শিশুটির বাড়িতে বিএনপি নেতারা, দিলেন সহযোগিতার আশ্বাস অভিযুক্তদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা
মাগুরায় ধর্ষকের বাড়িতে ক্ষুব্ধ জনতার আগুন -সংবাদ
মাগুরার আলোচিত ৮ বছরের শিশুর বাড়িতে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে শোকের মাতম। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার ৮ দিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সিএমএইচে মারা যায়। ওইদিন রাতেই তার লাশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগাযোগে মাগুরায় আনা হয়। নিহতের মা আয়েশা আক্তার, বাবা ফেরদৌস শেখ, খালা রোকসানা বেগম, ফুপু মমতা বেগমসহ এলাকাবাসী বারবার কান্নায় ভেঙে পরছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত উৎসুক জনতা নিহতর বাড়িতে ভিড় করছে। এছাড়া শুক্রবার সকালে বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। এদিকে শুক্রবার দুপুরে মাগুরা প্রেসক্লাবের সামনে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে জেলা মহিলা পরিষদ। জুমার নামাজের পরে মাগুরা জেলা কারাগার প্রতিটি অবরুদ্ধ করে ছাত্র জনতার একটি অংশ।
আর্তনাদ থামছে না শিশুটির মায়ের, শোকে পাথর বাবা
ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুর পর মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের পরিবারটিতে হাহাকার চলছে। মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ যেনো কবরের নিরবতাও ভাঙছে। ছোট শিশুটিকে যে নিদারুণ কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে, তাতে মর্মমাহত পুরো গ্রামবাসী। শুক্রবার শিশুটির বাড়িতে দেখা যায়, তার মা বুক চাপড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। আশপাশের কোনো সান্ত¡নাই তাকে শান্ত করতে পারছে না। অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে চোখ থেকে। আহাজারি করে তিনি কেবলই ধর্ষকদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছেন। আর মেয়েটির প্রতিবন্ধী বাবা নির্বাক বসে আছেন। পরিবারে অন্য সদস্যরাও কান্নাকাটি করছেন। স্থানীয় সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পান্না খাতুন বলেন, তিনি পরিবারটির পাশে আছেন। তাদের সব ধরনের সহায়তা দেবেন।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে নিহতর বড় বোন হামিদা খাতুনকে অসুস্থ’ অবস্থায় মাগুরা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক সুমি আক্তার তার শারীরিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, হামিদা বর্তমানে মানসিক ট্রমার মধ্যে আছে। তার দুটি স্তনের ওপরে ব্লেড দিয়ে কাটার বেশ কিছু ক্ষত পাওয়া গেছে। তবে সেগুলোতে এখন আর কোনো ইনফেকশন নেই। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
শিশুর মা আয়েশা আক্তার বলেন, গত ২রা মার্চ তার বড় বোনের সঙ্গে তার শ্বশুর বাড়ি মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে যায়। সেখানে ৬ মার্চ ভোররাতে মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখ
(৪৫), স্বামী সজিব শেখ (১৮) ও ভাসুর রাতুল শেখ (২০) তার ওপর অমানবিক অত্যাচার চালায়। তিনি আশঙ্কা করেন ওই সময় শিশুটির বড় বোনকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পরিয়ে রাখা হয়েছিল। বর্বরোচিত এই কাজে হিটু শেখের স্ত্রী জায়েদা খাতুন সহযোগিতা করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি অবিলম্বে দায়ীদের বিচার করে ফাঁসির দাবি জানান।
অভিযুক্তদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা
এদিকে প্রথম নামাজে জানাজা শেষ হওয়ার পরেই বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী নৃশংসতম এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযুক্ত হিটু শেখের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে ও হাতুর দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। তারা বলেন পিতা-পুত্র মিলে শিশু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ইতিহাসের নিশংসতম অমানবিক এমন ঘটনা তাদেরকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের নাম নিশানা মুছে ফেলা উচিত। সে কাজই তারা করছেন।
শিশুটির বাড়িতে বিএনপি নেতারা
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া ৮ বছরের শিশুটির বাড়ি গেছেন বিএনপির নেতারা। এ সময় শিশুটির স্বজনদের সান্ত¡না দেয়ার পাশাপাশি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তারা। শিশুটির মৃত্যুর পর থেকে শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের পরিবারটিতে চলছে হাহাকার। মেয়েকে হারিয়ে মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশ। শুক্রবার সকালে শিশুটির বাড়িতে যান জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এ সময় তার সঙ্গে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলী ছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে শিশুটির পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন আফরোজা। সেইসঙ্গে ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আফরোজা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা সারা দেশকে নাড়া দিয়েছে। শুরু থেকেই আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। শিশুটির ন্যায় বিচারের পক্ষে মাঠে নেমেছি আমরা। ‘আমরা চাই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে। সেইসঙ্গে পরিবারটিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। আমাদের দল শিশুটির পরিবারের পাশে আছে।’
পরে শিশুটির বাড়িতে যান মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনোয়ার হোসেন খান। সেখানে তিনি শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। শিশুটির মা বলেন, কয়েক মাস আগে তার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামীর অসুস্থতার পর থেকে পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে। বিএনপি নেতাদের কাছে স্বামীর সুচিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। এ সময় শিশুটির বাবার চিকিৎসায় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত সহযোগিতা ছাড়াও দলগত ভাবে তাদের সহযোগিতা করবো আমরা। শিগগিরই শিশুটির বাবার চিকিৎসা করাতে ঢাকায় পাঠানো হবে।’ বৃহস্পতিবার থেকে শিশুটির বাড়িতে ভিড় করছেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। শিশুটির এক চাচা বলেন, ‘শিশুটির বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। আগে থেকে জানতে পারিনি ওরা এত খারাপ অবস্থায় আছে। ‘আমরা সবাই চাই, বাকি তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে যাতে পরিবারটি ভালো থাকে।’
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গত ৬ মার্চ শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। সেই খবরে সারা দেশে তৈরি হয় ক্ষোভ। এ ঘটনায় শিশুটির মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬ মার্চই তাকে ঢাকা মেডিকেলের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরে ৭ মার্চ রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। ৮ মার্চ শিশুটিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে অবশেষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে তাকে মাগুরা নেয়া হয়। এরপর শহরের নোমানী ময়দানে তার প্রথম জানাজা ও পরে শ্রীপুর উপজেলার শব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে স্থানীয় সোনাইকুন্ডি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। যার বাড়িতে গিয়ে মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছিল, সেই বোনও ধর্ষকদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী বলেন, ‘মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের মধ্যে হিটু শেখকে ৭ দিন ও অন্যদের ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’
শিশুটির বাড়িতে বিএনপি নেতারা, দিলেন সহযোগিতার আশ্বাস অভিযুক্তদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা
মাগুরায় ধর্ষকের বাড়িতে ক্ষুব্ধ জনতার আগুন -সংবাদ
শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
মাগুরার আলোচিত ৮ বছরের শিশুর বাড়িতে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে শোকের মাতম। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার ৮ দিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সিএমএইচে মারা যায়। ওইদিন রাতেই তার লাশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগাযোগে মাগুরায় আনা হয়। নিহতের মা আয়েশা আক্তার, বাবা ফেরদৌস শেখ, খালা রোকসানা বেগম, ফুপু মমতা বেগমসহ এলাকাবাসী বারবার কান্নায় ভেঙে পরছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত উৎসুক জনতা নিহতর বাড়িতে ভিড় করছে। এছাড়া শুক্রবার সকালে বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। এদিকে শুক্রবার দুপুরে মাগুরা প্রেসক্লাবের সামনে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে জেলা মহিলা পরিষদ। জুমার নামাজের পরে মাগুরা জেলা কারাগার প্রতিটি অবরুদ্ধ করে ছাত্র জনতার একটি অংশ।
আর্তনাদ থামছে না শিশুটির মায়ের, শোকে পাথর বাবা
ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুর পর মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের পরিবারটিতে হাহাকার চলছে। মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ যেনো কবরের নিরবতাও ভাঙছে। ছোট শিশুটিকে যে নিদারুণ কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে, তাতে মর্মমাহত পুরো গ্রামবাসী। শুক্রবার শিশুটির বাড়িতে দেখা যায়, তার মা বুক চাপড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। আশপাশের কোনো সান্ত¡নাই তাকে শান্ত করতে পারছে না। অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে চোখ থেকে। আহাজারি করে তিনি কেবলই ধর্ষকদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছেন। আর মেয়েটির প্রতিবন্ধী বাবা নির্বাক বসে আছেন। পরিবারে অন্য সদস্যরাও কান্নাকাটি করছেন। স্থানীয় সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পান্না খাতুন বলেন, তিনি পরিবারটির পাশে আছেন। তাদের সব ধরনের সহায়তা দেবেন।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে নিহতর বড় বোন হামিদা খাতুনকে অসুস্থ’ অবস্থায় মাগুরা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক সুমি আক্তার তার শারীরিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, হামিদা বর্তমানে মানসিক ট্রমার মধ্যে আছে। তার দুটি স্তনের ওপরে ব্লেড দিয়ে কাটার বেশ কিছু ক্ষত পাওয়া গেছে। তবে সেগুলোতে এখন আর কোনো ইনফেকশন নেই। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
শিশুর মা আয়েশা আক্তার বলেন, গত ২রা মার্চ তার বড় বোনের সঙ্গে তার শ্বশুর বাড়ি মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে যায়। সেখানে ৬ মার্চ ভোররাতে মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখ
(৪৫), স্বামী সজিব শেখ (১৮) ও ভাসুর রাতুল শেখ (২০) তার ওপর অমানবিক অত্যাচার চালায়। তিনি আশঙ্কা করেন ওই সময় শিশুটির বড় বোনকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পরিয়ে রাখা হয়েছিল। বর্বরোচিত এই কাজে হিটু শেখের স্ত্রী জায়েদা খাতুন সহযোগিতা করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি অবিলম্বে দায়ীদের বিচার করে ফাঁসির দাবি জানান।
অভিযুক্তদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা
এদিকে প্রথম নামাজে জানাজা শেষ হওয়ার পরেই বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী নৃশংসতম এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযুক্ত হিটু শেখের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে ও হাতুর দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। তারা বলেন পিতা-পুত্র মিলে শিশু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ইতিহাসের নিশংসতম অমানবিক এমন ঘটনা তাদেরকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের নাম নিশানা মুছে ফেলা উচিত। সে কাজই তারা করছেন।
শিশুটির বাড়িতে বিএনপি নেতারা
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া ৮ বছরের শিশুটির বাড়ি গেছেন বিএনপির নেতারা। এ সময় শিশুটির স্বজনদের সান্ত¡না দেয়ার পাশাপাশি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তারা। শিশুটির মৃত্যুর পর থেকে শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের পরিবারটিতে চলছে হাহাকার। মেয়েকে হারিয়ে মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশ। শুক্রবার সকালে শিশুটির বাড়িতে যান জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এ সময় তার সঙ্গে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলী ছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে শিশুটির পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন আফরোজা। সেইসঙ্গে ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আফরোজা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা সারা দেশকে নাড়া দিয়েছে। শুরু থেকেই আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। শিশুটির ন্যায় বিচারের পক্ষে মাঠে নেমেছি আমরা। ‘আমরা চাই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে। সেইসঙ্গে পরিবারটিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। আমাদের দল শিশুটির পরিবারের পাশে আছে।’
পরে শিশুটির বাড়িতে যান মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনোয়ার হোসেন খান। সেখানে তিনি শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। শিশুটির মা বলেন, কয়েক মাস আগে তার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামীর অসুস্থতার পর থেকে পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে। বিএনপি নেতাদের কাছে স্বামীর সুচিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। এ সময় শিশুটির বাবার চিকিৎসায় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত সহযোগিতা ছাড়াও দলগত ভাবে তাদের সহযোগিতা করবো আমরা। শিগগিরই শিশুটির বাবার চিকিৎসা করাতে ঢাকায় পাঠানো হবে।’ বৃহস্পতিবার থেকে শিশুটির বাড়িতে ভিড় করছেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। শিশুটির এক চাচা বলেন, ‘শিশুটির বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। আগে থেকে জানতে পারিনি ওরা এত খারাপ অবস্থায় আছে। ‘আমরা সবাই চাই, বাকি তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে যাতে পরিবারটি ভালো থাকে।’
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গত ৬ মার্চ শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। সেই খবরে সারা দেশে তৈরি হয় ক্ষোভ। এ ঘটনায় শিশুটির মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬ মার্চই তাকে ঢাকা মেডিকেলের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরে ৭ মার্চ রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। ৮ মার্চ শিশুটিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে অবশেষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে তাকে মাগুরা নেয়া হয়। এরপর শহরের নোমানী ময়দানে তার প্রথম জানাজা ও পরে শ্রীপুর উপজেলার শব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে স্থানীয় সোনাইকুন্ডি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। যার বাড়িতে গিয়ে মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছিল, সেই বোনও ধর্ষকদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী বলেন, ‘মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের মধ্যে হিটু শেখকে ৭ দিন ও অন্যদের ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’