কমিশনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন বাংলাদেশ জাসদের
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রদর্শনের যে সাংবিধানিক নির্দেশনা সেটি বিলুপ্তির (বাতিল) প্রস্তাব জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এজন্য শনিবার,(১১ অক্টোবর ২০২৫) মধ্যে মতামত জানতে চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সংবিধানের প্রথম ভাগে (প্রজাতন্ত্র) ৪ (ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।’
২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই অনুচ্ছেদ সংবিধানে আসে এবং ওই বছর ১০ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা একটি নির্দেশনার মধ্য দিয়ে এটি কার্যকর করা হয়।
সংবিধানের ৪ (ক) অনুচ্ছেদটি তুলে ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, “রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহের সঙ্গে জুলাই সনদ ২০২৫ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নবিষয়ক বৈঠক শেষ হয়েছে। এ পর্যায়ে কমিশন বিদ্যমান সংবিধানের ‘অনুচ্ছেদ ৪ (ক)’ বিলুপ্তির প্রস্তাব জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।”
এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত মতামত শনিবার বিকাল ৪টার মধ্যে কমিশন বরাবর অথবা কমিশনের ই-মেইলে বা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। এ বিষয়ে আরও তথ্য প্রয়োজন হলে ই-মেইলে অথবা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করার কথাও বলেছে কমিশন।
প্রশ্ন বাংলাদেশ জাসদের
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকবে কি না- এ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মতামত চাওয়ার পেছনে ‘অশুভ উদ্দেশ্য’ দেখছে বাংলাদেশ জাসদ। শনিবার দলের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। ওই চিঠির অনুলিপি সংবাদমাধ্যমেও পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঐকমত্য কমিশনের সভায় কমিশনের তরফে বলা হয়েছিল, জাতীয় সনদে আর কোনো পরিবর্তন গ্রহণ করা হবে না। সে অনুযায়ী কোনো দল জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে কোনো আলোচনা না করলেও খোদ কমিশন নতুন বিষয়ে দলগুলোর মতামত চাইছে। এটা ঐকমত্যের সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন ও অশুভ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
বাংলাদেশ জাসদ চিঠিতে বলেছে, ‘যে বিষয়টির অবতারণা করা হয়েছে, তা একটি রাজনৈতিক বিষয়। মাননীয় আদালত এ সংক্রান্ত এক রায়ে বলেছেন, রাজনৈতিক বিষয় আগামীতে নির্বাচিত জাতীয় সংসদে নির্ধারিত হবে। আমরা তা সঠিক বলে মনে করি।’
দলটি আরও বলেছে, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের যে বিধান সংবিধানের ৪ (ক) ধারায় সন্নিবেশিত হয়েছে তা বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- বাংলাদেশ জাসদ সমর্থন করে। একে বিলুপ্ত করার প্রস্তাবকে আমরা বিরোধিতা করি।’
*আলোচনা শুরু*
শির্ক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ওইদিনই দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তার তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।
শেখ হাসিনার পতনের পরপরই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তার পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকা না থাকার বিতর্ক আলোচনায় আসে। ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
গত বছরের ১১ নভেম্বর বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলার কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সেদিন তিনি নিজের ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, ‘বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে ৭১ পরবর্তী ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার যে, আমরা ৫ আগস্টের পর বঙ্গভবন থেকে তার ছবি সরাতে পারিনি। ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু, জুলাইয়ের চেতনা বেঁচে থাকা পর্যন্ত তাকে আর কোথাও দেখা যাবে না।’
এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর ২৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানো হয় ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষ থেকে। সেদিন ওই সম্মেলন কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের প্রথম ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। ব্রিফিং শুরুর আগে সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলা হয়।
কমিশনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন বাংলাদেশ জাসদের
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রদর্শনের যে সাংবিধানিক নির্দেশনা সেটি বিলুপ্তির (বাতিল) প্রস্তাব জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এজন্য শনিবার,(১১ অক্টোবর ২০২৫) মধ্যে মতামত জানতে চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সংবিধানের প্রথম ভাগে (প্রজাতন্ত্র) ৪ (ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।’
২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই অনুচ্ছেদ সংবিধানে আসে এবং ওই বছর ১০ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা একটি নির্দেশনার মধ্য দিয়ে এটি কার্যকর করা হয়।
সংবিধানের ৪ (ক) অনুচ্ছেদটি তুলে ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, “রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহের সঙ্গে জুলাই সনদ ২০২৫ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নবিষয়ক বৈঠক শেষ হয়েছে। এ পর্যায়ে কমিশন বিদ্যমান সংবিধানের ‘অনুচ্ছেদ ৪ (ক)’ বিলুপ্তির প্রস্তাব জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।”
এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত মতামত শনিবার বিকাল ৪টার মধ্যে কমিশন বরাবর অথবা কমিশনের ই-মেইলে বা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। এ বিষয়ে আরও তথ্য প্রয়োজন হলে ই-মেইলে অথবা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করার কথাও বলেছে কমিশন।
প্রশ্ন বাংলাদেশ জাসদের
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকবে কি না- এ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মতামত চাওয়ার পেছনে ‘অশুভ উদ্দেশ্য’ দেখছে বাংলাদেশ জাসদ। শনিবার দলের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। ওই চিঠির অনুলিপি সংবাদমাধ্যমেও পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঐকমত্য কমিশনের সভায় কমিশনের তরফে বলা হয়েছিল, জাতীয় সনদে আর কোনো পরিবর্তন গ্রহণ করা হবে না। সে অনুযায়ী কোনো দল জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে কোনো আলোচনা না করলেও খোদ কমিশন নতুন বিষয়ে দলগুলোর মতামত চাইছে। এটা ঐকমত্যের সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন ও অশুভ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
বাংলাদেশ জাসদ চিঠিতে বলেছে, ‘যে বিষয়টির অবতারণা করা হয়েছে, তা একটি রাজনৈতিক বিষয়। মাননীয় আদালত এ সংক্রান্ত এক রায়ে বলেছেন, রাজনৈতিক বিষয় আগামীতে নির্বাচিত জাতীয় সংসদে নির্ধারিত হবে। আমরা তা সঠিক বলে মনে করি।’
দলটি আরও বলেছে, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের যে বিধান সংবিধানের ৪ (ক) ধারায় সন্নিবেশিত হয়েছে তা বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- বাংলাদেশ জাসদ সমর্থন করে। একে বিলুপ্ত করার প্রস্তাবকে আমরা বিরোধিতা করি।’
*আলোচনা শুরু*
শির্ক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ওইদিনই দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তার তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।
শেখ হাসিনার পতনের পরপরই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তার পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকা না থাকার বিতর্ক আলোচনায় আসে। ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
গত বছরের ১১ নভেম্বর বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলার কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সেদিন তিনি নিজের ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, ‘বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে ৭১ পরবর্তী ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার যে, আমরা ৫ আগস্টের পর বঙ্গভবন থেকে তার ছবি সরাতে পারিনি। ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু, জুলাইয়ের চেতনা বেঁচে থাকা পর্যন্ত তাকে আর কোথাও দেখা যাবে না।’
এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর ২৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানো হয় ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষ থেকে। সেদিন ওই সম্মেলন কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের প্রথম ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। ব্রিফিং শুরুর আগে সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলা হয়।