গাজীপুরে তাপদাহের প্রচন্ড গরমে মারা যাচ্ছে খামারের মুরগি। এ কারণে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে একাধিক খামার। মুরগি বাঁচিয়ে রাখার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেও টিকিয়ে রাখতে না পারায় বাধ্য হয়ে কম দামে মুরগি বেঁচে দিচ্ছেন অনেকে। পাশাপাশি ডিম উৎপাদনও কমে গেছে। ওষুধ ও কাজে দিচ্ছে না। আবার বিদ্যুতের লোডশেডিং এর কারণেও সমস্যা বাড়ছে। সব মিলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা।
গাজীপুরের এসব খামার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি মারা যাচ্ছে বেশি সংখ্যক। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্রয়লার মুরগিও কমদামে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। কেউ কেউ খামারে মারা যাওয়ার আগ মুহূর্তে জবাই করে দিচ্ছেন। খামারিরা বলছেন, আগে যেখানে একটা মুরগি কমপক্ষে ১২০ গ্রাম খাবার খেতে, গরমের কারণে এখন সেখানে ১০০ গ্রাম খেতে পারছে না। ওষুধে, ফ্যানের বাতাসেও কোন কাজ হচ্ছে না। তাদের এই ক্ষতির মুখে সরকারের প্রণোদনা আশা করছেন খামারিরা।
মহান নগরের লাগালিয়া এলাকার প্রান্তিক খামারি ওবায়দুল হকের খামারের দুটি সেডের প্রায় সব মুরগি মারা যাওয়ায় ওই সেড দুটি এখন খা খা করছে। তিনি জানান, প্রচন্ড গরমের কারণে গত কয়েকদিনে খামারের দুটি সেডে থাকা তিন হাজার ছোট বয়লার মুরগির মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি মুরগী মারা গেছে। দু-তিনশ মুরগি কম দামে মাদ্রাসায় এতিমখানায় দিয়েছে। আর কিছু নিজেরা খেয়ে ফেলেছেন। এই অবস্থায় ৫-৬ লাখ টাকা পুঁজি হারিয়ে তিনি এখন ফতুর হয়ে গেছেন। তার মতোই আরো অনেক খামারীর এমন দুরবস্থা গাজীপুরে।
সদর উপজেলার দড়ি বলদা এলাকার সোহাগ পোল্ট্রি ফার্মের ফরিদ হোসেন জানান, প্রতিদিনই মরছে তাদের খামারের মুরগি। মুরগি মারা যাওয়ার পাশাপাশি ডিমের উৎপাদনও কমেছে। মারা যাওয়া মুরগি মাটি চাপা দেয়া হচ্ছে। আর কিছু কিছু মুরগি মারা যাওয়ার আগে জবাই করতে হচ্ছে। এভাবেই আস্তে আস্তে খামার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
তাপদাহের মধ্যে প্রায়ই থাকছে না বিদ্যুৎ। ঘন ঘন লোডশেডিং এর মধ্যে জেনারেটর চালিয়ে তাপদাহ থেকে রক্ষার জন্য ঘন ঘন স্প্রে করে পানি দিয়ে, ফ্যান চালিয়ে কিংবা ওষুধ দিয়েও রক্ষা করতে পারছেন না খামারের মুরগি। বলধা এলাকার সাবেক ব্যাংকার খামারি আলী হোসেন জানান, প্রতিদিনই কয়েকটি করে মারা যাচ্ছে। ডিমের উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। প্রতি হাজার মুরগিতে এখন প্রতিদিনে কমপক্ষে দেড়শো ডিম উৎপাদন কম হচ্ছে। নগরের রাখালিয়াচালা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বুলবুল জানান, খামারের ওষুধের দাম অনেক বেশি পড়ছে। আবার অনেক ওষুধে সব সময় কাজও করছে না। পোল্ট্রিতে ব্যবহৃত অনেক ওষুধই আনতে হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। আর ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সেখানেও ডলার সংকটে বিরূপ প্রভাব রয়েছে। এই অবস্থায় সরকার খামারিদের পাশে এগিয়ে না আসলে ভর্তুকি কিংবা প্রণোদনা না দিলে, এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবে না বলেও জানান তিনি।
প্রচন্ড তাপদাহ পরিস্থিতিতে কিভাবে খামারের মুরগি রক্ষা করা যায় সেজন্য চিকিৎসকদের দিক নির্দেশনা নিচ্ছেন খামারিরা। প্রাণি চিকিৎসক আল আমিন জানান, খামারিদের আহবানে সাড়া দিয়ে চিকিৎসকরা ও খামার ঘুরে ঘুরে দিচ্ছেন নানা পরামর্শ।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নারগিস খানম সংবাদকে জানান, মুরগি মারা যাওয়ার বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে থেকে এখনো তারা সুনিদৃষ্ট কোন তথ্য পাননি।
তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে খামার রক্ষার জন্য খামারিদের সাথে যোগাযোগ রেখে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে ও মাইকিং করা সহ নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের খামার পরিদর্শন এবং নজরদারি সহ সচেতনামূলক নানা ধরনের কর্মসূচি ও রয়েছে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
গাজীপুরে তাপদাহের প্রচন্ড গরমে মারা যাচ্ছে খামারের মুরগি। এ কারণে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে একাধিক খামার। মুরগি বাঁচিয়ে রাখার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেও টিকিয়ে রাখতে না পারায় বাধ্য হয়ে কম দামে মুরগি বেঁচে দিচ্ছেন অনেকে। পাশাপাশি ডিম উৎপাদনও কমে গেছে। ওষুধ ও কাজে দিচ্ছে না। আবার বিদ্যুতের লোডশেডিং এর কারণেও সমস্যা বাড়ছে। সব মিলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা।
গাজীপুরের এসব খামার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি মারা যাচ্ছে বেশি সংখ্যক। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্রয়লার মুরগিও কমদামে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। কেউ কেউ খামারে মারা যাওয়ার আগ মুহূর্তে জবাই করে দিচ্ছেন। খামারিরা বলছেন, আগে যেখানে একটা মুরগি কমপক্ষে ১২০ গ্রাম খাবার খেতে, গরমের কারণে এখন সেখানে ১০০ গ্রাম খেতে পারছে না। ওষুধে, ফ্যানের বাতাসেও কোন কাজ হচ্ছে না। তাদের এই ক্ষতির মুখে সরকারের প্রণোদনা আশা করছেন খামারিরা।
মহান নগরের লাগালিয়া এলাকার প্রান্তিক খামারি ওবায়দুল হকের খামারের দুটি সেডের প্রায় সব মুরগি মারা যাওয়ায় ওই সেড দুটি এখন খা খা করছে। তিনি জানান, প্রচন্ড গরমের কারণে গত কয়েকদিনে খামারের দুটি সেডে থাকা তিন হাজার ছোট বয়লার মুরগির মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি মুরগী মারা গেছে। দু-তিনশ মুরগি কম দামে মাদ্রাসায় এতিমখানায় দিয়েছে। আর কিছু নিজেরা খেয়ে ফেলেছেন। এই অবস্থায় ৫-৬ লাখ টাকা পুঁজি হারিয়ে তিনি এখন ফতুর হয়ে গেছেন। তার মতোই আরো অনেক খামারীর এমন দুরবস্থা গাজীপুরে।
সদর উপজেলার দড়ি বলদা এলাকার সোহাগ পোল্ট্রি ফার্মের ফরিদ হোসেন জানান, প্রতিদিনই মরছে তাদের খামারের মুরগি। মুরগি মারা যাওয়ার পাশাপাশি ডিমের উৎপাদনও কমেছে। মারা যাওয়া মুরগি মাটি চাপা দেয়া হচ্ছে। আর কিছু কিছু মুরগি মারা যাওয়ার আগে জবাই করতে হচ্ছে। এভাবেই আস্তে আস্তে খামার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
তাপদাহের মধ্যে প্রায়ই থাকছে না বিদ্যুৎ। ঘন ঘন লোডশেডিং এর মধ্যে জেনারেটর চালিয়ে তাপদাহ থেকে রক্ষার জন্য ঘন ঘন স্প্রে করে পানি দিয়ে, ফ্যান চালিয়ে কিংবা ওষুধ দিয়েও রক্ষা করতে পারছেন না খামারের মুরগি। বলধা এলাকার সাবেক ব্যাংকার খামারি আলী হোসেন জানান, প্রতিদিনই কয়েকটি করে মারা যাচ্ছে। ডিমের উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। প্রতি হাজার মুরগিতে এখন প্রতিদিনে কমপক্ষে দেড়শো ডিম উৎপাদন কম হচ্ছে। নগরের রাখালিয়াচালা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বুলবুল জানান, খামারের ওষুধের দাম অনেক বেশি পড়ছে। আবার অনেক ওষুধে সব সময় কাজও করছে না। পোল্ট্রিতে ব্যবহৃত অনেক ওষুধই আনতে হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। আর ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সেখানেও ডলার সংকটে বিরূপ প্রভাব রয়েছে। এই অবস্থায় সরকার খামারিদের পাশে এগিয়ে না আসলে ভর্তুকি কিংবা প্রণোদনা না দিলে, এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবে না বলেও জানান তিনি।
প্রচন্ড তাপদাহ পরিস্থিতিতে কিভাবে খামারের মুরগি রক্ষা করা যায় সেজন্য চিকিৎসকদের দিক নির্দেশনা নিচ্ছেন খামারিরা। প্রাণি চিকিৎসক আল আমিন জানান, খামারিদের আহবানে সাড়া দিয়ে চিকিৎসকরা ও খামার ঘুরে ঘুরে দিচ্ছেন নানা পরামর্শ।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নারগিস খানম সংবাদকে জানান, মুরগি মারা যাওয়ার বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে থেকে এখনো তারা সুনিদৃষ্ট কোন তথ্য পাননি।
তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে খামার রক্ষার জন্য খামারিদের সাথে যোগাযোগ রেখে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে ও মাইকিং করা সহ নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের খামার পরিদর্শন এবং নজরদারি সহ সচেতনামূলক নানা ধরনের কর্মসূচি ও রয়েছে বলেও জানান তিনি।