alt

জাতীয়

একটানা এতদিন এত তাপ দেখেনি বাংলাদেশ

শাফিউল আল ইমরান : শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

আবহাওয়া অধিদপ্তর নতুন করে তাপ প্রবাহের সতর্কবার্তা বা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করে বলেছে, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ গতকাল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’ এর ফলে, এপ্রিল মাসের তাপমাত্রার ব্যাপ্তি দেশের ইতিহাসে রেকর্ড করতে যাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক সংবাদকে বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ বলছে; বিদ্যমান তাপপ্রবাহ সব অতীতের তাপমাত্রার রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এবার যে বহমান তাপপ্রবাহ তা বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি এপ্রিলের ৫ ও ৬ তারিখের তাপপ্রবাহ বিবেচনায় না ধরি, তবে এ পর্যন্ত ২৩ দিন চলছে। সুতরাং আরও কয়েকদিন যদি অব্যাহত থাকে তবে প্রি-মুনসুন সিজনের এপ্রিল মাসের তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল এটি মনে হয় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।’

তিনি যোগ করেন, ‘পুরো এপ্রিলজুড়ে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছিল। দুই দিনে তাপমাত্রা কিছু কমলেও এই তাপপ্রবাহ পূর্ণমাত্রায় শক্তি নিয়ে মাসজুড়ে অব্যাহত থাকে।’

বজ্র মেঘ তৈরির প্রবণতা কমে যাওয়া ও সূর্যের আলোর প্রাপ্যতার সময় বেশি থাকার কারণে ভূ-পৃষ্ট উত্তপ্ত হচ্ছে

ড. মল্লিক আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের পর বিদ্যমান তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও সাতক্ষীরা এসব অঞ্চলে তাপপ্রবাহ ১৭ থেকে ২৩ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত ছিল। ১৯ সালে তাপপ্রবাহ দেশের পশ্চিমাঞ্চল ও ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ প্রায় ১৯ দিন পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘৬০ বা ৭০ এর দশকে তাপপ্রবাহের যে ব্যাপ্তিকাল ছিল তা গড়ে কখনো তিন দিন আবার কখনো ৫ দিন বা ৭ দিন ছিল। আবার কোনো কোনো বছর ৮৯, ৯৯, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে তাপমাত্রার ব্যাপ্তি ১৩ বা ১৪ দিন বিস্তার লাভ করেছিল। তবে, সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করেছিল ওয়েস্টার্নপার্টে (পশ্চিমাঞ্চলে)। সেসময় ঢাকায় কখনো কখনো তাপমাত্রার ব্যাপ্তি ৩ থেকে ৫ দিন ৭ দিন স্থায়ী ছিল।’

তাপপ্রবাহ কতদিন চলবে

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এখন প্রায় ৪৫টির মতো জেলার ওপর দিয়ে এই দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন মাত্রায়। চলতি মৌসুমে গত কয়েকদিন ধরে টানা তীব্র গরমের মধ্যে গতকাল চতুর্থ দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়। ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকালেও আমাদের বিদ্যমান যে যে হিট এলার্ট আরও ৭২ ঘণ্টার জন্য দিয়েছি। কারণ আমরা মনে করি বিদ্যমান তাপপ্রবাহ যদি এটলিস্ট তিন দিন বহমান থাকে বা বয়ে যায় বিস্তীর্ণ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যায় তবেই আমরা এই এলার্ট জারি করি।’

ড. মল্লিক বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি যে বিদ্যমান যে তাপপ্রবাহ কোথাও কোথাও তীব্র ও কোথাও কোথাও মৃদু থেকে মাঝারি সেটা চলমান রয়েছে তা এ মাসজুড়েই অব্যাহত থাকবে। তবে মে মাসের দুই তারিখের পরে ছিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে বজ্রঝড় তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে ঢাকার পূর্বাঞ্চলসহ আমাদের উত্তরাঞ্চল কিছুটা স্বস্তিদায়ক পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’

‘এক তারিখ পর্যন্ত যে তাপমাত্রার গাণিতিক বিশ্লেষণ তাতে তাপ কমার সম্ভাবনা খুবই কম’ জানান তিনি।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ :

গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৮৫০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এর মধ্যে ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। গত ৪৭ বছরের মধ্যে ২০২৩ সাল শীতলতম বছর ছিল। ইতোমধ্যে পৃথিবীর অনেক দেশের তাপমাত্রা অতীতের তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

তাপমাত্রার ব্যাপ্তিকাল বৃদ্ধি পাওয়ার দুইটি কারণ বিদ্যমান। একটি মানবসৃষ্ট অন্যটি প্রাকৃতিক। মানবসৃষ্ট কারণ আমরা মোটামুটি সবাই জানা।

ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে এ বছরের এপ্রিল মাসের শেষ পর্যন্ত এলনিনো সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। সুতরাং এলনিনো সক্রিয় অবস্থায় থাকলে তা গ্লোবাল ওয়ারমিংকে প্রতিনিধিত্ব করে।’

‘তাপমাত্রার দুইটি ইফেক্ট একটি লোকাল ইফেক্ট ও আন্তঃমহাদেশীয় টেম্পারেচারের ফলাফল। এটা প্রতিবছরই হয়। তবে, এবার ব্যাপক এলাকাজুড়ে বিশেষ করে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, লাওস কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম। এই ব্যাপক এরিয়াজুড়ে বজ্র মেঘ তৈরির প্রবণতা কমে যাওয়ার কারণে প্রখর সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা এই এলাকাজুড়ে বেশি। এর দৈর্ঘ্য আট থেকে ১০ ঘণ্টা। প্রাকৃতিক কারণে সূর্যের আলোর প্রাপ্যতার সময় বেশি থাকার কারণে বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে,’ বলেন ড. মল্লিক।

এছাড়া বাংলাদেশে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল গরমের আধিক্য বেশি থাকার আরও কারণ ভারতের ভিতর থেকে ধেয়ে আসা গরম বাতাস। তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও উড়িশ্যার তাপমাত্রা বাংলাদেশের চেয়ে একটু বেশি হওয়ার কারণে ওই অঞ্চলের উত্তপ্ত বাতাস বা লু হাওয়া পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর এই অঞ্চলের গেটওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেষের তাপমাত্রাকে উত্তপ্ত করে ফেলে।’

রাডার ব্যবস্থা তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিতে পারে না

গণমাধ্যমে সব রাডার নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মল্লিক বলেন, ‘তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে রাডার পর্যক্ষেণ সারাদেশে না থাকার কারণে বিপর্যস্ত হচ্ছে, এটি একদমই ঠিক নয়। কারণ রাডার ব্যবস্থা তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিতে পারে না।’

তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় ঊর্ধ্বাকাশের অবস্থা কি রকম এবং তার মেঘমালার ভিতরে মেটিওর সাইজ তাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। সুতরাং হিটওয়েভ পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো রাডার ব্যবহার করা হয় না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের যে নিজস্ব সিনোপটিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সেটাতে আমরা থার্মোমিটারের মাধ্যমে কোনো স্টেশনের তাপমাত্রা পরিমাপ করি। আমাদের অনেকগুলো ওয়েদার স্টেশন আছে সেগুলোর মাধ্যমে আমরা তাপমাত্রা পরিমাপ করি। আমাদের গাণিতিক মডেল সারাবিশ্বের এক নম্বর হলো; ‘ইসিএমডাব্লিও’ হিটওয়েভ পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করি।’

উন্নত বিশ্ব যে ধরনের মডেল ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকারও সে ধরনের মডেল ব্যবহার করে বলেও জানান তিনি।

ছবি

দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে

ছবি

৭ দিন বৃষ্টি চলতে পারে: আবহাওয়া অফিস

ছবি

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি: জনপ্রশাসনমন্ত্রী

ছবি

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, প্রধানমন্ত্রীর সন্তোষ

ছবি

রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় সহযোগিতার জন্য ওআইসি সদস্যদের প্রতি আহবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ছবি

লাইসেন্সবিহীন টিভি-চ্যানেল বন্ধে কার্যক্রম শুরু, ১০ সিদ্ধান্ত

ছবি

সিরিয়াল অনুযায়ী মামলার শুনানি হবে: প্রধান বিচারপতি

ছবি

সম্পদ অর্জনে এমপিদের পেছনে ফেলেছেন চেয়ারম্যানরা

ছবি

সারা দেশে কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা

ছবি

অভিবাসন সংক্রান্ত অপতথ্য রোধে বাংলাদেশ-ইতালি একসঙ্গে কাজ করবে : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী

ছবি

নবায়ণযোগ্য জ্বালানি: নসরুল হামিদের সঙ্গে সুইডেনের রাষ্ট্রদূতের আলোচনা

ছবি

ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনাপ্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তন : দেখা যায়নি পর্যাপ্ত মুকুল, পড়ে যাচ্ছে গুটি; দুশ্চিন্তায় আম চাষিরা

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তন : দেখা যায়নি পর্যাপ্ত মুকুল, পড়ে যাচ্ছে গুটি; দুশ্চিন্তায় আম চাষিরা

ছবি

বাংলাদেশের সাথে গাম্বিয়ার বাণিজ্য ও কৃষিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির আশাবাদ

ছবি

মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকে ডিবিতে ডাকা হয়েছে : হারুন

ছবি

সরকার পরিচালনাকারী সবাই ফেরেশতা নয় : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

শিক্ষকদের মর্যাদা-বেতনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি : শিক্ষামন্ত্রী

ছবি

১০ টাকার টিকিট কেটে জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

শনিবার ২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ

দেশের গণমাধ্যমে কতটা গুরুত্ব পায় পরিবেশ, জলবায়ু : কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ছবি

বিচার বিভাগের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের : প্রধান বিচারপতি

ছবি

চাল ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধে আইন করা হয়েছে:খাদ্যমন্ত্রী

ছবি

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি : ঢাকায় পৌঁছেছে ৮ বাংলাদেশীর লাশ

ছবি

ঝিনাইদহ-১ আসনের এমপি আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে সংসদে শোক

ছবি

এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয় প্রার্থী থাকতে পারেন তবে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না : ইসি

ছবি

১২ কেজি এলপিজির দাম কমলো ৪৯ টাকা

ছবি

থাইল্যান্ড চাইলে আমাদের সমুদ্র সৈকতে জায়গা দেবো : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করবে থাইল্যান্ড : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বিকেলে বসছে দ্বাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন

আজ দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ

আগামী বছর হজ ব্যবস্থাপনায় অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে- ধর্মমন্ত্রী

ছবি

শ্রমিকের পুঞ্জীভূত শ্রমের প্রতিফলনই উন্নয়ন : ধর্মমন্ত্রী

ছবি

শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে ছাড় নয়: প্রধানমন্ত্রী

ছবি

শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক রেখে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী

tab

জাতীয়

একটানা এতদিন এত তাপ দেখেনি বাংলাদেশ

শাফিউল আল ইমরান

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

আবহাওয়া অধিদপ্তর নতুন করে তাপ প্রবাহের সতর্কবার্তা বা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করে বলেছে, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ গতকাল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’ এর ফলে, এপ্রিল মাসের তাপমাত্রার ব্যাপ্তি দেশের ইতিহাসে রেকর্ড করতে যাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক সংবাদকে বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ বলছে; বিদ্যমান তাপপ্রবাহ সব অতীতের তাপমাত্রার রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এবার যে বহমান তাপপ্রবাহ তা বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি এপ্রিলের ৫ ও ৬ তারিখের তাপপ্রবাহ বিবেচনায় না ধরি, তবে এ পর্যন্ত ২৩ দিন চলছে। সুতরাং আরও কয়েকদিন যদি অব্যাহত থাকে তবে প্রি-মুনসুন সিজনের এপ্রিল মাসের তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল এটি মনে হয় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।’

তিনি যোগ করেন, ‘পুরো এপ্রিলজুড়ে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছিল। দুই দিনে তাপমাত্রা কিছু কমলেও এই তাপপ্রবাহ পূর্ণমাত্রায় শক্তি নিয়ে মাসজুড়ে অব্যাহত থাকে।’

বজ্র মেঘ তৈরির প্রবণতা কমে যাওয়া ও সূর্যের আলোর প্রাপ্যতার সময় বেশি থাকার কারণে ভূ-পৃষ্ট উত্তপ্ত হচ্ছে

ড. মল্লিক আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের পর বিদ্যমান তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও সাতক্ষীরা এসব অঞ্চলে তাপপ্রবাহ ১৭ থেকে ২৩ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত ছিল। ১৯ সালে তাপপ্রবাহ দেশের পশ্চিমাঞ্চল ও ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ প্রায় ১৯ দিন পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘৬০ বা ৭০ এর দশকে তাপপ্রবাহের যে ব্যাপ্তিকাল ছিল তা গড়ে কখনো তিন দিন আবার কখনো ৫ দিন বা ৭ দিন ছিল। আবার কোনো কোনো বছর ৮৯, ৯৯, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে তাপমাত্রার ব্যাপ্তি ১৩ বা ১৪ দিন বিস্তার লাভ করেছিল। তবে, সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করেছিল ওয়েস্টার্নপার্টে (পশ্চিমাঞ্চলে)। সেসময় ঢাকায় কখনো কখনো তাপমাত্রার ব্যাপ্তি ৩ থেকে ৫ দিন ৭ দিন স্থায়ী ছিল।’

তাপপ্রবাহ কতদিন চলবে

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এখন প্রায় ৪৫টির মতো জেলার ওপর দিয়ে এই দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন মাত্রায়। চলতি মৌসুমে গত কয়েকদিন ধরে টানা তীব্র গরমের মধ্যে গতকাল চতুর্থ দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়। ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকালেও আমাদের বিদ্যমান যে যে হিট এলার্ট আরও ৭২ ঘণ্টার জন্য দিয়েছি। কারণ আমরা মনে করি বিদ্যমান তাপপ্রবাহ যদি এটলিস্ট তিন দিন বহমান থাকে বা বয়ে যায় বিস্তীর্ণ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যায় তবেই আমরা এই এলার্ট জারি করি।’

ড. মল্লিক বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি যে বিদ্যমান যে তাপপ্রবাহ কোথাও কোথাও তীব্র ও কোথাও কোথাও মৃদু থেকে মাঝারি সেটা চলমান রয়েছে তা এ মাসজুড়েই অব্যাহত থাকবে। তবে মে মাসের দুই তারিখের পরে ছিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে বজ্রঝড় তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে ঢাকার পূর্বাঞ্চলসহ আমাদের উত্তরাঞ্চল কিছুটা স্বস্তিদায়ক পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’

‘এক তারিখ পর্যন্ত যে তাপমাত্রার গাণিতিক বিশ্লেষণ তাতে তাপ কমার সম্ভাবনা খুবই কম’ জানান তিনি।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ :

গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৮৫০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এর মধ্যে ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। গত ৪৭ বছরের মধ্যে ২০২৩ সাল শীতলতম বছর ছিল। ইতোমধ্যে পৃথিবীর অনেক দেশের তাপমাত্রা অতীতের তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

তাপমাত্রার ব্যাপ্তিকাল বৃদ্ধি পাওয়ার দুইটি কারণ বিদ্যমান। একটি মানবসৃষ্ট অন্যটি প্রাকৃতিক। মানবসৃষ্ট কারণ আমরা মোটামুটি সবাই জানা।

ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে এ বছরের এপ্রিল মাসের শেষ পর্যন্ত এলনিনো সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। সুতরাং এলনিনো সক্রিয় অবস্থায় থাকলে তা গ্লোবাল ওয়ারমিংকে প্রতিনিধিত্ব করে।’

‘তাপমাত্রার দুইটি ইফেক্ট একটি লোকাল ইফেক্ট ও আন্তঃমহাদেশীয় টেম্পারেচারের ফলাফল। এটা প্রতিবছরই হয়। তবে, এবার ব্যাপক এলাকাজুড়ে বিশেষ করে পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, লাওস কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম। এই ব্যাপক এরিয়াজুড়ে বজ্র মেঘ তৈরির প্রবণতা কমে যাওয়ার কারণে প্রখর সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা এই এলাকাজুড়ে বেশি। এর দৈর্ঘ্য আট থেকে ১০ ঘণ্টা। প্রাকৃতিক কারণে সূর্যের আলোর প্রাপ্যতার সময় বেশি থাকার কারণে বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে,’ বলেন ড. মল্লিক।

এছাড়া বাংলাদেশে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল গরমের আধিক্য বেশি থাকার আরও কারণ ভারতের ভিতর থেকে ধেয়ে আসা গরম বাতাস। তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও উড়িশ্যার তাপমাত্রা বাংলাদেশের চেয়ে একটু বেশি হওয়ার কারণে ওই অঞ্চলের উত্তপ্ত বাতাস বা লু হাওয়া পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর এই অঞ্চলের গেটওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেষের তাপমাত্রাকে উত্তপ্ত করে ফেলে।’

রাডার ব্যবস্থা তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিতে পারে না

গণমাধ্যমে সব রাডার নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মল্লিক বলেন, ‘তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে রাডার পর্যক্ষেণ সারাদেশে না থাকার কারণে বিপর্যস্ত হচ্ছে, এটি একদমই ঠিক নয়। কারণ রাডার ব্যবস্থা তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিতে পারে না।’

তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় ঊর্ধ্বাকাশের অবস্থা কি রকম এবং তার মেঘমালার ভিতরে মেটিওর সাইজ তাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। সুতরাং হিটওয়েভ পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো রাডার ব্যবহার করা হয় না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের যে নিজস্ব সিনোপটিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সেটাতে আমরা থার্মোমিটারের মাধ্যমে কোনো স্টেশনের তাপমাত্রা পরিমাপ করি। আমাদের অনেকগুলো ওয়েদার স্টেশন আছে সেগুলোর মাধ্যমে আমরা তাপমাত্রা পরিমাপ করি। আমাদের গাণিতিক মডেল সারাবিশ্বের এক নম্বর হলো; ‘ইসিএমডাব্লিও’ হিটওয়েভ পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করি।’

উন্নত বিশ্ব যে ধরনের মডেল ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকারও সে ধরনের মডেল ব্যবহার করে বলেও জানান তিনি।

back to top