স্ত্রী হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত নজরুল ইসলাম -সংবাদ
সন্দেহ ও সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার ভয় থেকে স্ত্রীকে হত্যা: ডিবি ডিসি
নজরুলের সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তানদের মনোমালিন্য চরম পর্যায়ে ছিল
স্ত্রী ও তিন মেয়েকে বাসায় আটকে রেখে বাইরে থেকে দরজায় তালা ঝুলিয়ে রাখা হতো: পুলিশ
সন্দেহ ও সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার ভয় থেকে স্বামী তার স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ বাসার ডিপ ফ্রিজে রেখে পালিয়েছে। রাজধানীর কলাবাগানে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার, (১৫ অক্টোবর ২০২৫) ডিবির ডিসি তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃত নজরুল ইসলাম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার নেপথ্য কাহিনী স্বীকার করেছে বলে ডিবি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ডিবি কর্মকতা জানান, গত ১৪ অক্টোবর রাত ৯টা ১০মিনিটের দিকে বংশাল থানার নবাবপুর রোড এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন অভিযুক্ত নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১২ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে নজরুল ইসলাম কলাবাগান ১ম লেনে অবস্থিত ২৪ নম্বর বাসার ভাড়াকৃত ৬/বি ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখে ফ্ল্যাটের দরজার তিনটি লকের মধ্যে দুইটি খোলা।
স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের (৪২) প্রতি তার র্দীর্ঘদিনের সন্দেহ, সে পর পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও তার সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার ভয়সহ নানা সন্দেহের কারণে স্বামী উত্তেজিত হয়ে পড়ে। উত্তেজিত অবস্থায় রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত স্ত্রীর মাথায় ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।
হত্যার পর লাশ গামছা দিয়ে বেঁধে, বিছানার চাদর ওড়না দিয়ে মুড়িয়ে বাসার ফ্রিজে লুকিয়ে রাখে। এরপর রক্তমাখা তোষক উল্টিয়ে, বিছানার মেঝে পরিষ্কার করে, নিজের জামা-কাপড় ধুয়ে, আলামত গোপন করার চেষ্টা করে।
বড় মেয়ে নাজনীন আক্তারকে জানায়, তাদের মা অন্য পুরুষের সঙ্গে পালিয়েছে। এ সময় নাজনীন আক্তার ঘরের দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পায়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত নজরুল তার দুই মেয়েকে নানার বাড়ি রেখে আসার কথা বলে রাজধানীর আদাবরে তাদের ফুফুর বাসায় রেখে নিজের প্রাইভেটকারযোগে পালিয়ে যায়।
ঘটনা নিয়ে সন্দেহ হলে স্ত্রীর (ভিকটিম) ছোট ভাই নাঈম হোসেন ও ভিকটিমের দুই মেয়ে গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কলাবাগান থানায় গিয়ে অভিযোগ করে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলাবাগান থানা পুলিশ কলাবাগানের ওই ফ্ল্যাট বাসায় গিয়ে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে খোঁজাখুঁজি করে। এক পর্যায়ে ঘরের ডিপ ফ্রিজ খুলে ফ্রিজের ওপর থেকে মাছ-মাংস সরালে ফ্রিজের ভেতর চাদর দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় ভিকটিম তাসলিমা আক্তারের মৃতদেহ দেখতে পায় পুলিশ।
পরবর্তীতে পরিবারের লোকজনের উপস্থিতি ও সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ ডিপ ফ্রিজের ভেতর থেকে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার করে। এরপর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় ভিকটিম তাসলিমা আক্তারের ছোট ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলা দায়ের করার পর কলাবাগান
থানা পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিম তাসলিমার স্বামী নজরুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর গতকাল মঙ্গলবার রাতে নবাবপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
স্বামী নজরুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার নিজ বাসার ওয়্যারড্রব থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম ও তাসলিমা আক্তার দম্পতির কলহ দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। নজরুল ইসলাম সন্দেহের কারণে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো।
এমনকি সে ভয় পেত, স্ত্রী যদি তার সম্পত্তি ও ব্যাংকে রাখা অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যায়। এই সন্দেহ থেকেই হত্যাকা- সংঘটিত হয় বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। হত্যাকা-ের সময় তাসলিমার তিন মেয়ে বাসায় ছিল। তাদের মধ্যে দুইজন বড় ও একজনের বয়স ৫ বছর।
পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে, গ্রেপ্তারকৃত নজরুল স্ত্রীকে নানাভাবে সন্দেহ করতো। এজন্য অন্য কারও সঙ্গে যাতে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য স্ত্রী ও মেয়েকে মোবাইল এবং অন্যান্য যোগাযোগ থেকে বিরত রাখত।
এমনকি ভাড়াকৃত বাসার প্রধান দরজায় একাধিক তালা লাগিয়ে চাবি আসামি নিজের কাছে রাখত। আসামি কোনো সময় বাহিরে গেলে বাসার দরজা বাহির থেকে লক করে চলে যেত। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে আসামির সহিত তার স্ত্রী এবং সন্তানদের মনোমালিন্য চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
কলাবাগান থানার সাব-ইন্সপেক্টর আতিকুর রহমান জানান, নজরুলের ঢাকার আদাবরে একটি ফ্ল্যাট ছিল। ওই ফ্ল্যাট বিক্রি করে টাকা একটি প্রাইভেট ব্যাংকে রাখছে। সে টাকার মাসিক লভ্যাংশ তুলে খরচ করতো। এর আগে সে কাপড়ের ব্যবসা করত।
গত জুন মাসে সে কলাবাগানে বাসা ভাড়া নিয়েছে। বাসা ভাড়া নেয়ার পর নজরুল দুই মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে। তারা যাতে বাসা থেকে বের হতে না পারে সেজন্য বাসার প্রধান দরজার সামনে তালা লাগিয়ে সে বের হতো। এতে তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক শিশু বাসা থেকে দিনভর বের হতে পারতো না। ঘটনার আরও নেপথ্য কাহিনী উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছেন।
স্ত্রী হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত নজরুল ইসলাম -সংবাদ
বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
সন্দেহ ও সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার ভয় থেকে স্ত্রীকে হত্যা: ডিবি ডিসি
নজরুলের সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তানদের মনোমালিন্য চরম পর্যায়ে ছিল
স্ত্রী ও তিন মেয়েকে বাসায় আটকে রেখে বাইরে থেকে দরজায় তালা ঝুলিয়ে রাখা হতো: পুলিশ
সন্দেহ ও সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার ভয় থেকে স্বামী তার স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ বাসার ডিপ ফ্রিজে রেখে পালিয়েছে। রাজধানীর কলাবাগানে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার, (১৫ অক্টোবর ২০২৫) ডিবির ডিসি তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃত নজরুল ইসলাম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার নেপথ্য কাহিনী স্বীকার করেছে বলে ডিবি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ডিবি কর্মকতা জানান, গত ১৪ অক্টোবর রাত ৯টা ১০মিনিটের দিকে বংশাল থানার নবাবপুর রোড এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন অভিযুক্ত নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১২ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে নজরুল ইসলাম কলাবাগান ১ম লেনে অবস্থিত ২৪ নম্বর বাসার ভাড়াকৃত ৬/বি ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখে ফ্ল্যাটের দরজার তিনটি লকের মধ্যে দুইটি খোলা।
স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের (৪২) প্রতি তার র্দীর্ঘদিনের সন্দেহ, সে পর পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও তার সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার ভয়সহ নানা সন্দেহের কারণে স্বামী উত্তেজিত হয়ে পড়ে। উত্তেজিত অবস্থায় রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত স্ত্রীর মাথায় ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।
হত্যার পর লাশ গামছা দিয়ে বেঁধে, বিছানার চাদর ওড়না দিয়ে মুড়িয়ে বাসার ফ্রিজে লুকিয়ে রাখে। এরপর রক্তমাখা তোষক উল্টিয়ে, বিছানার মেঝে পরিষ্কার করে, নিজের জামা-কাপড় ধুয়ে, আলামত গোপন করার চেষ্টা করে।
বড় মেয়ে নাজনীন আক্তারকে জানায়, তাদের মা অন্য পুরুষের সঙ্গে পালিয়েছে। এ সময় নাজনীন আক্তার ঘরের দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পায়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত নজরুল তার দুই মেয়েকে নানার বাড়ি রেখে আসার কথা বলে রাজধানীর আদাবরে তাদের ফুফুর বাসায় রেখে নিজের প্রাইভেটকারযোগে পালিয়ে যায়।
ঘটনা নিয়ে সন্দেহ হলে স্ত্রীর (ভিকটিম) ছোট ভাই নাঈম হোসেন ও ভিকটিমের দুই মেয়ে গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কলাবাগান থানায় গিয়ে অভিযোগ করে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলাবাগান থানা পুলিশ কলাবাগানের ওই ফ্ল্যাট বাসায় গিয়ে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে খোঁজাখুঁজি করে। এক পর্যায়ে ঘরের ডিপ ফ্রিজ খুলে ফ্রিজের ওপর থেকে মাছ-মাংস সরালে ফ্রিজের ভেতর চাদর দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় ভিকটিম তাসলিমা আক্তারের মৃতদেহ দেখতে পায় পুলিশ।
পরবর্তীতে পরিবারের লোকজনের উপস্থিতি ও সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ ডিপ ফ্রিজের ভেতর থেকে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার করে। এরপর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় ভিকটিম তাসলিমা আক্তারের ছোট ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলা দায়ের করার পর কলাবাগান
থানা পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিম তাসলিমার স্বামী নজরুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর গতকাল মঙ্গলবার রাতে নবাবপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
স্বামী নজরুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার নিজ বাসার ওয়্যারড্রব থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম ও তাসলিমা আক্তার দম্পতির কলহ দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। নজরুল ইসলাম সন্দেহের কারণে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো।
এমনকি সে ভয় পেত, স্ত্রী যদি তার সম্পত্তি ও ব্যাংকে রাখা অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যায়। এই সন্দেহ থেকেই হত্যাকা- সংঘটিত হয় বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। হত্যাকা-ের সময় তাসলিমার তিন মেয়ে বাসায় ছিল। তাদের মধ্যে দুইজন বড় ও একজনের বয়স ৫ বছর।
পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে, গ্রেপ্তারকৃত নজরুল স্ত্রীকে নানাভাবে সন্দেহ করতো। এজন্য অন্য কারও সঙ্গে যাতে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য স্ত্রী ও মেয়েকে মোবাইল এবং অন্যান্য যোগাযোগ থেকে বিরত রাখত।
এমনকি ভাড়াকৃত বাসার প্রধান দরজায় একাধিক তালা লাগিয়ে চাবি আসামি নিজের কাছে রাখত। আসামি কোনো সময় বাহিরে গেলে বাসার দরজা বাহির থেকে লক করে চলে যেত। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে আসামির সহিত তার স্ত্রী এবং সন্তানদের মনোমালিন্য চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
কলাবাগান থানার সাব-ইন্সপেক্টর আতিকুর রহমান জানান, নজরুলের ঢাকার আদাবরে একটি ফ্ল্যাট ছিল। ওই ফ্ল্যাট বিক্রি করে টাকা একটি প্রাইভেট ব্যাংকে রাখছে। সে টাকার মাসিক লভ্যাংশ তুলে খরচ করতো। এর আগে সে কাপড়ের ব্যবসা করত।
গত জুন মাসে সে কলাবাগানে বাসা ভাড়া নিয়েছে। বাসা ভাড়া নেয়ার পর নজরুল দুই মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে। তারা যাতে বাসা থেকে বের হতে না পারে সেজন্য বাসার প্রধান দরজার সামনে তালা লাগিয়ে সে বের হতো। এতে তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক শিশু বাসা থেকে দিনভর বের হতে পারতো না। ঘটনার আরও নেপথ্য কাহিনী উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছেন।