alt

জাতীয়

ক্যাম্পাসে নেয়া হয়নি আরেফিন সিদ্দিককে, আজিমপুরে দাফন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

তিন দফা জানাজা শেষে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে। শুক্রবার বাবা-মায়ের কবরের পাশেই শেষ ঠিকানা হলো গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপকের।

রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।

গত ৬ মার্চ ইফতার কেনার জন্য ঢাকা ক্লাবে (রমনায়) গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার মধ্যেই পড়ে যান এই শিক্ষক। তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসা শুরুর পর অধ্যাপক আরেফিনকে নিউরো আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এর পর থেকে তিনি সেখানে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির গ্রিন রোড এলাকায় বায়তুল আকসা মসজিদে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অধ্যাপক আরেফিনের শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা অংশ নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানও জানাজায় অংশ নেন।

জানাজা শেষে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক অত্যন্ত বিনয়ী ও সজ্জন মানুষ ছিলেন। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় মসজিদে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যে সম্মাননা দেয়া হয়ে থাকে, অধ্যাপক আরেফিনকে তা আমরা পরিপূর্ণভাবে দিচ্ছি। তার অসুস্থতার সময় পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল।’

জুমার নামাজের পর ধানমন্ডির ঈদগাহ মসজিদে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত

হয়। এর কিছুক্ষণ পর ঈদগাহ মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াত আরেফিন সিদ্দিকের শিক্ষার্থী, সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও স্বজনেরা এই জানাজায় অংশ নেন। এই জানাজা শেষে অধ্যাপক আরেফিনের মরদেহ আজিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে মরদেহ দাফন করা হয়।

মৃত্যুকালে আরেফিন সিদ্দিক স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। বাবার অসুস্থতার খবরে রোববার তিনি দেশে ফিরেছেন।

ক্যাম্পাসে জানাজা না হওয়া নিয়ে সমালোচনা

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা ৮ বছর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন, তার শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের অনেকে চেয়েছিলেন সেই ক্যাম্পাসে তার অন্তত একটি জানাজা হোক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পাস বা শহীদ মিনারে আরেফিন সিদ্দিকের মরদেহ নেয়া হয়নি।

এবিষয়টি নিয়ে আরেফিন সিদ্দিকের শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অবশ্য এবিষয়ে আরেফিন সিদ্দিকের ছাত্র ও পরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তার সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম শুক্রবার সকালে ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘আরেফিন স্যারের জানাজা ঢাবিতে হতে বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটির (কর্তৃপক্ষ) কোনো বাধা বা অসহযোগিতা নেই। স্যারের পরিবার সেলফ সেন্সরড হয়ে ঢাবিতে জানাজার আয়োজন করছে না। ঢাবি পাবলিক রিলেশনস প্রধান তা-ই জানালেন।’

কর্ম ও ব্যক্তিজীবন

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকার ধানমন্ডিতে। তার পুরো নাম আবু আহসান মো. সামসুল আরেফিন সিদ্দিক। পৈতৃক নিবাস ছিল নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক প্রথম দফায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। এর প্রায় সাড়ে চার বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়। নির্বাচনের পর ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট প্যানেলে থাকা তিনজনের মধ্যে আরেফিন সিদ্দিককে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব দেয় সরকার।

উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার আগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের নেতা আরেফিন সিদ্দিক দুই মেয়াদে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান ও প্রেস ইনস্টিটিউটের সদস্যও ছিলেন তিনি। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সম্প্রচার বিষয়ক বেশ কিছু জাতীয় কমিটিতেও ছিলেন তিনি।

আরেফিন সিদ্দিক ১৯৬৯ সালে এসএসসি এবং ১৯৭১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৩ সালে বিএ এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে এমএ করেন তিনি। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেয়ার আগে বুয়েটের পিআর ছিলেন আরেফিন সিদ্দিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষে ১৯৮০ সালে এই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন আরেফিন সিদ্দিক। ভারতের মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন আরেফিন সিদ্দিক।

২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক। ২০১৭ সালে তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষ করে আবারও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০২০ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরে যান তিনি। অধ্যাপক আরেফিন একাধিকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যাওয়ার পর আরেফিন সিদ্দিক বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ছবি

রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান স্বেচ্ছা ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন: গুতেরেস

ছবি

ফরিদপুরে নানা আয়োজনে পল্লীকবি জসিম উদদীন এর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

ছবি

বিসিআইসি সড়ক: পলাশের অর্থনীতিতে নতুনভাবে গতি সঞ্চার

৭ দিনে গ্রেপ্তার ৩৮৩, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার: আইএসপিআর

ঢাকার বাতাস সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও অস্বাস্থ্যকর

এনআইডি প্রকল্পে ২২৩১ জনের চাকরি রাজস্ব খাতে নেয়ার দাবি

রংপুরে হত্যাচেষ্টা মামলা থেকে আসামিকে বাদ দেয়ার নামে থানায় তুলকালাম

অস্থির চালের বাজার, নতুন ধান না আসা পর্যন্ত স্বস্তির বার্তা নেই

দুই ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাপছে বাংলাদেশ ব্যাংক

খামারবাড়িতে বদলি ঘিরে ‘লঙ্কাকাণ্ড

বাইক টুকরো টুকরো, পাশে লাশ, পুলিশ বলছে ট্রাকের ধাক্কা

ছবি

ট্রেনে ঈদযাত্রা: পূর্বাঞ্চলের টিকেট বিক্রি শুরু

ছবি

‘লন্ডনে টাকা পাচার’: সালমান, ছেলে ও ভাতিজার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে জাতিসংঘের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার

ছবি

থামছে না মাগুরার শিশুটির স্বজনের কান্না, অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন

ছবি

রোহিঙ্গাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে জাতিসংঘ : অ্যান্তোনিও গুতেরেস

ছবি

আমাদের সমুদ্র আছে, আমরা যথেষ্ট ভাগ্যবান : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

ছবি

জাতিসংঘ মহাসচিবের সংস্কার কর্মসূচিতে সমর্থন ও রোহিঙ্গা সংকটে উদ্বেগ

ছবি

কক্সবাজার বিমানবন্দর পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

ছবি

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে জাতিসংঘ মহাসচিব

ছবি

খামারবাড়িতে বদলি ঘিরে লঙ্কাকাণ্ড

ভেনেজুয়েলায় বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন-নাবিকের মুক্তির চেষ্টা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

জেমকন গ্রুপের ৩৬ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ

ছবি

এনআইডি: দেশজুড়ে ইসি কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি

এলডিসি থেকে উত্তরণ আগামী বছরই, উপদেষ্টা পরিষদে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

৩০ দল নির্ধারিত সময়ে মতামত দেয়নি: ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ছয় মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি ধর্ষণ মামলার আসামি

যমুনা ও সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ : ডিএমপি

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ মামলার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু: আইন উপদেষ্টা

সর্বপ্রাণের নিরাপত্তা বিধান করতে হলে নদী রক্ষা করতে হবে

ছবি

ধর্ষণের শিকার মাগুরার শিশুটিকে বাঁচানো গেল না

ছবি

যশোরে প্রশিক্ষণ বিমানের ক্রাশ ল্যান্ডিং, অক্ষত দুই পাইলট

ছবি

সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের ভিত্তিহীন তথ্য ছড়াচ্ছে ভারতের গণমাধ্যম: বাংলাদেশ সরকার

tab

জাতীয়

ক্যাম্পাসে নেয়া হয়নি আরেফিন সিদ্দিককে, আজিমপুরে দাফন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

তিন দফা জানাজা শেষে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে। শুক্রবার বাবা-মায়ের কবরের পাশেই শেষ ঠিকানা হলো গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপকের।

রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।

গত ৬ মার্চ ইফতার কেনার জন্য ঢাকা ক্লাবে (রমনায়) গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার মধ্যেই পড়ে যান এই শিক্ষক। তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসা শুরুর পর অধ্যাপক আরেফিনকে নিউরো আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এর পর থেকে তিনি সেখানে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির গ্রিন রোড এলাকায় বায়তুল আকসা মসজিদে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অধ্যাপক আরেফিনের শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা অংশ নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানও জানাজায় অংশ নেন।

জানাজা শেষে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক অত্যন্ত বিনয়ী ও সজ্জন মানুষ ছিলেন। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় মসজিদে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যে সম্মাননা দেয়া হয়ে থাকে, অধ্যাপক আরেফিনকে তা আমরা পরিপূর্ণভাবে দিচ্ছি। তার অসুস্থতার সময় পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল।’

জুমার নামাজের পর ধানমন্ডির ঈদগাহ মসজিদে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত

হয়। এর কিছুক্ষণ পর ঈদগাহ মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াত আরেফিন সিদ্দিকের শিক্ষার্থী, সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও স্বজনেরা এই জানাজায় অংশ নেন। এই জানাজা শেষে অধ্যাপক আরেফিনের মরদেহ আজিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে মরদেহ দাফন করা হয়।

মৃত্যুকালে আরেফিন সিদ্দিক স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। বাবার অসুস্থতার খবরে রোববার তিনি দেশে ফিরেছেন।

ক্যাম্পাসে জানাজা না হওয়া নিয়ে সমালোচনা

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা ৮ বছর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন, তার শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের অনেকে চেয়েছিলেন সেই ক্যাম্পাসে তার অন্তত একটি জানাজা হোক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পাস বা শহীদ মিনারে আরেফিন সিদ্দিকের মরদেহ নেয়া হয়নি।

এবিষয়টি নিয়ে আরেফিন সিদ্দিকের শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অবশ্য এবিষয়ে আরেফিন সিদ্দিকের ছাত্র ও পরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তার সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম শুক্রবার সকালে ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘আরেফিন স্যারের জানাজা ঢাবিতে হতে বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটির (কর্তৃপক্ষ) কোনো বাধা বা অসহযোগিতা নেই। স্যারের পরিবার সেলফ সেন্সরড হয়ে ঢাবিতে জানাজার আয়োজন করছে না। ঢাবি পাবলিক রিলেশনস প্রধান তা-ই জানালেন।’

কর্ম ও ব্যক্তিজীবন

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকার ধানমন্ডিতে। তার পুরো নাম আবু আহসান মো. সামসুল আরেফিন সিদ্দিক। পৈতৃক নিবাস ছিল নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক প্রথম দফায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। এর প্রায় সাড়ে চার বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়। নির্বাচনের পর ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট প্যানেলে থাকা তিনজনের মধ্যে আরেফিন সিদ্দিককে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব দেয় সরকার।

উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার আগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের নেতা আরেফিন সিদ্দিক দুই মেয়াদে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান ও প্রেস ইনস্টিটিউটের সদস্যও ছিলেন তিনি। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সম্প্রচার বিষয়ক বেশ কিছু জাতীয় কমিটিতেও ছিলেন তিনি।

আরেফিন সিদ্দিক ১৯৬৯ সালে এসএসসি এবং ১৯৭১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৩ সালে বিএ এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে এমএ করেন তিনি। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেয়ার আগে বুয়েটের পিআর ছিলেন আরেফিন সিদ্দিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষে ১৯৮০ সালে এই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন আরেফিন সিদ্দিক। ভারতের মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন আরেফিন সিদ্দিক।

২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক। ২০১৭ সালে তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষ করে আবারও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০২০ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরে যান তিনি। অধ্যাপক আরেফিন একাধিকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যাওয়ার পর আরেফিন সিদ্দিক বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

back to top