সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী পেলে ওয়ার্ড হবে ‘লাল’ চিহ্নিত
ডেঙ্গুর ভয়াবহতার শিকার বেশি হচ্ছে নারী ও শিশু। বুধবার রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড-সংবাদ
এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২ হাজার ৭০ জন। এতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৪২৯ জন। বুধবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা নিয়মিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৭০ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৫৭ জন এবং ঢাকার বাইরের বাসিন্দা এক হাজার ২১৩ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৩ জনের মধ্যে ৮ জন ঢাকার এবং পাঁচজন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৪২৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫১ হাজার ২৭ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৫৫ হাজার ৪০২ জন। এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯?৮ হাজার ৯৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪৭ হাজার ৭৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ৫১ হাজার ২৫ জন।
মশানিধনে ব্যর্থতাকে দায়ী
করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের ওষুধ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে স্প্রে জোরদার করতে হবে, ভেজাল ওষুধ ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে। সিটি করপোরেশনগুলো যেন ভেজাল ওষুধ না ছিটায় সেই আহ্বানও জানান তিনি। দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ না কমার পেছনে মশানিধনে ব্যর্থতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমরা যতই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেই, মশা না কমলে দেশে ডেঙ্গু রোগীও কমবে না। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ৫শ’ মানুষের মৃত্যু এবং ১ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছে। মশা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার সেভাবে হচ্ছে না বলেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমছে না। তবে কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কিন্তু আমাদের সেবা নিয়ে মানুষের অভিযোগ নেই। এ সময় মশানিধন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আশপাশের দেশের থেকে বাংলাদেশে পরিস্থিতি খারাপ। সবাইকে যার যার জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে হবে।
স্বাস্থ্য সেবা খাতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে আগামী পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য সেবা খাতে পর্যায়ক্রমে ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাব বলে আশা করছি, যা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। টিকা তৈরির যে কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে সেখানেও তারা ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা নিশ্চিত করেছে, যা অবকাঠামো ও সেবার মান বাড়াতে খরচ করা হবে।
সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী পেলে ওয়ার্ড হবে লাল চিহ্নিত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কোন ওয়ার্ডে সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলে সে ওয়ার্ডকে লাল চিহ্নিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। সেই ওয়ার্ডে চালানো হবে দিনব্যাপী বিশেষ চিরুনি অভিযান। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন এলাকায় বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার লক্ষ্যে পরিচালিত কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এই কথা জানান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এখন থেকে সপ্তাহের প্রতি শনিবার করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মশককর্মীসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সব স্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এবং জনগণের সহযোগিতায় এই অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঠেকানো যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র।
শেখ তাপস বলেন, আগামী শনিবার আমরা আরেকটি বিশেষ অভিযান নিচ্ছি (পরিচালনা শুরু করব)। যেটা ওয়ার্ডভিত্তিক। যে ওয়ার্ডে এক সপ্তাহে ১০ জনের অধিক রোগী শনাক্ত করা হবে, সে ওয়ার্ডগুলোকে বিশেষ লাল চিহ্নিত এলাকা হিসেবে আমরা ঘোষণা করছি। সে ওয়ার্ডের এলাকাবাসী, সব হোল্ডিং-স্থাপনার মালিকদের আমরা আহ্বান করছি, তারা যেন নিজ নিজ বাসাবাড়ি, স্থাপনা, আঙিনা নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন। আমরা এলাকাবাসীর দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রার্থনা করছি।
মেয়র বলেন, ‘সেদিন কেউ কাজে যাবেন না। এটাই সবচেয়ে বড় কাজ হবে। আমরা যদি নিজেদের জীবন সুরক্ষিত রাখতে চাই, তাহলে এটাই হবে আমাদের গুরুদায়িত্ব। আমাদের এই কর্মসূচিতে আপনারা অংশগ্রহণ করবেন। আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মশককর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকবে। আমরা দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে এডিস মশার উৎসস্থলগুলোকে ধ্বংস করব। যার মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।’
৫, ২২, ৫৩ ও ৬০ নম্বর ওয়ার্ডে আগামী শনিবারে বিশেষ এই অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘এই চারটি ওয়ার্ডে গত এক সপ্তাহে আমরা ১০ জনেরও বেশি রোগী পেয়েছি। এই চারটি ওয়ার্ডে আগামী শনিবার অভিযান পরিচালনা করব। এরপরে যদি আমরা দেখি যে, অন্য কোন ওয়ার্ডে বা একাধিক ওয়ার্ডে এক সপ্তাহে ১০ জনের বেশি রোগী আসছে, তাহলে আমরা সে ওয়ার্ডগুলোতেও (পরের শনিবারে বিশেষ এই অভিযান পরিচালনা করব। আমরা মনে করি, এভাবে এডিস মশাকে পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। সেজন্য এলাকাবাসীকে পূর্ণমাত্রায় সম্পৃক্ত হতে হবে। তাহলে আমাদের এই কার্যক্রম আরও ব্যাপক সফলতা লাভ করবে। আমরা এলাকাবাসীকে সম্পৃক্ত করব।’
ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী স্থিতিশীল হলেও তা কমানোর পরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন ডেঙ্গু রোগের ভরা মৌসুম। এ সময় তা ঊর্ধ্বগামী হওয়ার কথা। কিন্তু আপনারা লক্ষ করেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলছে, ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগ এখন স্থিতিশীল। আমাদের রোগীর সংখ্যা আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পেরেছি। বুধবারও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা একশর নিচে ছিল। ভরা মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত দুরূহ হলেও আমরা কাজটি করে চলেছি। এজন্য ঢাকাবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা আমাদের একান্ত কাম্য। আপনাদের সচেতনতাই ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে, নির্মূলে সহায়ক হবে। তাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন সব শিক্ষার্থী, শিক্ষকম-লী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করব- বৃষ্টি হলেও যেন আপনার বাড়ি, আঙিনা ও আশপাশে বৃষ্টির পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এটা নির্মূল করা, ধ্বংস করা আমাদের সবার নাগরিক দায়িত্ব। তাই সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের এই কর্মসূচি।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ তাপস বলেন, ‘ঢালাওভাবে বলা- এটা কাজ করছে না, ওটা কাজ করছে না, আমার ফলাফলই তো বলে দিচ্ছে কোনটা কাজ করছে। কীটনাশক যদি কাজ না করত তাহলে এই ভরা মৌসুমে একশর নিচে রোগী রাখা, কোন দেশই তো পারছে না। যারা এ কথাগুলো বলছেন ওনারা কীটতত্ত্ববিদ নন। ওনারা আসলে বিভিন্ন (ধরনের) কীটনাশক বিক্রি করে ঢাকা সিটি করপোরেশনে চক্র সৃষ্টি করেছিল। (ওনারা) সেই একটি চক্রের (অংশ বিশেষ)।’ পরে মেয়র সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের অভ্যন্তর ঘুরে দেখেন এবং মশককর্মী ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ঈমানের অঙ্গ। তাই আমি শিক্ষার্থীদের বলব, তোমরা সবসময় তোমাদের আঙিনা পরিষ্কার রাখবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার, সিটি করপোরেশন যে সব দিকনির্দেশনা দিচ্ছে, সেগুলো যদি তোমরা সবাই অনুসরণ করো তাহলে এই ক্যাম্পাসে কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হবে না। এটা বড় একটি উদাহরণ সৃষ্টি করবে এবং আমাদের এই কার্যক্রমকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনুসরণ করবে।’
দেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছর বর্ষাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারীকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে গত বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা গেছেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী পেলে ওয়ার্ড হবে ‘লাল’ চিহ্নিত
ডেঙ্গুর ভয়াবহতার শিকার বেশি হচ্ছে নারী ও শিশু। বুধবার রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড-সংবাদ
বুধবার, ২৩ আগস্ট ২০২৩
এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২ হাজার ৭০ জন। এতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৪২৯ জন। বুধবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা নিয়মিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৭০ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৫৭ জন এবং ঢাকার বাইরের বাসিন্দা এক হাজার ২১৩ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৩ জনের মধ্যে ৮ জন ঢাকার এবং পাঁচজন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৪২৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫১ হাজার ২৭ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৫৫ হাজার ৪০২ জন। এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯?৮ হাজার ৯৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪৭ হাজার ৭৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ৫১ হাজার ২৫ জন।
মশানিধনে ব্যর্থতাকে দায়ী
করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের ওষুধ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে স্প্রে জোরদার করতে হবে, ভেজাল ওষুধ ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে। সিটি করপোরেশনগুলো যেন ভেজাল ওষুধ না ছিটায় সেই আহ্বানও জানান তিনি। দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ না কমার পেছনে মশানিধনে ব্যর্থতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমরা যতই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেই, মশা না কমলে দেশে ডেঙ্গু রোগীও কমবে না। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ৫শ’ মানুষের মৃত্যু এবং ১ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছে। মশা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার সেভাবে হচ্ছে না বলেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমছে না। তবে কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কিন্তু আমাদের সেবা নিয়ে মানুষের অভিযোগ নেই। এ সময় মশানিধন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আশপাশের দেশের থেকে বাংলাদেশে পরিস্থিতি খারাপ। সবাইকে যার যার জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে হবে।
স্বাস্থ্য সেবা খাতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে আগামী পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য সেবা খাতে পর্যায়ক্রমে ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাব বলে আশা করছি, যা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। টিকা তৈরির যে কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে সেখানেও তারা ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা নিশ্চিত করেছে, যা অবকাঠামো ও সেবার মান বাড়াতে খরচ করা হবে।
সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী পেলে ওয়ার্ড হবে লাল চিহ্নিত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কোন ওয়ার্ডে সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলে সে ওয়ার্ডকে লাল চিহ্নিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। সেই ওয়ার্ডে চালানো হবে দিনব্যাপী বিশেষ চিরুনি অভিযান। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন এলাকায় বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার লক্ষ্যে পরিচালিত কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এই কথা জানান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এখন থেকে সপ্তাহের প্রতি শনিবার করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মশককর্মীসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সব স্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এবং জনগণের সহযোগিতায় এই অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঠেকানো যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র।
শেখ তাপস বলেন, আগামী শনিবার আমরা আরেকটি বিশেষ অভিযান নিচ্ছি (পরিচালনা শুরু করব)। যেটা ওয়ার্ডভিত্তিক। যে ওয়ার্ডে এক সপ্তাহে ১০ জনের অধিক রোগী শনাক্ত করা হবে, সে ওয়ার্ডগুলোকে বিশেষ লাল চিহ্নিত এলাকা হিসেবে আমরা ঘোষণা করছি। সে ওয়ার্ডের এলাকাবাসী, সব হোল্ডিং-স্থাপনার মালিকদের আমরা আহ্বান করছি, তারা যেন নিজ নিজ বাসাবাড়ি, স্থাপনা, আঙিনা নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন। আমরা এলাকাবাসীর দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রার্থনা করছি।
মেয়র বলেন, ‘সেদিন কেউ কাজে যাবেন না। এটাই সবচেয়ে বড় কাজ হবে। আমরা যদি নিজেদের জীবন সুরক্ষিত রাখতে চাই, তাহলে এটাই হবে আমাদের গুরুদায়িত্ব। আমাদের এই কর্মসূচিতে আপনারা অংশগ্রহণ করবেন। আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মশককর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকবে। আমরা দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে এডিস মশার উৎসস্থলগুলোকে ধ্বংস করব। যার মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।’
৫, ২২, ৫৩ ও ৬০ নম্বর ওয়ার্ডে আগামী শনিবারে বিশেষ এই অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘এই চারটি ওয়ার্ডে গত এক সপ্তাহে আমরা ১০ জনেরও বেশি রোগী পেয়েছি। এই চারটি ওয়ার্ডে আগামী শনিবার অভিযান পরিচালনা করব। এরপরে যদি আমরা দেখি যে, অন্য কোন ওয়ার্ডে বা একাধিক ওয়ার্ডে এক সপ্তাহে ১০ জনের বেশি রোগী আসছে, তাহলে আমরা সে ওয়ার্ডগুলোতেও (পরের শনিবারে বিশেষ এই অভিযান পরিচালনা করব। আমরা মনে করি, এভাবে এডিস মশাকে পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। সেজন্য এলাকাবাসীকে পূর্ণমাত্রায় সম্পৃক্ত হতে হবে। তাহলে আমাদের এই কার্যক্রম আরও ব্যাপক সফলতা লাভ করবে। আমরা এলাকাবাসীকে সম্পৃক্ত করব।’
ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী স্থিতিশীল হলেও তা কমানোর পরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন ডেঙ্গু রোগের ভরা মৌসুম। এ সময় তা ঊর্ধ্বগামী হওয়ার কথা। কিন্তু আপনারা লক্ষ করেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলছে, ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগ এখন স্থিতিশীল। আমাদের রোগীর সংখ্যা আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পেরেছি। বুধবারও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা একশর নিচে ছিল। ভরা মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত দুরূহ হলেও আমরা কাজটি করে চলেছি। এজন্য ঢাকাবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা আমাদের একান্ত কাম্য। আপনাদের সচেতনতাই ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে, নির্মূলে সহায়ক হবে। তাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন সব শিক্ষার্থী, শিক্ষকম-লী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করব- বৃষ্টি হলেও যেন আপনার বাড়ি, আঙিনা ও আশপাশে বৃষ্টির পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এটা নির্মূল করা, ধ্বংস করা আমাদের সবার নাগরিক দায়িত্ব। তাই সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের এই কর্মসূচি।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ তাপস বলেন, ‘ঢালাওভাবে বলা- এটা কাজ করছে না, ওটা কাজ করছে না, আমার ফলাফলই তো বলে দিচ্ছে কোনটা কাজ করছে। কীটনাশক যদি কাজ না করত তাহলে এই ভরা মৌসুমে একশর নিচে রোগী রাখা, কোন দেশই তো পারছে না। যারা এ কথাগুলো বলছেন ওনারা কীটতত্ত্ববিদ নন। ওনারা আসলে বিভিন্ন (ধরনের) কীটনাশক বিক্রি করে ঢাকা সিটি করপোরেশনে চক্র সৃষ্টি করেছিল। (ওনারা) সেই একটি চক্রের (অংশ বিশেষ)।’ পরে মেয়র সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের অভ্যন্তর ঘুরে দেখেন এবং মশককর্মী ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ঈমানের অঙ্গ। তাই আমি শিক্ষার্থীদের বলব, তোমরা সবসময় তোমাদের আঙিনা পরিষ্কার রাখবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার, সিটি করপোরেশন যে সব দিকনির্দেশনা দিচ্ছে, সেগুলো যদি তোমরা সবাই অনুসরণ করো তাহলে এই ক্যাম্পাসে কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হবে না। এটা বড় একটি উদাহরণ সৃষ্টি করবে এবং আমাদের এই কার্যক্রমকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনুসরণ করবে।’
দেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছর বর্ষাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারীকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে গত বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা গেছেন।