দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে আবার নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে যাকেই প্রার্থী করি, সেটা কানা-খোঁড়া যেই হোক, তাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।’
জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এবং যেকোনো সময় তফসিল ঘোষণা করা হবে উল্লেখ করে জনসভা থেকে নিজ দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা।
শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আরামবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেট্রোরেলে চড়ে মতিঝিল
এলেন শেখ হাসিনা
দুপুরে প্রধানমন্ত্রী আগাঁরগাও প্রান্তে মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-৬) আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন শেষে টিকেট কেটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল প্রথম মেট্রোরেল যাত্রায় অংশ নিয়ে মতিঝিল যান। সেখানে এমআরটি লাইন-৫ এর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। যেটি হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল।
এরপর আরামবাগের জনসভায় যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ ও পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মজুরি কমিশন বসেছে। ধৈর্য ধরতে হবে। কারা উসকানি দিচ্ছে, সেটা আমরা জানি- যারা ভাঙচুরে জড়িত, বিএনপির নেতাকর্মীদের বলব হুকুমদাতা দেশেই থাকুক বিদেশেই থাকুক। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি আর ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ গ্রহণ করে হুকুমজারি করছে। ওই বিদেশ থেকে ধরে এনে বাংলাদেশে শাস্তি দেব ওই কুলাঙ্গারকে। কেউ ছাড়া পাবে না।’
পোশাকশ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘অন্যের কথায় নেচে কারখানায় হামলা করে, কারখানা ভেঙে, সেখানে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের ক্ষতি করলে নিজেরই ক্ষতি হবে। আর কারখানা বন্ধ করলে ওই গ্রামেই ফিরে যেতে হবে। বিনা কাজে জীবনযাপন করতে হবে।’
সবার দোয়া চেয়ে দলয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন এবং ঘাতকের দল, সন্ত্রাসী দল বিএনপি এবং যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত-এরা যেন এদেশের মানুষকে আর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতে না পারে। অত্যাচার করতে না পারে। এর জন্য সজাগ থাকতে হবে। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জ্বালাও-পোড়াও এটাই বিএনপির উৎসব, এটাই তাদের চরিত্র। তাদের আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন করা, ধ্বংস করা, পুলিশের ওপর হামলা করা। কীভাবে এটা বন্ধ করতে হয় সেটা আমাদের জানা আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি মানেই ধ্বংসের রাজনীতি। ২৮ অক্টোবর পুলিশ যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। অথচ তারা কী করল? রাস্তায় পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করল, আওয়ামী লীগ ও মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করল। এটাই কি রাজনীতি?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজশাহীতে মাটিতে ফেলে পুলিশ হত্যা করেছিল, সেটা স্মরণ রাখা দরকার। আমি ঢাকার মানুষকে বলব, যারা আগুন দিতে আসবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ঢাকাবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট পেয়েছি বলেই আজকে এত উন্নতি হচ্ছে। সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখে। আগামী নির্বাচনের তফসিল যেকোনো সময় ঘোষণা হবে। আগামী নির্বাচনে কাকে নমিনেশন দেয়া হবে সেটা আমরাই ঠিক করে দেব। যাকেই প্রার্থী করি, সেটা কানা, খোঁড়া যেই হোক, তাদের নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। করবেন কি না হাত তুলে ওয়াদা করেন।’ এ সময় উপস্থিত জনতা হাত নেড়ে সমর্থন জানান।
তিনি বলেন, ‘এখনও অনেক উন্নয়ন কাজ বাকি। সেগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি। কারণ, অগ্নিসন্ত্রাসী এবং জঙ্গিবাদীরা ক্ষমতায় এলে এ দেশকে আর টিকতে দেবে না। সেজন্যই জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ একমাত্র নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা ও উন্নয়ন দিতে মন্তব্য করে নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের জন্য শেখ হাসিনা সবার প্রতি বিশেষ করে ঢাকাবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান।
বার বার হত্যাচেষ্টাতেও তিনি ভীত নন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি এবং বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই আবার পাওয়ারও কিছু নেই। একটাই লক্ষ্য এই দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সোনার বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই। এই ঢাকার মানুষের জন্য আজকে আমরা নিয়ে এসেছি মেট্রোরেল। যারা উত্তরা বসবাস করে, তারা মাত্র ৩৮ মিনিটে মতিঝিল পৌঁছে যাবেন। যানজটে কষ্ট পেতে হবে না, রাস্তায় আটকে থাকতে হবে না। এই ঢাকায় যারা চাকরিজীবী, যারা কর্মজীবী, ছাত্র-শিক্ষক সকলে, বিশেষ করে আমার মেয়েরা, নারীরা, নিরাপদে চলাচল করতে পারবে এই মেট্রো রেলে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ও জাতির পিতার আদর্শের সৈনিকদের অবদানেই হচ্ছে আজকের স্বাধীনতা, তাদের অবদানই হচ্ছে আজকের উন্নয়ন।’
তিনি বলেন, ‘এমন একটি দেশে ফিরে এসেছিলাম যেখানে স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতায় ছিল। যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায় ছিল। প্রতিনিয়ত আমার ওপর আঘাত আসে। আমার নেতাকর্মীরা মানব ঢাল করে আমাকে রক্ষা করে। আল্লাহর রহমত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কারণে বার বার ফিরে এসেছি।’
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, জাতির পিতার মতো আমিও নিজেকে দেশের জন্য উৎসর্গ করলাম। বিএনপি দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে, আর আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা আকাশপথে মেট্রোরেলে করেছি, এখন পাতাল রেলের কাজ চলবে। সেটি নিয়েও কাজ চলছে। মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছি। রুটটি হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা হয়ে গাবতলী, মিরপুর-১০, গুলশান পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘পানির সমস্যা, বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসন করেছি। হাতিরঝিলকে দৃষ্টিনন্দন করেছি। দেশে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া মিলে ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। দেশে পানি নাই, রাস্তাঘাট নেই অভাব আর অভাব। এ সময় মানুষ ছিল অন্ধকারে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সামরিক-বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। সেই জিয়াউর রহমানের দলই বিএনপি। তারা গ্যাস বিক্রির জন্য মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসে। এসে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে। আর আমরা ক্ষমতায় এসে রাস্তাঘাট, কালভার্ট, ব্রিজ নির্মাণ করেছি। মাংস, ডিম, মাছ, শাক, সবজি উৎপাদন বাড়িয়েছি। সারাদেশে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কমিউনিটি হাসপাতাল করেছি।’
বিএনপি নেতারা ‘গুহায় ঢুকে গেছে’ : কাদের
‘বিএনপি নেতারা এখন গুহায় ঢুকে গেছে’- জনসভায় এমন মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ২৮ অক্টোবর ‘কেউ হরতাল ঘোষণার জন্য টেনে ধরেছিল’, দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘(মির্জা ফখরুল) মাইকে প্রথমে অর্ধদিবস হরতালের ঘোষণা দিল। পরে আবার হাতমাইকে সারা দিন হরতাল বলে ঘোষণা দিল। এরপরেই দৌড়। পালাবার পথ নাকি আমরা (আওয়ামী লীগ) পাব না। এখন তাদের পালাবার পথ কোথায়?’
বিএনপি নেতা আমীর খসরু, গয়েশ্বর রায়সহ অন্যরা কোথায়- প্রশ্ন করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এত সাহস, এত বীর পুরুষ। তারা এখন কোথায়? শেখ হাসিনা তো আছেন। কিন্তু বিএনপির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কিছু না পেয়ে তারা এখন গুহার মধ্যে ঢুকেছে। গুহা থেকে প্রেস কনফারেন্স করে।’ গত ২৮ অক্টোবর কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা হয়ে গেছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, সেই খেলায় আওয়ামী লীগ জিতে গেছে। সামনে সেমিফাইনাল আর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ফাইনাল খেলা হবে।
‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ ধ্বংস করবে; রক্তের বন্যা, লাশের পাহাড় বানিয়ে ফেলবে’- এমন মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) হাতে বাংলাদেশকে তুলে দেয়া যাবে না। সতর্ক পাহারায় ফাইনাল খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। জাতির স্বার্থে নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে আবার বিজয়ী করতে হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফির সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুয়ায়ুন কবির প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ।
সকাল থেকেই আরমবাগ এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঢল নামে। জনসভা সফল করতে ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের এলাকা থেকেও হাজির হন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। শত শত বাস ও অন্যান্য যানবাহন নিয়ে আসা ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা জমায়েত হন আরামবাগে। গোটা এলাকা ছেয়ে যায় ব্যানার-ফেস্টুনে।
শনিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৩
দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে আবার নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে যাকেই প্রার্থী করি, সেটা কানা-খোঁড়া যেই হোক, তাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।’
জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এবং যেকোনো সময় তফসিল ঘোষণা করা হবে উল্লেখ করে জনসভা থেকে নিজ দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা।
শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আরামবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেট্রোরেলে চড়ে মতিঝিল
এলেন শেখ হাসিনা
দুপুরে প্রধানমন্ত্রী আগাঁরগাও প্রান্তে মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-৬) আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন শেষে টিকেট কেটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল প্রথম মেট্রোরেল যাত্রায় অংশ নিয়ে মতিঝিল যান। সেখানে এমআরটি লাইন-৫ এর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। যেটি হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল।
এরপর আরামবাগের জনসভায় যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ ও পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মজুরি কমিশন বসেছে। ধৈর্য ধরতে হবে। কারা উসকানি দিচ্ছে, সেটা আমরা জানি- যারা ভাঙচুরে জড়িত, বিএনপির নেতাকর্মীদের বলব হুকুমদাতা দেশেই থাকুক বিদেশেই থাকুক। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি আর ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ গ্রহণ করে হুকুমজারি করছে। ওই বিদেশ থেকে ধরে এনে বাংলাদেশে শাস্তি দেব ওই কুলাঙ্গারকে। কেউ ছাড়া পাবে না।’
পোশাকশ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘অন্যের কথায় নেচে কারখানায় হামলা করে, কারখানা ভেঙে, সেখানে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের ক্ষতি করলে নিজেরই ক্ষতি হবে। আর কারখানা বন্ধ করলে ওই গ্রামেই ফিরে যেতে হবে। বিনা কাজে জীবনযাপন করতে হবে।’
সবার দোয়া চেয়ে দলয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন এবং ঘাতকের দল, সন্ত্রাসী দল বিএনপি এবং যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত-এরা যেন এদেশের মানুষকে আর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতে না পারে। অত্যাচার করতে না পারে। এর জন্য সজাগ থাকতে হবে। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জ্বালাও-পোড়াও এটাই বিএনপির উৎসব, এটাই তাদের চরিত্র। তাদের আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন করা, ধ্বংস করা, পুলিশের ওপর হামলা করা। কীভাবে এটা বন্ধ করতে হয় সেটা আমাদের জানা আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি মানেই ধ্বংসের রাজনীতি। ২৮ অক্টোবর পুলিশ যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। অথচ তারা কী করল? রাস্তায় পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করল, আওয়ামী লীগ ও মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করল। এটাই কি রাজনীতি?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজশাহীতে মাটিতে ফেলে পুলিশ হত্যা করেছিল, সেটা স্মরণ রাখা দরকার। আমি ঢাকার মানুষকে বলব, যারা আগুন দিতে আসবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ঢাকাবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট পেয়েছি বলেই আজকে এত উন্নতি হচ্ছে। সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখে। আগামী নির্বাচনের তফসিল যেকোনো সময় ঘোষণা হবে। আগামী নির্বাচনে কাকে নমিনেশন দেয়া হবে সেটা আমরাই ঠিক করে দেব। যাকেই প্রার্থী করি, সেটা কানা, খোঁড়া যেই হোক, তাদের নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। করবেন কি না হাত তুলে ওয়াদা করেন।’ এ সময় উপস্থিত জনতা হাত নেড়ে সমর্থন জানান।
তিনি বলেন, ‘এখনও অনেক উন্নয়ন কাজ বাকি। সেগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি। কারণ, অগ্নিসন্ত্রাসী এবং জঙ্গিবাদীরা ক্ষমতায় এলে এ দেশকে আর টিকতে দেবে না। সেজন্যই জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ একমাত্র নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা ও উন্নয়ন দিতে মন্তব্য করে নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের জন্য শেখ হাসিনা সবার প্রতি বিশেষ করে ঢাকাবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান।
বার বার হত্যাচেষ্টাতেও তিনি ভীত নন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি এবং বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই আবার পাওয়ারও কিছু নেই। একটাই লক্ষ্য এই দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সোনার বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই। এই ঢাকার মানুষের জন্য আজকে আমরা নিয়ে এসেছি মেট্রোরেল। যারা উত্তরা বসবাস করে, তারা মাত্র ৩৮ মিনিটে মতিঝিল পৌঁছে যাবেন। যানজটে কষ্ট পেতে হবে না, রাস্তায় আটকে থাকতে হবে না। এই ঢাকায় যারা চাকরিজীবী, যারা কর্মজীবী, ছাত্র-শিক্ষক সকলে, বিশেষ করে আমার মেয়েরা, নারীরা, নিরাপদে চলাচল করতে পারবে এই মেট্রো রেলে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ও জাতির পিতার আদর্শের সৈনিকদের অবদানেই হচ্ছে আজকের স্বাধীনতা, তাদের অবদানই হচ্ছে আজকের উন্নয়ন।’
তিনি বলেন, ‘এমন একটি দেশে ফিরে এসেছিলাম যেখানে স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতায় ছিল। যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায় ছিল। প্রতিনিয়ত আমার ওপর আঘাত আসে। আমার নেতাকর্মীরা মানব ঢাল করে আমাকে রক্ষা করে। আল্লাহর রহমত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কারণে বার বার ফিরে এসেছি।’
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, জাতির পিতার মতো আমিও নিজেকে দেশের জন্য উৎসর্গ করলাম। বিএনপি দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে, আর আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা আকাশপথে মেট্রোরেলে করেছি, এখন পাতাল রেলের কাজ চলবে। সেটি নিয়েও কাজ চলছে। মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছি। রুটটি হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা হয়ে গাবতলী, মিরপুর-১০, গুলশান পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘পানির সমস্যা, বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসন করেছি। হাতিরঝিলকে দৃষ্টিনন্দন করেছি। দেশে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া মিলে ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। দেশে পানি নাই, রাস্তাঘাট নেই অভাব আর অভাব। এ সময় মানুষ ছিল অন্ধকারে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সামরিক-বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। সেই জিয়াউর রহমানের দলই বিএনপি। তারা গ্যাস বিক্রির জন্য মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসে। এসে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে। আর আমরা ক্ষমতায় এসে রাস্তাঘাট, কালভার্ট, ব্রিজ নির্মাণ করেছি। মাংস, ডিম, মাছ, শাক, সবজি উৎপাদন বাড়িয়েছি। সারাদেশে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কমিউনিটি হাসপাতাল করেছি।’
বিএনপি নেতারা ‘গুহায় ঢুকে গেছে’ : কাদের
‘বিএনপি নেতারা এখন গুহায় ঢুকে গেছে’- জনসভায় এমন মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ২৮ অক্টোবর ‘কেউ হরতাল ঘোষণার জন্য টেনে ধরেছিল’, দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘(মির্জা ফখরুল) মাইকে প্রথমে অর্ধদিবস হরতালের ঘোষণা দিল। পরে আবার হাতমাইকে সারা দিন হরতাল বলে ঘোষণা দিল। এরপরেই দৌড়। পালাবার পথ নাকি আমরা (আওয়ামী লীগ) পাব না। এখন তাদের পালাবার পথ কোথায়?’
বিএনপি নেতা আমীর খসরু, গয়েশ্বর রায়সহ অন্যরা কোথায়- প্রশ্ন করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এত সাহস, এত বীর পুরুষ। তারা এখন কোথায়? শেখ হাসিনা তো আছেন। কিন্তু বিএনপির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কিছু না পেয়ে তারা এখন গুহার মধ্যে ঢুকেছে। গুহা থেকে প্রেস কনফারেন্স করে।’ গত ২৮ অক্টোবর কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা হয়ে গেছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, সেই খেলায় আওয়ামী লীগ জিতে গেছে। সামনে সেমিফাইনাল আর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ফাইনাল খেলা হবে।
‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ ধ্বংস করবে; রক্তের বন্যা, লাশের পাহাড় বানিয়ে ফেলবে’- এমন মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) হাতে বাংলাদেশকে তুলে দেয়া যাবে না। সতর্ক পাহারায় ফাইনাল খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। জাতির স্বার্থে নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে আবার বিজয়ী করতে হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফির সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুয়ায়ুন কবির প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ।
সকাল থেকেই আরমবাগ এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঢল নামে। জনসভা সফল করতে ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের এলাকা থেকেও হাজির হন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। শত শত বাস ও অন্যান্য যানবাহন নিয়ে আসা ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা জমায়েত হন আরামবাগে। গোটা এলাকা ছেয়ে যায় ব্যানার-ফেস্টুনে।