ঠু আলোচনা প্রয়োজন, যাতে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আরও ভঙ্গুর না করে ফেলি।”

ডিএমপির সদস্যদের প্রশিক্ষণের বিষয়েও তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমাদের পুলিশ সদস্যদের আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, যাতে তারা আরও দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।” বিশেষভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ সদস্যদের একযোগভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনার জানিয়ে দেন, ৫ আগস্টের পর ঢাকাবাসী পুলিশকর্মীদের নৈতিক মনোবল ভেঙে পড়ার বিষয়টি উপলব্ধি করেছে। তিনি বলেন, “যখন পুলিশ নিস্ক্রিয় থাকে, তখন তার ফলাফল কী হয়, তা ঢাকাবাসী মর্মে মর্মে বুঝেছে। আমরা আপনাদের সেবা দিতে চাই, কিন্তু ডিএমপি আপনাদের সহায়তা ছাড়া কাজ করতে পারবে না।”

তিনি ঢাকাবাসীকে তাদের সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানান এবং বলেন, “আপনারা আমাদের সেবা দেবেন এবং আমরা সবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে কাজ করবো। একসাথে কাজ করলে আমরা অবশ্যই ভালো থাকতে পারবো।”

এছাড়া, তিনি শহরের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উন্নতি অর্জনের আশা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, “আমরা সীমিত সংখ্যক পুলিশ নিয়ে কাজ করছি, তবে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে আমরা অবশ্যই সফল হবো।”

এভাবে ডিএমপি কমিশনার একদিকে ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে জনগণের সচেতনতা এবং সহায়তার গুরুত্বও ব্যাখ্যা করেছেন, যা ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করতে সহায়ক হবে।

back to top