ক্রিস্টাল প্যালেসের খেলোয়াড়দের বাঁধভাঙা উল্লাস
হতাশা আর ব্যর্থতায় ঠাসা মৌসুমে আরও একবার পথ হারালো ম্যানচেস্টার সিটি। শক্তি-সামর্থ্যে অনেক অনেক এগিয়ে থাকা দলটিকেই হারিয়ে এফএ কাপে চ্যাম্পিয়ন হলো ক্রিস্টাল প্যালেস।
লন্ডনের ওয়েম্বলিতে গতকাল শনিবার ফাইনালে ৮৫ হাজার দর্শকের সামনে ১-০ গোলে জিতেছে প্যালেস। ম্যাচের শুরুর দিকে ব্যবধান গড়ে দেয়া গোলটি করেন এবেরেচি এজে। প্রথমার্ধে পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয় ম্যান সিটি। এই পরাজয়ে কোনো শিরোপা ছাড়াই মৌসুম শেষ করতে হয়েছে পেপ গার্দিওলার দলকে।
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সেরা প্রতিযোগিতাটিতে এর আগে দুইবার ফাইনালে উঠেছিল প্যালেস। দু’বারই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে স্বপ্ন ভেঙেছিল তাদের। এবার ম্যানচেস্টারেরই অন্য দলকে হারিয়ে ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথম মেজর কোনো শিরোপা জিতলো এই ক্রিস্টাল-প্যালেস। এই সুবাদে আগামী বছর ইউরোপা লীগেও জায়গা নিশ্চিত করেছে প্যালেস।
তাদের নতুন ইতিহাস গড়ার নায়ক অবশ্যই এজে। তবে ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত সব সেভ করে ‘ফেবারিটদের’ আটকে রাখা ডিন হেন্ডারসনের অবদানও কোনো অংশে কম নয়।
ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটে ৮৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে ছিল সিটির। ষোড়শ মিনিটে প্রথম প্রতি-আক্রমণেই সিটিকে স্তব্ধ করে দেয় লীগে দ্বাদশ স্থানে থাকা দলটি। ডান দিক থেকে দানিয়েল মুনোসের বাড়ানো বল বক্সের মধ্যে পেয়ে, প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগ না দিয়ে দারুণ ভলিতে গোলটি করেন এবেরেচি এজে।
আচমকা এভাবে গোল হজম করতে দেখে ডাগআউটে মাথায় হাত উঠে যায় কোচ গার্দিওলার।
৩৩তম মিনিটে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি সিটি। ফাউল থেকে পেনাল্টি পায় সিটি। শুরুতে শট নিতে প্রস্তুত হতে দেখা যায় হালান্ডকে, কিন্তু তিনি বল তুলে দেন ওমার মার্মাউশের হাতে। মিশরের এই ফরোয়ার্ডে শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক। ফিরতি বলে হালান্ডের প্রচেষ্টাও আটকে দেন ডিন হেন্ডারসন।
৫৭ মিনিটে মুনোসের প্রচেষ্টা জালে জড়ালে ব্যবধান দ্বিগুণ করার উদ্যাপন শুরু করে প্যালেস। তবে, ভিএআরের সাহায্যে রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজালে হাফ ছাড়ে সিটি।
চাপ ধরে রেখে খেলতে থাকে সিটি, কিন্তু কাক্সিক্ষত ফলটাই মিলছিল না তাদের। ১০ মিনিট যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ডে ব্রুইনের শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। তিন মিনিট পর আরেকটি দুর্দান্ত সেভ করেন হেন্ডারসন। এরপর, শেষের বাঁশি বাজতেই গ্যালারির প্যালেস অংশে ওঠে গর্জন, আর অন্যপাশে পিনপতন নীরবতা।
প্যালেসের কোচ অলিভার গ্লাসনার বলেন, ‘সত্যি বলতে কী আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি মনে করি এভাবে ১০বার ম্যাচ খেললে একটিতে জেতার সম্ভাবনা থাকে। আর সেটাই আজ হয়েছে। তাদের অর্ধে প্রথমবার গিয়েই আমরা গোল আদায় করে নিয়েছি। এরপর শুধু সেই গোল প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছি।’
এর আগে ১৯৯০ ও ২০১৬ সালের এফর কাপের ফাইনালে ম্যান ইউর কাছে পরাজিত হয় প্যালেস। এবারও তাদের বিরুদ্ধে সিটি ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিল। ২০১৬-১৭ মৌসুমের পর এবারই প্রথম কোনো শিরোপা ছাড়া মৌসুম শেষ করতে হয়েছে গার্দিওলার দলকে।
ম্যাচ শেষে হতাশ গার্দিওলা বলেন, ‘আমরা সব কিছু করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু গোল করতে না পারলে ম্যাচে জেতা কঠিন। আমরা সত্যিই ভালো পারফর্ম করেছি। ফুটবল এমনই।’
আগের চার মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জেতার পর এবারের মৌসুমটা কোনোভাবেই নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি সিটিজেনরা। গার্দিওলার কোচিং ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বাজে মৌসুমের তকমাও এবার পাওয়া হয়ে গেছে।
প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে থাকা সিটি আগামীকাল বোর্নমাউথকে আতিথ্য দিবে ও আগামী ২৫ মে ফুলহ্যাম সফরে যাবে।
হালান্ড কেন পেনাল্টি নিলেন না
ম্যাচের পর আলোচনার কেন্দ্রে যথারীতি সেই পেনাল্টি। গার্দিওলা অকপটেই বলেন, তিনিও জানেন হালান্ডের এগিয়ে না আসার কারণ।
‘এটা ওরাই মাঠে ঠিক করেছে। আমি ভেবেছিলাম, আর্লিং হয়তো শট নিতে চাইবে তবে এসব ওদের ভেতরের ব্যাপার।’
‘ফ্রি কিক বা পেনাল্টি, এসব আসলে একটি মুহূর্তের ব্যাপার, ওই মুহূর্তের অনুভূতির ব্যাপার ওরা কেমন বোধ করছে।’
বিবিসির বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করা ওয়েইন রুনির ধারণা, ওয়েম্বলিতে ৮৫ হাজার দর্শকের চাপে ভড়কে গিয়ে থাকতে পারেন হালান্ড।
‘(হলান্ড) যখন পেনাল্টিতে ব্যর্থ হয়, তখন তাকে দেখে স্পষ্টই বোঝা যায় এবং এটা তার ওপর প্রভাব ফেলে। হয়তো সে ভেবেছে, ওয়েম্বলিতে পেনাল্টি নেয়া তার জন্য অনেক বেশিই (চাপ) হয়ে যায়! হতেও পারে এমন, সেও তো মানুষ।’
সিটির হতাশাজনক মৌসুমেও সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩০টি গোল করেছেন হলান্ড। সাত পেনাল্টির তিনটিতে ব্যর্থ হন। রুনির মতে, হালান্ডের মতো ফুটবলারদের সঙ্গে মেসি-রোনালদোর মতো কিংবদন্তিদের বড় একটি পার্থক্য এখানেই।
‘সে অবশ্যই বিশ্বমানের ফরোয়ার্ড, তবে যখন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর মতো ফুটবলারদের কথা আসবে ওরা কখনোই এমন মুহূর্তে অন্য কাউকে পেনাল্টি নিতে দিত না। এটাই এই দু’জনকে আলাদা করে তোলে আর্লি হালান্ড বা কিলিয়ান এমবাপ্পে কিংবা এই ধরনের ফুটবলারদের থেকে। ওরা দু’জন মরিয়া এবং প্রতি ম্যাচেই গোল করতে চায়।’
গার্দিওলার কোচিংয়ে প্রথমবার ট্রফিবিহীন মৌসুম নিশ্চিত হওয়ার পর সিটির এখন চ্যালেঞ্জ আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লীগে জায়গা করে নেয়া।
ক্রিস্টাল প্যালেসের খেলোয়াড়দের বাঁধভাঙা উল্লাস
রোববার, ১৮ মে ২০২৫
হতাশা আর ব্যর্থতায় ঠাসা মৌসুমে আরও একবার পথ হারালো ম্যানচেস্টার সিটি। শক্তি-সামর্থ্যে অনেক অনেক এগিয়ে থাকা দলটিকেই হারিয়ে এফএ কাপে চ্যাম্পিয়ন হলো ক্রিস্টাল প্যালেস।
লন্ডনের ওয়েম্বলিতে গতকাল শনিবার ফাইনালে ৮৫ হাজার দর্শকের সামনে ১-০ গোলে জিতেছে প্যালেস। ম্যাচের শুরুর দিকে ব্যবধান গড়ে দেয়া গোলটি করেন এবেরেচি এজে। প্রথমার্ধে পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয় ম্যান সিটি। এই পরাজয়ে কোনো শিরোপা ছাড়াই মৌসুম শেষ করতে হয়েছে পেপ গার্দিওলার দলকে।
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সেরা প্রতিযোগিতাটিতে এর আগে দুইবার ফাইনালে উঠেছিল প্যালেস। দু’বারই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে স্বপ্ন ভেঙেছিল তাদের। এবার ম্যানচেস্টারেরই অন্য দলকে হারিয়ে ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথম মেজর কোনো শিরোপা জিতলো এই ক্রিস্টাল-প্যালেস। এই সুবাদে আগামী বছর ইউরোপা লীগেও জায়গা নিশ্চিত করেছে প্যালেস।
তাদের নতুন ইতিহাস গড়ার নায়ক অবশ্যই এজে। তবে ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত সব সেভ করে ‘ফেবারিটদের’ আটকে রাখা ডিন হেন্ডারসনের অবদানও কোনো অংশে কম নয়।
ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটে ৮৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে ছিল সিটির। ষোড়শ মিনিটে প্রথম প্রতি-আক্রমণেই সিটিকে স্তব্ধ করে দেয় লীগে দ্বাদশ স্থানে থাকা দলটি। ডান দিক থেকে দানিয়েল মুনোসের বাড়ানো বল বক্সের মধ্যে পেয়ে, প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগ না দিয়ে দারুণ ভলিতে গোলটি করেন এবেরেচি এজে।
আচমকা এভাবে গোল হজম করতে দেখে ডাগআউটে মাথায় হাত উঠে যায় কোচ গার্দিওলার।
৩৩তম মিনিটে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি সিটি। ফাউল থেকে পেনাল্টি পায় সিটি। শুরুতে শট নিতে প্রস্তুত হতে দেখা যায় হালান্ডকে, কিন্তু তিনি বল তুলে দেন ওমার মার্মাউশের হাতে। মিশরের এই ফরোয়ার্ডে শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক। ফিরতি বলে হালান্ডের প্রচেষ্টাও আটকে দেন ডিন হেন্ডারসন।
৫৭ মিনিটে মুনোসের প্রচেষ্টা জালে জড়ালে ব্যবধান দ্বিগুণ করার উদ্যাপন শুরু করে প্যালেস। তবে, ভিএআরের সাহায্যে রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজালে হাফ ছাড়ে সিটি।
চাপ ধরে রেখে খেলতে থাকে সিটি, কিন্তু কাক্সিক্ষত ফলটাই মিলছিল না তাদের। ১০ মিনিট যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ডে ব্রুইনের শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। তিন মিনিট পর আরেকটি দুর্দান্ত সেভ করেন হেন্ডারসন। এরপর, শেষের বাঁশি বাজতেই গ্যালারির প্যালেস অংশে ওঠে গর্জন, আর অন্যপাশে পিনপতন নীরবতা।
প্যালেসের কোচ অলিভার গ্লাসনার বলেন, ‘সত্যি বলতে কী আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি মনে করি এভাবে ১০বার ম্যাচ খেললে একটিতে জেতার সম্ভাবনা থাকে। আর সেটাই আজ হয়েছে। তাদের অর্ধে প্রথমবার গিয়েই আমরা গোল আদায় করে নিয়েছি। এরপর শুধু সেই গোল প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছি।’
এর আগে ১৯৯০ ও ২০১৬ সালের এফর কাপের ফাইনালে ম্যান ইউর কাছে পরাজিত হয় প্যালেস। এবারও তাদের বিরুদ্ধে সিটি ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিল। ২০১৬-১৭ মৌসুমের পর এবারই প্রথম কোনো শিরোপা ছাড়া মৌসুম শেষ করতে হয়েছে গার্দিওলার দলকে।
ম্যাচ শেষে হতাশ গার্দিওলা বলেন, ‘আমরা সব কিছু করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু গোল করতে না পারলে ম্যাচে জেতা কঠিন। আমরা সত্যিই ভালো পারফর্ম করেছি। ফুটবল এমনই।’
আগের চার মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জেতার পর এবারের মৌসুমটা কোনোভাবেই নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি সিটিজেনরা। গার্দিওলার কোচিং ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বাজে মৌসুমের তকমাও এবার পাওয়া হয়ে গেছে।
প্রিমিয়ার লীগ টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে থাকা সিটি আগামীকাল বোর্নমাউথকে আতিথ্য দিবে ও আগামী ২৫ মে ফুলহ্যাম সফরে যাবে।
হালান্ড কেন পেনাল্টি নিলেন না
ম্যাচের পর আলোচনার কেন্দ্রে যথারীতি সেই পেনাল্টি। গার্দিওলা অকপটেই বলেন, তিনিও জানেন হালান্ডের এগিয়ে না আসার কারণ।
‘এটা ওরাই মাঠে ঠিক করেছে। আমি ভেবেছিলাম, আর্লিং হয়তো শট নিতে চাইবে তবে এসব ওদের ভেতরের ব্যাপার।’
‘ফ্রি কিক বা পেনাল্টি, এসব আসলে একটি মুহূর্তের ব্যাপার, ওই মুহূর্তের অনুভূতির ব্যাপার ওরা কেমন বোধ করছে।’
বিবিসির বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করা ওয়েইন রুনির ধারণা, ওয়েম্বলিতে ৮৫ হাজার দর্শকের চাপে ভড়কে গিয়ে থাকতে পারেন হালান্ড।
‘(হলান্ড) যখন পেনাল্টিতে ব্যর্থ হয়, তখন তাকে দেখে স্পষ্টই বোঝা যায় এবং এটা তার ওপর প্রভাব ফেলে। হয়তো সে ভেবেছে, ওয়েম্বলিতে পেনাল্টি নেয়া তার জন্য অনেক বেশিই (চাপ) হয়ে যায়! হতেও পারে এমন, সেও তো মানুষ।’
সিটির হতাশাজনক মৌসুমেও সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩০টি গোল করেছেন হলান্ড। সাত পেনাল্টির তিনটিতে ব্যর্থ হন। রুনির মতে, হালান্ডের মতো ফুটবলারদের সঙ্গে মেসি-রোনালদোর মতো কিংবদন্তিদের বড় একটি পার্থক্য এখানেই।
‘সে অবশ্যই বিশ্বমানের ফরোয়ার্ড, তবে যখন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর মতো ফুটবলারদের কথা আসবে ওরা কখনোই এমন মুহূর্তে অন্য কাউকে পেনাল্টি নিতে দিত না। এটাই এই দু’জনকে আলাদা করে তোলে আর্লি হালান্ড বা কিলিয়ান এমবাপ্পে কিংবা এই ধরনের ফুটবলারদের থেকে। ওরা দু’জন মরিয়া এবং প্রতি ম্যাচেই গোল করতে চায়।’
গার্দিওলার কোচিংয়ে প্রথমবার ট্রফিবিহীন মৌসুম নিশ্চিত হওয়ার পর সিটির এখন চ্যালেঞ্জ আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লীগে জায়গা করে নেয়া।