alt

রাজনীতি

চাদর পোড়ালে আর কী আসে-যায়, বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে?

ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দেয়া বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

বাসস : বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেখলাম বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে আগুন দিচ্ছে ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করবে না। এরপর আবার দেখা গেল, কিছু চাদর কিনে এনে পোড়ানো হলো। আচ্ছা শীতকাল তো চলে গেছে এখন চাদর পোড়ালে আর কী আসে-যায়। আমার প্রশ্ন, যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে। তাহলে বউদের কাছ থেকে সেই শাড়িগুলো এনে কেন পুড়িয়ে দিচ্ছেন না। আপনারা সবাই একটু এই কথাটা বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের বলব, যারা যারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন সবার বাড়িতে গিয়ে তাদের বউরা যেন কোনো মতে কোনো ভারতীয় শাড়ি না পরে; আলমারিতে যে কয়টা শাড়ি আছে সব এনে যেদিন ওই অফিসের সামনে পোড়াবেন সেদিন বিশ্বাস করব যে, আপনারা সত্যিকার ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন। আমাদের দেশে গরম মসলা, পেঁয়াজ, রসুন-আদা আমদানি করি। মিজোরাম থেকে আমরা আদা আনি। মসলাপাতি, আদা ভারত থেকে যা কিছু আসছে, তাদের কারও পাকের ঘরে যেন এই ভারতীয় মসলা দেখা না যায়। তাদের রান্না করে খেতে হবে এসব মসলাবিহীন। কাজেই এটা তারা খেতে পারবেন কিনা, সেই জবাবটা তাদের দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা রঙ-ঢঙ-সঙ করতে ওস্তাদ, এটা আমরা আগেও দেখেছি। বাস্তব কথায় আসেন, আপনারা এই পণ্যগুলো সত্যিকার বর্জন করেছেন কিনা, সেই কথাটাই আমরা জানতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে বলেন, এ বুদ্ধিটা যখন অন্য খাতে চলে যায় তাদের মতিভ্রম হয়ে যায় তখন আর এর কোনো দাম থাকে না, সেটা নির্বুদ্ধিতায় পরিণত হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র খুঁজে বেড়ায়। কোথায় পাবে তারা গণতন্ত্র? তাদের চোখে তো স্বৈরতন্ত্রের ঠুলি পরানো। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর পর দেশে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে প্রতি রাতে কারফিউ বলবৎ থাকতো। এমনকি তিনি ’৮১ সালে দেশে ফেরার পরও দেখতে পান রাত এগারোটার মধ্যে ঘরে ফিরতে হচ্ছে, সারারাত কারফিউ। এটাকে ‘কারফিউ গণতন্ত্র’ বা ‘মার্শাল ল’ গণতন্ত্র আখ্যায়িত করে বিএনপি এখন সে গণতন্ত্রই খুঁজে বেড়ায় কিনা সে প্রশ্ন ও তোলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে একটি অদ্ভুত কা- আমরা দেখি- অতি ডান (ডানপন্থি) ও অতি বাম (বামপন্থি) তারা এখন এক জায়গায় হয়ে গেছে। তাদের আদর্শটা কি? তাদের নীতিটা কি? তারা কোন কিছুতেই ভালো খুঁজে পায় না। অতি বামে বেশ কিছু দল আছে তারা একেবারে বিপ্লব করবে। যে বিপ্লব করতে করতে তারা এখন ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেছে।

স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলে, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭১ সালে তার স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল এবং দলের লোকেরা তা দেশের সব জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু তাকে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান যা ইপিআর এর ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম-টেলিপ্রিন্টার এবং দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর এই ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়।

তিনি বলেন, ‘কোনো এক মেজর একটি ড্রামের উপর দাঁড়িয়ে বাঁশিতে ফুঁক দিল আর অমনি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল! এভাবে একটি দেশ স্বাধীন হয় না। এখনও ইতিহাস বিকৃতির সেই ভাঙা রেকর্ড তারা (বিএনপি) বাজিয়েই যাচ্ছে।’

তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এখনো ইতিহাস বিকৃতির সেই ভাঙা রেকর্ড তারা (বিএনপি) বাজিয়েই যাচ্ছে। তার কারণও আছে। আজকে যিনি বলেন একাত্তরের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতার সব পালিয়ে যান, সেই মঈন খানের বাবা মমিন খান খাদ্য সচিব ছিলেন। যিনি খাদ্য সচিবের দায়িত্ব পালনকালে ৭৪ এর কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিতে সফল হওয়ায় পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে তার দ্বারা পুরস্কৃত হয়ে মন্ত্রীর মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। অথচ ’৭৫ এর পর থেকে সারাবছরই বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আমি একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সে সময় পাকিস্তানি সামরিক অফিসার আসলাম বেগ বাংলাদেশে কর্মরত ছিল। পরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধানও হয়েছিল সে। এই আসলাম বেগ একটা চিঠি লিখেছিল জিয়াউর রহমানের কাছে। সেই চিঠিতে জিয়াউর রহমানের কার্যক্রমে সে সন্তুষ্টি জানিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, আসলাম বেগ আরো লিখেছেন, ‘সে তার কার্যক্রমে সন্তুষ্ট, তাকে ভবিষ্যতে আরও কাজ দেয়া হবে। জিয়ার পরিবার তার স্ত্রী ও দুই ছেলে যে ভালোভাবে আছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সেই কথাটাও চিঠিতে জানিয়েছে। চিঠিটার কপিটা ছিল, পার্লামেন্টেও পাঠ করা হয়েছে। এটা ডকুমেন্ট হিসেবেও আছে।’

তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমাদের গেরিলারা বিভিন্ন সেনা অফিসারদের পরিবারগুলোকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। তারা খালেদা জিয়ার কাছেও এসেছিল কিন্তু তিনি গেরিলাদের সঙ্গে না গিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে চলে যান।

শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ফেলল, তার বউ ছেলেকে হেফাজতে রেখে দিলো পাকিস্তানিরা আর আসলাম বেগ চিঠিতে জানাল জিয়ার কার্যক্রমে তারা সন্তুষ্ট, কেন সন্তুষ্ট জানেন? যতগুলো সেক্টরে যুদ্ধ হয়েছে, আপনারা হিসাব করে দেখেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সব থেকে বেশি হত্যা করা হয়েছে যেটার দায়িত্বে ছিল জিয়াউর রহমান। সব থেকে বেশি হতাহত ছিল সেখানে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু, দলের সভাপতিম-লীর সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুর রাজ্জাক ও শাজাহান খান, দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা জেলা সভাপতি বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন।

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.আবদুস সোবহান গোলাপ ও সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীম।

ছবি

বিএনপি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে : কাদের

ছবি

‘স্বার্থহীন’ রাজনীতির উদাহরণ পঙ্কজ ভট্টাচার্য

ছবি

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা: কাদের

দুই ধাপের ভোটেই এমপির স্বজনরা

দুই ধাপের ভোটেই এমপির স্বজনরা

প্রথম ধাপে চার উপজেলায় ভোটের প্রয়োজন নেই

ছবি

মাদারীপুরে দুইটি উপজেলায় ২১ প্রার্থীর প্রতিক বরাদ্দ

ছবি

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে : কাদের

ছবি

উপজেলা নির্বাচন: পরশুরামে এবারও ভোটের প্রয়োজন হবে না

চেয়ারম্যান পদে জামায়াত নেতার মনোনযন প্রত্যাহার, দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নেই

ছবি

হাতিয়াতে ভোট ছাড়াই জয়ী হচ্ছেন চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস-চেয়ারম্যান

ছবি

তাপপ্রবাহের কারণে বিএনপির ২৬ এপ্রিলের সমাবেশ স্থগিত

লালমনিরহাটে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করেই সাবেক মন্ত্রীর ভাই-ছেলের লড়াই

ছবি

শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন যারা

ছবি

সেনবাগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন পদে ১৭ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

কসবায় নির্বাচন থেকে সরছেন না মন্ত্রীর আত্মীয় ছাইদুর

ছবি

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন করে প্রাইভেট হাসপাতালের রোগ নির্ণয় পরীক্ষার ফি নির্ধারণ: স্বাস্থ্য মন্ত্রী

ছবি

রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল অবস্থায় বিএনপি : ওবায়দুল কাদের

ছবি

১০ দিনে ৫ লাখ বৃক্ষ রোপণ করবে ছাত্রলীগ

ছবি

সন্ত্রাসী অপরাধে গ্রেপ্তারদেরও নিজেদের কর্মী দাবী করছে বিএনপি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

আমরা সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের রাজনীতি করতে চাই-- অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি

ছবি

স্থানীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন নেই: ইসি আলমগীর

ছবি

সরকার চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে, যেকোনো সময় ডুবে যাবে: রিজভী

ছবি

ইরাকে ইরানপন্থি বাহিনীর ঘাঁটিতে বিমান হামলায় হতাহত ৭

ছবি

আবদুল আউয়াল মিন্টু হাসপাতালে ভর্তি

ছবি

আ.লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ থাকবে : কাদের

ছবি

আমি লজ্জিত-দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী, দোষীদের কপালে দুঃখ আছে : পলক

ছবি

যারা নুন-ভাতের কথাও ভাবতে পারত না, এখন তারা মাছ-মাংসের চিন্তা করে : শেখ হাসিনা

মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আ’লীগের

ছবি

মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়া : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

খালেদা জিয়া ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন : শেখ হাসিনা

ছবি

বিএনপিসহ স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে : ওবায়দুল কাদের

ছবি

মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

ছবি

মনোনয়নে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা, তবে দল দু’টির বর্জনের ঘোষণা

ছবি

আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা বিএনপির

ছবি

হিটলারের চেয়েও ভয়ঙ্কর নেতানিয়াহু : ওবায়দুল কাদের

tab

রাজনীতি

চাদর পোড়ালে আর কী আসে-যায়, বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে?

ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দেয়া বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

বাসস

বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেখলাম বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে আগুন দিচ্ছে ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করবে না। এরপর আবার দেখা গেল, কিছু চাদর কিনে এনে পোড়ানো হলো। আচ্ছা শীতকাল তো চলে গেছে এখন চাদর পোড়ালে আর কী আসে-যায়। আমার প্রশ্ন, যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে। তাহলে বউদের কাছ থেকে সেই শাড়িগুলো এনে কেন পুড়িয়ে দিচ্ছেন না। আপনারা সবাই একটু এই কথাটা বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের বলব, যারা যারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন সবার বাড়িতে গিয়ে তাদের বউরা যেন কোনো মতে কোনো ভারতীয় শাড়ি না পরে; আলমারিতে যে কয়টা শাড়ি আছে সব এনে যেদিন ওই অফিসের সামনে পোড়াবেন সেদিন বিশ্বাস করব যে, আপনারা সত্যিকার ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন। আমাদের দেশে গরম মসলা, পেঁয়াজ, রসুন-আদা আমদানি করি। মিজোরাম থেকে আমরা আদা আনি। মসলাপাতি, আদা ভারত থেকে যা কিছু আসছে, তাদের কারও পাকের ঘরে যেন এই ভারতীয় মসলা দেখা না যায়। তাদের রান্না করে খেতে হবে এসব মসলাবিহীন। কাজেই এটা তারা খেতে পারবেন কিনা, সেই জবাবটা তাদের দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা রঙ-ঢঙ-সঙ করতে ওস্তাদ, এটা আমরা আগেও দেখেছি। বাস্তব কথায় আসেন, আপনারা এই পণ্যগুলো সত্যিকার বর্জন করেছেন কিনা, সেই কথাটাই আমরা জানতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে বলেন, এ বুদ্ধিটা যখন অন্য খাতে চলে যায় তাদের মতিভ্রম হয়ে যায় তখন আর এর কোনো দাম থাকে না, সেটা নির্বুদ্ধিতায় পরিণত হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র খুঁজে বেড়ায়। কোথায় পাবে তারা গণতন্ত্র? তাদের চোখে তো স্বৈরতন্ত্রের ঠুলি পরানো। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর পর দেশে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে প্রতি রাতে কারফিউ বলবৎ থাকতো। এমনকি তিনি ’৮১ সালে দেশে ফেরার পরও দেখতে পান রাত এগারোটার মধ্যে ঘরে ফিরতে হচ্ছে, সারারাত কারফিউ। এটাকে ‘কারফিউ গণতন্ত্র’ বা ‘মার্শাল ল’ গণতন্ত্র আখ্যায়িত করে বিএনপি এখন সে গণতন্ত্রই খুঁজে বেড়ায় কিনা সে প্রশ্ন ও তোলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে একটি অদ্ভুত কা- আমরা দেখি- অতি ডান (ডানপন্থি) ও অতি বাম (বামপন্থি) তারা এখন এক জায়গায় হয়ে গেছে। তাদের আদর্শটা কি? তাদের নীতিটা কি? তারা কোন কিছুতেই ভালো খুঁজে পায় না। অতি বামে বেশ কিছু দল আছে তারা একেবারে বিপ্লব করবে। যে বিপ্লব করতে করতে তারা এখন ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেছে।

স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলে, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭১ সালে তার স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল এবং দলের লোকেরা তা দেশের সব জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু তাকে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান যা ইপিআর এর ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম-টেলিপ্রিন্টার এবং দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর এই ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়।

তিনি বলেন, ‘কোনো এক মেজর একটি ড্রামের উপর দাঁড়িয়ে বাঁশিতে ফুঁক দিল আর অমনি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল! এভাবে একটি দেশ স্বাধীন হয় না। এখনও ইতিহাস বিকৃতির সেই ভাঙা রেকর্ড তারা (বিএনপি) বাজিয়েই যাচ্ছে।’

তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এখনো ইতিহাস বিকৃতির সেই ভাঙা রেকর্ড তারা (বিএনপি) বাজিয়েই যাচ্ছে। তার কারণও আছে। আজকে যিনি বলেন একাত্তরের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতার সব পালিয়ে যান, সেই মঈন খানের বাবা মমিন খান খাদ্য সচিব ছিলেন। যিনি খাদ্য সচিবের দায়িত্ব পালনকালে ৭৪ এর কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিতে সফল হওয়ায় পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে তার দ্বারা পুরস্কৃত হয়ে মন্ত্রীর মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। অথচ ’৭৫ এর পর থেকে সারাবছরই বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আমি একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সে সময় পাকিস্তানি সামরিক অফিসার আসলাম বেগ বাংলাদেশে কর্মরত ছিল। পরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধানও হয়েছিল সে। এই আসলাম বেগ একটা চিঠি লিখেছিল জিয়াউর রহমানের কাছে। সেই চিঠিতে জিয়াউর রহমানের কার্যক্রমে সে সন্তুষ্টি জানিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, আসলাম বেগ আরো লিখেছেন, ‘সে তার কার্যক্রমে সন্তুষ্ট, তাকে ভবিষ্যতে আরও কাজ দেয়া হবে। জিয়ার পরিবার তার স্ত্রী ও দুই ছেলে যে ভালোভাবে আছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সেই কথাটাও চিঠিতে জানিয়েছে। চিঠিটার কপিটা ছিল, পার্লামেন্টেও পাঠ করা হয়েছে। এটা ডকুমেন্ট হিসেবেও আছে।’

তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমাদের গেরিলারা বিভিন্ন সেনা অফিসারদের পরিবারগুলোকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। তারা খালেদা জিয়ার কাছেও এসেছিল কিন্তু তিনি গেরিলাদের সঙ্গে না গিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে চলে যান।

শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ফেলল, তার বউ ছেলেকে হেফাজতে রেখে দিলো পাকিস্তানিরা আর আসলাম বেগ চিঠিতে জানাল জিয়ার কার্যক্রমে তারা সন্তুষ্ট, কেন সন্তুষ্ট জানেন? যতগুলো সেক্টরে যুদ্ধ হয়েছে, আপনারা হিসাব করে দেখেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সব থেকে বেশি হত্যা করা হয়েছে যেটার দায়িত্বে ছিল জিয়াউর রহমান। সব থেকে বেশি হতাহত ছিল সেখানে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু, দলের সভাপতিম-লীর সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুর রাজ্জাক ও শাজাহান খান, দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা জেলা সভাপতি বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন।

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.আবদুস সোবহান গোলাপ ও সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীম।

back to top