alt

রাজনীতি

উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলকে নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বিএনপিতে

মহসীন ইসলাম টুটুল : রোববার, ১৭ মার্চ ২০২৪

জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিএনপির মধ্যে। মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে ‘আন্দোলন ও নির্বাচন’ ঘিরে তাদের ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। এই অবস্থায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাদের বিরত রাখা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যদিও ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এটিই আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। দলের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ অতীতের মতোই এসব নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।

এরপর থেকেই তৃণমূলের বিএনপি নেতাদের মধ্যে ওই নির্বাচনে অংশ নেয়া, না নেয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে তৃণমূলের অনেক নেতার আগ্রহ থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কোন কার্যক্রমে যেতে চান না তারা।

মাঠ পর্যায়ে বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকে এই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে এখনই বক্তব্য দিতে চান না তারা।

বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামেও নানা ধরনের মতমত উঠেছে। তবে তফসিল ঘোষণার পর ভোটের বিষয়ে কৌশল নির্ধারণে পরিবর্তন হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে।

বিএনপির তৃণমূলের অনেক নেতারা বলছেন, দুটি কারণে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে আলোচনা তৈরি হয়েছে। প্রথম কারণ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক ছাড়া অংশগ্রহণ। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা কিছুটা হতাশ। এ কারণে দলের কর্মীদের চাঙ্গা করতে কেউ কেউ ভোটে যাওয়ার পক্ষে থাকলেও বিপক্ষেও কথা বলছেন অনেকে।

দল থেকে নির্বাচন বর্জন করলেও সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কোনো কোনো নেতা দল থেকে বেরিয়ে অন্য দলের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর আগেও সিটি করপোরেশন নির্বাচন বা ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তা সত্ত্বেও দলটির তৃণমূলের অনেক নেতা সেসব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, কেউ কেউ বিজয়ীও হয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে কয়েকদিন আগে দলটির শীর্ষ ফোরামে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

বর্তমান সরকারের চার মেয়াদে এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের পর বিএনপি আর কোনো উপজেলার ভোটে অংশ নেয়নি।

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। তাদের কেউ কেউ সংসদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনও বর্জন করার পক্ষে, আবার অনেকে মনে করেন, স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের জনপ্রিয়তা তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। তৃণমূলের এই নেতারা মনে করছেন, সরকার বিএনপিকে অংশগ্রহণ করানোর জন্য নিজেরা প্রতীক ছাড়া ভোট করছে। তাদের মধ্যে অনেকে বিষয়টি ক্ষমতাসীনদের ফাঁদ বলেও মনে করেছেন। তাই বিএনপির শীর্ষ নেতারা সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে বলে জানান তৃণমূলের নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, এনিয়ে শীর্ষ ফোরামে আলোচনা হয়েছিল বলেই হয়তো এই আলোচনা উঠেছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়ার কথা জানান বিএনপির ওই নেতা।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘এটা নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে পরে দলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেবো।’

নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হলেও এই নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া উচিত। কেননা, এর মাধ্যমে তারা তৃণমূলে জনপ্রিয়তা প্রমাণের একটা সুযোগ পাবে। স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘নির্বাচন থেকে দূরে থেকে কোনো রাজনৈতিক ফায়দা কেউ পাবে না। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে দলীয় প্রতীকে ভোট না করার ইচ্ছা আওয়ামী লীগের এক ধরনের ফাঁদ হতে পারে। তবুও আমি মনে করি বিএনপি টেস্ট কেস হিসেবে এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।’

এবারের নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্রভাবে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছে, তখন থেকেই এক ধরনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বিএনপি। তবে এ নিয়ে জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় সংবাদের। যাদের মধ্যে অনেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।

ঘিওর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘যেখানে দলীয় সরকারের অধীনে আমরা জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলাম, সেখানে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায়ই আসতে পারে না। এই ভোটে অংশগ্রহণ মানে সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া। এই নির্বাচন কমিশনকে স্বীকৃতি দেয়া। সুতরাং এই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করার কোনো যুক্তিই নাই।’ তবে কর্মী সমর্থকরা নির্বাচন করার জন্য উৎসাহিত করছে বলে তিনি যোগ করেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতার তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচনে না যাওয়ার পর বলা হচ্ছিলো বিএনপি ভোটে না গিয়ে ভুল করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি যখন ভোটে অংশ নিলো, তখন নির্বাচনে কী কী অনিয়ম হয় সেটা সারা বিশ্ব দেখেছে।’

দোহার উপজেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান শামীমা রহিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটিই বাস্তবায়ন হয়। ভোট শুধু শোঅফ। এমন অবস্থায় ভোট করলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। তবে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা কাজ করবেন এবং ভোট যুদ্ধে অংশ নেয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে বলে জানান তিনি।’

বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে না যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপির তৃণমূলের নেতারা। এক্ষেত্রে অতীতে ভোটের অভিজ্ঞতা, জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নতুন করে মামলা হামলার ভয়ের বিষয়গুলো সামনে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, আমার উপজেলা নির্বাচনের সময় আমার প্রতিপক্ষ ২৯ কেন্দ্রের ভোট কেটে নিয়ে যায়। তারপরও ভাগ্যক্রমে জয় পেয়েছিলাম। এই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, এমন নির্বাচন করলে মান মর্যাদা যা অর্জন হয়, তার চেয়ে হেয় হতে হয় বেশি। এমন নির্বাচনে চেয়ারম্যান হওয়ার চেয়ে না হওয়াই ভালো। দলিয় প্রতীক ছাড়া উপজেলা নির্বাচন সরকারের একটা ফাঁদ। এই ফাঁদে তাদের পা দেয়া উচিত হবে না। শীর্ষ নেতাদের এটা বোঝা উচিত।

বিএনপির তৃণমূলের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, বতর্মান সরকারের অধীনে শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তাই তারা চান না নতুন করে আবারো নির্বাচনে অংশ নিতে।

বিএনপির আন্দোলন নির্বাচন বিষয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএনপিকে এখন নতুন করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের ছক কষতে হবে। কারণ, সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির যে আন্দোলন ছিল, সেই আন্দোলনে তো কাজ হয়নি; নির্বাচন হয়েছে। সে জন্য এখন একেবারে নতুনভাবে কৌশল ঠিক করতে হবে। সেটা এককভাবে নয়, দলের অভিজ্ঞ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ সবার মতামত বা সবাই মিলে পর্যালোচনা করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হলে তা দলের জন্য ভালো হবে। সরকার পতনের আন্দোলনে তখন ছক কষে এগোনো সহজ হবে। আগের আন্দোলনে কোনো ভুল হয়েছে কিনা, তাও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। আমরা ভুলগুলো চিহ্নিত করতে পারলে, তা শুধরিয়ে সামনে এগোলে ভবিষ্যতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। আন্দোলনে বিকল্প উপায় রাখতে হয়। সে জন্য আমি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা বা কৌশল নেয়ার কথা বলছি।

ছবি

বিএনপি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে : কাদের

ছবি

‘স্বার্থহীন’ রাজনীতির উদাহরণ পঙ্কজ ভট্টাচার্য

ছবি

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা: কাদের

দুই ধাপের ভোটেই এমপির স্বজনরা

দুই ধাপের ভোটেই এমপির স্বজনরা

প্রথম ধাপে চার উপজেলায় ভোটের প্রয়োজন নেই

ছবি

মাদারীপুরে দুইটি উপজেলায় ২১ প্রার্থীর প্রতিক বরাদ্দ

ছবি

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে : কাদের

ছবি

উপজেলা নির্বাচন: পরশুরামে এবারও ভোটের প্রয়োজন হবে না

চেয়ারম্যান পদে জামায়াত নেতার মনোনযন প্রত্যাহার, দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নেই

ছবি

হাতিয়াতে ভোট ছাড়াই জয়ী হচ্ছেন চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস-চেয়ারম্যান

ছবি

তাপপ্রবাহের কারণে বিএনপির ২৬ এপ্রিলের সমাবেশ স্থগিত

লালমনিরহাটে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করেই সাবেক মন্ত্রীর ভাই-ছেলের লড়াই

ছবি

শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন যারা

ছবি

সেনবাগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন পদে ১৭ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

কসবায় নির্বাচন থেকে সরছেন না মন্ত্রীর আত্মীয় ছাইদুর

ছবি

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন করে প্রাইভেট হাসপাতালের রোগ নির্ণয় পরীক্ষার ফি নির্ধারণ: স্বাস্থ্য মন্ত্রী

ছবি

রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল অবস্থায় বিএনপি : ওবায়দুল কাদের

ছবি

১০ দিনে ৫ লাখ বৃক্ষ রোপণ করবে ছাত্রলীগ

ছবি

সন্ত্রাসী অপরাধে গ্রেপ্তারদেরও নিজেদের কর্মী দাবী করছে বিএনপি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

আমরা সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের রাজনীতি করতে চাই-- অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি

ছবি

স্থানীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন নেই: ইসি আলমগীর

ছবি

সরকার চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে, যেকোনো সময় ডুবে যাবে: রিজভী

ছবি

ইরাকে ইরানপন্থি বাহিনীর ঘাঁটিতে বিমান হামলায় হতাহত ৭

ছবি

আবদুল আউয়াল মিন্টু হাসপাতালে ভর্তি

ছবি

আ.লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ থাকবে : কাদের

ছবি

আমি লজ্জিত-দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী, দোষীদের কপালে দুঃখ আছে : পলক

ছবি

যারা নুন-ভাতের কথাও ভাবতে পারত না, এখন তারা মাছ-মাংসের চিন্তা করে : শেখ হাসিনা

মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আ’লীগের

ছবি

মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়া : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

খালেদা জিয়া ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন : শেখ হাসিনা

ছবি

বিএনপিসহ স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে : ওবায়দুল কাদের

ছবি

মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

ছবি

মনোনয়নে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা, তবে দল দু’টির বর্জনের ঘোষণা

ছবি

আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা বিএনপির

ছবি

হিটলারের চেয়েও ভয়ঙ্কর নেতানিয়াহু : ওবায়দুল কাদের

tab

রাজনীতি

উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলকে নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বিএনপিতে

মহসীন ইসলাম টুটুল

রোববার, ১৭ মার্চ ২০২৪

জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিএনপির মধ্যে। মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে ‘আন্দোলন ও নির্বাচন’ ঘিরে তাদের ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। এই অবস্থায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাদের বিরত রাখা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যদিও ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এটিই আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। দলের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ অতীতের মতোই এসব নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।

এরপর থেকেই তৃণমূলের বিএনপি নেতাদের মধ্যে ওই নির্বাচনে অংশ নেয়া, না নেয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে তৃণমূলের অনেক নেতার আগ্রহ থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কোন কার্যক্রমে যেতে চান না তারা।

মাঠ পর্যায়ে বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকে এই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে এখনই বক্তব্য দিতে চান না তারা।

বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামেও নানা ধরনের মতমত উঠেছে। তবে তফসিল ঘোষণার পর ভোটের বিষয়ে কৌশল নির্ধারণে পরিবর্তন হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে।

বিএনপির তৃণমূলের অনেক নেতারা বলছেন, দুটি কারণে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে আলোচনা তৈরি হয়েছে। প্রথম কারণ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক ছাড়া অংশগ্রহণ। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা কিছুটা হতাশ। এ কারণে দলের কর্মীদের চাঙ্গা করতে কেউ কেউ ভোটে যাওয়ার পক্ষে থাকলেও বিপক্ষেও কথা বলছেন অনেকে।

দল থেকে নির্বাচন বর্জন করলেও সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কোনো কোনো নেতা দল থেকে বেরিয়ে অন্য দলের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর আগেও সিটি করপোরেশন নির্বাচন বা ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তা সত্ত্বেও দলটির তৃণমূলের অনেক নেতা সেসব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, কেউ কেউ বিজয়ীও হয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে কয়েকদিন আগে দলটির শীর্ষ ফোরামে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

বর্তমান সরকারের চার মেয়াদে এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের পর বিএনপি আর কোনো উপজেলার ভোটে অংশ নেয়নি।

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। তাদের কেউ কেউ সংসদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনও বর্জন করার পক্ষে, আবার অনেকে মনে করেন, স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের জনপ্রিয়তা তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। তৃণমূলের এই নেতারা মনে করছেন, সরকার বিএনপিকে অংশগ্রহণ করানোর জন্য নিজেরা প্রতীক ছাড়া ভোট করছে। তাদের মধ্যে অনেকে বিষয়টি ক্ষমতাসীনদের ফাঁদ বলেও মনে করেছেন। তাই বিএনপির শীর্ষ নেতারা সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে বলে জানান তৃণমূলের নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, এনিয়ে শীর্ষ ফোরামে আলোচনা হয়েছিল বলেই হয়তো এই আলোচনা উঠেছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়ার কথা জানান বিএনপির ওই নেতা।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘এটা নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে পরে দলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেবো।’

নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হলেও এই নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া উচিত। কেননা, এর মাধ্যমে তারা তৃণমূলে জনপ্রিয়তা প্রমাণের একটা সুযোগ পাবে। স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘নির্বাচন থেকে দূরে থেকে কোনো রাজনৈতিক ফায়দা কেউ পাবে না। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে দলীয় প্রতীকে ভোট না করার ইচ্ছা আওয়ামী লীগের এক ধরনের ফাঁদ হতে পারে। তবুও আমি মনে করি বিএনপি টেস্ট কেস হিসেবে এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।’

এবারের নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্রভাবে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছে, তখন থেকেই এক ধরনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বিএনপি। তবে এ নিয়ে জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় সংবাদের। যাদের মধ্যে অনেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।

ঘিওর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘যেখানে দলীয় সরকারের অধীনে আমরা জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলাম, সেখানে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায়ই আসতে পারে না। এই ভোটে অংশগ্রহণ মানে সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া। এই নির্বাচন কমিশনকে স্বীকৃতি দেয়া। সুতরাং এই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করার কোনো যুক্তিই নাই।’ তবে কর্মী সমর্থকরা নির্বাচন করার জন্য উৎসাহিত করছে বলে তিনি যোগ করেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতার তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচনে না যাওয়ার পর বলা হচ্ছিলো বিএনপি ভোটে না গিয়ে ভুল করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি যখন ভোটে অংশ নিলো, তখন নির্বাচনে কী কী অনিয়ম হয় সেটা সারা বিশ্ব দেখেছে।’

দোহার উপজেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান শামীমা রহিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটিই বাস্তবায়ন হয়। ভোট শুধু শোঅফ। এমন অবস্থায় ভোট করলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। তবে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা কাজ করবেন এবং ভোট যুদ্ধে অংশ নেয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে বলে জানান তিনি।’

বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে না যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপির তৃণমূলের নেতারা। এক্ষেত্রে অতীতে ভোটের অভিজ্ঞতা, জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নতুন করে মামলা হামলার ভয়ের বিষয়গুলো সামনে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, আমার উপজেলা নির্বাচনের সময় আমার প্রতিপক্ষ ২৯ কেন্দ্রের ভোট কেটে নিয়ে যায়। তারপরও ভাগ্যক্রমে জয় পেয়েছিলাম। এই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, এমন নির্বাচন করলে মান মর্যাদা যা অর্জন হয়, তার চেয়ে হেয় হতে হয় বেশি। এমন নির্বাচনে চেয়ারম্যান হওয়ার চেয়ে না হওয়াই ভালো। দলিয় প্রতীক ছাড়া উপজেলা নির্বাচন সরকারের একটা ফাঁদ। এই ফাঁদে তাদের পা দেয়া উচিত হবে না। শীর্ষ নেতাদের এটা বোঝা উচিত।

বিএনপির তৃণমূলের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, বতর্মান সরকারের অধীনে শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তাই তারা চান না নতুন করে আবারো নির্বাচনে অংশ নিতে।

বিএনপির আন্দোলন নির্বাচন বিষয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএনপিকে এখন নতুন করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের ছক কষতে হবে। কারণ, সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির যে আন্দোলন ছিল, সেই আন্দোলনে তো কাজ হয়নি; নির্বাচন হয়েছে। সে জন্য এখন একেবারে নতুনভাবে কৌশল ঠিক করতে হবে। সেটা এককভাবে নয়, দলের অভিজ্ঞ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ সবার মতামত বা সবাই মিলে পর্যালোচনা করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হলে তা দলের জন্য ভালো হবে। সরকার পতনের আন্দোলনে তখন ছক কষে এগোনো সহজ হবে। আগের আন্দোলনে কোনো ভুল হয়েছে কিনা, তাও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। আমরা ভুলগুলো চিহ্নিত করতে পারলে, তা শুধরিয়ে সামনে এগোলে ভবিষ্যতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। আন্দোলনে বিকল্প উপায় রাখতে হয়। সে জন্য আমি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা বা কৌশল নেয়ার কথা বলছি।

back to top