alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের দুর্নীতির তদন্তে দুদক

প্রাথমিক অনুসন্ধানে রাজধানীতে ৩ টি বাড়ি, সাতারকুলে হাউজিং প্রকল্পে ৮৬ টি প্লটের মালিক

সাইফ বাবলু: : রোববার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন । ফাইল ছবি

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারী বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। একই সঙ্গে নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের উৎস অনুসন্ধান চলছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে মোশাররফ হোসেনের বিপুল পরিমান সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।

দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্রাচুইিটি ফান্ড গঠন করে শেয়ার বাজারে কোটি কোটি টাকার লেনদেন এবং দেশের বাইরে বিপুল পরিমান অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি হাইকোর্ট মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কে নির্দেশ দিয়েছে।

২০২০ সালে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স নামে একটি বেসরকারী বিমা প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করে আলোচনায় আসেন ড. এম মোশাররফ হোসেন। পরে এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকেও অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন মোশাররফ হোসেন। পরে তাদের অভিযোগ তুলে নিতেও বাধ্য করান। যদিও দুদক স্বপ্রণোতিদ হয়ে সেই অভিযোগের অনুসন্ধান করতে গিয়ে মোশাররফ হোসেনের আরও কেলেঙ্কারী ও দুর্নীতির অভিযোগ পায়।

দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল জানান, ডেল্ট লাইফ ইন্সুওরেন্সের এক কর্মকর্তার কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার বিষটি তারা অনুসন্ধান করছেন। ঘুষ চাওয়ার যে অডিও রেকর্ডটি ফাঁস হয়েছে সেটির বিষয়ে তারা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারে (এমটিএমসি)একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এমটি এমসির প্রতিবেদনের পর তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, মোশরাফ হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের আরেকটি অনুসন্ধান করছে দুদকের অন্য আরেকটি দল। ওই দলের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের এপ্রিলে সরকারী ও বেসরকারী বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো নজরদারি করার প্রতিষ্ঠান

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান ড. মোশাররফ হোসেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠানটির শীষ পদে অথাৎ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরই মোশাররফ হোসেন অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

২০২০ সালে ডেল্টা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদ ওই প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী (সিইও) পদে একজনকে নিয়োগের অনুমোদন দেয়। নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা পর্যদের সুপারিশ অনুমোদন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ ওই নিয়োগের বিপরীতে ডেল্টা লাইফের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা পল্লব ভৌমিকের কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করেন মোশারেফ হোসেন। ঘুষ না দেওয়ায় অনুমোদন আটকে দেন মোশাররফ হোসেন।

এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে মোশাররফ হোসেনের অডিও ফাঁস করে ডেল্টা লাইফ। পরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মোশারফ হোসেন টাকা চাওয়ার কথা ‘স্বীকার করলেও সেটি ঘুষ’ হিসেবে চাননি বলে দাবী করেন। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন তৈরী হলে মোশারফ হোসেন অভিযোগকারী পল্লব ভৌমিককে আটকে রেখে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য একটি আবেদনে স্বাক্ষর করান। তাদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঘুষের জন্য টাকা চাননি বলেও বলাতে বাধ্য করান। এসব ঘটনায় জোড়পূর্বক অভিযোগ প্রত্যাহারে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়। এরপর তদন্তের জন্য দুদককে দির্শে দেয় হাইকোর্ট।

মোশারাফ হোসেনের ঘুষ কেলেঙ্কারীর অভিযোগের মধ্যে আরেকটি অভিযোগ আসে হাইকোর্টে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে থেকে লাভস এন্ড লাইফ অর্গানিকস লিমিটেড এবং গুলশান ভ্যালি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে দুটি বেনামী প্রতিষ্ঠানের নামে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্রাচাউটি ফান্ড গঠনের নামে কোটি টাকা লেনদেন এবং পাচারের অভিযোগ উঠে মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে হাইকোর্ট এটি তদন্তের জন্য দুদক এবং বিএফআইইউকে নির্দেশ দেয়।

সূত্র জানিয়েছে, মোশারফ ২০১৭ সালের ৯ মে লাভস এন্ড লাইভ অর্গানিকস লিমিটেড (এলএলওএল) নামে একটি কোম্পানী রেজিঃ অব জয়েন স্টক কোম্পানীতে নিবন্ধন করান। ওই কোম্পানীর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক তিনি নিজে। তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়াক কোম্পানীর পরিচালক। একইভাবে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারী গুলশান ভ্যালি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (জিভিএআইএল) নামেআরেকটি কোম্পানীও করেন। ওই প্রতিষ্ঠানেরও তিনি ব্যাবস্থাপনা পরিচালক তিনি এবং স্ত্রী পরিচালক।

এ দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪ টি ফান্ড গঠন করে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেন। ৪ টি ফান্ডের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান হিসেবে মোশাররফ হোসেন নিযুক্ত আছেন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষের আইন অনুযায়ী তিনি এসব পদে থাকতে পারেন না। এ দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ৪ টি ফান্ডে ৪ কোটি টাকারও বেশি তিনি বিনিয়োগ করেছেন শেয়ার মার্কেটে। তার এ বিপুল অর্থের উৎস অজানা। তবে ট্যাক্স ফাইলে তিনি কোম্পানীর কার্যক্রম শুরু করেননি বলে জানিয়েছেন।

২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলএলওএল এমপ্লয়ীজ গ্রাইইটি ফান্ডের বিও একাউন্টে ১ কোটি টকার উপরে এবং এমপ্লয়ীজ কন্ট্রিবিউটরী প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিও একাউন্ডে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার উপরে শেয়ার ছিলো। ২ বছরে স্টক মার্কেটে পোর্টফলিওর মার্কেট ভ্যালু ছিলো ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। একইভাবে জিবিএ আইএল এমপ্লয়ীজ বিও একাউন্ডে ৭০ লাখ টাকা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিও একাউন্টে ৯৭ লাখ টাকার উপরে শেয়ার ছিলো। সব মিলিয়ে ৪ টি ফান্ডে শেয়ার মার্কেটে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার উপর বিনিয়োগ ছিলো।

মোশাররফ হোসেনের যত সম্পদ:

রাজধানীর কাফরুল, শেওড়াপাড়া, ধানমন্ডি এলাকায় বিলাসবহুল ৩ টি বাড়ির সন্ধান মিলেছে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে। রাজধানীর সাতারকুলে মাকাম হাউজিং নামে বিশাল এলাকা জুড়ে হাউজিং কোম্পানী রয়েছে। এ প্রকল্পে কোয়ান্টাম প্লাস ফাউন্ডেশনের নামে ৮৬ টি প্লটের মালিক মোশাররফ হোসেন। কোয়ন্টাম প্লাস ফ্উান্ডেশনের আওতায় কোয়ান্টাম প্লাস স্কুল এন্ড কলেজ, কোয়ান্টাম দুগ্ধ খামার, কোয়ন্টাম বৃত্তি প্রকল্প, ফ্যামিলি বাজার নামে বিশাল এক মার্কেট রয়েছে।

দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে মোশাররফ হোসেনের নিয়ন্ত্রণাধীন। এ দুটি প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট স্টক থেকে লাইলেন্স নেওয়া। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমান অর্থ বিনিয়োগ করেছেন মোশাররফ হোসেন। মাকাম হাউজিং এর ভিতরে কোয়ন্টাম স্কুল এন্ড কলেজ নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ৫০ বিঘা জমির উপর গড়ে তুলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শুধু মাত্র অনলাইন থেকে নামের ছাড়পত্র নিয়ে রেখেছে কোয়ন্টাম প্লাস ফাউন্ডেশন। যা নিবন্ধনের কোন বৈধতা হিসাবে গৃহীত হয় না। তার হাতে গড়া এই কথিত ফাউন্ডেশনের নামে তৈরি করা বিভিন্ন প্রকল্প দেখা শুনার দায়িত্ব পালন করেন নিজ এলাকার কতিপয় লোকজন। যারা নিজেদেরকে মোশাররফ হোসেনের আত্নীয় বলে দাবি করেন।

ছবি

গণহত্যা মামলায় মামুন-জিয়াউলসহ আরও ৬ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখানো হলো

ছবি

জমি নিয়ে বিরোধ: মাদারীপুরে ২ বোনকে লাঠিপেটা, ভিডিও ভাইরাল

ছবি

উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিপণ, নজরদারিতে শিশুটির বাবা

ছবি

প্রতিবেশীর সাথে মুরগী নিয়ে ঝগড়া, সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ২

ছবি

রাজধানীর আজিমপুরে ডাকাতি মালামালের সঙ্গে দুধের শিশুকেও নিয়ে যায় ডাকাতরা

সূত্রাপুরে সাংবাদিকের বাসার গ্রিল কেটে ২০ ভরি স্বর্ণ ও আড়াই লাখ টাকা চুরি

ঝিকরগাছায় যুবদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা: ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৪

হাত খরচের টাকার জন্য মাকে খুন, ছেলে গ্রেপ্তার

ছবি

বেক্সিমকো ফার্মায় রিসিভার নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত

ছবি

শরীয়তপুরে সড়কের পাশে পড়ে থাকা দশটি ব্যাগ থেকে ১২৩টি ককটেল বোমা উদ্ধার

ছবি

কেন শিশু মুনতাহাকে হত্যা করে তার গৃহশিক্ষিকা?

ছবি

ঝিকরগাছায় দলীয় প্রতিপক্ষের হাতে যুবদল কর্মী খুন

জামালপুরে সেনা সদস্যের স্ত্রী ধর্ষণসহ হত্যা মামলার পলাতক আসামী গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৪

আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ী ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ড্রেজিংয়ের নামে ৭০০ কোটি টাকা লোপাট

ছবি

আদালতে আমুর আইনজীবীকে পিটুনি

সিলেটে ভারতীয় বৃহৎ চোরাই চালান জব্দ

নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্রী হত্যায় যুবকের যাবজ্জীবন

যশোরে ‘বাজার কেন্দ্রীক বিরোধে’ খুন হন ব্যবসায়ী জামায়াত নেতা সজল

হত্যা মামলায় কারাগারে যশোর নগর বিএনপির সভাপতি মুল্লুক চাঁদ

না’গঞ্জে নারী পোশাক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা, পুলিশ বলছে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’

ছবি

উখিয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ৩ ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড

ছবি

গান বাংলার চেয়ারম্যান তাপস গ্রেপ্তার

যশোরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ট্রাক হেলপার খুন

ছিনতাই ও চুরি হওয়া ৪৫টি মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার

ছবি

সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির ৫ দিনের রিমান্ডে

চৌগাছায় ইউপি চেয়ারম্যান আশা হত্যাকান্ডের ২২ বছর পর তার ভাই খুন

ছবি

মিরপুরের সাবেক ডিসি জসিম গ্রেপ্তার

রাজশাহী নগরীতে যুবলীগ কর্মীকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা

যশোরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ দেশ ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

খাগড়াছড়ি বিজিবি’র অভিযানে পানছড়ি সীমান্তে ভারতীয় মালামাল উদ্ধার

ছবি

খুলনায় ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার দায়ে ২১ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

রংপুরে কিশোরকে চোরের অপবাদে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল

ছবি

লাকী যুগের অবসানের পর প্রথম সভায় বসছে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন

সিলেটে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

শরীয়তপুরে জমিসংক্রান্ত জেরে জামায়াত নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

চালের সাইলোতে গম, নেপথ্যে ‘দুর্নীতি’

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের দুর্নীতির তদন্তে দুদক

প্রাথমিক অনুসন্ধানে রাজধানীতে ৩ টি বাড়ি, সাতারকুলে হাউজিং প্রকল্পে ৮৬ টি প্লটের মালিক

সাইফ বাবলু:

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন । ফাইল ছবি

রোববার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারী বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। একই সঙ্গে নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের উৎস অনুসন্ধান চলছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে মোশাররফ হোসেনের বিপুল পরিমান সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।

দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্রাচুইিটি ফান্ড গঠন করে শেয়ার বাজারে কোটি কোটি টাকার লেনদেন এবং দেশের বাইরে বিপুল পরিমান অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি হাইকোর্ট মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কে নির্দেশ দিয়েছে।

২০২০ সালে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স নামে একটি বেসরকারী বিমা প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করে আলোচনায় আসেন ড. এম মোশাররফ হোসেন। পরে এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকেও অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন মোশাররফ হোসেন। পরে তাদের অভিযোগ তুলে নিতেও বাধ্য করান। যদিও দুদক স্বপ্রণোতিদ হয়ে সেই অভিযোগের অনুসন্ধান করতে গিয়ে মোশাররফ হোসেনের আরও কেলেঙ্কারী ও দুর্নীতির অভিযোগ পায়।

দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল জানান, ডেল্ট লাইফ ইন্সুওরেন্সের এক কর্মকর্তার কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার বিষটি তারা অনুসন্ধান করছেন। ঘুষ চাওয়ার যে অডিও রেকর্ডটি ফাঁস হয়েছে সেটির বিষয়ে তারা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারে (এমটিএমসি)একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এমটি এমসির প্রতিবেদনের পর তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, মোশরাফ হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের আরেকটি অনুসন্ধান করছে দুদকের অন্য আরেকটি দল। ওই দলের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের এপ্রিলে সরকারী ও বেসরকারী বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো নজরদারি করার প্রতিষ্ঠান

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান ড. মোশাররফ হোসেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠানটির শীষ পদে অথাৎ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরই মোশাররফ হোসেন অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

২০২০ সালে ডেল্টা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদ ওই প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী (সিইও) পদে একজনকে নিয়োগের অনুমোদন দেয়। নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা পর্যদের সুপারিশ অনুমোদন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ ওই নিয়োগের বিপরীতে ডেল্টা লাইফের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা পল্লব ভৌমিকের কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করেন মোশারেফ হোসেন। ঘুষ না দেওয়ায় অনুমোদন আটকে দেন মোশাররফ হোসেন।

এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে মোশাররফ হোসেনের অডিও ফাঁস করে ডেল্টা লাইফ। পরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মোশারফ হোসেন টাকা চাওয়ার কথা ‘স্বীকার করলেও সেটি ঘুষ’ হিসেবে চাননি বলে দাবী করেন। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন তৈরী হলে মোশারফ হোসেন অভিযোগকারী পল্লব ভৌমিককে আটকে রেখে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য একটি আবেদনে স্বাক্ষর করান। তাদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঘুষের জন্য টাকা চাননি বলেও বলাতে বাধ্য করান। এসব ঘটনায় জোড়পূর্বক অভিযোগ প্রত্যাহারে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়। এরপর তদন্তের জন্য দুদককে দির্শে দেয় হাইকোর্ট।

মোশারাফ হোসেনের ঘুষ কেলেঙ্কারীর অভিযোগের মধ্যে আরেকটি অভিযোগ আসে হাইকোর্টে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে থেকে লাভস এন্ড লাইফ অর্গানিকস লিমিটেড এবং গুলশান ভ্যালি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে দুটি বেনামী প্রতিষ্ঠানের নামে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্রাচাউটি ফান্ড গঠনের নামে কোটি টাকা লেনদেন এবং পাচারের অভিযোগ উঠে মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে হাইকোর্ট এটি তদন্তের জন্য দুদক এবং বিএফআইইউকে নির্দেশ দেয়।

সূত্র জানিয়েছে, মোশারফ ২০১৭ সালের ৯ মে লাভস এন্ড লাইভ অর্গানিকস লিমিটেড (এলএলওএল) নামে একটি কোম্পানী রেজিঃ অব জয়েন স্টক কোম্পানীতে নিবন্ধন করান। ওই কোম্পানীর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক তিনি নিজে। তার স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়াক কোম্পানীর পরিচালক। একইভাবে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারী গুলশান ভ্যালি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (জিভিএআইএল) নামেআরেকটি কোম্পানীও করেন। ওই প্রতিষ্ঠানেরও তিনি ব্যাবস্থাপনা পরিচালক তিনি এবং স্ত্রী পরিচালক।

এ দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪ টি ফান্ড গঠন করে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেন। ৪ টি ফান্ডের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান হিসেবে মোশাররফ হোসেন নিযুক্ত আছেন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষের আইন অনুযায়ী তিনি এসব পদে থাকতে পারেন না। এ দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ৪ টি ফান্ডে ৪ কোটি টাকারও বেশি তিনি বিনিয়োগ করেছেন শেয়ার মার্কেটে। তার এ বিপুল অর্থের উৎস অজানা। তবে ট্যাক্স ফাইলে তিনি কোম্পানীর কার্যক্রম শুরু করেননি বলে জানিয়েছেন।

২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলএলওএল এমপ্লয়ীজ গ্রাইইটি ফান্ডের বিও একাউন্টে ১ কোটি টকার উপরে এবং এমপ্লয়ীজ কন্ট্রিবিউটরী প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিও একাউন্ডে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার উপরে শেয়ার ছিলো। ২ বছরে স্টক মার্কেটে পোর্টফলিওর মার্কেট ভ্যালু ছিলো ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। একইভাবে জিবিএ আইএল এমপ্লয়ীজ বিও একাউন্ডে ৭০ লাখ টাকা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিও একাউন্টে ৯৭ লাখ টাকার উপরে শেয়ার ছিলো। সব মিলিয়ে ৪ টি ফান্ডে শেয়ার মার্কেটে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার উপর বিনিয়োগ ছিলো।

মোশাররফ হোসেনের যত সম্পদ:

রাজধানীর কাফরুল, শেওড়াপাড়া, ধানমন্ডি এলাকায় বিলাসবহুল ৩ টি বাড়ির সন্ধান মিলেছে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে। রাজধানীর সাতারকুলে মাকাম হাউজিং নামে বিশাল এলাকা জুড়ে হাউজিং কোম্পানী রয়েছে। এ প্রকল্পে কোয়ান্টাম প্লাস ফাউন্ডেশনের নামে ৮৬ টি প্লটের মালিক মোশাররফ হোসেন। কোয়ন্টাম প্লাস ফ্উান্ডেশনের আওতায় কোয়ান্টাম প্লাস স্কুল এন্ড কলেজ, কোয়ান্টাম দুগ্ধ খামার, কোয়ন্টাম বৃত্তি প্রকল্প, ফ্যামিলি বাজার নামে বিশাল এক মার্কেট রয়েছে।

দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে মোশাররফ হোসেনের নিয়ন্ত্রণাধীন। এ দুটি প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট স্টক থেকে লাইলেন্স নেওয়া। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমান অর্থ বিনিয়োগ করেছেন মোশাররফ হোসেন। মাকাম হাউজিং এর ভিতরে কোয়ন্টাম স্কুল এন্ড কলেজ নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ৫০ বিঘা জমির উপর গড়ে তুলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শুধু মাত্র অনলাইন থেকে নামের ছাড়পত্র নিয়ে রেখেছে কোয়ন্টাম প্লাস ফাউন্ডেশন। যা নিবন্ধনের কোন বৈধতা হিসাবে গৃহীত হয় না। তার হাতে গড়া এই কথিত ফাউন্ডেশনের নামে তৈরি করা বিভিন্ন প্রকল্প দেখা শুনার দায়িত্ব পালন করেন নিজ এলাকার কতিপয় লোকজন। যারা নিজেদেরকে মোশাররফ হোসেনের আত্নীয় বলে দাবি করেন।

back to top