‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পয়লা বৈশাখ সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হবে।
বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদ্যাপনের কর্মসূচি প্রণয়নের লক্ষ্যে আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও অফিসপ্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দপ্তর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদ্যাপনের সার্বিক প্রস্তুতি ও অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও উৎসবমুখর পরিবেশে নববর্ষ উদ্যাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য সায়মা হক বিদিশাকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটি এবং বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা নববর্ষে শোভাযাত্রা আয়োজনের কথা বলা হলেও একে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বলা হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সভায় স্পষ্ট করা হয় যে, এই শোভাযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু বছরের ঐতিহ্যের পরিচায়ক। এই ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আরও বড় পরিসরে, বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এবং লোক ঐতিহ্য ও ’২৪–এর চেতনাকে ধারণ করে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে।
শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে পয়লা বৈশাখ সকাল ৯টায় শুরু হবে। শোভাযাত্রাটি শিশুপার্কের সামনে থেকে ঘুরে শাহবাগ হয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গিয়ে শেষ হবে।
বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রার ঐতিহ্য ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে, যখন সামরিক শাসন বিরোধী তরুণরা একত্রিত হয়ে এই শোভাযাত্রা শুরু করেন। শোভাযাত্রায় তারা বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক, প্রাণীর মুখাবয়ব, মুখোশসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদান প্রদর্শন করেন, যা অশুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ২০১৬ সালে ইউনেসকো এই শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মামুন আহমেদ বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা অনেকের মধ্যে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করেছে। তবে এবার আমরা এই শোভাযাত্রাকে এমনভাবে সাজাতে চাই যাতে করে নেতিবাচক ধারণাটি দূর হয়।”
অধ্যাপক মামুন আহমেদ আরও বলেন, “নাম পরিবর্তনের বিষয়ে বিশেষ কোনো আলোচনা হয়নি, তবে কিছু একাডেমিক ব্যক্তিত্ব নাম পরিবর্তনের পক্ষেই ছিলেন। কিন্তু আমরা মূলত এই চর্চার উপর পরিবর্তন আনতে চাই, নামের পরিবর্তনের চেয়ে এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ক্যাম্পাসে মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে, চারুকলা অনুষদের তৈরি মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো এবং বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। বিকেল ৫টার পর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে না, তবে বের হওয়া যাবে। নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল রোববার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি ঢুকতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গেটগুলোর মাধ্যমে আসা-যাওয়া করতে হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট কিছু অংশে বন্ধ থাকবে, তবে ভিন্ন গেট দিয়ে ঢোকা ও বের হওয়া যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে, এবং মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার অনুরোধ করেছে এবং সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করা হবে।
এই বছরের নববর্ষ উদ্যাপনটি ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নতুন উদ্যমে এবং বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে সর্বজনীন অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাঙালির ঐতিহ্য আরও সমৃদ্ধ হতে চলেছে।
সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পয়লা বৈশাখ সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হবে।
বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদ্যাপনের কর্মসূচি প্রণয়নের লক্ষ্যে আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও অফিসপ্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দপ্তর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদ্যাপনের সার্বিক প্রস্তুতি ও অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও উৎসবমুখর পরিবেশে নববর্ষ উদ্যাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য সায়মা হক বিদিশাকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটি এবং বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা নববর্ষে শোভাযাত্রা আয়োজনের কথা বলা হলেও একে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বলা হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সভায় স্পষ্ট করা হয় যে, এই শোভাযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু বছরের ঐতিহ্যের পরিচায়ক। এই ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আরও বড় পরিসরে, বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এবং লোক ঐতিহ্য ও ’২৪–এর চেতনাকে ধারণ করে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে।
শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে পয়লা বৈশাখ সকাল ৯টায় শুরু হবে। শোভাযাত্রাটি শিশুপার্কের সামনে থেকে ঘুরে শাহবাগ হয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গিয়ে শেষ হবে।
বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রার ঐতিহ্য ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে, যখন সামরিক শাসন বিরোধী তরুণরা একত্রিত হয়ে এই শোভাযাত্রা শুরু করেন। শোভাযাত্রায় তারা বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক, প্রাণীর মুখাবয়ব, মুখোশসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদান প্রদর্শন করেন, যা অশুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ২০১৬ সালে ইউনেসকো এই শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মামুন আহমেদ বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা অনেকের মধ্যে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করেছে। তবে এবার আমরা এই শোভাযাত্রাকে এমনভাবে সাজাতে চাই যাতে করে নেতিবাচক ধারণাটি দূর হয়।”
অধ্যাপক মামুন আহমেদ আরও বলেন, “নাম পরিবর্তনের বিষয়ে বিশেষ কোনো আলোচনা হয়নি, তবে কিছু একাডেমিক ব্যক্তিত্ব নাম পরিবর্তনের পক্ষেই ছিলেন। কিন্তু আমরা মূলত এই চর্চার উপর পরিবর্তন আনতে চাই, নামের পরিবর্তনের চেয়ে এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ক্যাম্পাসে মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে, চারুকলা অনুষদের তৈরি মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো এবং বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। বিকেল ৫টার পর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে না, তবে বের হওয়া যাবে। নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল রোববার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি ঢুকতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গেটগুলোর মাধ্যমে আসা-যাওয়া করতে হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট কিছু অংশে বন্ধ থাকবে, তবে ভিন্ন গেট দিয়ে ঢোকা ও বের হওয়া যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে, এবং মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার অনুরোধ করেছে এবং সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করা হবে।
এই বছরের নববর্ষ উদ্যাপনটি ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নতুন উদ্যমে এবং বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে সর্বজনীন অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাঙালির ঐতিহ্য আরও সমৃদ্ধ হতে চলেছে।