স্থানীয় সরকারের ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে বহিষ্কারের হিড়িক পড়েছে বিএনপিতে। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতাদের প্রথমে শোকজ বা কারণ দর্শানো জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। এরপর কেন্দ্রীয় নেতারা সব প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করাসহ নির্বাচন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধও করা হয়। এসব শোকজ, অনুরোধ ও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেও যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের প্রাথমিক পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের নেতাও রয়েছেন।
বিএনপি সূত্র বলছে, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা অটুট রাখতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দল ও অঙ্গসংগঠনের শুক্রবারর প্রথমে ৭৩ জনকে এবং পরে শনিবার নতুন করে আরও তিনজনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে শোকজ নোটিশের জবাবও দেননি, আবার কেউ কেউ নোটিশ পেয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করেছেন। নোটিশ দেয়ার পর তৃণমূলের এই নেতাদের সঙ্গে রুহুল কবির রিজভী এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা কথাও বলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যারা প্রার্থী হিসেবে থেকে গেছেন, তাদের মধ্যে প্রথমে ৭৩ জনকে তাদের প্রাথমিক পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপর নতুন করে আরও ৩ জনকে বহিষ্কৃত করা হয়। নতুন করে বহিষ্কৃত ৩ জন হলেনÑ ময়মনসিংহ উত্তর জেলার হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির সদস্য আবদুল হামিদ। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করছেন। শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম মোস্তফা (সোনাহার)। তিনি ২নং পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। অন্যজন হলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মংসুইউ চৌধুরী। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন।
যাদের কাছে বহিষ্কারের চিঠি পাঠানো হয় তাদের মধ্যে ৩০ জন উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, ২৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং ২১ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া ৭৬ জন বহিষ্কৃত নেতা মনে করেন, অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই নির্বাচনে অংশ নেওয়া জরুরি। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ সব প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তৃণমূল কর্মীদের সংগঠিত করতে এবং কর্মী সমর্থকদের চাপেই নির্বাচন করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে বিএনপির এসব প্রার্থীদের দাবি।
‘দলের সঙ্গে বেঈমানি করা হয়েছে’ শোকজের টিঠিতে এমনটা উল্লেখ করা হয়েছে বলে নোটিশপ্রাপ্ত তৃণমূলের এসব নেতারা জানান। দলের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করার পরও এমন চিঠি তারা কেন্দ্র থেকে আশা করেননি। এই ধরনের কার্য দলের মধ্যে দূরুত্ব ও বিভেদ সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন তারা।
রহুল কবির রিজভীর সই করা বহিষ্কারের চিঠিতে বলা হয়, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আপনাকে নির্দেশক্রমে বহিষ্কার করা হলো।’
কিশোরগগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজমুল আলম সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন। শোকজের পর মৌখিকভাবে বারণ করার পরও তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। দল থেকে বহিষ্কারের কারণ দর্শানো নোটিশে তাকে বলা হয়েছে, ‘দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপি জালিয়াতির নির্বাচনে অংশ নেবে না। আপনি সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দলের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন।’
এর জবাবে নাজমুল আলম বলেন, ‘আমি দলের সঙ্গে কোনো বেঈমানি করিনি। আমি তো সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করি। তাই তাদের জন্য নির্বাচন করছি। তারা যদি আমাকে গ্রহণ করে, তাহলেও তাদের সঙ্গে থাকবো। না করলেও তাদের সঙ্গে থাকবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো জাতীয় পর্যায়ের না, তৃণমূলের নেতা। তাই আমাকে তৃণমূলে থাকতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকতে পারলেই আমি নেতা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকলে তো আর দলের সঙ্গে বেঈমানি করা হয় না। বহিষ্কার করা হলেও আমি একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে দলের সঙ্গেই থাকবো।’
তার মতে, ‘এবার নির্বাচন যেহেতু দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না তাই বিএনপি যদি নির্দলীয় প্রতীকে দলের লোকজনকে নির্বাচনে বাধা না দিতো, তাহলে তৃণমূলের আরও অনেক নেতা প্রার্থী হতেন। এতে দলের লাভ হতো। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হতো। আমার এলাকার নেতাকর্মীরা এখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।’
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় শামসুর রশীদ মজনু চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখানকার বিএনপি নেতাদের অবহেলার শিকার। আমি বটতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম ১৪ বছর। কিন্তু এর আগে উপজেলা বা সংসদ নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। দলের বড় কোনো পদও আমাকে দেয়া হয়নি। কিন্তু এলাকার সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে, তারা আমাকে চায়। তাই আমি প্রার্থী হয়েছি।’ নির্বাচন না করলে দলের ক্ষতি হবে, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে, আরও হবে। আমরা যদি জনপ্রতিনিধি হই তাহলে সেসব মামলা ফেস করা সহজ হবে। আর নির্বাচন না করলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সব আওয়ামী লীগে চলে যাবে। গত সংসদ নির্বাচনে অনেকেই আওয়ামী লীগে চলে গেছে। তৃণমূলে দলকে ধরে রাখতে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা উচিত।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ওমরাও খান ২৪ বছর কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, এবার তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন করায় বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত নয়, উল্টো লাভবান হবে। কারণ, আমি কাজ করছি মানুষের জন্য, তাদের নিয়েই আমার রাজনীতি। নির্বাচনে এলাকার মানুষ আমাকে চায়, তাদেরকে আমার মূল্যায়ন করতে হবে। ফলে আমার এলাকায় বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে। নির্বাচন যেহেতু দলীয়ভাবে হচ্ছে না, তাই আমি না দাঁড়ালেও ভোটাররা মন্দের ভালোকে ভোট দিতেন। এখন সর্বোত্তম প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে কারচুপি হবে বলে আমি মনে করি না। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভালো হয়েছে। আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করতে পেরেছে।’ দল থেকে বহিষ্কার করলেও তিনি বিএনপির সঙ্গেই আছেন এবং থাকবেন বলে জানান।
রিজভী বলেন, ‘তারা যে যুক্তিই দেখাক না কেন আসলে তারা নিজেদের স্বার্থে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন। তারা দেশ, মানুষ বা দলের কথা চিন্তা করেননি। তারা শেখ হাসিনার মতো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যে, নির্বাচনে না থাকলে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। ডিক্টেটররা এই ধরনের কথা বলে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। তারপর তারা তাদের ছক অনুযায়ী কাজ করে। যেহেতু নির্বাচন কমিশন তাদের আজ্ঞাবাহী।’ তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪-এ আমরা সেটা দেখেছি। দেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে ভোটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারপরও কিছু অতি উৎসাহী নেতাকর্মী দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, আমরা বহিষ্কার করেছি।’
রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
স্থানীয় সরকারের ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে বহিষ্কারের হিড়িক পড়েছে বিএনপিতে। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতাদের প্রথমে শোকজ বা কারণ দর্শানো জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। এরপর কেন্দ্রীয় নেতারা সব প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করাসহ নির্বাচন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধও করা হয়। এসব শোকজ, অনুরোধ ও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেও যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের প্রাথমিক পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের নেতাও রয়েছেন।
বিএনপি সূত্র বলছে, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা অটুট রাখতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দল ও অঙ্গসংগঠনের শুক্রবারর প্রথমে ৭৩ জনকে এবং পরে শনিবার নতুন করে আরও তিনজনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে শোকজ নোটিশের জবাবও দেননি, আবার কেউ কেউ নোটিশ পেয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করেছেন। নোটিশ দেয়ার পর তৃণমূলের এই নেতাদের সঙ্গে রুহুল কবির রিজভী এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা কথাও বলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যারা প্রার্থী হিসেবে থেকে গেছেন, তাদের মধ্যে প্রথমে ৭৩ জনকে তাদের প্রাথমিক পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপর নতুন করে আরও ৩ জনকে বহিষ্কৃত করা হয়। নতুন করে বহিষ্কৃত ৩ জন হলেনÑ ময়মনসিংহ উত্তর জেলার হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির সদস্য আবদুল হামিদ। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করছেন। শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম মোস্তফা (সোনাহার)। তিনি ২নং পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। অন্যজন হলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মংসুইউ চৌধুরী। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন।
যাদের কাছে বহিষ্কারের চিঠি পাঠানো হয় তাদের মধ্যে ৩০ জন উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, ২৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং ২১ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া ৭৬ জন বহিষ্কৃত নেতা মনে করেন, অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই নির্বাচনে অংশ নেওয়া জরুরি। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ সব প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তৃণমূল কর্মীদের সংগঠিত করতে এবং কর্মী সমর্থকদের চাপেই নির্বাচন করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে বিএনপির এসব প্রার্থীদের দাবি।
‘দলের সঙ্গে বেঈমানি করা হয়েছে’ শোকজের টিঠিতে এমনটা উল্লেখ করা হয়েছে বলে নোটিশপ্রাপ্ত তৃণমূলের এসব নেতারা জানান। দলের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করার পরও এমন চিঠি তারা কেন্দ্র থেকে আশা করেননি। এই ধরনের কার্য দলের মধ্যে দূরুত্ব ও বিভেদ সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন তারা।
রহুল কবির রিজভীর সই করা বহিষ্কারের চিঠিতে বলা হয়, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আপনাকে নির্দেশক্রমে বহিষ্কার করা হলো।’
কিশোরগগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজমুল আলম সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন। শোকজের পর মৌখিকভাবে বারণ করার পরও তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। দল থেকে বহিষ্কারের কারণ দর্শানো নোটিশে তাকে বলা হয়েছে, ‘দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপি জালিয়াতির নির্বাচনে অংশ নেবে না। আপনি সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দলের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন।’
এর জবাবে নাজমুল আলম বলেন, ‘আমি দলের সঙ্গে কোনো বেঈমানি করিনি। আমি তো সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করি। তাই তাদের জন্য নির্বাচন করছি। তারা যদি আমাকে গ্রহণ করে, তাহলেও তাদের সঙ্গে থাকবো। না করলেও তাদের সঙ্গে থাকবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো জাতীয় পর্যায়ের না, তৃণমূলের নেতা। তাই আমাকে তৃণমূলে থাকতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকতে পারলেই আমি নেতা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকলে তো আর দলের সঙ্গে বেঈমানি করা হয় না। বহিষ্কার করা হলেও আমি একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে দলের সঙ্গেই থাকবো।’
তার মতে, ‘এবার নির্বাচন যেহেতু দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না তাই বিএনপি যদি নির্দলীয় প্রতীকে দলের লোকজনকে নির্বাচনে বাধা না দিতো, তাহলে তৃণমূলের আরও অনেক নেতা প্রার্থী হতেন। এতে দলের লাভ হতো। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হতো। আমার এলাকার নেতাকর্মীরা এখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।’
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় শামসুর রশীদ মজনু চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখানকার বিএনপি নেতাদের অবহেলার শিকার। আমি বটতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম ১৪ বছর। কিন্তু এর আগে উপজেলা বা সংসদ নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। দলের বড় কোনো পদও আমাকে দেয়া হয়নি। কিন্তু এলাকার সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে, তারা আমাকে চায়। তাই আমি প্রার্থী হয়েছি।’ নির্বাচন না করলে দলের ক্ষতি হবে, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে, আরও হবে। আমরা যদি জনপ্রতিনিধি হই তাহলে সেসব মামলা ফেস করা সহজ হবে। আর নির্বাচন না করলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সব আওয়ামী লীগে চলে যাবে। গত সংসদ নির্বাচনে অনেকেই আওয়ামী লীগে চলে গেছে। তৃণমূলে দলকে ধরে রাখতে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা উচিত।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ওমরাও খান ২৪ বছর কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, এবার তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন করায় বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত নয়, উল্টো লাভবান হবে। কারণ, আমি কাজ করছি মানুষের জন্য, তাদের নিয়েই আমার রাজনীতি। নির্বাচনে এলাকার মানুষ আমাকে চায়, তাদেরকে আমার মূল্যায়ন করতে হবে। ফলে আমার এলাকায় বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে। নির্বাচন যেহেতু দলীয়ভাবে হচ্ছে না, তাই আমি না দাঁড়ালেও ভোটাররা মন্দের ভালোকে ভোট দিতেন। এখন সর্বোত্তম প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে কারচুপি হবে বলে আমি মনে করি না। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভালো হয়েছে। আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করতে পেরেছে।’ দল থেকে বহিষ্কার করলেও তিনি বিএনপির সঙ্গেই আছেন এবং থাকবেন বলে জানান।
রিজভী বলেন, ‘তারা যে যুক্তিই দেখাক না কেন আসলে তারা নিজেদের স্বার্থে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন। তারা দেশ, মানুষ বা দলের কথা চিন্তা করেননি। তারা শেখ হাসিনার মতো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যে, নির্বাচনে না থাকলে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। ডিক্টেটররা এই ধরনের কথা বলে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। তারপর তারা তাদের ছক অনুযায়ী কাজ করে। যেহেতু নির্বাচন কমিশন তাদের আজ্ঞাবাহী।’ তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪-এ আমরা সেটা দেখেছি। দেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে ভোটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারপরও কিছু অতি উৎসাহী নেতাকর্মী দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, আমরা বহিষ্কার করেছি।’