alt

জিয়াই স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম নায়ক: মির্জা ফখরুল

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ১২ জুন ২০২১

ছাত্রদল ও নতুন প্রজন্ম জিয়াউর রহমানকে কতটুকু জানে—এমন প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তারা কিন্তু জানে বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান, যুদ্ধ করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগই হচ্ছে একমাত্র দল, তারাই শুধু যুদ্ধ করেছে, আর কারও কিছু করার ছিল না এখানে। এ কথাগুলো যে সত্য নয়, এ কথাগুলো যে সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, একেবারে ইচ্ছে করে নতুন প্রজন্মকে অন্ধকারে রেখে দিতে বিকৃত ইতিহাস রচনা করছে, সেটাকে খণ্ডন করতে হবে, প্রকৃত সত্যকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।’

জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম নায়ক ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আজ শনিবার গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীর ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

আলোচনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে যে স্বাধীনতার ঘোষণাটা কীভাবে হয়েছে, কে দিয়েছিল, কেন দিয়েছিল। এখানে আলোচনায় এসেছে যে জিয়াউর রহমানকে তো ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে কেউ চিনত না। তাহলে জিয়াউর রহমান কেন আবির্ভূত হলেন? তিনি যে একেবারে আকাশ থেকে শূন্যে পড়ে গেলেন, তা তো নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা ঐতিহাসিক সত্য যে জিয়াউর রহমানই প্রথম নায়ক, যিনি স্বাধীনতাযুদ্ধ দিয়ে গোটা জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। অর্থাৎ একটা অন্ধকার সময়ে আশার আলো দেখিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম এক দিনের নয়। একেবারে মোগল আমল থেকে পরবর্তীকালে ব্রিটিশ আমল—সব সময় এ অঞ্চলের মানুষ লড়াই করেছে স্বাধীনতার জন্য। প্রীতিলতা, সূর্য সেন, তিতুমীর, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু—তাঁরা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করার চেষ্টা করেছেন। পাকিস্তান হওয়ার পর শেরেবাংলা ফজলুল হক থেকে শুরু করে মাওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান—সবাই কাজ করেছেন, চেষ্টা করেছেন কীভাবে এই দেশকে স্বাধীন করা যায়।

একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটা জনমত তৈরি করে যে পাকিস্তান আমাদের শোষণ করছে। আর পাকিস্তান নয়, এখন আমরা আমাদের নিজেদের একটা দেশ চাই, নিজেদের ভূখণ্ড চাই, নিজেদের সরকার চাই। এ আকাঙ্ক্ষায় মানুষ যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়ে গেছে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ট্যাংক, মর্টার নিয়ে যখন এই বাংলাদেশের নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, তখন কিন্তু কোনো নেতাকে খুঁজে পাওয়া গেল না।

‘কেউ যখন কোথাও দিশা খুঁজে পাচ্ছিল না, সেই সময়ে এই জিয়াউর রহমান, অখ্যাত এক মেজর, যিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটা রেজিমেন্টের কমান্ডার ছিলেন, তিনি বেরিয়ে এসে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বললেন, উই রিভোল্ট। আমরা বিদ্রোহ করছি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এখন আসুন আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়ুন যুদ্ধে। সেখান থেকে লড়াইটা শুরু হয়।’

সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে ‘ভুলে গেল’ তারা জনগণকে কী আশ্বাস, কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। স্বাধীনতার চেতনা ছিল একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটা মুক্ত, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক সমাজের। কিন্তু আওয়ামী লীগ ‘সেই পথে না গিয়ে বিভাজনের পথ তৈরি করল’। তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) বলতে শুরু করল, এক নেতার এক দেশ। এতে জাতি বিভক্ত হয়ে গেল। আর বললেন, জাতি একটাই, বাঙালি জাতি। এ কথা যারা বাঙালি নয়, যারা ভিন্ন অধিবাসী, নৃতাত্ত্বিক আদিবাসী, তারা এটা মেনে নিল না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তাঁরা যখন দেখলেন চতুর্দিকে যখন অস্থিরতা শুরু হয়েছে, জনগণের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না, লুটপাট শুরু করে দিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেদিন রক্ষীবাহিনী তৈরি করা হলো। নতুন একটা বাহিনী, তারা ট্রেইনড ইন ইন্ডিয়া। এরা অতি দ্রুত নিপীড়নের মাত্রা এমন পর্যায়ে নিয়ে গেল যে মানুষ অতি অল্প সময়ের মধ্যে এই দলের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলল।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসানুল হক ইনু মন্ত্রী ছিলেন। তিনি একটা দল করতেন, দলটার নাম জাসদ। কেন এই জাসদ তৈরি হয়েছিল? এই জন্য যে ওই দলের নেতা-কর্মীরা, যাঁরা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে একটা শোষণহীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। সর্বশেষ বাকশাল করল। একটি ছাড়া আর কোনো দল থাকবে না। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওই খান থেকে জাতিকে উদ্ধার করল কে, এই জিয়াউর রহমান। কেন জিয়াউর রহমানকে আমরা এত পছন্দ করি, কী কারণে তাঁকে এত প্রাসঙ্গিক মনে করি, কেন মনে করি যে তাঁর মতো নেতা এ দেশে আর জন্মগ্রহণ করেননি। এই কারণে যে তিনি আবারও এই জাতিকে মুক্তি দিয়েছিলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছেন যে একটা দল নয়, সব দল থাকবে। সেদিন এই আওয়ামী লীগও নতুন করে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেছিল। এ কথাগুলো তারা কখনো বলে না, মানে না, শুনতেও চায় না।’

ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে ‘বর্গি’। তারা ক্ষমতায় এলেই দেশে লুটপাট হয়। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করলেও জবাব দিতে হয় না, খুন করলেও জবাব দিতে হয় না।

‘বাকশালের’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের সমস্যাও কিন্তু একই রকম প্রায়। বাংলাদেশ আবার ফ্যাসিবাদের কবলে পড়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। দুনীতি চরম শিখরে পৌঁছেছে। এই সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিন্ন দেশের স্বার্থ রক্ষা করছে।

সরকার হটাতে বিভক্তি ভুলে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যা করছে, করুক। জনগণের কাছে তাদের অন্যায় টিকে থাকতে পারবে না। জনগণের আন্দোলনে তারা ভেসে যাবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। ফখরুল বলেন, ‘আসুন অতি দ্রুত আমরা নিজেদের পুরোপুরি সংগঠিত করে ফেলি, নিজেদের ভুল-বোঝাবুঝি, বিভেদগুলো দূর করি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জনগণকে একত্র করে কাজ করি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যে জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী পালন করছি, এর মূল উদ্দেশ্যটা কী? জিয়াউর রহমান যে স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ছিলেন, আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি ছিলেন, এটা বলার জন্য নয়। এর মূল বিষয় হচ্ছে আলোচনা সভাগুলোর মধ্য দিয়ে সেই টার্গেট গ্রুপ বা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছানো এবং আমাদের বার্তাগুলো দেওয়া।’

ছবি

নির্বাচনী উৎসবমুখর পরিবেশ গড়তে ২৫ কোটি টাকার প্রচার কার্যক্রমে নীতিগত অনুমোদন

ছবি

প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ভোট: ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ চালু, অঞ্চলভিত্তিক নিবন্ধন শুরু বুধবার

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন দুই রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিল ইসি

ছবি

বিএনপি ও জামায়াত

ছবি

একমাসে কার্যকরের দাবি এনসিপির

ছবি

শেষমেষ সবাইকে নির্বাচনে আসতে হবে: সালাহউদ্দিন

ছবি

মহম্মদপুরে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আলোচনা অনুষ্ঠিত

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধিক মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে এনসিপির এক মাসের আল্টিমেটাম

ছবি

সোমবার ইসির সংলাপে যাচ্ছে না জামায়াত

ছবি

নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ না হওয়া পর্যন্ত জামায়াত ও সঙ্গীদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা

ছবি

সবসময় আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন মওলানা ভাসানী: তারেক রহমান

ছবি

আ’লীগ-জাপা-বাম, সবাইকে বাইরে রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না: ইসির সংলাপে কাদের সিদ্দিকী

ছবি

একটা মহল নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে, রুখে দাঁড়াতে হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি

নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রাজশাহী ও রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ

ছবি

নিবন্ধন পেল এনসিপি ও বাসদ (মার্কসবাদী)

ছবি

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা

দলীয় মনোনয়নের জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো : টিপু

ছবি

বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে একটি মহল: মির্জা ফখরুল

ছবি

বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন চেয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধে মানুষের দুর্ভোগ

মনোনয়ন নিয়ে নাখোশ সিলেট বিএনপি, এবার অশান্ত গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার

মনোনয়ন নিয়ে নাখোশ সিলেট বিএনপি, এবার অশান্ত গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার

ছবি

গণফোরামের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ঢাকা-৬ আসনে সভাপতি নিজে লড়বেন

ছবি

নওগাঁ পোরশা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল শাহ চৌধুরীকে জেলা কমিটি থেকে সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

সরকার পতনে বিদেশি শক্তির সম্পৃক্ততা অস্বীকার শেখ হাসিনার; ইউনূসের ‘পশ্চাৎপোষক বলয়’কে দায়ী

ছবি

নাটোর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মশাল মিছিল

ছবি

পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেলকে বহিষ্কার

সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মশাল মিছিল ও মানববন্ধন

ছবি

ক্ষমতায় এলে ভারতের ‘দাদাগিরি’ বন্ধে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা মির্জা ফখরুলের

ছবি

সাংবিধানিকভাবে ‘মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহালের অঙ্গীকার সালাহউদ্দিন আহমদের

ছবি

ফারাক্কা–তিস্তা ইস্যুতে বিশেষ গুরুত্ব দেবে বিএনপি: মির্জা ফখরুল

ছবি

গাজীপুরে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

আলাদাভাবে গণভোটের তারিখসহ তিন দাবি ৮ দলের

ছবি

গণভোটে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না, সেজন্য সংসদ লাগবে: সালাহউদ্দিন

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ছবি

নাশকতার অভিযোগে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৪৩ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

ছবি

নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে: আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে মত দেবে ইসি

tab

জিয়াই স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম নায়ক: মির্জা ফখরুল

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ১২ জুন ২০২১

ছাত্রদল ও নতুন প্রজন্ম জিয়াউর রহমানকে কতটুকু জানে—এমন প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তারা কিন্তু জানে বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান, যুদ্ধ করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগই হচ্ছে একমাত্র দল, তারাই শুধু যুদ্ধ করেছে, আর কারও কিছু করার ছিল না এখানে। এ কথাগুলো যে সত্য নয়, এ কথাগুলো যে সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, একেবারে ইচ্ছে করে নতুন প্রজন্মকে অন্ধকারে রেখে দিতে বিকৃত ইতিহাস রচনা করছে, সেটাকে খণ্ডন করতে হবে, প্রকৃত সত্যকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।’

জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম নায়ক ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আজ শনিবার গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীর ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

আলোচনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে যে স্বাধীনতার ঘোষণাটা কীভাবে হয়েছে, কে দিয়েছিল, কেন দিয়েছিল। এখানে আলোচনায় এসেছে যে জিয়াউর রহমানকে তো ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে কেউ চিনত না। তাহলে জিয়াউর রহমান কেন আবির্ভূত হলেন? তিনি যে একেবারে আকাশ থেকে শূন্যে পড়ে গেলেন, তা তো নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা ঐতিহাসিক সত্য যে জিয়াউর রহমানই প্রথম নায়ক, যিনি স্বাধীনতাযুদ্ধ দিয়ে গোটা জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। অর্থাৎ একটা অন্ধকার সময়ে আশার আলো দেখিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম এক দিনের নয়। একেবারে মোগল আমল থেকে পরবর্তীকালে ব্রিটিশ আমল—সব সময় এ অঞ্চলের মানুষ লড়াই করেছে স্বাধীনতার জন্য। প্রীতিলতা, সূর্য সেন, তিতুমীর, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু—তাঁরা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করার চেষ্টা করেছেন। পাকিস্তান হওয়ার পর শেরেবাংলা ফজলুল হক থেকে শুরু করে মাওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান—সবাই কাজ করেছেন, চেষ্টা করেছেন কীভাবে এই দেশকে স্বাধীন করা যায়।

একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটা জনমত তৈরি করে যে পাকিস্তান আমাদের শোষণ করছে। আর পাকিস্তান নয়, এখন আমরা আমাদের নিজেদের একটা দেশ চাই, নিজেদের ভূখণ্ড চাই, নিজেদের সরকার চাই। এ আকাঙ্ক্ষায় মানুষ যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়ে গেছে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ট্যাংক, মর্টার নিয়ে যখন এই বাংলাদেশের নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, তখন কিন্তু কোনো নেতাকে খুঁজে পাওয়া গেল না।

‘কেউ যখন কোথাও দিশা খুঁজে পাচ্ছিল না, সেই সময়ে এই জিয়াউর রহমান, অখ্যাত এক মেজর, যিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটা রেজিমেন্টের কমান্ডার ছিলেন, তিনি বেরিয়ে এসে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বললেন, উই রিভোল্ট। আমরা বিদ্রোহ করছি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এখন আসুন আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়ুন যুদ্ধে। সেখান থেকে লড়াইটা শুরু হয়।’

সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে ‘ভুলে গেল’ তারা জনগণকে কী আশ্বাস, কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। স্বাধীনতার চেতনা ছিল একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটা মুক্ত, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক সমাজের। কিন্তু আওয়ামী লীগ ‘সেই পথে না গিয়ে বিভাজনের পথ তৈরি করল’। তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) বলতে শুরু করল, এক নেতার এক দেশ। এতে জাতি বিভক্ত হয়ে গেল। আর বললেন, জাতি একটাই, বাঙালি জাতি। এ কথা যারা বাঙালি নয়, যারা ভিন্ন অধিবাসী, নৃতাত্ত্বিক আদিবাসী, তারা এটা মেনে নিল না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তাঁরা যখন দেখলেন চতুর্দিকে যখন অস্থিরতা শুরু হয়েছে, জনগণের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না, লুটপাট শুরু করে দিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেদিন রক্ষীবাহিনী তৈরি করা হলো। নতুন একটা বাহিনী, তারা ট্রেইনড ইন ইন্ডিয়া। এরা অতি দ্রুত নিপীড়নের মাত্রা এমন পর্যায়ে নিয়ে গেল যে মানুষ অতি অল্প সময়ের মধ্যে এই দলের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলল।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসানুল হক ইনু মন্ত্রী ছিলেন। তিনি একটা দল করতেন, দলটার নাম জাসদ। কেন এই জাসদ তৈরি হয়েছিল? এই জন্য যে ওই দলের নেতা-কর্মীরা, যাঁরা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে একটা শোষণহীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। সর্বশেষ বাকশাল করল। একটি ছাড়া আর কোনো দল থাকবে না। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওই খান থেকে জাতিকে উদ্ধার করল কে, এই জিয়াউর রহমান। কেন জিয়াউর রহমানকে আমরা এত পছন্দ করি, কী কারণে তাঁকে এত প্রাসঙ্গিক মনে করি, কেন মনে করি যে তাঁর মতো নেতা এ দেশে আর জন্মগ্রহণ করেননি। এই কারণে যে তিনি আবারও এই জাতিকে মুক্তি দিয়েছিলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছেন যে একটা দল নয়, সব দল থাকবে। সেদিন এই আওয়ামী লীগও নতুন করে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেছিল। এ কথাগুলো তারা কখনো বলে না, মানে না, শুনতেও চায় না।’

ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে ‘বর্গি’। তারা ক্ষমতায় এলেই দেশে লুটপাট হয়। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করলেও জবাব দিতে হয় না, খুন করলেও জবাব দিতে হয় না।

‘বাকশালের’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের সমস্যাও কিন্তু একই রকম প্রায়। বাংলাদেশ আবার ফ্যাসিবাদের কবলে পড়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। দুনীতি চরম শিখরে পৌঁছেছে। এই সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিন্ন দেশের স্বার্থ রক্ষা করছে।

সরকার হটাতে বিভক্তি ভুলে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যা করছে, করুক। জনগণের কাছে তাদের অন্যায় টিকে থাকতে পারবে না। জনগণের আন্দোলনে তারা ভেসে যাবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। ফখরুল বলেন, ‘আসুন অতি দ্রুত আমরা নিজেদের পুরোপুরি সংগঠিত করে ফেলি, নিজেদের ভুল-বোঝাবুঝি, বিভেদগুলো দূর করি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জনগণকে একত্র করে কাজ করি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যে জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী পালন করছি, এর মূল উদ্দেশ্যটা কী? জিয়াউর রহমান যে স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ছিলেন, আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি ছিলেন, এটা বলার জন্য নয়। এর মূল বিষয় হচ্ছে আলোচনা সভাগুলোর মধ্য দিয়ে সেই টার্গেট গ্রুপ বা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছানো এবং আমাদের বার্তাগুলো দেওয়া।’

back to top