alt

জাতীয়

আজ বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস

ঝুঁকিতে মাটির উর্বরতা, রাসায়নিক ও জৈবসারের সমন্বিত ব্যবহারে গুরুত্বারোপ

শফিউল ইমরান : সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। অপরিকল্পিত চাষাবাদ, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান নগরায়ন, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস এবং অপরিকল্পিতভাবে সারের ব্যবহারে দেশের মাটি উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ইটভাটার জন্য মাটির উপরিভাগের অংশ তুলে নেয়া ছাড়াও টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে মাটি এখন হুমকির মুখে রয়েছে। এসব কারণে মাটির স্বাস্থ্যহীনতায় এখন প্রতি বছর ফসল উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

আন্তর্জাতিকভাবে আদর্শ মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ ৪৫ শতাংশ, অরগানিক ম্যাটেরিয়াল, ২৫ শতাংশ পানি এবং ২৫ শতাংশ বাতাস থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে গড়ে অরগানিক ম্যাটার বা জৈব পদার্থ ১ শতাংশেরও কমে চলে আসছে। ফলে দেশে মাটির উর্বরতা বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। উর্বরতা কমে যাওয়ায় ক্রমাগতভাবে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, একই জমিতে অধিক ফসল ফলানোতে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে বটে, কিন্তু, মাটির জৈব উপাদান আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। এর ফলে মাটির উর্বরতা যেমন কমছে তেমনি ক্রমাগতভাবে মাটির উর্বরতা ঝুঁকি বাড়ছে। এভাবেই যদি চলতে থাকে তাহলে একটা সময়ে গিয়ে ফসল উৎপাদনের হার কমে আসবে বলে মনে করছেন মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) ‘ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে আবাদি, বনভূমি, নদী, লেক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সুন্দরবন ইত্যাদি এলাকা মিলিয়ে জমির পরিমাণ এক কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে জৈব পদার্থের ঘাটতি রয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর বা মোট জমির প্রায় ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, ১৯৮০ সালে মোট জমির তুলনায় কৃষিজমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা ১৯৯০ সালে ৬৫ দশমিক ৫০ ও ২০০০ সালে ৫৯ দশমিক ৩০ শতাংশে নেমে আসে। কৃষিজমির পরিমাণ কমার এ হার পরবর্তী বছরগুলোতেও অব্যাহত ছিল। ২০১০ সালে মোট জমির মাত্র ৫৮ দশমিক ২০ শতাংশ ছিল কৃষিজমি, যা ২০১৯ সালে ৫৯ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমে আসে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত চাষাবাদ, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস এবং অপরিকল্পিতভাবে সারের ব্যবহারের কারণে মাটির উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ইটভাটার জন্য মাটির উপরিভাগের অংশ তুলে নেয়া ছাড়াও মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে মাটি এখন হুমকির মুখে রয়েছে। এসব কারণে মাটির স্বাস্থ্যহীনতায় এখন প্রতি বছর ফসল উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মাটিকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করায় উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে।

এসআরডিআই সূত্রে জানা গেছে, জনসংখ্যার চাপের কারণে একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনের ফলে আমাদের জমি থেকে যে পরিমাণ ফসল উৎপন্ন হচ্ছে সেই পরিমাণ জৈব পদার্থ যুক্ত করতে না পারার কারণে মাটির জৈব পদার্থ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও কমে যাচ্ছে। আগে যে জমিতে ৫-৬ মণ ধান উৎপন্ন হতো এখন সেখানে ৩০ মণ ধান উৎপন্ন হচ্ছে। জমি এই পুষ্টি মাটি থেকে নিলেও সেই হারে মাটিকে ‘পুষ্টি’ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আগে যেখানে বছরে একটা ফসল চাষ হতো, এখন দুই তিনটা।

তাদের মতামত; জৈব ও রাসায়নিক সারের ‘সমন্বিতভাবে প্রয়োগ’ করতে হবে। তাহলে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। উর্বরতা ক্ষমতা অক্ষত থাকবে।

এসআরডিআই এর এসআরএসআরএফ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ড. আবদুল বারী সংবাদকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি কৃষকরা সাধারণত প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার ব্যাবহার করছে। কখনো প্রয়োজনীয় সার অল্প পরিমানে লাগে যেমন- জিঙ্ক, বোরন. সালফার এসব সারের ঘাটতি দেখা যায়। অনেক কৃষক এইসব সার না প্রয়োগ করেই অনুমান নির্ভর ইউরিয়া ও অন্য সারের ব্যবহার বেশি করছে। আমরা সারাদেশের মাটির নমুনা নিয়ে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেছি যে, মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সার প্রয়োগ করলে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

তিনি মনে করেন, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ কৃষকই মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই যত্রতত্র সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করছে। লাগামহীন এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে মানুষ যেমন স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়েছে অনুরুপভাবে কৃষিতে কোন রকম পরীক্ষা নীরিক্ষা ছাড়াই সার এবং কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটিও স্থায়ীভাবে হারিয়ে ফেলছে উর্বরতা শক্তি। এসআরডিআই এর মহাপরিচালক (ডিজি) মো. কামারুজ্জামান সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের অনেক প্রযুক্তি আছে। তার মধ্যে একটি মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সার প্রয়োগ। কৃষকরা যদি জমিতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করে তবে ফলন বৃদ্ধি পাবে। এসআরডিআই এই কৃষি প্রযুক্তি কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক লাভবান হবে।

তিনি মনে করেন, ‘কৃষক জমিতে অন্যসার না দিয়ে ইউরিয়া প্রয়োগ করে। আমরা বলি, এটা বিজ্ঞান ভিত্তিক হচ্ছেনা, এটা সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ হচ্ছেনা। এরফলে, একদিকে যেমন আমাদের অর্থের অপচয় হয় তেমনি জমির স্বাস্থ্য নষ্ট হয় আর ফলন কমে যায়। পাশাপাশি সরকার যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যায় করে সার আমদানি করে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের মাঝে দিচ্ছেন তাতে সরকারেরও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।’

অচিরেই জমির উর্বরতা শক্তি রক্ষার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন না করলে কৃষি উৎপাদনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থায় আজ পালিত হবে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য-‘মাটি : খাদ্যের সূচনা যেখানে’

দিবসটি উপলেক্ষ্যে সকাল ১০টায় খামারবাড়ির কেআইবি মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে ‘সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার’ দেয়া হবে।

‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২’ উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাটির প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, ‘গত প্রায় তিন বছর যাবৎ সারা পৃথিবীতে করোনা অতিমারীর দুর্যোগ ও বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গোটা বিশ্বে খাদ্য সংকট প্রকট হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক জলবায়ুর সমস্যা। বর্তমান সময়ের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। আর খাদ্য উৎপাদনের মূল উপাদান মাটি। তাই মাটির প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।’

ছবি

থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

মৃত্যুর দু’বছর পর ব্রুনাই থেকে ফিরছে দুই বাংলাদেশির লাশ

ছবি

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হলেন এম ইউ কবীর চৌধুরী

বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে : মানবাধিকার কমিশন

ছবি

১৫ বছরে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি: এলজিআরডি মন্ত্রী

ছবি

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি

ছবি

যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

গ্যাস সংকটে আগামীর ‘ভরসা’ এলএনজি

ছবি

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর : ‘আমার স্বপ্নও ভেঙে গেছে’

ছবি

এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়লো আরও ৩ দিন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এর যৌথ অংশগ্রহণে টিএল-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

শিশু অধিকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ--স্পীকার

ছবি

দু’দিনের সফরে কাতারের আমির ঢাকায়

ছবি

পাঁচ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া

ছবি

আনু মুহাম্মদের পায়ে ‌‘কম্বাইন্ড অপারেশন’ দরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, বাড়লো আরও ৩ দিন

tab

জাতীয়

আজ বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস

ঝুঁকিতে মাটির উর্বরতা, রাসায়নিক ও জৈবসারের সমন্বিত ব্যবহারে গুরুত্বারোপ

শফিউল ইমরান

সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। অপরিকল্পিত চাষাবাদ, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান নগরায়ন, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস এবং অপরিকল্পিতভাবে সারের ব্যবহারে দেশের মাটি উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ইটভাটার জন্য মাটির উপরিভাগের অংশ তুলে নেয়া ছাড়াও টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে মাটি এখন হুমকির মুখে রয়েছে। এসব কারণে মাটির স্বাস্থ্যহীনতায় এখন প্রতি বছর ফসল উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

আন্তর্জাতিকভাবে আদর্শ মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ ৪৫ শতাংশ, অরগানিক ম্যাটেরিয়াল, ২৫ শতাংশ পানি এবং ২৫ শতাংশ বাতাস থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে গড়ে অরগানিক ম্যাটার বা জৈব পদার্থ ১ শতাংশেরও কমে চলে আসছে। ফলে দেশে মাটির উর্বরতা বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। উর্বরতা কমে যাওয়ায় ক্রমাগতভাবে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, একই জমিতে অধিক ফসল ফলানোতে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে বটে, কিন্তু, মাটির জৈব উপাদান আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। এর ফলে মাটির উর্বরতা যেমন কমছে তেমনি ক্রমাগতভাবে মাটির উর্বরতা ঝুঁকি বাড়ছে। এভাবেই যদি চলতে থাকে তাহলে একটা সময়ে গিয়ে ফসল উৎপাদনের হার কমে আসবে বলে মনে করছেন মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) ‘ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে আবাদি, বনভূমি, নদী, লেক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সুন্দরবন ইত্যাদি এলাকা মিলিয়ে জমির পরিমাণ এক কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে জৈব পদার্থের ঘাটতি রয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর বা মোট জমির প্রায় ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, ১৯৮০ সালে মোট জমির তুলনায় কৃষিজমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা ১৯৯০ সালে ৬৫ দশমিক ৫০ ও ২০০০ সালে ৫৯ দশমিক ৩০ শতাংশে নেমে আসে। কৃষিজমির পরিমাণ কমার এ হার পরবর্তী বছরগুলোতেও অব্যাহত ছিল। ২০১০ সালে মোট জমির মাত্র ৫৮ দশমিক ২০ শতাংশ ছিল কৃষিজমি, যা ২০১৯ সালে ৫৯ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমে আসে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত চাষাবাদ, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস এবং অপরিকল্পিতভাবে সারের ব্যবহারের কারণে মাটির উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ইটভাটার জন্য মাটির উপরিভাগের অংশ তুলে নেয়া ছাড়াও মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে মাটি এখন হুমকির মুখে রয়েছে। এসব কারণে মাটির স্বাস্থ্যহীনতায় এখন প্রতি বছর ফসল উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মাটিকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করায় উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে।

এসআরডিআই সূত্রে জানা গেছে, জনসংখ্যার চাপের কারণে একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনের ফলে আমাদের জমি থেকে যে পরিমাণ ফসল উৎপন্ন হচ্ছে সেই পরিমাণ জৈব পদার্থ যুক্ত করতে না পারার কারণে মাটির জৈব পদার্থ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও কমে যাচ্ছে। আগে যে জমিতে ৫-৬ মণ ধান উৎপন্ন হতো এখন সেখানে ৩০ মণ ধান উৎপন্ন হচ্ছে। জমি এই পুষ্টি মাটি থেকে নিলেও সেই হারে মাটিকে ‘পুষ্টি’ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আগে যেখানে বছরে একটা ফসল চাষ হতো, এখন দুই তিনটা।

তাদের মতামত; জৈব ও রাসায়নিক সারের ‘সমন্বিতভাবে প্রয়োগ’ করতে হবে। তাহলে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। উর্বরতা ক্ষমতা অক্ষত থাকবে।

এসআরডিআই এর এসআরএসআরএফ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ড. আবদুল বারী সংবাদকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি কৃষকরা সাধারণত প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার ব্যাবহার করছে। কখনো প্রয়োজনীয় সার অল্প পরিমানে লাগে যেমন- জিঙ্ক, বোরন. সালফার এসব সারের ঘাটতি দেখা যায়। অনেক কৃষক এইসব সার না প্রয়োগ করেই অনুমান নির্ভর ইউরিয়া ও অন্য সারের ব্যবহার বেশি করছে। আমরা সারাদেশের মাটির নমুনা নিয়ে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেছি যে, মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সার প্রয়োগ করলে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

তিনি মনে করেন, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ কৃষকই মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই যত্রতত্র সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করছে। লাগামহীন এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে মানুষ যেমন স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়েছে অনুরুপভাবে কৃষিতে কোন রকম পরীক্ষা নীরিক্ষা ছাড়াই সার এবং কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটিও স্থায়ীভাবে হারিয়ে ফেলছে উর্বরতা শক্তি। এসআরডিআই এর মহাপরিচালক (ডিজি) মো. কামারুজ্জামান সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের অনেক প্রযুক্তি আছে। তার মধ্যে একটি মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সার প্রয়োগ। কৃষকরা যদি জমিতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করে তবে ফলন বৃদ্ধি পাবে। এসআরডিআই এই কৃষি প্রযুক্তি কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক লাভবান হবে।

তিনি মনে করেন, ‘কৃষক জমিতে অন্যসার না দিয়ে ইউরিয়া প্রয়োগ করে। আমরা বলি, এটা বিজ্ঞান ভিত্তিক হচ্ছেনা, এটা সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ হচ্ছেনা। এরফলে, একদিকে যেমন আমাদের অর্থের অপচয় হয় তেমনি জমির স্বাস্থ্য নষ্ট হয় আর ফলন কমে যায়। পাশাপাশি সরকার যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যায় করে সার আমদানি করে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের মাঝে দিচ্ছেন তাতে সরকারেরও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।’

অচিরেই জমির উর্বরতা শক্তি রক্ষার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন না করলে কৃষি উৎপাদনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থায় আজ পালিত হবে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য-‘মাটি : খাদ্যের সূচনা যেখানে’

দিবসটি উপলেক্ষ্যে সকাল ১০টায় খামারবাড়ির কেআইবি মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে ‘সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার’ দেয়া হবে।

‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২’ উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাটির প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, ‘গত প্রায় তিন বছর যাবৎ সারা পৃথিবীতে করোনা অতিমারীর দুর্যোগ ও বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গোটা বিশ্বে খাদ্য সংকট প্রকট হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক জলবায়ুর সমস্যা। বর্তমান সময়ের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। আর খাদ্য উৎপাদনের মূল উপাদান মাটি। তাই মাটির প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।’

back to top