alt

জাতীয়

আইএমএফের ঋণের শর্ত, টানাপড়েন, আলোচনায় কী

রেজাউল করিম : রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

আইএমএফের ঋণের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শর্ত ‘পর্যাপ্ত’ রিজার্ভ না রাখতে পারলেও প্রথম দুই কিস্তির ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটি রাজস্ব বাড়ানোর শর্তও পূরণ হয়নি। এখন বাজেট ‘ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ বা ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে আইএমএফ। ১০ বছর কর অবকাশ পাওয়া শিল্পখাতের সুবিধা বাতিল করার সুপারিশও করেছে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার জানতে চেয়েছে ঋণ দেয়ার আন্তর্জাতিক এই সংস্থা।

ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে এখন বাংলাদেশে আছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। তারা বাংলাদেশকে দেয়া শর্তগুলো কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে সেগুলোর খোঁজ-খবর নিচ্ছে এবং বাস্তবায়নের ‘বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা’ করছে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

সম্প্রতি অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে ভর্তুকি নিয়ে বৈঠক করেছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। সূত্র জানায়, ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক সূত্র-ভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ। তবে সার্বিক বাজেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অন্যান্য খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

২০২২ সালে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি বা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এর সঙ্গে কিছু শর্ত জুড়ে দেয় সংস্থাটি।

শর্তগুলো মধ্যে আরও রয়েছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতের মতো সামাজিক ব্যয়ের জন্য সময়সীমার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন ও ভ্যাট আইন পাস করা এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কর্ম পরিকল্পনা করা, কর ছাড় কমানো এবং ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা।

আগামীতে শর্ত পুরণ না হলে বাংলাদেশের ঋণের কিস্তি পেতে ঝামেলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আইএমএফ মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের অর্থ দেবে। এর জন্য ধারাবাহিকভাবে সবগুলো শর্ত পুরণ করতে হবে। প্রথমদিকের কিছু শর্ত পুরণ হয়েছে, কিছু হয়নি। তারপরও দুটি কিস্তি এসেছে। এতে আমাদের আশ্বস্থ হওয়া ঠিক নয় যে বাকি শর্তগুলো পুরণ না হলেও পুরো কিস্তি পাবো।’

জাহিদ হোসেন বলছেন, ‘আইএমএফ মূলত রাজস্ব বাড়াতে বলেছে। সরকার কিভাবে রাজস্ব বাড়াবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের ভর্তুকি না কমিয়েও রাজস্ব বাড়াতে পারে। সেগুলো ভেবে দেখা উচিত। বিদ্যুৎ খাতে যেসব বাড়তি খরচ আছে সেগুলো কমালেই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে না। এখন সরকার কি করবে সেটা তার বিষয়।’

আইএমএফ প্রতিনিধিদল ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তাও জানতে চেয়েছে। এছাড়া লক্ষ্যভিত্তিক খেলাপিঋণ কমানো বিশেষ করে সরকারি মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ কমিয়ে আনা এবং প্রক্রিয়াধীন থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত আইনগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঋণ খেলাপি কারা সেটা সরকার জানে। এখন সরকার চাইলেই তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারে। কিন্তু সরকার হয়তো কোনো কারণে সেটা করছে না।’

আইএমএফ প্রতিনিধিদলের কাছে অর্থবিভাগ খেলাপি ঋণের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। অর্থবিভাগ জানিয়েছে, গত ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে খেলাপিঋণের পরিমাণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় ‘প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে’। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপিঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ শতাংশ।

আইএমএফের শর্তের আওতায়, আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের খেলাপিঋণ ৮ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকে পাঁচ শতাংশের নীচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নীচে নামানোর লক্ষ্য।

অর্থ বিভাগের সামাজিক সুরক্ষা শাখার সঙ্গেও বৈঠক করে সফররত মিশন। বাড়তি মূল্যস্ফীতি উল্লেখ করে যেসব লক্ষ্যভিত্তিক দরিদ্র জণগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে আসা উচিত তাদের আওতায় নিয়ে এর সম্প্রাসরণের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নানান অনিয়মের কারণে বিদ্যামান উপকারভোগীরাও সঠিভাবে ভাতা পান না- এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

ব্যাংকখাতে সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেছে আইএমএফের দল। বৈঠকে ডলারের বিনিময় মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে এতে ‘ইতিবাচক’ সাড়া দিয়েছে আইএমএফ।

‘ক্রলিং পেগ’ দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এতে মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেয়া হয়। আশির দশকে এই পদ্ধতি চালু হয় কয়েকটি দুর্বল অর্থনীতির দেশে।

বছরের পর বছর কর অবকাশ পাওয়া শিল্পখাতের সুবিধা বাতিল করার কথা বলেছে আইএমএফ। তবে সংস্থাটির পরামর্শ দেয়ার অনেক আগে থেকেই এনবিআর এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে এনবিআর বলছে যে সব পণ্যের জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, ওইসব খাতকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। ‘জটিল’ এমন সিদ্ধান্ত ‘হুটহাট’ করে নেয়া ‘সম্ভব হবে না’ বলে বলছে এনবিআর।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া শিল্পখাত বিবেচনা করলে দেশের অধিকাংশ খাতই চলে আসবে। ফার্মাসিটিক্যালস, কৃষি যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, ইলেট্রনিক্স, অটোমোবাইল, বাইসাইকেল, গাড়ির টায়ার, নির্মাণ সামগ্রীর স্বয়ংক্রিয় ইট কিংবা রড, রপ্তানির কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, পোল্ট্রি, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ও মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ-এমন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের শিল্প এর আওতায় চলে আসবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সবাই কর অব্যাহতি বললেও আমরা সেটাকে লজিস্টিক সাপোর্ট বলে থাকি। এ ধরনের অর্থনৈতিক পলিসি প্রতিটি দেশেই রয়েছে। আইএমএফ যেটা বলে আসছে, সেটা হলো ভর্তুকি কমানো। নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকি এটা এনবিআরের বিষয় না। ভর্তুকি আসলে এক ধরনের সাপোর্ট। আমরা ভর্তুকিকে সাপোর্টের পর্যায়ে নিয়ে যাবো। এ সব সাপোর্ট ধাপে ধাপে কমিয়ে আনবো, যাতে আমাদের উৎপাদনে ধস না নামে। সেটা আইএমএফও জানে। আমরা তাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। একসাথে সবকিছু মানা যাবে না।’

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আইএমএফ বলছে কর অবকাশ কমিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। আর এনবিআর বলছে, আমাদের অর্থনীতির স্বার্থে সেটা কমানো যাবে না। আমরা যদি বলি, কর অবকাশ করলে রাজস্ব আয় বাড়বে সেটাও তো দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে। এই মুহূর্তে সেটাই করা দরকার।’

একই সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদল আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নিয়ে জানতে চেয়েছেন। তাদের পরামর্শ বাজেটের আকার ও ঘাটতি কমিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর।

ছবি

আজ ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু

ছবি

৫৬ হাজার টন চুনাপাথর নিয়ে এসেছে এমভি আবদুল্লাহ

ছবি

হজযাত্রীর ভিসার সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

গরম কমলেও আছে লোডশেডিং, ভুক্তভোগী গ্রাম

ছবি

শ্রম আইন সংশোধনে আইএলও’র সঙ্গে আলোচনা চলছে : আইনমন্ত্রী

ছবি

ঢাকায় নগর বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.মনোয়ার হোসেন ‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৩’-এর জন্য মনোনীত

ছবি

‘সংখ্যায় ছেলেরা কম’ এবং ‘ফলাফলে পিছিয়ে’ কেন, খুঁজে দেখতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

পাসের হার কমেছে এসএসসি ভোকেশনালে

ছবি

শিক্ষার্থীরা স্মার্ট বাংলাদেশের সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠবে: প্রধানমন্ত্রী

ছবি

কুমিল্লা বোর্ডে বেড়েছে পাসের হার ও জিপিএ-৫

ছবি

এসএসসিতে পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর

ছবি

পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রত্যয়

ছবি

বাঙালির শক্তির মূল জায়গা হচ্ছে সংস্কৃতি : দীপু মনি

দেশের চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকার সব ধরণের পদক্ষেপ নেবে : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী

ছবি

অবৈধ অভিবাসীদের ফেরার জন্য ‘নিরাপদ’ বাংলাদেশ, ইতালির ঘোষণা

ছবি

মাটি ভরাট করে হাওরে আর রাস্তা হবে না: প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশের জলসীমায় এমভি আবদুল্লাহ, সোমবার পৌঁছাবে কুতুবদিয়া

ছবি

যে পরিকল্পনা হোক, সেটা পরিবেশবান্ধব হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

লঘুচাপের প্রভাবে ঝরছে বৃষ্টি, কমবে দিনের তাপমাত্রা

ছবি

দাম বাড়ছেই, বন্ধের দিনেও কম ক্রেতা সমাগম

ছবি

সহযোগিতা এগিয়ে নেবেন ডেভিড মিল: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

বিটিসিএলে চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে আন্দোলনে কর্মচারীরা

ছবি

সব দেশেরই উচিত মানবাধিকার উন্নয়নে একযোগে কাজ করা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

সবাই যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য কাজ করছি : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

প্রতিটি মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করতে সরকার কাজ করছে: প্রধানমন্ত্রী

ছবি

দেড় দশকে সবচেয়ে কম ভোট পড়ার রেকর্ড

ছবি

উন্নত যাত্রী সেবা ও দক্ষ বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনার স্বপ্ন বিমান মন্ত্রীর

ছবি

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক, দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা

ছবি

উপজেলা নির্বাচনে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে : ইসি আলমগীর

ছবি

হজযাত্রীদের আবেগ-অনুভূতিকে সম্মান দেখাতে হবে : ধর্মমন্ত্রী

ছবি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হলেন যারা

সীমান্ত হত্যা দুঃখজনক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কমাতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

tab

জাতীয়

আইএমএফের ঋণের শর্ত, টানাপড়েন, আলোচনায় কী

রেজাউল করিম

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

আইএমএফের ঋণের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শর্ত ‘পর্যাপ্ত’ রিজার্ভ না রাখতে পারলেও প্রথম দুই কিস্তির ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটি রাজস্ব বাড়ানোর শর্তও পূরণ হয়নি। এখন বাজেট ‘ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ বা ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে আইএমএফ। ১০ বছর কর অবকাশ পাওয়া শিল্পখাতের সুবিধা বাতিল করার সুপারিশও করেছে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার জানতে চেয়েছে ঋণ দেয়ার আন্তর্জাতিক এই সংস্থা।

ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে এখন বাংলাদেশে আছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। তারা বাংলাদেশকে দেয়া শর্তগুলো কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে সেগুলোর খোঁজ-খবর নিচ্ছে এবং বাস্তবায়নের ‘বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা’ করছে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

সম্প্রতি অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে ভর্তুকি নিয়ে বৈঠক করেছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। সূত্র জানায়, ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক সূত্র-ভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ। তবে সার্বিক বাজেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অন্যান্য খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

২০২২ সালে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি বা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এর সঙ্গে কিছু শর্ত জুড়ে দেয় সংস্থাটি।

শর্তগুলো মধ্যে আরও রয়েছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতের মতো সামাজিক ব্যয়ের জন্য সময়সীমার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন ও ভ্যাট আইন পাস করা এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কর্ম পরিকল্পনা করা, কর ছাড় কমানো এবং ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা।

আগামীতে শর্ত পুরণ না হলে বাংলাদেশের ঋণের কিস্তি পেতে ঝামেলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আইএমএফ মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের অর্থ দেবে। এর জন্য ধারাবাহিকভাবে সবগুলো শর্ত পুরণ করতে হবে। প্রথমদিকের কিছু শর্ত পুরণ হয়েছে, কিছু হয়নি। তারপরও দুটি কিস্তি এসেছে। এতে আমাদের আশ্বস্থ হওয়া ঠিক নয় যে বাকি শর্তগুলো পুরণ না হলেও পুরো কিস্তি পাবো।’

জাহিদ হোসেন বলছেন, ‘আইএমএফ মূলত রাজস্ব বাড়াতে বলেছে। সরকার কিভাবে রাজস্ব বাড়াবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের ভর্তুকি না কমিয়েও রাজস্ব বাড়াতে পারে। সেগুলো ভেবে দেখা উচিত। বিদ্যুৎ খাতে যেসব বাড়তি খরচ আছে সেগুলো কমালেই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে না। এখন সরকার কি করবে সেটা তার বিষয়।’

আইএমএফ প্রতিনিধিদল ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তাও জানতে চেয়েছে। এছাড়া লক্ষ্যভিত্তিক খেলাপিঋণ কমানো বিশেষ করে সরকারি মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ কমিয়ে আনা এবং প্রক্রিয়াধীন থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত আইনগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঋণ খেলাপি কারা সেটা সরকার জানে। এখন সরকার চাইলেই তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারে। কিন্তু সরকার হয়তো কোনো কারণে সেটা করছে না।’

আইএমএফ প্রতিনিধিদলের কাছে অর্থবিভাগ খেলাপি ঋণের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। অর্থবিভাগ জানিয়েছে, গত ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে খেলাপিঋণের পরিমাণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় ‘প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে’। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপিঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ শতাংশ।

আইএমএফের শর্তের আওতায়, আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের খেলাপিঋণ ৮ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকে পাঁচ শতাংশের নীচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নীচে নামানোর লক্ষ্য।

অর্থ বিভাগের সামাজিক সুরক্ষা শাখার সঙ্গেও বৈঠক করে সফররত মিশন। বাড়তি মূল্যস্ফীতি উল্লেখ করে যেসব লক্ষ্যভিত্তিক দরিদ্র জণগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে আসা উচিত তাদের আওতায় নিয়ে এর সম্প্রাসরণের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নানান অনিয়মের কারণে বিদ্যামান উপকারভোগীরাও সঠিভাবে ভাতা পান না- এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

ব্যাংকখাতে সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেছে আইএমএফের দল। বৈঠকে ডলারের বিনিময় মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে এতে ‘ইতিবাচক’ সাড়া দিয়েছে আইএমএফ।

‘ক্রলিং পেগ’ দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এতে মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেয়া হয়। আশির দশকে এই পদ্ধতি চালু হয় কয়েকটি দুর্বল অর্থনীতির দেশে।

বছরের পর বছর কর অবকাশ পাওয়া শিল্পখাতের সুবিধা বাতিল করার কথা বলেছে আইএমএফ। তবে সংস্থাটির পরামর্শ দেয়ার অনেক আগে থেকেই এনবিআর এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে এনবিআর বলছে যে সব পণ্যের জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, ওইসব খাতকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। ‘জটিল’ এমন সিদ্ধান্ত ‘হুটহাট’ করে নেয়া ‘সম্ভব হবে না’ বলে বলছে এনবিআর।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া শিল্পখাত বিবেচনা করলে দেশের অধিকাংশ খাতই চলে আসবে। ফার্মাসিটিক্যালস, কৃষি যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, ইলেট্রনিক্স, অটোমোবাইল, বাইসাইকেল, গাড়ির টায়ার, নির্মাণ সামগ্রীর স্বয়ংক্রিয় ইট কিংবা রড, রপ্তানির কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, পোল্ট্রি, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ও মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ-এমন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের শিল্প এর আওতায় চলে আসবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সবাই কর অব্যাহতি বললেও আমরা সেটাকে লজিস্টিক সাপোর্ট বলে থাকি। এ ধরনের অর্থনৈতিক পলিসি প্রতিটি দেশেই রয়েছে। আইএমএফ যেটা বলে আসছে, সেটা হলো ভর্তুকি কমানো। নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকি এটা এনবিআরের বিষয় না। ভর্তুকি আসলে এক ধরনের সাপোর্ট। আমরা ভর্তুকিকে সাপোর্টের পর্যায়ে নিয়ে যাবো। এ সব সাপোর্ট ধাপে ধাপে কমিয়ে আনবো, যাতে আমাদের উৎপাদনে ধস না নামে। সেটা আইএমএফও জানে। আমরা তাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। একসাথে সবকিছু মানা যাবে না।’

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আইএমএফ বলছে কর অবকাশ কমিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। আর এনবিআর বলছে, আমাদের অর্থনীতির স্বার্থে সেটা কমানো যাবে না। আমরা যদি বলি, কর অবকাশ করলে রাজস্ব আয় বাড়বে সেটাও তো দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে। এই মুহূর্তে সেটাই করা দরকার।’

একই সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদল আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নিয়ে জানতে চেয়েছেন। তাদের পরামর্শ বাজেটের আকার ও ঘাটতি কমিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর।

back to top