শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এবার এ পুরস্কার ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। এ বছর পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো।
ভেনেজুয়েলার এ রাজনীতিক ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর ‘ঘোরতর সমর্থক’, যা তাকে ‘গাজায় বোমাবর্ষণ ও গণহত্যার সঙ্গী’ বানিয়েছে বলে সমালোচনা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আরও সমালোচনা তিনি নিজের দেশে সরকার উৎখাতে বিদেশি শক্তির ‘হস্তক্ষেপও’ চেয়েছেন।
তিনি ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর ‘ঘোরতর সমর্থক’
২০২০ সালে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সঙ্গে সহযোগিতার দলিলে ‘সই করেছেন’
ভেনেজুয়েলায় বিদেশি ‘হস্তক্ষেপ’ চেয়েছেন
নোবেল কমিটি তাকে বলছে ‘শান্তির অগ্রদূত’
এসবই তাকে ‘শান্তি পুরস্কারের অযোগ্য’ এবং নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করেছে বলে মত সমালোচকদের। তবে নোবেল কমিটি তাকে ‘শান্তির অগ্রদূত’ আখ্যা দিয়েছে।
মাচাদোর পুরনো সব পোস্ট সামনে নিয়ে এসেছেন সমালোচকরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানানো মাচাদো অবশ্য প্যালেস্টাইনে হত্যাকাণ্ডের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সরাসরি কিছু লিখেননি। তবে তিনি বারবার প্রশংসা করেছেন নেতানিয়াহুর, যার বিরুদ্ধে গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।
নরওয়ের আইনপ্রণেতা বিয়র্নার মক্সনেস বলছেন, মাচাদো ২০২০ সালে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সঙ্গে সহযোগিতামূলক দলিলে স্বাক্ষর করেছেন।
লিকুদ পার্টি ‘গাজায় গণহত্যার’ জন্য দায়ী, যে কারণে এবারের পুরস্কার নোবেলের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি বলে মত মক্সনেসের।
নোবেল পুরস্কার কমিটি গতকাল শুক্রবার লাতিন আমেরিকার দেশটিতে ‘গণতন্ত্রের প্রসারে’ কাজ ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ‘লড়াইয়ের’ স্বীকৃতি হিসেবে মাচাদোকে শান্তি পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
নোবেল কমিটি বলছে, মাচাদো ‘শান্তির অগ্রদূত’ যিনি ক্রমবর্ধমান অন্ধকারেও ভেনেজুয়েলায় ‘গণতন্ত্রের শিখা’ জ্বালিয়ে রেখেছেন। আরও বলেছে, ‘এ শান্তি পুরস্কারজয়ী দেখিয়েছেন গণতন্ত্র ও শান্তির পন্থা এক।’
মাচাদোকে কমিটির প্রধান জর্গেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস একদা বহুধাবিভক্ত ভেনেজুয়েলার ‘রাজনৈতিক বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা নারী’ বলেছেন।
‘গত কয়েক বছর ধরে মাচাদোকে বাধ্য হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। জীবন ভয়াবহ হুমকির মুখে থাকার পরও তিনি দেশেই আছেন, যা লাখ লাখ মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে। যখন কর্তৃত্ববাদীরা ক্ষমতা দখলে নেয়, তখন মুক্তির সাহসী রক্ষক যারা উঠে দাঁড়ায় ও প্রতিরোধ করে তাদের স্বীকৃতি দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ,’ ঘোষণায় বলেছেন ফ্রিডনেস।
পুরস্কারের নাম ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই হোয়াইট হাউজ সমালোচনা করে বলে, নোবেল কমিটি ‘শান্তির ওপরে রাজনীতিকে স্থান দিয়েছে’। বিশ্বব্যাপী ৬-৭টি যুদ্ধ থামানোর কৃতিত্ব নেয়া প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ ‘শান্তি’ পুরস্কার না পাওয়ায় তাদের এ মন্তব্য।
তবে মাচাদো পরে তার পুরস্কার ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেন। আর ট্রাম্পও পরে জানান, মাচাদো পুরস্কার পাওয়ায় তিনি খুশি।
কী বলেছিলেন মাচাদো
বছরের পর বছর মাচাদোর পোস্টে দেখা যাচ্ছে যে তিনি নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র। তিনি এক সময় বলেছিলেন, ‘ভেনেজুয়েলার সংগ্রামই ইসরায়েলের সংগ্রাম।’
তিনি ইসরায়েলকে ‘স্বাধীনতার সত্যিকারের মিত্র’ অভিহিত করেছিলেন। আর ক্ষমতায় গেলে ইসরায়েলে ভেনেজুয়েলার দূতাবাস তেলআবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস নোবেল শান্তি পুরস্কার মাচাদোকে দেয়ার ‘অচিন্তনীয় সিদ্ধান্তের’ কড়া সমালোচনা করেছে।
এক অনলাইন পোস্টে তারা নোবেল কমিটিকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহবান জানিয়েছে। তারা বলছেন মাচাদোকে পুরস্কার দেয়ার মাধ্যমে ‘তারা (নোবেল কমিটি) তাদের সুনাম নষ্ট করেছে’।
ভেনেজুয়েলায় বিদেশি হস্তক্ষেপ
প্রায় ১২ বছর ক্ষমতায় ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তার শাসন অবসানের জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন বলে সমালোচনা হচ্ছে মাচাদোর।
মাচাদো ২০১৮ সালে তার দেশের শাসন ব্যবস্থা বদলাতে ইসরায়েল ও আর্জেন্টিনার সমর্থন চেয়ে চিঠিও লিখেছিলেন।
সেই চিঠির কপি অনলাইলে দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বলেছিলেন, ‘মাদক চোরাকারবার ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা ভেনেজুয়েলার অপরাধী শাসনব্যবস্থা ধ্বংসে আজ আমি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মরিসিও মাক্রির কাছে চিঠি পাঠাচ্ছি, যেন তারা তাদের শক্তি ও প্রভাবকে এ কাজে লাগাতে পারেন।’
শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এবার এ পুরস্কার ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। এ বছর পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো।
ভেনেজুয়েলার এ রাজনীতিক ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর ‘ঘোরতর সমর্থক’, যা তাকে ‘গাজায় বোমাবর্ষণ ও গণহত্যার সঙ্গী’ বানিয়েছে বলে সমালোচনা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আরও সমালোচনা তিনি নিজের দেশে সরকার উৎখাতে বিদেশি শক্তির ‘হস্তক্ষেপও’ চেয়েছেন।
তিনি ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর ‘ঘোরতর সমর্থক’
২০২০ সালে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সঙ্গে সহযোগিতার দলিলে ‘সই করেছেন’
ভেনেজুয়েলায় বিদেশি ‘হস্তক্ষেপ’ চেয়েছেন
নোবেল কমিটি তাকে বলছে ‘শান্তির অগ্রদূত’
এসবই তাকে ‘শান্তি পুরস্কারের অযোগ্য’ এবং নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করেছে বলে মত সমালোচকদের। তবে নোবেল কমিটি তাকে ‘শান্তির অগ্রদূত’ আখ্যা দিয়েছে।
মাচাদোর পুরনো সব পোস্ট সামনে নিয়ে এসেছেন সমালোচকরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানানো মাচাদো অবশ্য প্যালেস্টাইনে হত্যাকাণ্ডের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সরাসরি কিছু লিখেননি। তবে তিনি বারবার প্রশংসা করেছেন নেতানিয়াহুর, যার বিরুদ্ধে গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।
নরওয়ের আইনপ্রণেতা বিয়র্নার মক্সনেস বলছেন, মাচাদো ২০২০ সালে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সঙ্গে সহযোগিতামূলক দলিলে স্বাক্ষর করেছেন।
লিকুদ পার্টি ‘গাজায় গণহত্যার’ জন্য দায়ী, যে কারণে এবারের পুরস্কার নোবেলের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি বলে মত মক্সনেসের।
নোবেল পুরস্কার কমিটি গতকাল শুক্রবার লাতিন আমেরিকার দেশটিতে ‘গণতন্ত্রের প্রসারে’ কাজ ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ‘লড়াইয়ের’ স্বীকৃতি হিসেবে মাচাদোকে শান্তি পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
নোবেল কমিটি বলছে, মাচাদো ‘শান্তির অগ্রদূত’ যিনি ক্রমবর্ধমান অন্ধকারেও ভেনেজুয়েলায় ‘গণতন্ত্রের শিখা’ জ্বালিয়ে রেখেছেন। আরও বলেছে, ‘এ শান্তি পুরস্কারজয়ী দেখিয়েছেন গণতন্ত্র ও শান্তির পন্থা এক।’
মাচাদোকে কমিটির প্রধান জর্গেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস একদা বহুধাবিভক্ত ভেনেজুয়েলার ‘রাজনৈতিক বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা নারী’ বলেছেন।
‘গত কয়েক বছর ধরে মাচাদোকে বাধ্য হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। জীবন ভয়াবহ হুমকির মুখে থাকার পরও তিনি দেশেই আছেন, যা লাখ লাখ মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে। যখন কর্তৃত্ববাদীরা ক্ষমতা দখলে নেয়, তখন মুক্তির সাহসী রক্ষক যারা উঠে দাঁড়ায় ও প্রতিরোধ করে তাদের স্বীকৃতি দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ,’ ঘোষণায় বলেছেন ফ্রিডনেস।
পুরস্কারের নাম ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই হোয়াইট হাউজ সমালোচনা করে বলে, নোবেল কমিটি ‘শান্তির ওপরে রাজনীতিকে স্থান দিয়েছে’। বিশ্বব্যাপী ৬-৭টি যুদ্ধ থামানোর কৃতিত্ব নেয়া প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ ‘শান্তি’ পুরস্কার না পাওয়ায় তাদের এ মন্তব্য।
তবে মাচাদো পরে তার পুরস্কার ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেন। আর ট্রাম্পও পরে জানান, মাচাদো পুরস্কার পাওয়ায় তিনি খুশি।
কী বলেছিলেন মাচাদো
বছরের পর বছর মাচাদোর পোস্টে দেখা যাচ্ছে যে তিনি নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র। তিনি এক সময় বলেছিলেন, ‘ভেনেজুয়েলার সংগ্রামই ইসরায়েলের সংগ্রাম।’
তিনি ইসরায়েলকে ‘স্বাধীনতার সত্যিকারের মিত্র’ অভিহিত করেছিলেন। আর ক্ষমতায় গেলে ইসরায়েলে ভেনেজুয়েলার দূতাবাস তেলআবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস নোবেল শান্তি পুরস্কার মাচাদোকে দেয়ার ‘অচিন্তনীয় সিদ্ধান্তের’ কড়া সমালোচনা করেছে।
এক অনলাইন পোস্টে তারা নোবেল কমিটিকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহবান জানিয়েছে। তারা বলছেন মাচাদোকে পুরস্কার দেয়ার মাধ্যমে ‘তারা (নোবেল কমিটি) তাদের সুনাম নষ্ট করেছে’।
ভেনেজুয়েলায় বিদেশি হস্তক্ষেপ
প্রায় ১২ বছর ক্ষমতায় ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তার শাসন অবসানের জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন বলে সমালোচনা হচ্ছে মাচাদোর।
মাচাদো ২০১৮ সালে তার দেশের শাসন ব্যবস্থা বদলাতে ইসরায়েল ও আর্জেন্টিনার সমর্থন চেয়ে চিঠিও লিখেছিলেন।
সেই চিঠির কপি অনলাইলে দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বলেছিলেন, ‘মাদক চোরাকারবার ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা ভেনেজুয়েলার অপরাধী শাসনব্যবস্থা ধ্বংসে আজ আমি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মরিসিও মাক্রির কাছে চিঠি পাঠাচ্ছি, যেন তারা তাদের শক্তি ও প্রভাবকে এ কাজে লাগাতে পারেন।’