বিষ দিয়ে মাছ ধরা ‘অত্যন্ত নিকৃষ্ট’ কাজ। এতে জীববৈচিত্র্য সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে : হাইকোর্ট
সুন্দরবনের অভ্যন্তরের খালগুলোতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ আহরণকে ‘অত্যন্ত নিকৃষ্ট’ কাজ বলে আখ্যায়িত করেছে উচ্চ আদালত। এক রায়ের পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত আশঙ্কা করছে, ‘বিষ প্রয়োগে মাছ আহরণ অব্যাহত থাকলে পুরো সুন্দরবন এলাকার মৎস্যশূন্য হয়ে যাবে। এমনকি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে।’
পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলছে, ‘সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য রক্ষায় কোনভাবেই কোন অন্যায় দাবির সঙ্গে আপোষ করা যাবে না।’
সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কাঁকড়া পরিবহনে ইঞ্জিনচালিত নৌকার ব্যবহার সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দেয় হাইকোর্ট।
প্রায় এক বছর আগে (১৬ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম (এখন আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ওই রায়ের ১৪ পৃষ্ঠার অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।
গত ৮ আগস্ট রায়ের অনুলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিটের পক্ষের আইনজীবী আল-ফয়সাল সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘রায়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেশকিছু অভিমত ও ৭টি নির্দেশনা এসেছে।’
রায়ে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য রক্ষায় যে সাতটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে-
১. রিটকারীরাসহ কাঁকড়া জেলেরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সুন্দরবনের সংশ্লিষ্ট স্টেশন অফিসে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করে পাস (অনুমতি) সংগ্রহ করে কেবল বৈঠা চালিত নৌকা এবং ‘দোন দড়ি’র মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজনের কাঁকড়া আহরণ করতে পারবেন।
২. কোন অবস্থাতেই সুন্দরবনের অভ্যন্তরে সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত এলাকার খালের ভেতরে কোন ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলার চলাচল করা যাবে না। এজন্য বন বিভাগসহ সুন্দরবনের অভ্যন্তরে চলাচলকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।
৩. পাস নিয়ে কাঁকড়া আহরণের জন্য সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের সময় বন বিভাগের স্টেশন অফিস থেকে কঠোরভাবে সংশ্লিষ্ট নৌকা ও নৌকার লোকদের পরীক্ষা করতে হবে। যাতে কোন প্রকার ‘চারু’ (কাঁকড়া ধরার জন্য বাঁশের শলা দ্বারা নির্মিত চাঁই, যা স্থানীয়ভাবে চারু নামে পরিচিত) এবং ‘বিষ’ কিংবা অন্য কোন বেআইনি জিনিস বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করাতে না পারে। এ ক্ষেত্রে দিনের বেলা তাদের নৌকা পরীক্ষা করে সুন্দরবনের প্রবেশের অনুমতি দেয়া সমীচীন হবে।
৪. প্রতিটি নৌকা পাস নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশকালে তাদের জন্য কী কী করণীয় এবং কী করা দন্ডনীয় সে সম্পর্কিত হ্যান্ডবিল/পোস্টার সরবরাহ করা যেতে পারে।
৫. যেহেতু সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবাহিত নদী ও খালগুলো থেকে মাছ আহরণ করে তা জেলেপল্লী দুবলা থেকে সংগ্রহ করে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলারের মাধ্যমে পরিবহন করে বাজারজাত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সেহেতু অনুরূপভাবে বৈঠাচালিত নৌকা দ্বারা কেবল ‘দোন দড়ি’ পদ্ধতিতে কাঁকড়া আহরণ করে তা দুবলা জেলে পল্লীসহ সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অন্য যেকোন স্বীকৃত স্থানে যেখানে ইঞ্জিনচালিত নৌকার/ ট্রলারের যাতায়াতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, সেখান থেকে সংগ্রহ করে দ্রুত বাজারজাত করার জন্য ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলারে পরিবহনের অনুমতি দিতে হবে।
এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত ইঞ্জিনচালিত নৌকা/ট্রলারে কাঁকড়া পরিবহনের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করতে হবে এবং ওইসব ইঞ্জিনচালিত নৌকা/ট্রলার সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশকালে স্থানীয় স্টেশন অফিস কর্তৃপক্ষ ওই নৌকা/ট্রলার কঠোরভাবে পরীক্ষা করে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেবে, যাতে কোন প্রকার বেআইনি জিনিস, যা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য ধ্বংস করতে পারে, তা যেন সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করাতে না পারে।
৬. সুন্দরবন সংলগ্ন স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কৃষি বিভাগ, মৎস্য বিভাগ ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়মিতভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন স্থানীয় বাজার, ওষুধের দোকানসহ কৃষির জন্য সার, ওষুধ ও বীজ বিক্রির দোকানগুলোতে অনুসন্ধান করতে হবে যাতে ওই এলাকায় অননুমোদিত কোন বিষ বিক্রি করা না হয়।
৭. পাস সংগ্রহ করে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশকালে কিংবা সুন্দরবনে অবস্থানকালে কাঁকড়া জেলেসহ মৎস্য জেলে ও অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছে কোনোরূপ বেআইনি দ্রব্য পাওয়া গেলে তাদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতেবে।
বিষ দিয়ে মাছ ধরা ‘অত্যন্ত নিকৃষ্ট’ কাজ। এতে জীববৈচিত্র্য সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে : হাইকোর্ট
বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট ২০২২
সুন্দরবনের অভ্যন্তরের খালগুলোতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ আহরণকে ‘অত্যন্ত নিকৃষ্ট’ কাজ বলে আখ্যায়িত করেছে উচ্চ আদালত। এক রায়ের পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত আশঙ্কা করছে, ‘বিষ প্রয়োগে মাছ আহরণ অব্যাহত থাকলে পুরো সুন্দরবন এলাকার মৎস্যশূন্য হয়ে যাবে। এমনকি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে।’
পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলছে, ‘সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য রক্ষায় কোনভাবেই কোন অন্যায় দাবির সঙ্গে আপোষ করা যাবে না।’
সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কাঁকড়া পরিবহনে ইঞ্জিনচালিত নৌকার ব্যবহার সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দেয় হাইকোর্ট।
প্রায় এক বছর আগে (১৬ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম (এখন আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ওই রায়ের ১৪ পৃষ্ঠার অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।
গত ৮ আগস্ট রায়ের অনুলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিটের পক্ষের আইনজীবী আল-ফয়সাল সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘রায়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেশকিছু অভিমত ও ৭টি নির্দেশনা এসেছে।’
রায়ে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য রক্ষায় যে সাতটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে-
১. রিটকারীরাসহ কাঁকড়া জেলেরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সুন্দরবনের সংশ্লিষ্ট স্টেশন অফিসে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করে পাস (অনুমতি) সংগ্রহ করে কেবল বৈঠা চালিত নৌকা এবং ‘দোন দড়ি’র মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজনের কাঁকড়া আহরণ করতে পারবেন।
২. কোন অবস্থাতেই সুন্দরবনের অভ্যন্তরে সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত এলাকার খালের ভেতরে কোন ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলার চলাচল করা যাবে না। এজন্য বন বিভাগসহ সুন্দরবনের অভ্যন্তরে চলাচলকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।
৩. পাস নিয়ে কাঁকড়া আহরণের জন্য সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের সময় বন বিভাগের স্টেশন অফিস থেকে কঠোরভাবে সংশ্লিষ্ট নৌকা ও নৌকার লোকদের পরীক্ষা করতে হবে। যাতে কোন প্রকার ‘চারু’ (কাঁকড়া ধরার জন্য বাঁশের শলা দ্বারা নির্মিত চাঁই, যা স্থানীয়ভাবে চারু নামে পরিচিত) এবং ‘বিষ’ কিংবা অন্য কোন বেআইনি জিনিস বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করাতে না পারে। এ ক্ষেত্রে দিনের বেলা তাদের নৌকা পরীক্ষা করে সুন্দরবনের প্রবেশের অনুমতি দেয়া সমীচীন হবে।
৪. প্রতিটি নৌকা পাস নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশকালে তাদের জন্য কী কী করণীয় এবং কী করা দন্ডনীয় সে সম্পর্কিত হ্যান্ডবিল/পোস্টার সরবরাহ করা যেতে পারে।
৫. যেহেতু সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবাহিত নদী ও খালগুলো থেকে মাছ আহরণ করে তা জেলেপল্লী দুবলা থেকে সংগ্রহ করে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলারের মাধ্যমে পরিবহন করে বাজারজাত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সেহেতু অনুরূপভাবে বৈঠাচালিত নৌকা দ্বারা কেবল ‘দোন দড়ি’ পদ্ধতিতে কাঁকড়া আহরণ করে তা দুবলা জেলে পল্লীসহ সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অন্য যেকোন স্বীকৃত স্থানে যেখানে ইঞ্জিনচালিত নৌকার/ ট্রলারের যাতায়াতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, সেখান থেকে সংগ্রহ করে দ্রুত বাজারজাত করার জন্য ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলারে পরিবহনের অনুমতি দিতে হবে।
এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত ইঞ্জিনচালিত নৌকা/ট্রলারে কাঁকড়া পরিবহনের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করতে হবে এবং ওইসব ইঞ্জিনচালিত নৌকা/ট্রলার সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশকালে স্থানীয় স্টেশন অফিস কর্তৃপক্ষ ওই নৌকা/ট্রলার কঠোরভাবে পরীক্ষা করে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেবে, যাতে কোন প্রকার বেআইনি জিনিস, যা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য ধ্বংস করতে পারে, তা যেন সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করাতে না পারে।
৬. সুন্দরবন সংলগ্ন স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কৃষি বিভাগ, মৎস্য বিভাগ ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়মিতভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন স্থানীয় বাজার, ওষুধের দোকানসহ কৃষির জন্য সার, ওষুধ ও বীজ বিক্রির দোকানগুলোতে অনুসন্ধান করতে হবে যাতে ওই এলাকায় অননুমোদিত কোন বিষ বিক্রি করা না হয়।
৭. পাস সংগ্রহ করে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশকালে কিংবা সুন্দরবনে অবস্থানকালে কাঁকড়া জেলেসহ মৎস্য জেলে ও অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছে কোনোরূপ বেআইনি দ্রব্য পাওয়া গেলে তাদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতেবে।