এল-ফাশের শহরের বাসিন্দারা ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে, সেখানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের পর রক্তাক্ত দৃশ্য স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছে -এএফপি
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, সুদানের আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ এর দখল করা এল-ফাশের শহর থেকে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১৮-মাস ধরে অবরোধ, অনাহার ও বোমাবর্ষণের পর আরএসএফ যোদ্ধারা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ব্যাপক গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের খবর পাওয়া যাচ্ছে।ইউএনএইচসিআর এর ইউজিন বায়ুন বিবিসিকে বলেছেন, সহিংসতা থেকে বাঁচতে গত কয়েকদিনে তাওইলা শহরের দিকে লোকজনের পালানোর সংখ্যা বাড়ছে। শহরটি এল-ফাশের থেকে ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে। তারা ধর্ষণসহ নৃশংসতার ভয়াবহ বর্ণনা দিচ্ছে। লোকজনের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে জাতিসংঘের সংস্থাটি। ইউজিন বায়ুন বলছেন প্রতিটি শিশু সেখানে অপুষ্টিতে ভুগছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এখনো প্রায় দেড় লাখ মানুষ এল-ফাশেরে আটকা পড়ে আছে। এটি দারফুরের পশ্চিমাঞ্চলে সেনাবাহিনীর সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি ছিল। আরএসএফ এল-ফাশেরে জাতিগত নির্মূলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। আরব মিলিশিয়াগুলো যেভাবে ‘আরব নয়’- এমন জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে- এল-ফাশেরেও সেই প্যাটার্ন অনুসরণের অভিযোগ উঠেছে। আরএসএফ বিচার ছাড়াই হত্যার অভিযোগে আবু লুলু নামে তাদেরই এক মিলিশিয়া সদস্যকে আটক করেছে। বিবিসি ভেরিফাই-এ এল-ফাশেরের কাছে ওই ব্যক্তিকে কয়েকজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যার জন্য চিহ্নিত করার পর ওই যোদ্ধাকে আটকের ফুটেজ শেয়ার করেছে গোষ্ঠীটি। টিকটক বিবিসির কাছে নিশ্চিত করেছে যে লুলুর সাথে যোগসূত্র আছে এমন অ্যাকাউন্টগুলো তারা স্থগিত করেছে। তবে তিনি নিজেই তার নামে অ্যাকাউন্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন কি-না তা এখনো পরিষ্কার নয়।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে। সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ। বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
আরএসএফ গঠিত হয় ২০১৩ সালে। যে কুখ্যাত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দারফুরে নৃশংস গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূল অভিযানের অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্য থেকে আরএসএফ বাহিনী গড়ে ওঠে। জেনারেল দাগালো আরএসএফকে একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলেন। এ বাহিনীর মাধ্যমে তিনি সুদানের কিছু সোনার খনিরও নিয়ন্ত্রণ করেন। অভিযোগ রয়েছে যে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ সোনা পাচার করেন। সুদানের সেনাবাহিনী আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে আরএসএফকে সমর্থন দেওয়া ও ড্রোন হামলা চালানোর অভিযোগ করেছে। যদিও উপসাগরীয় দেশটি তা অস্বীকার করেছে।
আরএসএফ এখন প্রায় পুরো দারফুর এবং পাশের কর্দোফান প্রদেশের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। সেখানে আরএসএফ একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার গঠন করায়, সুদান সম্ভবত দ্বিতীয়বারের মতো বিভক্ত হতে চলেছে। ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করে। দারফুরের অনেক বাসিন্দা মনে করেন, আরএসএফ ও সহযোগী মিলিশিয়ারা জাতিগতভাবে মিশ্র জনগোষ্ঠীর অঞ্চলটিকে আরব-শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ চালাচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, আরএসএফ মাসালিত ও অন্যান্য অ-আরব সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা এটিকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
সামরিক বাহিনী দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলো মিসর, যার সঙ্গে সুদানের অভিন্ন সীমান্ত ও নীল নদের পানি ভাগাভাগির সম্পর্ক রয়েছে। জেনারেল বুরহান লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত পোর্ট সুদানকে তাঁর সদর দপ্তর এবং জাতিসংঘ স্বীকৃত সরকারের কেন্দ্র বানিয়েছেন। আরএসএফ সেখানে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। আরএসএফ চলে যাওয়ার সময় রাজধানী খার্তুম ছিল এক ধ্বংসস্তূপ। সেখানে হাসপাতাল, ক্লিনিক, সরকারি ভবনগুলো বিমান হামলা ও কামানের গোলায় ধ্বংস হয়েছিল।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল আরএসএফ ও সহযোগী মিলিশিয়ারা গণহত্যা করেছে। তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, আরএসএফ জাতিগত সহিংসতার ভিত্তিতে পুরুষ, বালক ও শিশুদের পদ্ধতিগতভাবে হত্যা করেছে এবং নারীদের ওপর জঘন্য যৌন সহিংসতা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে জেনারেল দাগালো এবং পরে জেনারেল বুরহানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা যদিও সেখানে গণহত্যা ঘটেছে, এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি; তবে তাঁরা নিশ্চিত করেন যে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী উভয়ই যুদ্ধাপরাধ করেছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
এল-ফাশের শহরের বাসিন্দারা ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে, সেখানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের পর রক্তাক্ত দৃশ্য স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছে -এএফপি
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, সুদানের আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ এর দখল করা এল-ফাশের শহর থেকে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১৮-মাস ধরে অবরোধ, অনাহার ও বোমাবর্ষণের পর আরএসএফ যোদ্ধারা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ব্যাপক গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের খবর পাওয়া যাচ্ছে।ইউএনএইচসিআর এর ইউজিন বায়ুন বিবিসিকে বলেছেন, সহিংসতা থেকে বাঁচতে গত কয়েকদিনে তাওইলা শহরের দিকে লোকজনের পালানোর সংখ্যা বাড়ছে। শহরটি এল-ফাশের থেকে ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে। তারা ধর্ষণসহ নৃশংসতার ভয়াবহ বর্ণনা দিচ্ছে। লোকজনের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে জাতিসংঘের সংস্থাটি। ইউজিন বায়ুন বলছেন প্রতিটি শিশু সেখানে অপুষ্টিতে ভুগছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এখনো প্রায় দেড় লাখ মানুষ এল-ফাশেরে আটকা পড়ে আছে। এটি দারফুরের পশ্চিমাঞ্চলে সেনাবাহিনীর সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি ছিল। আরএসএফ এল-ফাশেরে জাতিগত নির্মূলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। আরব মিলিশিয়াগুলো যেভাবে ‘আরব নয়’- এমন জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে- এল-ফাশেরেও সেই প্যাটার্ন অনুসরণের অভিযোগ উঠেছে। আরএসএফ বিচার ছাড়াই হত্যার অভিযোগে আবু লুলু নামে তাদেরই এক মিলিশিয়া সদস্যকে আটক করেছে। বিবিসি ভেরিফাই-এ এল-ফাশেরের কাছে ওই ব্যক্তিকে কয়েকজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যার জন্য চিহ্নিত করার পর ওই যোদ্ধাকে আটকের ফুটেজ শেয়ার করেছে গোষ্ঠীটি। টিকটক বিবিসির কাছে নিশ্চিত করেছে যে লুলুর সাথে যোগসূত্র আছে এমন অ্যাকাউন্টগুলো তারা স্থগিত করেছে। তবে তিনি নিজেই তার নামে অ্যাকাউন্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন কি-না তা এখনো পরিষ্কার নয়।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে। সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ। বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
আরএসএফ গঠিত হয় ২০১৩ সালে। যে কুখ্যাত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দারফুরে নৃশংস গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূল অভিযানের অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্য থেকে আরএসএফ বাহিনী গড়ে ওঠে। জেনারেল দাগালো আরএসএফকে একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলেন। এ বাহিনীর মাধ্যমে তিনি সুদানের কিছু সোনার খনিরও নিয়ন্ত্রণ করেন। অভিযোগ রয়েছে যে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ সোনা পাচার করেন। সুদানের সেনাবাহিনী আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে আরএসএফকে সমর্থন দেওয়া ও ড্রোন হামলা চালানোর অভিযোগ করেছে। যদিও উপসাগরীয় দেশটি তা অস্বীকার করেছে।
আরএসএফ এখন প্রায় পুরো দারফুর এবং পাশের কর্দোফান প্রদেশের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। সেখানে আরএসএফ একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার গঠন করায়, সুদান সম্ভবত দ্বিতীয়বারের মতো বিভক্ত হতে চলেছে। ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করে। দারফুরের অনেক বাসিন্দা মনে করেন, আরএসএফ ও সহযোগী মিলিশিয়ারা জাতিগতভাবে মিশ্র জনগোষ্ঠীর অঞ্চলটিকে আরব-শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ চালাচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, আরএসএফ মাসালিত ও অন্যান্য অ-আরব সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা এটিকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
সামরিক বাহিনী দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলো মিসর, যার সঙ্গে সুদানের অভিন্ন সীমান্ত ও নীল নদের পানি ভাগাভাগির সম্পর্ক রয়েছে। জেনারেল বুরহান লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত পোর্ট সুদানকে তাঁর সদর দপ্তর এবং জাতিসংঘ স্বীকৃত সরকারের কেন্দ্র বানিয়েছেন। আরএসএফ সেখানে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। আরএসএফ চলে যাওয়ার সময় রাজধানী খার্তুম ছিল এক ধ্বংসস্তূপ। সেখানে হাসপাতাল, ক্লিনিক, সরকারি ভবনগুলো বিমান হামলা ও কামানের গোলায় ধ্বংস হয়েছিল।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল আরএসএফ ও সহযোগী মিলিশিয়ারা গণহত্যা করেছে। তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, আরএসএফ জাতিগত সহিংসতার ভিত্তিতে পুরুষ, বালক ও শিশুদের পদ্ধতিগতভাবে হত্যা করেছে এবং নারীদের ওপর জঘন্য যৌন সহিংসতা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে জেনারেল দাগালো এবং পরে জেনারেল বুরহানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা যদিও সেখানে গণহত্যা ঘটেছে, এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি; তবে তাঁরা নিশ্চিত করেন যে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী উভয়ই যুদ্ধাপরাধ করেছে।