গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি) নির্ধারণের বর্তমান পদ্ধতিকে ভৌতিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, যা মাত্র ৩০০ ডিভাইস ব্যবহার করে পরিচালিত হচ্ছে। টিআরপির মাধ্যমে টেলিভিশন চ্যানেলের জনপ্রিয়তা এবং বিজ্ঞাপনের দর নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু এই অল্প সংখ্যক ডিভাইসের মাধ্যমে তেমন নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়, দাবি করছে কমিশন।
টিআরপি ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য, যেমন দর্শকদের বয়স, লিঙ্গ, দেখার সময়, পছন্দের অনুষ্ঠান এবং আঞ্চলিক জনপ্রিয়তা নির্ধারণ করা হয়। এসব তথ্য বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ভিত্তিতেই তারা টেলিভিশন চ্যানেল নির্বাচন করে বিজ্ঞাপন দেয়। তবে, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এই পদ্ধতিকে অবিশ্বাস্য এবং বাস্তবায়নযোগ্য না বলে মন্তব্য করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে বিজ্ঞাপন। টেলিভিশন স্টেশনগুলোর রাজস্ব প্রায় পুরোপুরি বেসরকারি বিজ্ঞাপন থেকে আসে, কারণ সরকারি বিজ্ঞাপনগুলোর উপস্থিতি সীমিত। তাই টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে বেসরকারি বিজ্ঞাপনদাতাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। বিজ্ঞাপনদাতারা শুধুমাত্র দর্শক সংখ্যা দেখে বিজ্ঞাপন প্রদানে সিদ্ধান্ত নেন, তবে কমিশনের মতে, এই সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আরো অনেক জটিল বিষয় নিহিত থাকে, যা বর্তমানে শুধুমাত্র কিছু অল্প ডিভাইসের মাধ্যমে সঠিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব নয়।
এতে আরও বলা হয় যে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) টিআরপি সেবা প্রদান করার প্রস্তাব দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে এটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেয়। সেই অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে বিএসসিএল টিআরপি নির্ধারণের জন্য ৫০০ সেট-টপ বক্স স্থাপন করার শর্ত দেয়।
তবে, ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বিএসসিএল মাত্র ২০০ সেট-টপ বক্স ব্যবহার করছিল, এবং বর্তমানে ৩০০ সেট-টপ বক্সে তাদের কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে। কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, এভাবে এত কম ডিভাইস ব্যবহার করে টিআরপি নির্ধারণ করা একটি ভুল পদ্ধতি, যা কোনোভাবেই সঠিক ফলাফল দিতে সক্ষম নয়।
বিএসসিএলের কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, এই সংখ্যক ডিভাইসের মধ্যে সবগুলো সার্বক্ষণিকভাবে চালু থাকে না, এবং এই কারণে টিআরপি নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। কমিশন এর ফলস্বরূপ এ ধরনের সেবা শিল্পের জন্য কোনো উপকারী নয় বলেও মন্তব্য করেছে।
একুশে টিভির সঙ্গে বিএসসিএলের সম্পাদিত চুক্তির কপি বিশ্লেষণ করে কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ৫০০ ডিভাইস স্থাপন করার কথা ছিল। তবে চুক্তিতে বলা হয়নি যে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ কখন শুরু হবে, যার মাধ্যমে আরো ১০৬৮ ডিভাইস স্থাপন করার কথা ছিল। কমিশন এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছে যে, চুক্তির মধ্যে অসত্য তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং সরকারি নির্দেশনার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এছাড়া, টিআরপি সেবার জন্য বিএসসিএল প্রতি টেলিভিশন স্টেশনের কাছ থেকে মাসে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ফি নিচ্ছে এবং জামানত হিসেবে তিন মাসের ফি, অর্থাৎ ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। কমিশন বলেছে, এত কম ডিভাইস ব্যবহার করে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব নয় এবং এটি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে বিভ্রান্ত করেছে।
কমিশন আরো উল্লেখ করেছে যে, টিআরপি সেবার জন্য নির্ধারিত ডিভাইসের সংখ্যা এখনো ৫০০ হলেও, টিভি চ্যানেল মালিকরা বলেছেন যে, তারা এক লাখ ২৫ হাজার টাকার বেশি দিতে পারবেন না, এ কারণে ডিভাইস বসানোর কাজ থেমে আছে। বিএসসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি সমাধানের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং ঈদের পরেই এই বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হবে বলে আশা করছেন।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ জানান, কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো দ্রুত কার্যকর করা হবে।
এদিকে, কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছেন যে, টিআরপি ব্যবস্থার ত্রুটিগুলি সংশোধন করতে টেলিভিশন চ্যানেল এবং বিজ্ঞাপন শিল্পের প্রতিনিধিদের কার্যকর উপায় নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি) নির্ধারণের বর্তমান পদ্ধতিকে ভৌতিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, যা মাত্র ৩০০ ডিভাইস ব্যবহার করে পরিচালিত হচ্ছে। টিআরপির মাধ্যমে টেলিভিশন চ্যানেলের জনপ্রিয়তা এবং বিজ্ঞাপনের দর নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু এই অল্প সংখ্যক ডিভাইসের মাধ্যমে তেমন নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়, দাবি করছে কমিশন।
টিআরপি ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য, যেমন দর্শকদের বয়স, লিঙ্গ, দেখার সময়, পছন্দের অনুষ্ঠান এবং আঞ্চলিক জনপ্রিয়তা নির্ধারণ করা হয়। এসব তথ্য বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ভিত্তিতেই তারা টেলিভিশন চ্যানেল নির্বাচন করে বিজ্ঞাপন দেয়। তবে, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এই পদ্ধতিকে অবিশ্বাস্য এবং বাস্তবায়নযোগ্য না বলে মন্তব্য করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে বিজ্ঞাপন। টেলিভিশন স্টেশনগুলোর রাজস্ব প্রায় পুরোপুরি বেসরকারি বিজ্ঞাপন থেকে আসে, কারণ সরকারি বিজ্ঞাপনগুলোর উপস্থিতি সীমিত। তাই টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে বেসরকারি বিজ্ঞাপনদাতাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। বিজ্ঞাপনদাতারা শুধুমাত্র দর্শক সংখ্যা দেখে বিজ্ঞাপন প্রদানে সিদ্ধান্ত নেন, তবে কমিশনের মতে, এই সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আরো অনেক জটিল বিষয় নিহিত থাকে, যা বর্তমানে শুধুমাত্র কিছু অল্প ডিভাইসের মাধ্যমে সঠিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব নয়।
এতে আরও বলা হয় যে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) টিআরপি সেবা প্রদান করার প্রস্তাব দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে এটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেয়। সেই অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে বিএসসিএল টিআরপি নির্ধারণের জন্য ৫০০ সেট-টপ বক্স স্থাপন করার শর্ত দেয়।
তবে, ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বিএসসিএল মাত্র ২০০ সেট-টপ বক্স ব্যবহার করছিল, এবং বর্তমানে ৩০০ সেট-টপ বক্সে তাদের কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে। কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, এভাবে এত কম ডিভাইস ব্যবহার করে টিআরপি নির্ধারণ করা একটি ভুল পদ্ধতি, যা কোনোভাবেই সঠিক ফলাফল দিতে সক্ষম নয়।
বিএসসিএলের কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, এই সংখ্যক ডিভাইসের মধ্যে সবগুলো সার্বক্ষণিকভাবে চালু থাকে না, এবং এই কারণে টিআরপি নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। কমিশন এর ফলস্বরূপ এ ধরনের সেবা শিল্পের জন্য কোনো উপকারী নয় বলেও মন্তব্য করেছে।
একুশে টিভির সঙ্গে বিএসসিএলের সম্পাদিত চুক্তির কপি বিশ্লেষণ করে কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ৫০০ ডিভাইস স্থাপন করার কথা ছিল। তবে চুক্তিতে বলা হয়নি যে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ কখন শুরু হবে, যার মাধ্যমে আরো ১০৬৮ ডিভাইস স্থাপন করার কথা ছিল। কমিশন এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছে যে, চুক্তির মধ্যে অসত্য তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং সরকারি নির্দেশনার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এছাড়া, টিআরপি সেবার জন্য বিএসসিএল প্রতি টেলিভিশন স্টেশনের কাছ থেকে মাসে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ফি নিচ্ছে এবং জামানত হিসেবে তিন মাসের ফি, অর্থাৎ ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। কমিশন বলেছে, এত কম ডিভাইস ব্যবহার করে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব নয় এবং এটি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে বিভ্রান্ত করেছে।
কমিশন আরো উল্লেখ করেছে যে, টিআরপি সেবার জন্য নির্ধারিত ডিভাইসের সংখ্যা এখনো ৫০০ হলেও, টিভি চ্যানেল মালিকরা বলেছেন যে, তারা এক লাখ ২৫ হাজার টাকার বেশি দিতে পারবেন না, এ কারণে ডিভাইস বসানোর কাজ থেমে আছে। বিএসসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি সমাধানের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং ঈদের পরেই এই বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হবে বলে আশা করছেন।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ জানান, কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো দ্রুত কার্যকর করা হবে।
এদিকে, কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছেন যে, টিআরপি ব্যবস্থার ত্রুটিগুলি সংশোধন করতে টেলিভিশন চ্যানেল এবং বিজ্ঞাপন শিল্পের প্রতিনিধিদের কার্যকর উপায় নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।